somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ওআমার বন্ধু , আমার নির্ভেজাল ভালোবাসারা : কমলগঞ্জ কলেজ এর সহপাঠী এবং প্রিয় বন্ধু ! চতুর্থ অংশ

২৪ শে এপ্রিল, ২০১১ ভোর ৬:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পৃথিবীর সব আনন্দ যদি এই মুঠোতে ভরে রাখা যেতো , আবার যদি প্রজাপতির মতো ছুটে যেতে পারতাম ।কলেজ থেকে শিক্ষাসফরে গেলাম ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরী । ততোটা আনন্দ হয়নি । কারণ বিজ্ঞান বিভাগের আমরা আর আর্টসের কয়েকজন । তবে একেবারেই যে হয়নি তা বললেও ভুল হবে । যখন ফিরে আসি তখন মনে হলো আর এ পথ আর আমাদের কোনোদিন এক করবেনা । সত্যিও হলো । শুনেছি জাকারিয়া মারা গেছে , ওর বোন ডালিয়াও নাকি আর নেই ।

আমাদের আড্ডা জমতো পুকুর পাড়ে নয়তো পদার্থ বিজ্ঞানের ল্যাবরটরীর বারান্দায় , যার পাশে লাইব্রেরী । আমাদের ক্লাশ যখন থাকতো না এতোটাই হুল্লোড় । আহ্ শুধু ওই আড্ডার জন্যই ঝড় - বৃষ্টি তোয়াক্কা না করে কলেজ ছুটে আসা । যদিও জানতাম ক্লাশ হবেনা । আমি আমাদের গ্রুপের নাম দিয়েছিলাম "স্টারলিট"।

ছেলে আর মেয়ের মধ্যে বন্ধুত্ত্ব কলেজে আমরাই প্রথম । প্রেম কেন করে মানুষ ? শুধু একজনের সাথে সারাদিন ! উফ্ ! অসহ্য ! কিন্তু সবাই ভাবতো নির্ঘাত প্রেম করছি , বিশেষ করে আমার আর বেলাল কে দিয়ে যে কতো কথা । কিন্তু সত্যি ও আমার সব বন্ধুদের মধ্যে সেরা । কি করিনি আমরা মারামারি থেকে শুরু করে গলায় জড়িয়ে ধরা । নাহ্ একে কোনো পাপ বা খারাপ বলতে পারিনা । এ সমাজের কিছু ব্যপার আমাকে বিরক্ত করে তোলে । ছেলে আর মেয়ের বন্ধুত্ত্ব নাকি হয়না । আমাদের এই সম্পর্ক কে নারী - পুরুষ এর প্রেম একে বলা যায়না , তাইতো এখনো ছুটে গিয়ে বেলালের গলা জড়িয়ে ধরতে পারি । নির্ভেজাল ভালোবাসা , স্বার্থহীন ।

একদিন আমাদের অধ্যক্ষ রসময় মোহান্ত স্যার আমাদের আড্ডার মধ্যে এসে দাঁড়ালেন আর বললেন আমায় , ক্লাশ শেষে আমি যেনো মেয়েদের কমন রুমে চলে যাই ছেলেদের সাথে আর বসতে পারবোনা । কেন জানতে চাইলে তাঁর কথা শুধু না । আমি বলে ফেললাম , "ক্ষমা করবেন আমার পক্ষে সম্ভব না , কি করেছি আমরা আপনি অনুগ্রহ করে বলুন"। স্যার তখন এমন বাজে কথা বললেন , "এসব চরিত্রহীন ছেলেদের সাথে তোমার মতো মেয়ে মিশবে কেন ?" আমি বলার আগেই শান্ত ছেলে মিন্টু খুব ক্ষেপে গেলো । এটা ঠিক স্যার এর এভাবে বলাটায় আমাদের বন্ধন আরো সুদৃঢ় হলো ।আমরা কেউ মানিনি । বাপির কাছে সবাই বলতো আমি ছেলেদের সাথে চলছি বাপি বলেছিলো বেলাল, মিন্টু ওরা বাপিরই ছেলে আর "আমার মেয়েকে আমি ভালো করেই জানি"। কি যে শক্তি পেয়েছিলাম তাই তো ভুল করিনি জীবনে কখনো ।আরেকদিন বাসে উঠেছি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহপাঠী প্রদীপ এসে জানালায় দাঁড়িয়ে বললো , "আমি কেন মুসলিম ছেলে বেলাল কে ভালোবাসি ?" আমি বললাম বেলাল আমার ভালো বন্ধু , সে যা ভাবছে তা নয় । কোনোভাবেই মানছে না আরো উল্টাপাল্টা কথা শুরু করলো আর সেই কথা শুনলো বেলাল । রাগ ওঠেনা সহজে উঠলে পুরো পাগল হয়ে যায় । বাস থেকে নেমে এমন মারলো সবাই মিলে আটকালাম ।

মিন্টু আর আমি আবৃত্তি করতাম । একবার পূর্নেন্দু পত্রীর কথোপোকথন থেকে আবৃত্তি করলাম । এরপর আমাদের নাম হয়ে গেলো শুভঙ্কর আর নন্দিনী । যখন রিহার্সেল করি কি হাসি ! কোনোভাবেই ভালো হচ্ছিলো না ----

"আজকাল তুমি বড্ড বেশী সিগারেট খাচ্ছো শুভঙ্কর !
----এক্ষুণি ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছি ।
কিন্তু তার বদলে !
----বড্ড হ্যাংলা , যেনো খাওনি কখনো ।"

কবি দিলওয়ার ওই আসরেও এসেছিলেন । বলেছিলেন :"লিখিস ভালো , আবৃত্তিও দেখছি ভালোই করিস , বাহ্ !" আমাদের কষ্ট সার্থক হলো ।

দ্বিতীয় বর্ষ আমরা এখন সিনিয়র । আমরাই কলেজের মাথা । পিকনিকের জন্য আমরা অধ্যক্ষ স্যারের কাছে গেলাম । উনি রাজী না ।কিন্তু আমাদের প্রিয় স্যারদের বললাম আর কি ! হয়ে গেলো গুছানো । আহ্, যদি আবার মাধবকুন্ড ঝর্ণার পাহাড়ের উপরে উঠে চিৎকার দিতে পারতাম ! সেই কলেজ পিকনিক । ভোরের আলো ফুটে বেরুনোর আগেই বাসা থেকে দৌঁড় । তারপর গান শুরু । যদিও তাকে বেসুরো গান বলেই আখ্যা দেয়া যায় । আমার প্রিয় চারজন স্যার রসায়নের বিশ্বজিৎ স্যার , ইংরেজির সুনীল স্যার , বাংলার রায়হান স্যার এবং জীববিদ্যার পল্লব স্যার সবাই মেতে উঠলেন আমাদের সাথে । পদার্থ বিজ্ঞানের বাসিত স্যারও ছিলেন যদিও উনাকে কেউই পছন্দ করতাম না । নিজেকে গুটিয়ে রাখতেন গাম্ভীর্যতার আড়ালে । একমাত্র বাসিত স্যারই না করেছিলেন উপরে উঠতে কে শোনে কার কথা ! অন্য স্যারদের বলে লুকিয়ে চলে গেলাম বেলাল আর মিন্টুর সাথে । আমার পেছনে রায়হান স্যারও আসলেন তাঁরও দেখার ইচ্ছা । নীচে দাঁড়িয়ে ছবি তুললো আহাদ । চোখের সামনে ভাসছে শীর্ষের উপর তিনটি বিন্দু । ওখানেই দেখা হয়ে গেলো কমলগঞ্জ বালিকা বিদ্যালয়ের মাধবীর সাথে । কথায় কথায় জানলাম সে এখন সিলেট মহিলা কলেজে পড়ে আর তার সেই প্রেমিক বদল হয়েছে । চিন্তা করলাম একজন মানুষ কিভাবে বারবার প্রেমিক বদলায় !

তবে একটা বইয়ে (নামটা ভুলে গেছি ) পড়েছিলাম সময়ের সাথে সাথে সম্পর্কের বদল হয় আর এটা কোনো খারাপ কিছু না । প্রকৃতির এই-ই নিয়ম ।

নীলাঞ্জনা নীলা

ক্রমশ-------------
১৩টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×