somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিয়ের আড্ডায় মিসির আলী, হিমুও(৫)

২৩ শে এপ্রিল, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিয়ের সময় কনেকে কান্নাকাটি করতে হয়। আমি ভেবে দেখেছি এই কান্নাকাটি দুই প্রকার। এক, সত্যিকারের কান্না। আপনজনদের ছেড়ে যাওয়ার দুঃখে কলজের ভেতর থেকে বের হওয়া কষ্টের অশ্রু।

আরেক প্রকার কান্না আছে যাকে রেডিমেট কান্না বলা যায়। মা বাবাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছি। মা কাঁদছেন, বাবা চোখ মুছছেন, ভাইবোন কাঁদছে। এখন একটু না কাঁদলে কেমন দেখায়! অতএব, লাগাও জোর! কান্না আসুক আর না আসুক, জোর করে হলেও দু'চারটি চিৎকার, দাঁতে দাঁত চেপে ধরা এবং গোঙানির মতো শব্দ করা, এই আর কি!!

এই তো গত মাসে বন্ধু জামানের বিয়েতে গিয়েছিলাম। বউ নিয়ে যখন ফেরার সময় হলো, তখন কনের চিৎকারে আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠলো। ও মা গো! ও বাবাগো! আমি তোমাদের ছেড়ে যাবনা গো' টাইপ সুরেলা ছন্দ ও হাত পা ছুড়ার কসরত দেখে আমার মতো হিমুর নিজেরই খারাপ লাগতে শুরু করেছিলো। আহা বেচারি!!

কিন্তু অই আহাবেচারি যখন গাড়িতে উঠে বরের পাশে বসলো, তখন আমি বিস্মিত হয়ে লক্ষ্য করলাম, কান্না বা কষ্টের কোনো ছাপই নেই তার চেহারায়। সাদা কালো চোখের কোনো কোণাও লাল নেই। এতো কান্নাকাটি করলো মেয়ে অথচ চীখ লাল হলোনা! আশ্চর্য!!

মিনিক পাঁচেক পর আমার বিস্ময়ের ষোল কলা পূর্ণ হলো। বর কনে বসেছে পেছনে, আমি সামনে। লুকিং গ্লাস ছিলো এডজাষ্ট করা। দেখলাম অই আহা বেচারি হাসি হাসি মুখ করে বরের বাম হাতের আঙুলগুলো মুঠোয় নিয়ে বসে আছেন। কুটুস কুটুস করে কথাও বলছেন! অবস্থা দেখে মনে হলো, এই মেয়েরচে' সুখি পৃ্থিবীতে দ্বিতীয়টি আর নেই।

আবেগ এবং কৌ্তূহল থেকে হিমুদের দূরে থাকার কথা। তাই এ নিয়ে আমার মাঝে ভাবান্তর হওয়াকে প্রশ্রয় দিলাম না। আমার জায়গায় অন্য যে কেউ বর্তমানের এই রোমান্টিক দৃশ্য এবং একটু আগের কান্নাকাটির অবস্থা দেখলে ভাবত, এই মেয়ে, তাকে উঠিয়ে দিতে দেরি হচ্ছে কেনো, এই দুঃখেই মনে হয় কাঁদছিলো!

আমি আজ অপেক্ষা করছি মাজারুলের বউ কী করে, দেখবার জন্যে। এ পর্যন্ত মনে হচ্ছে, ফাটাফাটি ধরনের কান্নাকাটিই হবে। যাকে বলে আয়োজন করে কান্না। মা বোনেরা অন্তর থেকেই কাঁদবেন।একটু দূরের আত্মীয়-স্বজন চোখ মুছবেন। প্রতিবেশিরা দুঃখি দুঃখি চেহারায় তাকাবেন।

আমি আজ দেখতে চাই, কান্নাকাটির সময় আমার মানসিক অবস্থা কেমন থাকে! আমি পরীক্ষা করে দেখতে চাই তখন আমি সাভাবিক থাকতে পারি কিনা! যদি পারি, যদি তাদের কষ্টের আবহাওয়ায় দাঁড়িয়ে উৎফুল্ল থাকতে পারি, কষ্টের দৃশ্যের ভেতর থেকে যদি আনন্দের অনুভূতির বের করে নিয়ে আসতে পারি,তাহলে ধরে নেবো বাবার বাতলানো সূত্রে আবেগ ও মায়াকে জয় করার পথে আমি টুয়েন্টি ফাইভ পারসেন্ট সফল। বাকি সেভেন্টি ফাইভ এর জন্য আমাকে অপেক্ষা করতে হবে আসছে অগ্রহায়নের ১৯ তারিখ পর্যন্ত। অই দিন আমার আপন বোনের বিয়ে।

( হুমায়ূন আহমেদের হিমুর কোনো বোন ছিলোনা। এই হিমুর আছে। আমি কী করবো! আপন বোন না থাকলে হিমু বুঝবে কেমন করে আপন কারো চলে যাওয়ার মুহুর্তে কষ্টের অনুভূতি কেমন হয়? হিমুর তো আর আপন বলতে কেউ নেই। এক মা ছিলেন। অই বেচারিকেও হিমুর বাবার হাত দিয়ে গলাটিপে মেরে ফেলেছেন হুমায়ূন সাহেব।

কাহিনীতে বোধয় আবারো প্যাঁচ লাগিয়ে ফেললাম! মা মারা গেলে আরেকটি বোন আসলো কোথ্যেকে! নাকি মৃত্যুর আগে তিনি আরেকটি কন্যাও জন্ম দিয়ে গিয়েছিলেন? নাকি হিমুর বাবা দ্বিতীয় বিবাহ করেছিলেন?

কী জানি!! অত শত আমার জানা নাই। আমার জেনে কাজও নাই। আমার কাহিনির প্রয়োজনে একটি বোনের দরকার ছিলো। পাওয়া গেছে, ব্যস। পুরো ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড ব্যাখ্যা করে মিল দেয়া আমার দায়িত্ব না। তছাড়া আমি তো আর হুমায়ূন আহমেদ না যে, গল্পকে একদম গুছিয়ে সব দিকে মিল রেখে উপস্থাপন করতে হবে। চলুন চলে যাই আবার হিমুর কাছে)


আমার আপন বোনের বিয়ের দিন যদি মায়া ও কষ্টকে জয় করা যায়, বোনের ছেড়ে যাওয়ার মুহুর্তে যদি আমি স্বাভাবিক থাকতে পারি, কষ্ট ও মায়াকে জয় করে, বিন্দু মাত্র বেদনার চিহ্নও যদি আমাকে আচ্ছন্ন করতে না পারে, তাহলেই ভাববো, মায়াকে জয় করে ফেলেছি আমি। বাকি সেভেন্টি ফাইভ পারসেন্ট কমপ্লিট।

আর তাহলে,
২৫% প্লাস ৭৫% সমান মহাপুরুষ!!

চলবে
৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×