আজকাল মানুষের ভদ্রতাবোধ দেখে আমি দিন দিন হতাশ হয়ে যাচ্ছি। আমি এমনিতে খুব ভদ্রমহিলা এমন দাবি করছি না তবে আমি একেবারে ছোটলোকও না।
সেদিন টিভিতে একটা ফোনোলাইভ শো হচ্ছিল, অনুষ্ঠানের গেস্ট জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী আসিফ আকবর। উপস্থাপিকার নাম নাবিলা আর চ্যাংড়া উপস্থাপকের নামটা মনে নাই। নাবিলা এবং ওই চ্যাংড়া(টাইপের সুবিধার জন্য চ্যাংড়া শব্দটি ব্যবহার করছি) কথা শুরু করলো। নাবিলা কথাবার্তায় যথেষ্ট স্মার্ট ই মনে হল তবে চ্যাংড়ার চ্যাংড়ামো দেখে আমার বড়ই বিরক্ত লাগলো! সে মেকআপ দিবে একটু পরপর আল্লাদ শুরু করলো। ভাব দেখে মনে হল ফোন করে বলি, যেই না পোলার চেহারা নাম থুইছে কি পেয়ারা! ফোন দিবো কি দিবো না এটা ভাবতে ভাবতেই একটা ফোন চলে এল অনুষ্ঠানে।
কলার ভাইসাহেব ফোন করে হাই হ্যালোর তোয়াক্কা না করে উনি কে সেটা আগে বললেন! উনি স্মার্ট গ্রুপ অব ইন্ডাট্রিজের মালিক মাহফুজুর রহমান। নাবিলা একটু তব্ধা খেলো প্রথমে, তারপর বলল, ও মাহফুজ ভাই কেমন আছেন? (ভাবখানা এমন যেন এই মাহফুজ ভাইকে সে অনেকদিন ধরেই চিনে!)
মাহফুজ ভাই নাবিলাকে পাত্তা নি দয়ে বললেন, উনি আসিফ ভাইয়ের সাথে কথা বলবেন।
আসিফ ভাই হ্যালো বলতেই মাহফুজ ভাই বললেন, আসিফ ভাই আমি যুবদল মাহফুজ!
আসিফ: হ্যা ভাই কেমন আছেন?
মাহফুজ ভাই: আসিফ ভাই আপনার প্রিয় শহর খুলনায় এসেছি। রয়েলের আশপাশ দিয়ে ঘুরে বেড়াইতেছি….. পলিটিক্যাল আলোচনা শুরু করলেন।
আসিফ: ভাই এটা রিক্রিয়েশানের একটা প্রোগ্রাম। আপনার সাথে পলিটিক্যাল আলোচনা আমি ফোনে করবো।
আসিফ ভাইয়ের এহেন আচরণে আমি মুগ্ধ হয়ে গেলাম, তবে মাহফুঝ ভাইয়ের অভদ্র আচরণে আমি হতাশ হলাম।
আজকে রিডিং রুমে বসে এক ক্লাসমেটকে অংক বুঝাতে বসেছি আমাদের সাথে পরের ব্যাচের আরো ২টা ছেলে বসেছে। আমি আমার ক্লাসমেটকে মাত্র অংক বুঝাতে বসেছি এমন সময় জুনিয়র একজন চলে গেল কি কাজে। আরেকজন পিচ্চি(বোঝার সুবিধার্থে পিচ্চি শব্দটি ব্যবহার করছি) শুরু করলো, তার উত্তরা ব্যাংকে জব হয়েছে। সে কি করবে? সে কি এখানে পড়ালেখা করবে নাকি জয়েন করবে!
পিচ্চির ব্যাকগ্রাউন্ড ম্যাথ শুনে সৎ পরামর্শ দিতে গিয়েই আমরা প্যাচে পড়লাম। আমরা বললাম, এখানে বসে ২বছর অমানবিক অত্যাচার সহ্য না করে জব করা ই ভাল। পিচ্চি বলে, নাহ উত্তরায় স্যালারি ভাল না! ঢাকার বাইরে পাঠিয়ে দিবে…..
এরপর আমার ক্লাসমেটকে জিজ্ঞেস করলো, তার স্কুল কলেজ কোনটা?
সে বলল তার বাবা আর্মিতে চাকরি করে বলে তার ক্যান্টনমেন্ট স্কুল এন্ড কলেজগুলোতে পড়া হয়েছে। এরপর সে স্পেসিফিক্যালি স্কুল কলেজের নাম শুনলো। এরপর তার বাসা মোহাম্মদপুর শুনে রাস্তার নাম শুনেই সে ক্ষান্ত দিলো না আমার ফ্রেন্ডের বাবা সেনাবাহিনীর কোন পোস্টে চাকরি করেন সেটাও সে শুনলো।
এরপর আমার টার্ন আসলো! আমার স্কুল কলেজ এবং ভার্সিটি শোনার পর বলল, আমাদের ভার্সিটির সুপ্তিকে চিনি কিনা! আমি বললাম, কোন সুপ্তি! কোন ডিসিপ্লিন!
পিচ্চি খালি এটুকু বলতে পারলো, সুপ্তি খুলনা সরকারী মহিলা কলেজে পড়তো তবে সায়েন্স, কমার্স নাকি হিউম্যানিটিজ তা সে জানে না। সুপ্তি ভার্সিটিতে কোন ডিসিপ্লিন সেটাও সে জানে না!
এরপর পিচ্চি জিজ্ঞেস করলো, খুলনা মেডিকেলে আপনার পরিচিত কেউ পড়তো?!
আমি: স্কুলের এক ফ্রেন্ড পড়তো।
পিচ্চি: কি নাম?
আমি: মাসুমা
পিচ্চি: সে এখন কোথায়?
আমি: সম্ভবত ইউএসএ তে।
পিচ্চি: কোন পারপাস এ? ক্যারিয়ার নাকি হাসবেন্ড পারপাস এ?
আমি: হাসবেন্ড পারপাস।
পিচ্চি: আপনার বাসা কোথায়?
আমি: কুয়েটের কাছাকাছি
পিচ্চি: কুয়েটের সিভিলের কোন টিচার কে চিনেন?
আমি: নাহ এখন কাউকে চিনি না। আগে মামাদের ২টা ফ্রেন্ড ছিল সেই হিসেবে চিনতাম।
পিচ্চি: দাড়িওয়ালা, সিভিলের সাইফুল্লাহ স্যারকে চিনেন না??
আমি: নাহ! আমি চিনবো কিভাবে!
পিচ্চি: রেনডমলি চিনেন না!
আমি: নাহ।
সে আরো লোকজন চেনাতে চাইছিলো কিন্তু অন্যলোকেরা এসে ভিড় করায় সে চলে যেতে বাধ্য হল। এই পিচ্চিকে দেখে আমার মনে হল, ছেলেটার এটিকেট জ্ঞান কম।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে এপ্রিল, ২০১১ রাত ১২:০৮