somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জলরাশির নাম রামসাগর

২২ শে এপ্রিল, ২০১১ দুপুর ২:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আরিফুল ইসলাম আরমান
দিনাজপুর রেলস্টেশনে নেমে রিকশায় ১০-১২ কিলোমিটার পাকা পথ পেরুলেই সৌন্দর্যে-ঐশ্বর্যে, প্রকৃতির রূপ-লাবণ্যে মনোমুগ্ধকর নৈসর্গিক সৌন্দর্যবেষ্টিত রামসাগর। সহসাই যা নজর কাড়ে ভ্রমণপিপাসু দর্শনার্থীদের। রামসাগরকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা বাজারটির প্রচলিত নাম রামনগর বাজার। বাজার ঘেঁষেই রাজা রামনাথের স্মৃতিবিজড়িত রামসাগর। সব মানুষই নতুন কিছু দেখার, পাওয়ার আশায় উন্মুখ চিরকাল। আর তা যদি হয় হাতের কাছে, তাহলে সবকিছু ভুলে ছুটে যাওয়ার তাগিদ মনকে তাড়া দেবেই। এমনই এক জায়গা রামসাগর। ২ টাকা ৩০ পয়সার টিকিট ৩ টাকায় সংগ্রহ করে ভেতরে ঢুকলেই চোখে পড়বে মাটির উঁচু টিলা। দেখতে অনেকটা পাহাড়ের মতো। মনে হবে সাগরের মাঝে আবার পাহাড় কেন? একটু কষ্ট করে টিলা পেরুলেই দেখা মিলবে রামসাগরের। শীতকালই রামসাগর দেখার উপযুক্ত সময়। কারণ এ সময় এখানে অতিথি পাখির দেখা মেলে।
দিনাজপুর সদর উপজেলা থেকে ১২ কিলোমিটার দক্ষিণে সরকারি প্রায় ৭০.৫৬ একর জায়গাজুড়ে রামসাগর। পুরো জায়গাকে কেন্দ্র করে খনন করা রামসাগরের জলভাগের পরিমাণ প্রায় ৬০ একর।
প্রকৃতির উজাড় করা সৌন্দর্যের মহিমায় উদ্ভাসিত একটি গ্রামীণ জনপদ। এখানকার মাটির উঁচু টিলা আর পানির অপূর্ব সম্মিলন আকর্ষণ করে প্রকৃতিপ্রেমী পর্যটকদের। অসংখ্য পর্যটক শীতের কুহেলিকা আর পাখির গানের টানে এখানে আসেন। তাই শীত মৌসুমে প্রতিদিন অসংখ্য অতিথির পদভারে এই নিভৃত অঞ্চলটিও প্রাণ পায় মৌসুম উৎসবের।
মাটির উঁচু টিলায় দাঁড়িয়ে চারদিকে তাকালে চোখে পড়বে শুধু পানি আর গাছপালার নয়নাভিরাম সৌন্দর্য। যেন সবুজ গালিচায় মোড়ানো প্রকৃতি। উঁচু মাটির টিলার মাঝ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে স্বচ্ছ পানির অজস্রধারা। নানা জাতের পাখির কলকাকলি। কোথাও জঙ্গল আবার কোথাও কোথাও দেখা যাবে বৃক্ষহীন ন্যাড়া উঁচু টিলা। বিশাল আয়তনের এই সাগর ঘুরে দেখার জন্য এখানে রয়েছে রিকশাভ্যান। জনপ্রতি ২০ টাকা দিলে ভ্যানচালক আপনাকে ঘুরিয়ে দেখাবে পুরো সাগরের নয়নাভিরাম দৃশ্য। শোনাবে রামসাগরের নানা অজানা গল্প। এছাড়াও পায়ে হেঁটে চারদিকে ঘুরে বেড়ানোর জন্য রয়েছে মনোরম পরিবেশ। সাগরের বিরাট এলাকাজুড়ে রয়েছে বাহারি গাছ-গাছালিতে সৌন্দর্যমণ্ডিত সবুজের সমারোহ। অসংখ্য ঝাউগাছ আর বনজবৃক্ষে পরিপূর্ণ রামসাগর। সাগর সংলগ্ন এলাকায় সাধারণ মানুষজনের বসতি খুবই কম। সাগর ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হয়ে পড়লে বিশ্রাম নিতে বা আড্ডা জমাতে পারেন খোলা বিশ্রামাগারগুলোতে। বনভোজন করার মতো অনন্য স্থান এই রামসাগর। বছরজুড়েই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষজন এখানে বনভোজনে আসেন। তবে বনভোজনের জন্য স্থানীয় বন বিভাগ থেকে অবশ্যই অনুমতি নিতে হবে। কারণ রামসাগরের সার্বিক রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দিনাজপুর বন বিভাগের। রামসাগরের ভেতরে রয়েছে ছোট একটি চিড়িয়াখানা। সেখানে রয়েছে ১৭টি প্রাণীর প্রতিকৃতি আর বেশকিছু হরিণ। শিশুদের আনন্দ করার জন্য এখানে রয়েছে একটি শিশুপার্ক। তিন টাকা দিয়ে টিকিট সংগ্রহ করে ছোটদের সঙ্গে বড়রাও ঘুরতে পারেন পার্কের ভেতরে। পার্কের ভেতরে অবস্থিত সুউচ্চ টাওয়ার থেকে দেখে নিতে পারেন পুরো রামসাগর। সাগরের পাড়ে বসলে মনে হবে স্থলভাগে এ ধরনের বিশাল জলরাশি সাগর নয় তো কী? এর বিশালত্ব ও অনুপম শোভা সাগরের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
রামসাগরের উত্তরপাশে রয়েছে একটি পুরনো মন্দির, যেখানে বসে জমিদারবাড়ির লোকজন সাগরের সৌন্দর্য অবলোকন করতেন এবং পূজা-অর্চনা করতেন। ধ্বংসাবশেষটি এখনও তাদেরই স্মৃতি বহন করে দাঁড়িয়ে আছে। এর দেয়ালজুড়ে রয়েছে অপরূপ কারুকার্য। প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এটি প্রায় নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে।
প্রচলিত আছে, বৃষ্টির অভাবে এ অঞ্চলে একসময় তীব্র খরা দেখা দেয়। পানির অভাবে বহু লোক মারা যায়। রাজা রামনাথ নিজ উদ্যোগে সবাইকে খরার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য বিপুলসংখ্যক লোক নিয়োগ করে খাল খনন করলেন; কিন্তু তাতে পানির দেখা মিলল না। স্বপ্নাদেশ অনুযায়ী রাজা দীঘিতে প্রাণ বিসর্জন দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে মাটির বুক চিরে পানি বের হয়ে এলো। তার নামানুসারে খালটির নামকরণ করা হলো রামসাগর।
রামসাগরকে ঘিরে সরকারিভাবে পূর্ণাঙ্গ পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠার ব্যাপকভিত্তিক পরিকল্পনা থাকলেও তা ভ্রমণপিপাসুদের কাছে এখনও গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠতে পারেনি। ফলে সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র থেকে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। চিরসবুজঘেরা নয়নাভিরাম রামসাগরের নিবিড় মনোমুগ্ধকর পরিবেশ দেশের অন্যান্য দর্শনীয় পর্যটন স্পটের চেয়ে কোনো অংশেই কম নয়।
রামসাগরের ভেতরের এক অংশে রয়েছে বন বিভাগের একতলাবিশিষ্ট একটি বাংলো। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা এখানে থাকতে পারেন। এখানে থাকতে হলে স্থানীয় বন বভাগ থেকে অনুমতি নিতে হয়। একতলা ভবনটিতে তিনটি সাধারণ এবং একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ আছে। প্রতিটি সাধারণ কক্ষের ভাড়া প্রতি রাত পাঁচশ' টাকা এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষের ভাড়া এক হাজার টাকা। নিজেদেরই খাবারের ব্যবস্থা করতে হয়।
এছাড়াও দিনাজপুর শহরে রয়েছে বেশ কয়েকটি উন্নতমানের আবাসিক হোটেল। অল্প খরচেই সেখানে স্বাচ্ছন্দ্যে থাকা যায়।

সূত্র: দৈনিক সমকাল
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসলামে পর্দা মানে মার্জিত ও নম্রতা: ভুল বোঝাবুঝি ও বিতর্ক

লিখেছেন মি. বিকেল, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১:১৩



বোরকা পরা বা পর্দা প্রথা শুধুমাত্র ইসলামে আছে এবং এদেরকে একঘরে করে দেওয়া উচিত বিবেচনা করা যাবে না। কারণ পর্দা বা হিজাব, নেকাব ও বোরকা পরার প্রথা শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×