somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চাচা কাহিনী

২১ শে এপ্রিল, ২০১১ সকাল ৯:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চাচা কাহিনী
ছোট বেলা সৈয়দ মুজতবা আলির “চাচা কাহিনী” পড়েছিলাম। বইয়ের বিষয়বস্ত আজ আর এক বিন্দুও আমার মনে নেই নতুন করে যে পড়ব তার ধৈর্য্য ও আজ নেই। আজ বলতে বসেছি আমার রোগী, আমার অন্ধ ভক্ত নাটোরের ওবায়েদ চাচার গল্প।

তখন নতুন করে চেম্বার সাঁজিয়ে বসেছি। রোগী পত্র খুব বেশী হয় না, পেপার পড়ে, যা দু একজন রোগী আসে তাদের সাথে গল্প করে সময় কাটাই। চাচা আমার এই রকম সময়কার রোগী । কিছু কিছু মানুষের মুখাবয়ব কৌতুক রস বোধ সম্পন্ন হয়, আমাদের চাচা ও ছিলেন ঐ রকম মানুষ ।সব সময় হাসি হাসি মুখ। চাচার বয়স প্রায় আশি। হাটুর ব্যাথা নিয়ে এসেছিলেন আমার কাছে। ঔষধপত্র খেয়ে চাচা ভাল হলেন। তারপর থেকে চাচা আমার ভক্ত। অনেক রোগী চাচা পাঠাতেন।রোগী গরীব হলে চাচার নাম করলেই ১০০ টাকা কম নিতে হত আমাকে।
এর মধ্যে ৩/৪ বছর কেটে গেছে । আমার পসার ও কিছুটা বেড়েছে। চাচাকে আগের মত সময় দিতে পারি না, তাতে অবশ্য চাচার কোন দুখঃ নেই।ততদিনে চাচা আমার বাধাঁ রোগী এবং চাচার ফিস মাফ।আমার চেম্বারের ছেলেটাও চাচাকে চিনে গেছে, চাচা এলেই তাকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেখানোর ব্যাবস্থা সেই করে দিত। এ নিয়ে দু একদিন ঝামেলা ও হয়েছে। যাই হোক ,বেশ কিছুদিন পর সেবার যখন চাচা এলেন বেশ কিছুটা মর্মাহত হলাম।চাচা স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছিলেন সেই জন্যই এবার দেরি করে এলেন।ঢাকাতে ছিলেন বেশ কিছুদিন । এখন ভাল। কিন্তু চাচার ডাক্তার আমি, আমাকে না দেখিয়ে চাচা তৃপ্তি পাচ্ছিলেন না।

বলতে ভুলে গেছি চাচা ছিলেন ধার্মিক হাজী মানুষ, হাটুর ব্যাথায় নামাজ পড়তে কষ্ট পেতেন।আমার চাচী দুজন। একজনের বয়স ৭০ আরেকজনের ৪০ এর একটু উপরের।ছেলেমেয়ে দুই ঘরে মিলিয়ে ৮/১০জন।অবস্থা সম্পন্ন ব্যাবসায়ী মানুষ চাচা, তার ব্যবসা এখন ছেলেরাই দেখাশোনা করে। আগে অনেকবার চাচা একা একাই এসেছেন কিন্তু এবার সপরিবারে, দুই চাচী আরো ৪/৫ জন ছেলে মেয়ে নিয়ে।স্ট্রোকের কারনে ছেলেমেয়ে বৌ সাথেই এসেছে।
চাচাকে দেখে শেষ করার পর চাচা বললেন “ স্যার আপনার সাথে একটু প্রাইভেট আলাপ করতে চাই” সবাইকে চেম্বার থেকে বাইরে পাঠিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলাম চাচার”প্রাইভেট’ বক্তব্য শোনার জন্য।
“স্যার আমি বড্ড বিপদে আছি”
-কেন?
-"স্যার আমার সব কিছু “নরমাল” হয়ে গেছে"।
অবাক হলাম চাচার কথা শুনে ।নরমাল মানে স্বাভাবিক সেটা তো ভাল তাতে চাচার বিপদ কেনো?
“কোন মুখে বলি স্যার, আপনার চাচিদের নিয়ে ভাই বোনের মত শুয়ে থাকি, আমার সব কিছু “নরমাল” এতক্ষনে চাচার সমস্যা বুঝতে পারলাম।স্বল্প শিক্ষিত মানুষ চাচা বলে চললেন” পুরুষ মানুষের একটা মনুষ্যত্ব আছে না, স্ট্রোকের পর থেকে ঐ জিনিসটা আর নেই।চাচা পুরুষত্বকে মনুষ্যত্ব বলছেন ভুল করে ।
চাচাকে বোঝাতে চেস্টা করি “ বয়স হয়েছে, স্ট্রোকের রোগী, কি আর করবেন” ইত্যাদি। চাচা কে কিছূ ঔষধ ও দিলাম।খুব বেশী আশ্বস্ত চাচা হলেন না।
আরো দু এক বছর কেটেছে। এখন চাচার বড় ছেলে এসেছে রোগী হিসেবে ।তার কাছেই শুনলাম চাচা মারা গেছেন মাস খানেক আগে। চাচার শেষ দিন গুলো কেটেছে বেশ কস্টে।এই এক মাসেই চাচার পরিবার বিভক্ত হয়ে গেছে । বিষয় সম্পত্তি ভাগ বাটোয়ারা হয়ে গেছে।আর সবচে দুখঃএর ব্যাপার হল- আমার ছোট চাচি। চাচার কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা বাগিয়ে নিয়ে একই গ্রামের রহমত শেখকে বিয়ে করে নতুন সংসার পেতেছে চাচা মারা যাওয়ার আগেই।
চাচার সমস্যার কিছু আমি করতে পারি নি।আমার ছোট চাচি অন্য কোথাও বিয়ে করবেন চাচা ঠিকই বুঝেছিলেন। আমি চাচার বিপদ বুঝতে পারি নি, চাচার “মনুষ্যত্ব” ফিরিয়ে দিতে পারি নি।সব কিছুর সমাধানই তো ডাক্তারদের হাতে নেই।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে এপ্রিল, ২০১১ ভোর ৪:৪১
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যমদূতের চিঠি তোমার চিঠি!!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:০৮

যমদূতের চিঠি আসে ধাপে ধাপে
চোখের আলো ঝাপসাতে
দাঁতের মাড়ি আলগাতে
মানুষের কী তা বুঝে আসে?
চিরকাল থাকার জায়গা
পৃথিবী নয়,
মৃত্যুর আলামত আসতে থাকে
বয়স বাড়ার সাথে সাথে
স্বাভাবিক মৃত্যু যদি নসিব... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×