somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইউরোপে বর্ণবাদ ও সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ

১৯ শে এপ্রিল, ২০১১ বিকাল ৩:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সাংবিধানিকভাবে ফ্রান্সে প্রত্যেক নাগরিকের স্বাধীনতা ও মানবিক অধিকার সুরক্ষিত। কিন্তু বর্তমান প্রেসিডেন্ট নিকোলাই সারকোজির বহু সংস্কৃতিবাদ অভিবাসন ও বিরোধী পদক্ষেপ দেশটিতে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করিয়াছে। কিছুদিন আগেও অবৈধ অভিবাসী প্রত্যাবর্তন কর্মসূচি সফল করিতে ফ্রান্সে বসবাসকারী রোমা বা জিপসি সমপ্রদায়ের বস্তি উচ্ছেদে ফরাসি পুলিশের কঠোর ভূমিকা বিশ্বের গণমাধ্যমে দেখানো হইয়াছে। সমপ্রতি আল জাজিরা সূত্রে প্রাপ্ত খবরে জানা যায়, ফ্রান্সে অভিবাসীরা আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় এখন বেশি বর্ণবাদের শিকার হইতেছেন। সমপ্রতি প্রকাশিত ফ্রান্সের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ৩৬ ভাগ বর্ণবাদের শিকার উত্তর আফ্রিকার অভিবাসী। দেশটিতে বোরকা, ধর্ম ও ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়া অনুষ্ঠিত সামপ্রতিক বিতর্কে ফরাসি মুসলিমদের ভিনদেশী হিসাবে চিহ্নিত করা হইয়াছে। নির্বাচনে সুবিধা পাওয়ার জন্য রাজনীতিকরা ইসলামভীতি ব্যবহার করিয়া থাকেন বলিয়াও মানবাধিকার কমিশনের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

ইতিপূর্বে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এজেন্সি ফর ফান্ডামেন্টাল রাইটস-এর এক জরিপ প্রতিবেদনেও ইউরোপে বসবসকারী জাতিগত সংখ্যালঘু এবং অভিবাসীদের জীবনে বর্ণবাদ ও বৈষম্যের শিকার হইবার বাস্তবতা খানিকটা ধরা পড়ে। কিন্তু সমপ্রতি ফরাসি সমাজে ইসলামের প্রশ্নে অসহিষ্ণুতা প্রদর্শন করা হইতেছে, তাহাতে দেশটির প্রায় ৫০ লাখ মুসলিম নাগরিকের বৃহত্তর সমপ্রদায় হইতে বিচ্ছিন্নতার বোধ উদ্বেগজনকভাবে বাড়িয়া যাওয়াই স্বাভাবিক। গত ১১ এপ্রিল হইতে ফ্রান্সে জনসমাগমস্থলে দেশী অথবা বিদেশী মুসলিম নারীদের নেকাব ও বোরকা পরা নিষিদ্ধ করিয়া একটি বিতর্কিত আইন কার্যকর করা হইয়াছে। ইহাছাড়াও ফ্রান্সে মুসলিম অভিবাসীদের নিরুত্সাহিত করার নানা কর্মসূচির মাধ্যমেও দেশটিতে ইসলাম-বিদ্বেষী প্রবণতা তীব্রতর হইতেছে বলিয়া জানা যায়। প্রেসিডেন্ট সারকোজির অভিবাসন ও মুসলিম বিদ্বেষী প্রবণতার প্রভাব রহিয়াছে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত অন্যান্য দেশেও। গত সপ্তাহে বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনও যুক্তরাজ্যের ব্যাপক অভিবাসনের বিরুদ্ধে তাহার দল ও সরকারের কঠোর অবস্থানের কথা পুনর্ব্যক্ত করিয়াছেন। ইতিপূর্বে যুক্তরাজ্যে দীর্ঘদিন ধরিয়া চলিয়া আসা রাষ্ট্রীয় বহু সংস্কৃতিবাদ তত্ত্ব (স্টেট মাল্টিকালচারালিজম) ব্যর্থ হইয়াছে বলিয়াও দাবি করেন তিনি এবং ব্রিটিশ মুসলিমদের রাষ্ট্রীয় মূলধারায় সম্পৃক্ত হওয়ার পরামর্শ দেন। ইহার আগে জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেলও অনুরূপ মন্তব্য করিয়াছেন। তাহারা ৮০ মিলিয়ন মুসলিম অধ্যুষিত শক্তিশালী তুরস্ককে ইউরোপীয় ইউনিয়নে অন্তর্ভুক্ত করারও ঘোর বিরোধী।

অস্বীকার করা যাইবে না, নাইন-ইলিভেনের পর সৃষ্ট বিশ্ব পরিস্থিতিতে ইউরোপ-আমেরিকায় মুসলিম সমপ্রদায়কে দেখা হইতেছে ভয় ও সন্দেহের দৃষ্টিতে। ফ্রান্সসহ পাশ্চাত্যের যে দেশগুলির নেতারা এ্যাগ্রেসিভ বা উগ্র জাতীয়তাবাদের পক্ষে কথা বলিতেছেন, সেসব দেশে মুসলিম অভিবাসন-বিরোধিতা, সংখ্যালঘুর প্রতি অসহিষ্ণুতা, সামপ্রদায়িকতা ও বর্ণবাদ আবারও মাথাচাড়া দিয়া উঠার লক্ষণ স্পষ্ট হইতেছে। প্রশ্ন জাগে, ইতিহাসে ঘৃণিত বর্ণবাদ, সামপ্রদায়িক দাঙ্গা বা আগ্রাসন যুদ্ধের মতো কলঙ্কজনক অধ্যায়গুলি ফিরাইয়া আনিতে চায় কাহারা? মনে রাখা দরকার, সভ্যতার বিকাশে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ায় অভিভাসন এবং অভিবাসীদের সাংস্কৃতিক গ্রহণ-বর্জন স্বাভাবিক নিয়মেই ঘটিয়া চলিয়াছে। ভবিষ্যতেও ঘটিবে। বহু সংস্কৃতিবাদ বা বহু মতের সমন্বয়েই গড়িয়া উঠে গণতান্ত্রিক সভ্য সমাজ। যে ইউরোপ গণতন্ত্র, পরমত সহিষ্ণুতা, ব্যক্তিস্বাধীনতা, ধর্মনিরপেক্ষতা ও মানবিধার রক্ষার প্রশ্নে সোচ্চার এবং গর্ব করিয়া থাকে, তাহারাই আজ যখন মানবাধিকার লংঘন বা মানবতা বিপর্যয়কারী পরিস্থিতি সৃষ্টি করিয়া চলিয়াছে, তখন শান্তিপ্রিয় বিশ্ববাসীর জন্য তাহা অবশ্যই উদ্বেগজনক।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার মায়ের চৌহদ্দি

লিখেছেন শাওন আহমাদ, ১২ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৫



আমার মা ভীষণ রকমের বকবকিয়ে ছিলেন। কারণে-অকারণে অনেক কথা বলতেন। যেন মন খুলে কথা বলতে পারলেই তিনি প্রাণে বাঁচতেন। অবশ্য কথা বলার জন্য যুতসই কারণও ছিল ঢের। কে খায়নি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণা!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৭



নীচে, আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণাকে ( পেশগত দক্ষতা ও আভিজ্ঞতার সারমর্ম ) আমি হুবহু তুলে দিচ্ছি। পড়ে ইহার উপর মন্তব্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

মোজো ইদানীং কম পাওয়া যাচ্ছে কেন?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


শুনলাম বাজারে নাকি বয়কটিদের প্রিয় মোজোর সাপ্লাই কমে গেছে! কিন্তু কেন? যে হারে আল্লামা পিনাকী ভাট ভাঁওতাবাজিদেরকে টাকা দিয়ে 'কোকের বিকল্প'-এর নামে 'অখাদ্য' খাওয়ানো হচ্ছিলো, আর কোককেই বয়কটের ডাক... ...বাকিটুকু পড়ুন

জমিদার বাড়ি দর্শন : ০০৮ : পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২৪


পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

বিশেষ ঘোষণা : এই পোস্টে ৪৪টি ছবি সংযুক্ত হয়েছে যার অল্প কিছু ছবি আমার বন্ধু ইশ্রাফীল তুলেছে, বাকিগুলি আমার তোলা। ৪৪টি ছবির সাইজ ছোট করে ১৮ মেগাবাইটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×