somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মিষ্টি সফলতা

১৮ ই এপ্রিল, ২০১১ দুপুর ২:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সফলতার ধারণাগুলো আমাদের আশপাশেই লুকানো থাকে। প্রয়োজন শুধু সেগুলো খুঁজে বের করার। কোনো কাজই ছোট নয়। এমন অনেক কাজ আছে যেগুলো খুব সহজেই পেঁৗছে দিতে পারে সফলতার সিঁড়িতে। তেমই জ্বলন্ত এক প্রমাণ ১৪ বছরের ফ্রাসের ডর্থি। সে তার স্বপ্ন নিয়ে কাজ শুরু করে তার বাসার রান্নাঘরে বসে।
স্কটল্যান্ডের এনিবারা শহরের ছোট্ট একটা বাড়িতে থাকে ডর্থি। সে প্রথমবারের মতো আচার তৈরি করে তার দাদির জন্য। দাদীর রান্নার প্রস্তুতপ্রণালী দেখে শেখে সে। সেসময় তার আচারের গ্রাহক বলতে ছিলো তার বন্ধু ও প্রতিবেশীরা। সে তার দাদীর ব্যবসায় সাহায্যের জন্য এ কাজ করতো। ধীরে ধীরে তার আচারের ব্যবসা লাভজনক পর্যায়ে চলে যায়। প্রয়োজনের তাগিদে ব্যবসা বাড়াতে হয়। তখন তার বয়স ছিলো ১৬। আচার তৈরির ব্যবসায় পুরো সময় দেওয়ার জন্য স্কুল ছাড়তে হয় তাকে।
পুরোদমে ব্যবসাতে নাম লিখিয়ে সে চিন্তা করে, এটা নিয়েই যখন থাকতে হবে, তবে ব্যবসাটা ভালোমতো করি। সে তার দাদীর প্রস্তুতপ্রণালীর সাথে নিজের কিছু ধারণা যোগ করে নতুন এক প্রস্তুতপ্রণালী তৈরি করে এবং সেটার নামও দেয়_চমৎকার আচার। সমস্যা বাঁধে তার লোকবল নিয়ে। কারণ, তার জোগানের তুলনায় অধিক চাহিদা সৃষ্টি হয়। সেসময় আরো একটা সমস্যা ছিল। সে তখনও তার পারিবারিক রান্নাঘরে আচার প্রস্তুত করতো। প্রথমে সে ফল ও ফলের রস দিয়ে আচার বানাতো। সেখানে এতো বিশাল পরিধিতে ব্যবসা করা সম্ভব হচ্ছিল না। পরের কয়েক মাসের মধ্যে সে একটা কারখানা ভাড়া নেয়। ২০০৭-এর শুরুর দিকে সে যুক্তরাজ্যের বৃহত্তম সুপারমার্কেট, ওয়েটরোজ-এ তার আচার বিক্রির চেষ্টা করে। সে আশা করে তার আচার ব্যবসা ভালো হবে সেখানে। মাত্র কয়েক মাসের মাথায় ওয়েটরোজ সুপারমার্কেটের ১৮৪ দোকানের সামনে আচারের একটা বড় দোকান হয়ে গেল। ডর্থি তার ব্যবসাকে নতুন এক প্রান্তে নিয়ে আসতে পারল অবশেষে। সে তখন সফলতার চূড়ার কাছাকাছি।
একের পর এক নতুন ধারণার জন্ম দিতে লাগলো তার ব্যবসাকে কেন্দ্র করে। আর এর জন্য প্রয়োজন টাকা, যা সেসময় তার কাছে যথেষ্ট পরিমাণে ছিলো না। তাই তার ব্যাংকের শরণাপন্য হতে হয়। এক বেসরকারি ব্যাংক থেকে ৫০০০ পাউন্ড (৯হাজার ডলার) ধার নেয় সে। বাংলাদেশি টাকায় তা প্রায় ৬৩,৯২,২৫০ টাকার সমান। সে এই টাকা দিয়ে তার আচারের তিনটি নতুন স্বাদ আনতে চায়_বস্ন-বেরি ও বস্নাক কারেন্ট, রুবার্ব আদা ও ক্যাবেরি এবং র্যাসপবেরি (কমলার রসের মতো স্বাদ)। ধীরে ধীরে যুক্তরাজ্যের প্রায় ৩০০ দোকানে ডর্থির আচার ছড়িয়ে পড়তে লাগল। ২০০৬-এর শেষ থেকে ২০০৭-এর দিকে তার ‘সুপার জ্যামের’ বিক্রি ১.২ মিলিয়ন ছুঁয়ে গেল। বলতে গেলে ব্যবসার ক্ষেত্রে সফলতার এ মাত্রাটি ৬০ শতাংশের মতো। বর্তমানে তার এই আচার ব্যবসা তাকে আসডা ওয়াল মার্ট-এর প্রতিদিনকার খুচরা বিক্রেতা হিসেবে পরিচিতি দিয়েছে। শুধু যুক্তরাজ্যেই নয়; তার এ ব্যবসার পরিধি মরিজন ও আইয়ারল্যান্ডেও ছড়িয়ে গেছে। এরপর ২০০৮ সালের দিকে সে একটা চ্যারিটির ব্যবস্থা করে তার আচারের ব্যবসার মাধ্যমে। নাম দেয়, ‘সুপার জ্যাম টি পার্টি’। ধারণার বাইরে ছিলো ব্যাপারটা। তার এ উদ্যোগ স্কটল্যান্ড, ইংল্যান্ডে ব্যাপক হারে জনপ্রিয়তা পায়। ‘অতিথিরা অনুষ্ঠান শেষে হাসতে হাসতে প্রায় কেঁদে ফেলার জোগাড় হয়েছিলো’, বলে ডর্থি। সে অনুষ্ঠানে নাচ, গান, খাওয়া-দাওয়ার সাথে ছিলো তার আচারের বিশাল সমাহার। প্রায় ৫০০-এর উপর অতিথিরা এসেছিলেন সেখানে। সেই বছরই ডর্থি ঘোষণা দেয়, তার এ আচারের ব্যবসা কিছুদিনের মধ্যে অন্যতম আচার ব্যবসায়ী সেইনবেরিকেও হার মানাবে। এবং যুক্তরাজ্যের খুচরা বিক্রেতাদের মধ্যে অন্যতম স্থানটি দখল করে নেবে। উদাহরণ দিয়ে সে আরো বলে, বিখ্যাত জেলি প্রস্তুতকারক জে এম স্মুকার যেখানে ১ থেকে ১.৪ মিলিয়ন বিক্রি করে, সেখানে তার বিক্রি নিঃসন্দেহে ১ থেকে ২ মিলিয়নের মতো। তাই সে আত্মবিশ্বাসী তার আচার ব্যবসার ভবিষ্যত নিয়ে। বর্তমানে সে সবচেয়ে অল্পবয়সী মিলিয়নেয়ারদের মধ্যে একজন। তবে এ নিয়ে তার কোনো চিন্তা নেই। সে বলে, ‘আমার টাকার প্রতি কোনো লোভ নেই অথবা আগ্রহ। আমি আচারের এই ব্যবসা করি কারণ, আমি এটা করতে ভালোবাসি।’ তার উপর সফলতার মিঠে স্বাদটাও তো আছে; ঠিক ডর্থির আচারের মতো।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×