somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

Freedom of Choice ও ইসলামে ইবাদতের কনসেপ্ট

২২ শে এপ্রিল, ২০১১ রাত ১:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এই পোষ্ট টি শরীয়াহ-খিলাফত-ইসলামিক রাষ্ট্রঃ Human Values নিয়ে ইসলামপন্থিদের দ্বৈত অবস্থান শীর্ষক পোষ্টের ধারাবাহিকতা বলা যায়।
_______________________________________
কুরআনে ইবাদাহ বুঝাতে,দাসত্ব বুঝাতে মুলত একই মুল অক্ষরের দুটি শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে,যেমন "আল-ইবাদ" এবং "আল-আবিদ" দুটোর অর্থই দাসত্ব করা।যেহেতু "রিদ্দা" বা ধর্মত্যাগ মানুষের স্বাধীনতার সাথে সম্পর্কিত এবং দাসত্ব বা বন্দেগী করাও মানুষের Choice এর উপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে, সেজন্য ইবাদত সম্পর্কিত মুল ধারনাটা আমাদের পরিষ্কার হওয়া দরকার।

"আল-ইবাদ" এবং "আল-আবিদ" শব্দগুলোর মধ্যে পার্থক্য কি?পার্থক্য হচ্ছে, কুরআনে মানুষকে দুনিয়ার জীবনে আল্লাহর "ইবাদ" বলা হয়েছে, "আবিদ" নয়।

আবিদ শব্দটির উৎস হচ্ছে আবদ্( ع ب د )আরবীতে যার দুটি বিপরীত অর্থ রয়েছে।এখানে ক্রিয়া পদ হচ্ছে প্রার্থনা কারী বা ইবাদতকারী,যে কিনা একই সাথে মানতে পারে আবার নাও মানতে পারে।যার কারনে আল-ইবাদিয়াহ মানে হচ্ছে both আনুগত্য এবং অনানুগত্য বা অস্বীকার।
আনুগত্য অর্থে যখন আল্লাহ কুরআনে এই শব্দটি ব্যবহার করেছেন তা নিন্মরুপ;

إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ
আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদাত করি এবং একমাত্র তোমারই কাছে সাহায্য চাই (ফাতিহা:৫)এখানে عْبُدُ ব্যবহৃত হয়েছে আনুগত্য করা অর্থে।

অন্যদিকে একটি আয়াত দেখুন;
قُلْ يَا عِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَىٰ أَنفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوا مِن رَّحْمَةِ اللَّهِ ۚ إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا ۚ إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ [٣٩:٥٣]

হে নবী! বলে দাও, হে আমার বান্দারা যারা নিজের আত্মার ওপর জুলুম করেছো আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না৷ নিশ্চিতভাবেই আল্লাহ সমস্ত গোনাহ মাফ করে দেন৷ তিনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু৷(৩৯:৫৩) এখানে عْبُد ব্যবহৃত হয়েছে আনুগত্য করেনি বা অস্বীকার করা অর্থে।

আরেকটা আয়াত দেখা যাক,
قُلْ إِن كَانَ لِلرَّحْمَٰنِ وَلَدٌ فَأَنَا أَوَّلُ الْعَابِدِينَ

এদের বলো, “সত্যিই যদি রহমানের কোন সন্তান থাকতো তাহলে তার সর্বপ্রথম ইবাদতকারী হতাম আমি”৷(৪৩:৮১) এখানেও عْبُد ব্যবহৃত হয়েছে নেগেটিভ অর্থে।

কিছু জায়গায় দুটো অর্থই বুঝানো হয়েছে।যেমন;

نَبِّئْ عِبَادِي أَنِّي أَنَا الْغَفُورُ الرَّحِيمُ

হে নবী ! আমার বান্দাদেরকে জানিয়ে দাও যে, আমি বড়ই ক্ষমাশীল ও করুণাময়৷(১৫:৪৯)

رِّزْقًا لِّلْعِبَادِ ۖ وَأَحْيَيْنَا بِهِ بَلْدَةً مَّيْتًا ۚ كَذَٰلِكَ الْخُرُوجُ

বান্দাদের জীবিকাস্বরূপ এবং বৃষ্টি দ্বারা আমি মৃত জনপদকে সঞ্জীবিত করি। এমনিভাবে পুনরুত্থান ঘটবে। (৫০:১১)খেয়াল করুন এখানেও لِّلْعِبَادِ মানুষ আল্লাহর "ইবাদ"

বহুল আলোচিত একটি আয়াত

বহুল ব্যবহৃত একটি আয়াতের দিকে খেয়াল করা যাক।

وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ [٥١:٥٦]

জিন ও মানুষকে আমি শুধু এ জন্যই সৃষ্টি করেছি যে, তারা আমার দাসত্ব করবে৷(৫১:৫৬) এখানেও মানুষ আল্লাহর আবিদ. এই আয়াতের অর্থ কি?মানুষকে আল্লাহ তার ইবাদত করতে বাধ্য করেছেন? অথবা এমনকি মানুষ আল্লাহর ইবাদত না করলে আল্লাহর কিছু কমে যায়?(নাউজুবিল্লাহ)
দেখুন আল্লাহ কি বলছেন;

يَا أَيُّهَا النَّاسُ أَنتُمُ الْفُقَرَاءُ إِلَى اللَّهِ ۖ وَاللَّهُ هُوَ الْغَنِيُّ الْحَمِيدُ [٣٥:١٥
হে লোকেরা! তোমরাই আল্লাহর মুখাপেক্ষী এবং আল্লাহ তো অভাবমুক্ত ও প্রশংসার্হ৷(15:35)

তার মানে হচ্ছে মানুষকে ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করা মানেই মানুষকে আল্লাহর ইবাদত করার জন্য আমরা বাধ্য করব? না!সেই সুযোগ নেই।কেননা আল্লাহ বলছেন;

আর তোমার পরওয়ারদেগার যদি চাইতেন, তবে পৃথিবীর বুকে যারা রয়েছে, তাদের সবাই ঈমান নিয়ে আসতে সমবেতভাবে। তুমি কি মানুষের উপর জবরদস্তী করবে ঈমান আনার জন্য? (Yunus: 99)

তাহলে মানুষকে সৃষ্টির উদ্দেশ্যে কি?? পরীক্ষা করাই মুল উদ্দেশ্যে।

الَّذِي خَلَقَ الْمَوْتَ وَالْحَيَاةَ لِيَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا ۚ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْغَفُورُ [٦٧:٢]
যিনি সৃষ্টি করেছেন মরণ ও জীবন, যাতে তোমাদেরকে পরীক্ষা করেন-কে তোমাদের মধ্যে কর্মে শ্রেষ্ঠ? তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাময়। (67:2)
এমন পরীক্ষা যার প্রশ্ন পত্র আউট করে দেয়া হয়েছে বহু আগে,আর আমাদের কাজ হচ্ছে সেই প্রশ্নপত্রটি মানুষকে যথাযথভাবে পৌঁছে দেয়া।
জোড় করে কাউকে সৎপথে আনা বা থাকার জন্য বাধ্য করা নয়।

ঈমানদাররা কি এ ব্যাপারে নিশ্চিত নয় যে, যদি আল্লাহ চাইতেন, তবে সব মানুষকে সৎপথে পরিচালিত করতেন? (Ar-Ra'd: 31)

এবার দেখা আসলে জিন ও মানুষকে আল্লাহ শুধু তার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন মানে কি বুঝানো হচ্ছে।

এর অর্থ আমরা অনেকেই করি বা বুঝি মানুষকে আল্লাহ শুধু তার ইবাদত (যেমন; নামাজ,রোজা,যাকাত ইত্যাদি)করার জন্যই সৃষ্টি করেছেন।আসলে তা নয় বরং মানুষকে আল্লাহর ইবাদত করা বা না করা দুটো choice ই দেয়া হয়েছে এখানে।মানুষকে সৃষ্টিই করা হয়েছে এমনভাবে যে সে ইচ্ছে করলে সে আল্লাহর দাসত্ব করবে, না চাইলে নাও করতে পারে,অস্বীকার করতে পারে,করতে পারে কুফরী!এই আয়াতের ব্যাখ্যায় মাওলানা মওদুদী কি বলছেন দেখুন;

অর্থাৎ আমি তাদেরকে অন্য কারো দাসত্বের জন্য নয় আমার নিজের দাসত্বের জন্য সৃষ্টি করেছি । তারা আমার দাসত্ব করবে এ জন্য যে, আমি তাদের স্রষ্টা । যখন অন্য কেউ তাদের সৃষ্টি করেনি তখন তার দাসত্ব করার কি অধিকার এদের আছে৷ তাছাড়া তাদের জন্য এটা কি করে বৈধ হতে পারে যে, এদের স্রষ্টা আমি অথচ এরা দাসত্ব করবে অন্যদের! এখানে প্রশ্ন দেখা দেয় যে, আল্লাহ তা'আলা শুধু জিন ও মানুষের স্রষ্টা নন । তিনি সমগ্র বিশ্ব-জাহান ও তাঁর প্রতিটি জিনিসের স্রষ্টা । কিন্তু এখানে কেবল জিন ও মানুষ সম্পর্কে কেন বলা হয়েছে যে, আমি তাদেকে আমার ছাড়া আর কারো দাসত্বের জন্য সৃষ্টি করিনি৷ অথচ গোটা সৃষ্টির প্রতিটি অণু-পরমাণু শুধু আল্লাহর দাসত্বের জন্য । এর জবাব হচ্ছে পৃথিবীতে জিন ও মানুষই শুধু সৃস্টি যাদের স্বাধীনতা আছে । তারা তাদের ক্ষমতা ও ইখতিয়ারের গন্ডির মধ্যে আল্লাহ তা'আলার দাসত্ব করতে চাইলে কিংবা তাঁর দাসত্ব থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে চাইলে নেবে
এবং আল্লাহ ছাড়া অন্যদের দাসত্ব করতে চাইলেও করতে পারে । জিন ও মানুষ ছাড়া এ পৃথিবীতে আর যত সৃষ্টি আছে তাদের এ ধরনের কোন স্বাধীনতা নেই । তাদের আদৌ কোন ক্ষমতা ও ইখতিয়ার নেই যে, তারা আল্লাহর দাসত্ব করবে না অন্য কারো দাসত্ব করতে পারবে । তাই এখানে শুধু জিন ও মানুষ সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, তারা তাদের ক্ষমতা ও ইখতিয়ারের গণ্ডির মধ্যে তাদের নিজ স্রষ্টার আনুগত্য ও দাসত্ব থেকে মুখ ফিরিয়ে এবং স্রষ্টা ছাড়া অন্যদের দাসত্ব করে নিজেরা নিজেদের স্বভাব প্রকৃতির বিরুদ্ধে লড়াই করছে । তাদের জানা উচিত যে, তাদেরকে একমাত্র স্রষ্টা ছাড়া আর কারো দাসত্বের জন্য সৃষ্টি করা হয়নি । তাদের সোজা পথ হচ্ছে যে স্বাধীনতা তাদেরকে দেয়া হয়েছে তার অন্যায় ব্যবহার যেন না করে । বরং স্বাধিনতার এ সীমার মধ্যে নিজ নিজ ইচ্ছা অনুসারে ঠিক তেমনিভাবে যেন আল্লাহর দাসত্ব করে যেভাবে তার দেহের প্রতিটি লোক তার ক্ষমতা ও ইখতিয়ার বিহীন সীমার মধ্যে তার দাসত্ব করছে ।


আসলেই যদি মানুষ ইবাদত করতে বাধ্য হত তাহলে প্রশ্ন আসে যে আল্লাহ ফেরেস্তাদের মত একটা বিশেষ জাতি রেখে নতুন করে আবার মানুষ কেন তৈরি করলেন? আদম সৃষ্টির আগে ফেরেস্তাদের সাথে আল্লাহর কথপকথনতো আশাকরি সবার জানা।ফেরেস্তারা বলল,কেন এই মানুষ সৃষ্টি করবেন,যারা মারা-মারি কাটা-কাটি করবে,তারচেয়ে বরং আমরাইও আপনার ইবাদত করছি সারাক্ষণ? আসলে আল্লাহ কারোরই মুখাপেক্ষী নন,এমনকি আমাদের ইবাদতেরও মুখাপেক্ষী নন।

আমি তাদের কাছে কোন রিযিক চাই না কিংবা তারা আমাকে খাওয়াবে তাও চাই না৷(51:57) আসলে আমরা আমাদের নিজের প্রয়োজনেই ইবাদত করি,আল্লাহর প্রয়োজনে নয়। যে সৎকর্ম করে, সে নিজের উপকারের জন্যেই করে, আর যে অসৎকর্ম করে, তা তার উপরই বর্তাবে। আপনার পালনকর্তা বান্দাদের প্রতি মোটেই যুলুম করেন না। (41:46)

Freedom of Choice এর কথা বুঝাতে মুলত “ইবাদিয়্যা” বুঝানো হয়েছে।আল্লাহ কুরআনে বহু জায়গায় মানুষকে লক্ষ্য করে বলছেন আল্লাহ চাইলে কি মানুষকে শাস্তি দিতে পারতেন না? কাফেররা যখন রাসুল (সঃ )কে বলত কই তোমার শেষ বিচার,কবে আসবে তোমার কেয়ামত ইত্যাদি।কিন্তু আল্লাহ বলছেন ভিন্ন কথা,মানুষকে কিছু দিন সময় দেয়া হয়েছে Choice দেয়া হয়েছে।

আর সমস্ত মানুষ একই উম্মতভুক্ত ছিল, পরে পৃথক হয়ে গেছে। আর একটি কথা যদি তোমার পরওয়ারদেগারের পক্ষ থেকে পূর্ব নির্ধারিত না হয়ে যেত; তবে তারা যে বিষয়ে বিরোধ করছে তার মীমাংসা হয়ে যেত।(১০:১৯)। আপনার পালনকর্তার পক্ষ থেকে পূর্ব সিদ্ধান্ত এবং একটি কাল নির্দিষ্ট না থাকলে শাস্তি অবশ্যম্ভাবী হয়ে যেত। (20:129)

উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটা স্পষ্ট যে মানুষকে যখন কোন কিছু মানতে জোড়-জবরদস্তি করা হয়(যেমন নামাজ পড়তে বাধ্য করা,হিজাব করতে বাধ্য করা বা হিজাব না করতে বাধ্য করা যেমন তুরস্ক)তা মুলত আল্লাহ প্রদত্ত স্বাধীনতার পরিপন্থি।Without the existence of the freedom of choice, we are unable to make sense of the Day of Judgment with its punishment and reward. It is now clear that the concept of freedom is the main objective of creation, as described in God’s Holy Book.

এবার আসুন আমরা দ্বীতিয় কনসেপ্টটির(আল-আবিদ- لِّلْعَبِيدِ ) দিকে খেয়াল করি।

ذَٰلِكَ بِمَا قَدَّمَتْ أَيْدِيكُمْ وَأَنَّ اللَّهَ لَيْسَ بِظَلَّامٍ لِّلْعَبِيدِ [٣:١٨٢]
এ হল তারই প্রতিফল যা তোমরা ইতিপূর্বে নিজের হাতে পাঠিয়েছ। বস্তুতঃ আল্লাহ বান্দাদের প্রতি অত্যাচার করেন না। (3:182)

ذَٰلِكَ بِمَا قَدَّمَتْ أَيْدِيكُمْ وَأَنَّ اللَّهَ لَيْسَ بِظَلَّامٍ لِّلْعَبِيدِ [٨:٥١]
এই হলো সে সবের বিনিময় যা তোমরা তোমাদের পূর্বে পাঠিয়েছ নিজের হাতে। বস্তুতঃ এটি এ জন্য যে, আল্লাহ বান্দার উপর যুলুম করেন না। (8:51)

ذَٰلِكَ بِمَا قَدَّمَتْ يَدَاكَ وَأَنَّ اللَّهَ لَيْسَ بِظَلَّامٍ لِّلْعَبِيدِ
এটা তোমার দুই হাতের কর্মের কারণে, আল্লাহ বান্দাদের প্রতি জুলুম করেন না।(22:10)

مَا يُبَدَّلُ الْقَوْلُ لَدَيَّ وَمَا أَنَا بِظَلَّامٍ لِّلْعَبِيدِ
আমার কাছে কথা রদবদল হয় না এবং আমি বান্দাদের প্রতি জুলুমকারী নই।(50:29)

খেয়াল করে দেখুন প্রত্যেকটা আয়াত মুলত আখিরাতের, শেষ বিচার দিবসের প্রেক্ষাপটে নাজিল হয়েছে।প্রশ্ন হতে পারে কেন? আল্লাহর কালাম পড়তে যেয়ে মাথাটা নির্ধিদায় নত হয়ে যায়,কি হেকমত এখানে আল্লাহ ব্যবহার করেছেন,আল্লাহু আকবার!শেষ বিচার দিনে মানুষ আর আল্লাহর "ইবাদ" নয় বরং আমরা হয়ে যাব আল্লাহর "আবিদ"।

সেদিন আল্লাহর কথা ছাড়া আর কারো কোন কথা থাকবেনা।কারো কোন চয়েস থাকবেনা,এমনকি কেউ কথা বলারও অনুমতি পাবেনা,ব্যখ্যা করার সুযোগও থাকবেনা কেন দুনিয়াতে তার দাসত্ব করিনি।there will not have any freedom of choice anymore.

কাফেরদেরকে জাহান্নামের দিকে দলে দলে হাঁকিয়ে নেয়া হবে। তারা যখন সেখানে পৌছাবে, তখন তার দরজাসমূহ খুলে দেয়া হবে এবং জাহান্নামের রক্ষীরা তাদেরকে বলবে, তোমাদের কাছে কি তোমাদের মধ্য থেকে পয়গম্বর
আসেনি, যারা তোমাদের কাছে তোমাদের পালনকর্তার আয়াতসমূহ আবৃত্তি
করত এবং সতর্ক করত এ দিনের সাক্ষাতের ব্যাপারে? তারা বলবে, হঁ্যা, কিন্তু কাফেরদের প্রতি শাস্তির হুকুমই বাস্তবায়িত হয়েছে। (39:71)

যারা তাদের পালনকর্তাকে ভয় করত তাদেরকে দলে দলে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। যখন তারা উম্মুক্ত দরজা দিয়ে জান্নাতে পৌছাবে
এবং জান্নাতের রক্ষীরা তাদেরকে বলবে, তোমাদের প্রতি সালাম, তোমরা সুখে থাক, অতঃপর সদাসর্বদা বসবাসের জন্যে তোমরা জান্নাতে
প্রবেশ কর। (39:73)

মুরতাদের বিষয়

উপরোক্ত আলোচনা থেকে একটা বিষয় আশাকরি পরিষ্কার হয়েছে,দুনিয়াতে মানুষ আল্লাহকে মানতেও পারে,নাও মানতে পারে সেই choice ,সেই freedom তাকে দেয়া হয়েছে।আর স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে তাহলে মুরতাদকে কেন তাহলে হত্যা করার কথা বলা হল? অথচ কুরআনেই বলা আছে ধর্মে কোন জবর দস্তি নেই? আসলে মুরতাদের মত এত গুরুত্বপূর্ন একটা বিষয় কুরআনে কোথাও বর্ণনা নেই বরং কুরআনে
এসেছে;

إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا ثُمَّ كَفَرُوا ثُمَّ آمَنُوا ثُمَّ كَفَرُوا ثُمَّ ازْدَادُوا كُفْرًا لَّمْ يَكُنِ اللَّهُ لِيَغْفِرَ لَهُمْ وَلَا لِيَهْدِيَهُمْ سَبِيلًا [٤:١٣٧]
যারা একবার মুসলমান হয়ে পরে পুনরায় কাফের হয়ে গেছে, আবার মুসলমান হয়েছে এবং আবারো কাফের হয়েছে এবং কুফরীতেই উন্নতি লাভ করেছে, আল্লাহ তাদেরকে না কখনও ক্ষমা করবেন, না পথ দেখাবেন। (Nisa:137)

তার মানে একবার মুসলমান হওয়ার পর আবার কাফের কেউ কেউ হয়েছিল,আবার মুসলমান হয়েছে তারা আবার কাফের হয়েছিল।যদি হত্যাই ধর্মত্যাগের নিধান হত তাহলেতো প্রথমবারেই তার কল্লা জায়গায় থাকার কথা ছিলনা।অথচ রাসুল (সঃ )তাদের বিরুদ্ধে সেরকম কোন ব্যবস্থাই নেননি।
রাসুল (সঃ )বিচার পছন্দ না হওয়ার এক ব্যক্তি খৃষ্টান হয়ে গিয়েছিল এরকম একটি প্রমাণ পাওয়া যায়।
The traditions recount a particularly amusing story about an aristocratic tribesman named Jabalah ibn al-Ayham who was struck in the face by a humble man from the Muzaynah, a modest tribe in Arabia. Expecting that a stern penalty would be imposed on the lowly offender—one that would signify his inferior status in society—al-Ayham was shocked to learn that all he could expect as retribution was the opportunity to strike the humble man back. So outraged was he by this “injustice” that al-Ayham immediately abandoned Islam and became a Christian. (Reza Aslan-No God but God:59)

তাহলে খোলাফায়ে রাশেদার আমলে কেন মুরতাদের শাস্তি কার্যকর করা হত? আসলে এই বিষয়টাকে কন্টেম্পোরারি স্কলারগন "পলিটিকাল রিদ্দা" হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।যেমন রাষ্ট্রের সেনাপ্রধান যদি রাষ্ট্রের আনুগত্য অস্বীকার করেন তাহলে তাকে পলিটিকাল রিদ্দার আওতায় সকল দেশেই বন্ধি বা হত্যা করার আইন এখনো পাওয়া যাবে।ঠিক তেমনি আবু বকর (রাঃ )এর সময়ে অনেকেই জাকাত দিতে অস্বীকার করে বসে,মদীনা কেন্দ্রিক ইসলামি রাষ্ট্রের সাথে থাকার চেয়ে নিজেরা স্বাধীনভাবে চলার জন্য ঘোষণা দিতে থাকে।তখনই মুলত এই বিষয়টা বেশি কার্যকর হয়। এখনকার বিশ্বে কেউ যদি নিরবে ধর্মত্যাগ করে তাহলে তাকে মুরতাদের শাস্তি দেয়া হবে কিনা সেটা নিয়ে
সময়সাময়িক স্কলারগন ভিন্ন মত দিয়েছেন। এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা জানতে এই সাইটে দেখুন http://apostasyandislam.blogspot.com/


ফাইনালি,তাহলে আমাদের কাজ কি? আল্লাহ তার নবীকে যে বেসিক কাজ দিয়েছেন তাই আমাদের কাজ হওয়া উচিত এই ক্ষেত্রে।

অতএব, হে নবী, তাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও৷ এ জন্য তোমার প্রতি কোন তিরস্কার বাণী নেই৷ তবে উপদেশ দিতে থাকো৷ কেননা, উপদেশ ঈমান গ্রহণকারীদের জন্য উপকারী৷(51:54-55)

আল্লাহ বলছেন, কখনও না, এটা তো উপদেশ মাত্র। (Al-Muddaththir: 54)। যে ভয় করে, সে উপদেশ গ্রহণ করবে, (Al-A'laa: 10)। এটা তো বিশ্ববাসীর জন্যে এক উপদেশ মাত্র। (Saad: 87)
অতএব, আপনি উপদেশ দিন, আপনি তো কেবল একজন উপদেশদাতা, (Al-Ghaashiya: 21)

গ্রহন করলে কি হবে না করলে কি হবে পরিষ্কার বর্ণনা করা হয়েছে।আমাদের কাজ হচ্ছে সেই উপদেশগুলো মানুষের কাছে যথাযথ ভাবে তুলে ধরা। বুদ্ধিমানদের জন্যে উপদেশ ও হেদায়েত স্বরূপ। (Ghaafir: 54)। তিনি যাকে ইচ্ছা বিশেষ জ্ঞান দান করেন এবং যাকে বিশেষ জ্ঞান দান করা হয়, সে প্রভুত কল্যাণকর বস্তু প্রাপ্ত হয়। উপদেশ তারাই গ্রহণ করে, যারা জ্ঞানবান। (Al-Baqara: 269)
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×