somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাত্রাতিরিক্ত ধূমপানের ঝুঁকিতে দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস

১৭ ই এপ্রিল, ২০১১ সকাল ১০:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সাম্প্রতিক সময়ে বিশবিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে তামাকের ব্যবহার আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাই নয়, ছাত্রীরাও তামাক সেবনে আসক্ত হয়ে পড়ছেন। সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের পরই তামাকের সাথে পরিচিতি ঘটছে এসব শিক্ষার্থীর। মাত্রাতিরিক্ত শিক্ষার্থী ধূমপানে আসক্ত হয়ে পড়ায় বর্তমানে মাদকের ঝুঁকিতে রয়েছে দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। তামাক ব্যবহারের বর্তমান অবস্থাকে আশঙ্কাজনক উল্লেখ করে ক্যাম্পাসকে তামাকমুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। ইউজিসির উপসচিব (প্রশাসন) ড. সুলতান মাহমুদ ভূইয়ার স্বাক্ষরকৃত এ সংক্রান্ত একটি পত্র ইতিমধ্যে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। তামাকের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সচেতন করতে ক্যাম্পাসে ধূমপানমুক্তকরণ সাইনবোর্ড স্থাপন করতেও অনুরোধ করা হয়েছে ওই চিঠিতে।
বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুসারে ক্যাম্পাসে যে কোন প্রকার তামাক সেবন নিষিদ্ধ। কিন্তু বাস্তবে এ আইনের কোন কার্যকারিতা নেই। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও এ ব্যাপারে উদাসীন। ফলে হরহামেশাই ধূমপানে আসক্ত হয়ে পড়ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধূমপানের মাত্রা আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্যাম্পাসগুলোকে ধূমপান মুক্ত করতে এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে উদ্যোগ নিয়েছে ইউজিসি। তিনি বলেন, সব বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন অনুসারে ধূমপান মুক্ত করতে জোরালো পদক্ষেপ নেয়া হবে। এ ব্যাপারে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে চিঠি দেয়া হয়েছে। ধূমপানকে নিরুৎসাহিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রেও অধূমপায়ীদের প্রাধান্য দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপর পরিচালিত সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৩ দশমিক ৩৩ ভাগ শিক্ষার্থী ধূমপায়ী। আর এ ধূমপায়ীদের মধ্যে ৪৪ ভাগ ছেলে এবং ৪ ভাগ মেয়ে।
গবেষণায় দেখা গেছে, অধিকাংশ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পরই ধূমপানে আসক্ত হয়ে পড়েন যা উদ্বেগজনক হারে বেড়ে চলেছে। ধূমপায়ীদের ৪৬ দশমিক ১৫ ভাগ তাদের ধূমপানে দৈনিক ব্যয় করে ১০ থেকে ২০ টাকা। ২৩ দশমিক ০৬ ভাগ ৩০ থেকে ৪০ টাকা, ১৯ দশমিক ২৩ ভাগ ২০ থেকে ৩০ টাকা এবং ১১ দশমিক ৫৩ ভাগ ৫০ থেকে ৯০ টাকা দৈনিক ব্যয় করে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর প্রথম বর্ষের ২৩ দশমিক ৩৩ ভাগ, দ্বিতীয় বর্ষের ২৬ দশমিক ৬৬ ভাগ, তৃতীয় বর্ষের ৩৩ দশমিক ৩৩ ভাগ এবং চতুর্থ বর্ষের ৪৬ দশমিক ৬৬ ভাগ শিক্ষার্থী ধূমপানে জড়িয়ে পড়েন। এছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৬৯ দশমিক ২৯ ভাগই ধূমপায়ী। এদের মধ্যে ছেলে ধূমপায়ী ৯৬ দশমিক ৬৬ ভাগ এবং মেয়ে ৩ দশমিক ৩৩ ভাগ।
২০০৫ সালে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন হওয়ার পর পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে ধূমপান নিষিদ্ধ করে সরকার।
তামাকের ভয়াবহতা সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক গবেষণায় বলা হয়, বাংলাদেশে বর্তমানে শুধূমাত্র তামাকজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে বছরে ৫৭ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করছে। এছাড়া প্রতিবছর তামাকজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ৩ লাখ ৮২ হাজার মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করছে। এছাড়া তামাক সেবন ও ধূমপানের কারণে দেশে ১২ লাখ মানুষ ৮টি প্রধান রোগে (ক্যান্সার, যক্ষা, ডায়াবেটিকস, হাঁপানি, হৃদরোগ, বার্জাজ ডিজিজ ইত্যাদি) আক্রান্ত হচ্ছে।
তামাকের অর্থনৈতিক ক্ষতির উপর অর্থনীতিবিদ আবুল বারাকাত এর নেতৃত্বে পরিচালিত 'এইচডিআরসি' নামক একটি বেসরকারি সংগঠনের গবেষণায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকার সকল প্রকার তামাক থেকে রাজস্ব পায় ৫ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু তামাকজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে শুধু ২৫ ভাগ রোগীর চিকিৎসা বাবদ সরকারি ব্যয় ১১ হাজার কোটি টাকা। যেখানে ঘাটতি ৬ হাজার কোটি টাকা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. এমরান হোসাইনের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত ওই গবেষণা জরিপের রিপোর্টে বলা হয়েছে, পুরো কাম্পাসে প্রতিদিন অন্তত ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৩০৫ টাকা শিক্ষার্থীরা ধূমপানের পেছনে ব্যয় করে। তাদের মধ্যে ৬০ দশমিক ৭৬ ভাগের পছন্দের সিগারেটের ব্র্যান্ড হচ্ছে বেনসন। আর্থিক দিক বিবেচনায় অনিচ্ছা সত্ত্বেও ৩৩ দশমিক ৮৪ ভাগ গোল্ড লিফ, ৩ দশমিক ৮৪ ভাগ পালমাল এবং ১ দশমিক ৫৩ ভাগ নেভী ব্র্যান্ডের সিগারেট কিনেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩২ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে অনার্স প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত সব অনুষদ থেকে নমুনা হিসেবে ৩০০ শিক্ষার্থীর মধ্যে এ গবেষণা জরিপ চালানো হয়। এর মধ্যে ২৪৭ জন ছেলে এবং ৫৩ জন মেয়ে শিক্ষার্থী। দেখা গেছে, ৩০০ শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৩০ জন ধূমপায়ী। ১৭০ জন বা ৫৬ দশমিক ৬৬ ভাগ অধূমপায়ী।
গবেষণায় দেখা গেছে, ৬৩ দশমিক ৮৪ ভাগ শিক্ষার্থী বলেছে, বিশেষ কোন কারণ ছাড়াই তারা ধূমপান করে থাকেন। ২৩ দশমিক ০৭ ভাগ কারণ হিসেবে বলেছে হতাশা, ৯ দশমিক ২৩ ভাগ বলেছে কৌতূহল এবং ৩ দশমিক ৮৪ ভাগ বলেছে স্মার্টনেস বাড়াতে তারা ধূমপান করে।
এ গবেষণা জরিপে পুরো ক্যাম্পাসকে ৫টি জোনে ভাগ করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, ছেলেদের মধ্যে চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি ধূমপায়ী। এ অনুষদের শতকরা ৮৩ ভাগ শিক্ষার্থীই ধূমপায়ী। এরপরেই রয়েছে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের শিক্ষার্থীরা। এ অনুষদের ৭৫ ভাগ শিক্ষার্থী ধূমপায়ী। কলা ভবন এলাকার কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ৭২ ভাগ, কার্জন হলের বিজ্ঞান অনুষদের ৪৮ ভাগ, এনেঙ্ ভবনের ৪৭ ভাগ এবং শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২৮ ভাগ শিক্ষার্থী ধূমপায়ী। এছাড়া মেয়েদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, চারুকলায় ৬৬ ভাগ, বিবিএ তে ১৫ ভাগ এবং কলা ভবনের ৩ ভাগ মেয়ে শিক্ষার্থী ধূমপায়ী।
জরিপে দেখা গেছে, ৫৮ ভাগ ধূমপায়ীই বিশ্বাবিদ্যালয়ে ভর্তির পূর্বেই ধূমপান শুরু করে। আর ৪১ দশমিক ৫৩ ভাগ শুরু করেছে ভর্তি হওয়ার পর। ৪৬ দশমিক ৯২ ভাগ ধূমপায়ী তাদের বন্ধুদের দ্বারা ধূমপানে প্রভাবিত, ৩১ দশমিক ৫৩ ভাগ পারিপাশ্বিক পরিবেশ, ১৩ দশমিক ৮৪ ভাগ পরিবারের সদস্যদের দ্বারা এবং ৭ দশমিক ৬৯ ভাগ কোন আত্মীয়-স্বজন দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ধূমপানে আসক্ত হয়েছেন।
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×