somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বুয়া থেকে খালা

২৮ শে জুলাই, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ছবিঃ ইন্টারনেট
১.
সাদিয়া ভার্সিটি থেকে এসে বিরক্তি নিয়ে কলিংবেল বাজিয়েই যাচ্ছে কিন্তু বুয়া এসে দরজা খোলার কোন লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। একটু পরেই ভিতর থেকে শোনা গেল ' দাঁড়ান আম্মা আইতেসি' এতে তার বিরক্তির মাত্রা আরও বেড়ে গেল। সে আরও আগেই বুয়াকে সাফ জানিয়ে দিয়েছে তাকে এসব আজেবাজে নামে না ডেকে ম্যাডাম ডাকতে। কিন্তু এই মহিলা বরাবরই একই কাজ করে যাচ্ছে! দরজা খোলার সাথে সাথেই;


- এই মহিলা কই থাক তুমি?? দরজা খুলতে এতক্ষণ লাগে!!

- জে আম্মা ভাতের মার গালতেছিলাম।

- আমি যে কখন থেকে বাইরে দাঁড়িয়ে আছি সে খেয়াল নাই তোমার??

- এইবারের মতন মাফ কইরা দেন আম্মা। আর হইব না।

- এই শোন তোমাকে না কতবার নিষেধ করছি আমাকে আম্মা ডাকতে! যতসব গাইয়া ভূত!


২.
বলতে বলতে সিঁড়ির দিকে পা বাড়ায় সাদিয়া। সাদিয়ার পরিচয় আলাদাভাবে দেয়ার মত কিছু নেই। ব্যবসায়ী ধনী বাবার একমাত্র দুলালি হলে ম্যাক্সিমাম ক্ষেত্রে যা হওয়ার কথা এখানেও ঠিক তাই। পার্থক্য শুধু তাকে ৪ বছরের ছোট্ট মেয়েটি রেখে তার মা না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছিল। মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বাবা দ্বিতীয় কাউকে আসতে দেন নি। সেই তখন থেকেই সাদিয়ার বুয়ার কাছেই বেড়ে উঠা। ভিটেমাটি, স্বামী-সন্তানহারা হালিমাও এতদিনে সাদিয়ার মাঝে নিজের সন্তানকে খুঁজে নিয়েছে। তবুও মেয়েটা কিভাবে যে এমন হয়ে গেল সে রহস্য হালিমার অজানা। সে সব হাসিমুখে মেনে নেয় আর ভাবে আজ যদি নিজের সন্তান এমন করত তবে কি সে পারত তাকে ফেলে দিতে! কক্ষনই না। রান্না শেষ করে সাদিয়ার রুমে গিয়ে দেখে মেয়েটা না খেয়েই দিব্যি ঘুমিয়ে পড়েছে। কিছু না বলে আস্তে করে জানালার পর্দাগুলো ঠিক করে লাইট অফ করে বেরিয়ে যায়।


৩.
- বুয়া... আই বুয়া এক গ্লাস পানি দিয়ে যাও তো।

- আম্মা আমি ইপ্তারি বানাইতাছি। আপনে নিয়া খাইয়া ফালান।

- তোমাকে বলছি দিয়ে যাইতে।

- কেন আপনে কি এক গেলাস পানিও লইয়া খাইবার পারেন না!

- কি বললা তুমি? আই তুমি আমাকে কি বললা??


চিৎকার করতে করতে হাত থেকে ছোলার বাটি কেঁড়ে নিয়ে ফেলে দেয়। কাড়াকাড়ির এক পর্যায়ে বুয়ার মাথার লম্বা সাদা ঘোমটা পড়ে যায়। সাদিয়া চমকে উঠে দুইপা সরে গিয়ে চোখেমুখে বিস্ময় নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে কিছুতেই ভেবে পাচ্ছে না এটা কিভাবে সম্ভব! সামনে যে তার মা দাঁড়িয়ে আছে!!


৪.
সাদিয়া লাফ মেরে ঘুম থেকে উঠে বসে পড়ে। তার সাড়া শরীর থরথর করে কাঁপছে। এক মুহূর্ত দেরি না করে রান্না ঘরের দিকে দৌড়ায়। তাকে এদিকে দেখে বুয়া জিজ্ঞাস করে 'কি আম্মা...কিসু লাগবো আপনের' উত্তরে কিছু না বলেই সে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। বুয়া আর কথা বাড়ায় না। কিছুক্ষণ পরেই হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বুয়াকে জড়িয়ে ধরে;

- আমাকে মাফ করে দাও খালা। আমি তোমার সাথে অনেক অন্যায় করে ফেলছি।

- আরে আরে কানতাছেন কেন? কি হইসে আম্মা???

- দেখ আমাকে একদম আপনে করে বলবা না। নিজের মেয়েকে কেউ আপনি করে বলে!!

- (হাসতে হাসতে) আল্লারে কি পাগল মাইয়া।


সাদিয়া আজ নিজ হাতে তার খালার জন্য শরবত বানাচ্ছে। খালাকে এটাসেটা এগিয়ে দিচ্ছে। মেয়ের এসব পাগলামি দেখে হালিমা শাড়ির আঁচলে মুখ লুকায়। চোখের পানিও যেন আজ কিছুতেই বাঁধ মানছে না। হঠাত করেই প্রত্যাশার চেয়ে প্রাপ্তির ভার বেশি হয়ে গেলে তার প্রাথমিক উচ্ছ্বাসটা বোধ হয় এরকমই হয়। জীবনে আর কিছুই চাওয়ার নেই তার। সুখ নামক সোনার হরিণটি যে নিজে থেকেই এসে ধরা দিয়েছে।

[কিছু কথাঃ সাধুতা বা ভালমানুশি প্রদর্শনের জায়গা থেকে নয় বরং নিজের অবস্থান থেকে দ্বিতীয়বার চিন্তা করেই কথাটা বলছি, আপনার ডিকশেনারি থেকে বুয়া শব্দটি মুছে ফেলুন। এই গরীব মানুষটিকে আজ থেকে জাস্ট 'খালা' বলে ডেকে দেখুন উনি আপনার প্রতি কতটা আন্তরিক আর খুশি হোন! অবশ্যই উনাদের প্রাপ্য সম্মানটুকু দেয়া আমাদের কর্তব্য বৈকি?]
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:২২
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই হোটেল এর নাম বাংলা রেস্তেরা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭



অনেক দিন পর আমি আজ এই হোটেলে নাস্তা করেছি। খুব তৃপ্তি করে নাস্তা করেছি। এই হোটেল এর নাম বাংলা রেস্তেরা। ঠিকনা: ভবেরচর বাসস্ট্যান্ডম ভবেরচর, গজারিয়া, মন্সীগঞ্জ। দুইটি তুন্দুল রুটি আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

জলদস্যুরা কি ফেরেশতা যে ফিরে এসে তাদের এত গুণগান গাওয়া হচ্ছে?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭


জলদস্যুরা নামাজি, তাই তারা মুক্তিপণের টাকা ফেরত দিয়েছে? শিরোনাম দেখে এমনটা মনে হতেই পারে। কিন্তু আসল খবর যে সেটা না, তা ভেতরেই লেখা আছে; যার লিংক নিচে দেওয়া হলো।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×