somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঝাপসা অতীত

২৩ শে এপ্রিল, ২০১১ বিকাল ৩:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি তখন দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র, আমাদের বাসায় এক বৃদ্ধ ভিক্ষুক আসতো,আমাকে নাতি ডাকত, হাতে অদ্ভুত ধরনের একটা বাঁকা লাঠি,আমি নিজের হাতে উনাকে যাই দেই উনি হাত তুলে দোয়া করেন, মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেন, আমিও উনাকে অন্যদের চেয়ে একটু বেশী সমাদর করতাম হয়তো দোয়া পাওয়ার জন্যই । কিন্তু হঠাৎ করেই উনি আসা বন্ধ করে দিলেন, কেন জানি না.. আর জানতেও পারবনা... তখন একটু বড় হলে হয়ত খুঁজতে বের হতাম.... হতাম কি??

গ্রাম ছেড়ে শহরের রকমারি যান্ত্রিকতার সাথে পরিচয় ৯২ সালে, তখন ফাইভে ভতির্ হই, অচেনা শহর তাই খুব একটা বাহিরে বের হতাম না, স্কুল আর চার দেয়ালের মাঝে আমার জগৎ, তখন হঠাৎ একদিন একটা মানুষ এলো সাহায্যের জন্য, ডান হাতটা কব্জি পর্যন্ত কাটা, জানতে চাইলাম কি হয়েছিল, জানলাম উনার একটা ধান ভাঙানোর মেশিন ছিল, একদিন কাজ করার সময় ডান হাতটা মেশিনের মধ্যে ঢুকে যায়, পরে এটার চিকিৎসা করতে গিয়ে সেই মেশিনটা বিক্রি করে দিতে হয়, আমার খুব মায়া হয়, বললাম যেদিন বড় হব সেদিন আপনাকে একটা মেশিন কিনে দেব, উনি হেসে মাথা নাড়িয়ে সায় দিয়ে চলে যায়, আমি বড় হতে থাকি কিন্তু আমার মেশিন কিনে দেয়ার স্বপ্নটা ছোট হতে থাকে...

মাধ্যমিক পরীক্ষার সময়ের কথা, পরীক্ষার প্রস্তুতি আর সবার উপদেশ এভাবেই চলছে প্রতিটা দিন, মন না বসলেও পড়ার টেবিলে বসে থাকার অক্লান্ত চেষ্টা, অনেকের মতই খুব ধামর্িক হবার চেষ্টাও করে যাচ্ছি, খোদা যদি এ যাত্রায় উদ্ধার করে নেন,এর মধ্যেই এক বয়স্ক লোক আসলো বলল পুরাতন জামা থাকলে যেন দেই, আমিও দিলাম একটা পুরাতন পান্জাবী, পরীক্ষাটা যদি একটু ভালো হয় উনার দোয়ায়, দুদিন পর আবার আসে লোকটা আমার খোঁজে, আমি যেতেই আমার হাতে গুজে দেয় ১৭ টাকা, শুনলাম এটা সেই জামার পকেটে ছিল, কিছুটা অবাক হয়ে টাকাটা দিতে চাইলাম কিন্তু নিলো না, আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে চলে যায়, যাবার সময় বলে যায় এ জামাটা পরে নামায পড়ে আমার জন্য দোয়া করবে, আমি শুধু সে চলে যাওয়া একমনে দেখতে থাকি....

মধ্যদুপুরে রিক্সায় চেপে নিউমার্কেট যাচ্ছিলাম, রেল ক্রসিংপার হতে গিয়ে থামতে হলো, রেলগাড়ি যাচ্ছে, না থেমে উপায় নেই । রিক্সায় বসে তপ্ত রোদে পুড়ছি আর চলন্ত রেলগাড়ি দেখছি, ধ্যান ভাঙলো পা'য়ে কারো স্পশর্ পেয়ে, এক চল্লিশোধর্ নারী পা ধরে আছে, কিছুটা বিরক্তি কিছুটা সংকোচ নিয়ে তাকালাম, বললাম পা ছাড়েন, বলল বাড়িতে সাত সাতজন খাবার মানুষ না খেয়ে আছে, কিছু সাহায্য যেন করি । আমার পকেটে ১৩৬ টাকা ছিল, কিছু চিন্তা না করেই ভাংতি টাকাগুলো দিয়ে দিলাম, কখনও এমন হয়না, কেন এমন করলাম জানিনা, রিক্সা চলতে শুরু করল একটু বেশীই গতিতে আর পেছনে পড়ে রইল মায়ের বয়সী একটা নারীর বাস্তবতার চাপে ছেলের পা ধরার কষ্টমাখা সময়টা, নিজেকে অনেক তুচ্ছ মনে হচ্ছিল তখন, রেলগাড়ির মতো আমার ভাবনাগুলো চলছিল অবিরত....

এ মানুষগুলোর সাথে আমার আত্নিক কোনো সম্পকর্ নেই, কিন্তু মুখগুলো চোখের সামনে ভেসে উঠল... কেন জানিনা, জানতে চাইও না.. উনারা সবাই এখন কেমন আছে জানিনা..... আছেন নাকি এ জগৎ ছেড়ে অন্য কোথাও.. যেখানে চাইলেও সে বৃদ্ধটিকে খুঁজে পাবেনা কেউ, যেখানে মেশিন কেনার মিথ্যে স্বপ্ন দেখাবে না কেউ, যেখানে সততার প্রতীক সে লোকটা কারো কাছে হাত পেতে রইবে না, যেখানে মা'কে নত হতে হবে না তার সন্তানের কাছে..... যেখানে অথর্ বিত্ত মানুষের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করবেনা কোনদিন....

কিসের এতো অহংকার আমাদের.... ??
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কৃষ্ণচূড়া আড্ডার কথা

লিখেছেন নীলসাধু, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০২



গতকাল পূর্ব নির্ধারিত কৃষ্ণচূড়ায় আড্ডায় মিলিত হয়েছিলাম আমরা।
বছরের একটি দিন আমরা গ্রীষ্মের এই ফুলটির প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে প্রকৃতির সাথে থাকি। শিশুদের নিয়ে গাছগাছালি দেখা, ফুল লতা পাতা চেনাসহ-... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×