somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রত্যাবর্তনঃ ভাই সব এইটা কোন রোমান্টিক গল্প না, এইটা একটা বেকুব পোলার গল্প

১৭ ই এপ্রিল, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আচ্ছা বহু দিন আগে হারিয়ে যাওয়া কোন প্রিয় মানুষের সাথে আবার দেখা হবার জন্য কোন সময়টা সবচাইতে ভালো? আমার মনে হয় রোদের তেজ কমে আসা একটা সোনালী বিকেলকে যে কোন হিসেবে রোমান্টিকতার বিচারে এগিয়ে রাখা যায়। কিমবা বাতাস উঠে আসা বৈশাখ মাসের কোন মেঘলা দুপুর?
জীবনটা কোন আর্ট ফিল্ম পরিচালকের সিনেমা নয় সে ব্যাপারে নতুন করে বলার কিছু নাই, প্রয়োজনের সময় কোন ব্যাকগ্যাউন্ড মিউজিক শোনা যায়না, অনেক ব্যক্তিগত কষ্টের সময়ে লম্বা লিস্ট আর চটের ব্যাগ হাতে মানুষকে কাচা বাজারে ঘোরা ঘুরি করতে হয়, আকাশ দেখে একটু আনমনা হয়ে হাটলেই রাস্তার পাশে জমে থাকা প্যাচপ্যাচে কাদায় আছাড় খেতে হয়; সবই ঠিক আছে কিন্তু আমার ব্যাপারে যেটা হল আজকে বিকেলে আর্টফিল্ম হলে সেটাকে এক কথায় বলা যেত নিম্ন মানের পরিচালনা, অরুচিকর পরিচালনা।
বহু দিন আগে হারিয়ে যাওয়া একটা মুখ আমি কিনা খুজে পেলাম গুলিস্তানের মোড়ে, পাবলিক টয়লেটের সামনে? কোন মানে হয়?
মেয়েটার নাম তান্নি- আমাকে বলার দরকার নাই যে নামটা মোটেই রোমান্টিক কিসিমের নয়, আমি সেইটা জানি। কলেজে একই সেকশনে পড়তাম। পাশা পাশি রো তে বসে ক্লাস করতাম।
বিপরীত লিঙ্গের কেবল ভ্যাদভ্যাদে ফরসা ত্বক কখনো আমাকে দুর্বল করতে পারবেনা সে ব্যাপারে আমি নি:সন্দেহ ছিলাম, আর আমার গাঢ়তর আস্থা ছিলো মেয়েদের ফেস কাটিং এর ব্যাপারে আমার অমোঘ রুচি আর জ্ঞানের ব্যাপারে।সেই আমিই কি না পাগলের মতো পছন্দ করে ফেললাম খুব ফর্সা আর খুব সাদা মাটা ফেস কাটিং এর একটা মেয়েকে? আমি আমার ক্যারেকটার নিয়ে খুব একটা গর্ব করি না, এবং এটাও দাবি করি না যে এটাই আমার বিপরীত লিঙ্গের ব্যাপারে প্রথম দুর্বলতা।
তান্নির সাথে আমার পরিচয়ের ঘটনাটা বলি।দিন,মাস,বছর কিছুই মনে নাই। বিরক্তিকর একটা ক্লাস শেষে রুম থেকে বের হচ্ছি, আমাদের ঠোকা ঠুকি হবার উপক্রম হলো, ওকে সাইড দিতে গিয়ে আমি দেয়ালের সাথে ধাক্কা খেলাম; অতি মাইল্ড ধাক্কা, ব্যাথা পাবার প্রশ্নই ওঠে না। তান্নি কিন্তু ভালো মেয়ে, তার জন্যে আমি ব্যাথা পেয়েছি, খুব সম্ভব এইটা তার অনেক খারাপ লাগলো। সে , এতো সুন্দর ভঙ্গী আমি কোন মেয়েকে করতে দেখিনি, দুটা হাত সামনে নিয়ে বললো, ‘স্যরি, ব্যাথা পেয়েছো?’. আমি তাড়া তাড়ি মাথা নেড়ে বললাম, “আরে, নাহ্, কিসের ব্যাথা?’ তারপর পাশাপাশি হাটতে হাটতে কিছু ছাড়া ছাড়া কথা হল,আমি মওকা পেয়ে ওর নামটা জেনে নিলাম, রোল নাম্বার তো আগেই জানি।
সেই থেকে শুরু, আসলে সিরিয়াস কিছুই না। খালি ক্যাম্পাসে গেলে তৃষাতুর চোখেএকটা অতিরিক্ত ফর্সা আর কালো চশমা পড়া মুখ খুজে বেরাই।ওর আশেপাশে থাকতে ভীষণ ভালো লাগে।মাঝে মধ্যে হালকা কথা বার্তা হয়, প্রায় না হওয়ার মতোই।আগ বাড়ায়ে মেয়েদের সাথে কথা বলতে গেলে যে সব ছেলেদের দুর্বল পৌরুষে আঘাত লাগে, দুর্ভাগ্যের ব্যাপার হল, আমি সেই টাইপের।
চোখা চোখি হতো, এবং ,খুব সম্ভব পৃথিবীর সব ছেলের মত, আমি ওর দৃষ্টিতে আমার জন্যে অ্যাফেকশন টের পেতাম। বাট ঘটনা সেই পর্যন্তই। কলেজ থেকে ক্লাস ফাকি দিয়ে বের হবার সময় আমি ম্যাগনেটিজম চ্যাপটারের আগামাথা কিছু না পড়েই সব কিছু বুঝে যেতাম। আমি ফিল করতাম, একটা উত্তর মেরুকে দক্ষিণ মেরু থেকে দূরে সরানোর সময়ে উত্তর মেরুটার কেমন লাগে। আমার সমস্ত মনোযোগ কেন্দ্রীভূত থাকতো পশ্চিম বিল্ডিং এর পাচ তলার বারান্দার এককোণে, যেখানে তান্নি দাড়িয়ে আছে, আর আমি হন হন করে হেটে চলে যাচ্ছি কলেজ থেকে দূরে, কেন? উত্তর কে জানে।
পরীক্ষার হলে সিটে বসে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছি, তান্নির অন্য রুমে সিট পড়েছে, সে মাথা নিচু করে হেটে যাচ্ছে পাশের লম্বা করিডোর ধরে, তার সাদা অ্যাপ্রনের প্রান্ত বাতাসে উড়ছে, আর তার ফেলে যাওয়া বাতাসে হালকা সেন্টের গন্ধ; পরীক্ষার লেখা শুরু করতে করতে আমার খামোখাই আধা মিনিট দেরী হয়ে যায়।
তারপর ম্যালাদিন পার হয়ে গেছে, বুয়েটে চান্স পাবার পর চিটাগাং এর পার্ট পার্মানেন্টলী চুকিয়ে দিয়ে চলে এসেছি ঢাকায়, সেও প্রায় তিন/ সাড়ে তিন বছর হতে চললো।
সেই তান্নির সাথে আজ দেখা। গুলিস্তানের গোলাপ শাহ্ মাজার মোড়ে, পাবলিক টয়লেটের সামনে ফুটপাথে দাড়িয়ে রিক্সা ঠিক করছে, আমি কি করতে পারতাম? যে কাপুরুষদের কারণে বিশ্ব সাহিত্যে বিরহ গাথার সংখ্যা বাড়ে আমি তাদের দলের একজন।
এই শহরের রাস্তায় হাটতে হাটতে আমি প্রায়ই চিন্তা করতাম, বাংলা নাটকের একটা কমন সিন হল, নায়িকা রিক্সা করে কোন এক ছেলের সাথে হাস্য করতে করতে চলে যাচ্ছে , আর সেই দেখে রাস্তার পাশে দাড়ানো নায়কের হৃদয় টুকরা বি টুকরা হয়ে যাচ্ছে, আমি ভেবে খুশি হতাম যে, অ্যাটলিস্ট এই শহরে অ্যামন কোন মেয়ে নাই, যাকে অন্য ছেলের সাথে রিক্সায় দেখলে আমার সেই নায়কের অবস্থা হবে। আফসোস, আমার সেই আত্ম অহমিকার টাইটানিক আজকে গুলিস্থানের গোলাপ শাহ্ মাজার মোড়ে ভুশ করে ডুবে গেলো।
তান্নি যেভাব্ তার পাশের ছেলেটার হাত ধরে ছিলো, আমার খালি একটা কথাই মনে হচ্ছিলো, ইশ্ ওই পোলার জায়গায় যদি আমি থাকতে পারতাম।
কি হবে, মহিমান্বিত প্রেম ভালোবাসার অপেক্ষা করে? হুড ফেলা রিক্সায়, চাদি ফাটা রোদে, একটা খুব সাদামাটা মেয়ের হাত ধরে রিক্সায় ঘুরতে না পারার দু:খে আমি একটা বেনসন ধরালাম।
দেবদাস মদ খেতে পারলে আমিও পলাশীতে মামার দোকানে বসে চা সিগারেট খেতে পারি।কারণ, কি খাচ্ছি সেইটা না, কোন দু:খ বোধ থেকে খাচ্ছি সেইটাই আসল ব্যাপার বলে আমার মনে হয়।

দ্রষ্টব্য: এই গল্পের প্রায় সমস্ত ঘটনাই কাল্পনিক। জীবিত বা মৃত কোন মানুষের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ অভিজ্ঞতার সাথে কাহিনীর সামান্য মিল থাকতেই পারে, সেইটা নিয়ে চিল্লাপাল্লা করার কিছু নাই ।



সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মে, ২০১১ রাত ১:৩১
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা শহর ইতিমধ্যে পচে গেছে।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



স্থান: গুলিস্থান, ঢাকা।

ঢাকার মধ্যে গুলিস্থান কোন লেভেলের নোংড়া সেটার বিবরন আপনাদের দেয়া লাগবে না। সেটা আপনারা জানেন। যেখানে সেখানে প্রসাবের গন্ধ। কোথাও কোথাও গু/পায়খানার গন্ধ। ড্রেন থেকে আসছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজত্ব আল্লাহ দিলে রাষ্ট্রে দ্বীন কায়েম আমাদেরকে করতে হবে কেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:০৬



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) কেড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তির কোরাস দল

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৫



ঘুমিয়ে যেও না !
দরজা বন্ধ করো না -
বিশ্বাস রাখো বিপ্লবীরা ফিরে আসবেই
বন্যা ঝড় তুফান , বজ্র কণ্ঠে কোরাস করে
একদিন তারা ঠিক ফিরবে তোমার শহরে।
-
হয়তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাইডেন ইহুদী চক্তান্ত থেকে বের হয়েছে, মনে হয়!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮



নেতানিয়াহু ও তার ওয়ার-ক্যাবিনেট বাইডেনকে ইরান আক্রমণের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো; বাইডেন সেই চক্রান্ত থেকে বের হয়েছে; ইহুদীরা ষড়যন্ত্রকারী, কিন্তু আমেরিকানরা বুদ্ধিমান। নেতানিয়াহু রাফাতে বোমা ফেলাতে, আজকে সকাল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×