পহেলা বৈশাখে দেখার টাইম ঠিক করে রেখেছিলাম ।কিন্তু পত্রিকার বিজ্ঞাপণ অনুযায়ী পহেলা বৈশাখে হল কর্তৃপক্ষ গেরিলা দেখায় নি ।মন খারাপ করে চলে আসি।তারপর গতরাতে শেষ সো তে বন্ধুদের নিয়ে গেলাম জোর করেই।হলেই কাছে রিকসা থেকে নেমে আবার মন খারাপ ।লোকজন কম মনে হচ্ছে ।সো কী তবে শুরু হয়ে গেল না কি।ভেতরে ঢুকে বুঝলাম , না ১০ মিনিট আছে ।তবে লোক কই ? ঢাকাতে না হাউজফুল ,তবে আমাদের এখানে নয় কেনো ?চেক ম্যান কে জিজ্ঞেস করলে বললো -ভালো সিনেমা মানুষে কম দেখে ।
ভালো সিনেমার বিবৃতি একটু শুনেন আমার দৃষ্টিতে কেমন ...
গেরিলা নিয়ে পরিচালকের সাক্ষাতকার পড়েছিলাম একটি সত্য কাহিনী নিয়ে সৈয়দ শামসূল হূদা এটি লিখেছিলেন।কাহিনীটি ১৯৭২ সালে ২ নং সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফ তাকে শুনিয়েছিলেন।খালেদ সাহেব কোথা থেকে শুনেছিলেন তা অবশ্য জানা যায় নি।তবে ছবি দেখে বুঝা গেল কোথা থেকে শুনেছেন ।
ছবিতে বিলকিছ নামের মহিলার যে চিত্রনাট্য ফুটে উঠেছে তা সত্য না হলেও মিথ্যা না হওয়ার সম্ভাবনা কম।কিন্তু অন্য অনেক বিষয় এড করা হয়েছে ছবির কাহিনী বড় করার জন্য।অথবা অন্য কোনো উদ্দেশ্য থেকে।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ছায়াছবিগুলি মোটামুটি সবগুলি দেখার সৌভাগ্য হয়েছে।কিন্তু এ ছবির নেয় আর কোথাও সাম্প্রদায়িকতার ছেড়াঁ কাহিনী শুনানো হয়নি।
ছবিতে বিলকিছের কাহিনীর সমান্তরালে ঢুকানো হয়েছে সাম্প্রদায়িকতার ভাঙ্গা কাহিনী।গোয়ালা ,ট্রেনের যুবতী মেয়েটি অথবা বিলকিছের সর্বশেষের সহায়তাকারী সিরাজ ছদ্মনামের যুবকটির কথা যে ভাবে বলা হয়েছে এভাবে না বললেও তিনি পারতেন।
সনাতন সংখ্যালঘুদের যে নির্যাতন করা হয় নি আমি তা বলছি না ।কিন্তু কথায় কথায় বিশেষ অঙ্গ টেস্টের কাহিনী মু্ক্তিযুদ্ধে বেমানান ।প্রধানত কালেমা টেস্টে না উৎরাতে পারলে তখন সেই অঙ্গ দেখে মুসলমান -হিন্দু নিশ্চিৎ হওয়া ছিলো পাকিদের বৈশিষ্ট ।কিন্তু ছবিতে বেশ ক বার সরাসরি লুঙ্গি-কাপড় খুলে নিশ্চৎ হতে হয় পাকি দুসরদের ।
আরো বহু বহু প্রশ্ন আছে ।আপাতত এগুলি বাদ আসেন ছবি থেকে আমরা কী শিক্ষা পেতে পারি তা বিশ্লেষণ করি।
বিনোদন কী শুধোই চিত্তকে বিকশিত করে না অন্য কিছু ।
পরিচালক বলেছেন আগামী প্রজন্মকে ইতিহাস শিক্ষা দিবে ছবিটি।
ভুল বলেন নি ।তবে খারাপ অর্থে শিক্ষাটা বেশি ব্যবহার হবে।এখানে প্রতিহিংসার শিক্ষাটা অগ্রগণ্য ।
আপনার অনাগত প্রজন্মকে কোন দিন কোনো সনাতন ধর্মের অনাগত প্রজন্ম আঙুল তুলে দেখাবে ঐ যে মুসলমানের বাচ্ছারা যারা সুযোগ পেয়ে আমাদের পূর্ব পুরুষদের অত্যাচার করেছিলো ।আর ঐ অত্যাচারের মাত্রাটা সামান্য পাওয়া যায় গেরিলা ছবিতে।
মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন অসম্প্রদায়িক দেশ গড়ার জন্য কিন্তু ছবিতে বর্তমান প্রজন্মের সনাতন ভাইদের যেভাবে ক্ষ্যাপিয়ে তুলছেন ।এর দায়াভার বহন করা ভবিষ্যতে কঠিন হয়ে যাবে।
আস্তে আস্তে বাঙালি যখন অসাম্প্রদায়িক হতে চলছিলো তখন আপনি নতুন প্রজন্মের সনাতণদের মনে সন্দেহ এবং অবিশ্বাস ঢুকিয়ে দিলেন ।
তাই আমি বলতে চাই , গেরিলা : গৃহযুদ্ধ ,ধর্মযুদ্ধ নাকি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ।নাকি প্রেমের উপাখ্যান নাকি সব মিলে বস্তাপচাঁ মাথামোটা গরিলা ইতিহাস ।