somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনুপ্রেরণার ফর্মুলা

১৭ ই এপ্রিল, ২০১১ সকাল ৮:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মনের শক্তিই আসল শক্তি। তাই তো মনের ইচ্ছা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে দু’হাত অচল থাকা সত্বেও মারসেইল নামের এক তরুণী নিজেকে সাফল্যের মালা নিজের গলায় পরতে সক্ষম হয়েছেন। তার গল্প জানাচ্ছেন প্রাঞ্জল সেলিম চকলেট কেকের আল্পনা করা নিয়ে ব্যস্ত সে মেয়েটি। এটা তার নিয়মিত কাজের মধ্যে পরে। মারসেইল আপাতান, ২২ বছর বয়স তার। ম্যানিলার এক হোটেলে কাজ করে। ‘এডসা সাংরি লা হোটেল’ এর রান্নাঘরে কাজ তার। সে এই হোটেলের রান্না বিষয়ক তদারকির চিফ। অল্প বয়সী এ মেয়েটির একটা হোটেলে কাজ করে আলোচনায় উঠে আসার ব্যাপারটির পেছনে কাজ করছে তার অক্ষমতাকে জয় করার গল্প। মেয়েটির দুটি হাতই অচল। খুব ছোট থাকতেই সে অনেক উত্সাহ নিয়ে রান্নার কাজ করতো। কিন্তু তার অক্ষমতা তাকে মাঝপথেই থামিয়ে দেয়। তার হাতে কব্জি না থাকায় সে এখন আর কেকের উপর মজা নিয়ে বাদাম সাজাতে পারে না। এখন তার কাজ করার জন্য দুহাতের অবশিষ্ট অংশ ব্যবহার করতে হয়। কষ্ট করে হলেও কিছুু কাটার জন্য চাকুর পেছনের অংশটা সে দু হাতের মাঝে ধরে। এভাবেই সে সবজিসহ সব কাটাকুটি করার কাজের অভ্যাস করে ফেলেছে। এবং খুব সুন্দর করেই সে স্ট্রবেরি ও কিউই ফলগুলোকে দুভাগ করে ফেলতে পারে। এরই সাথে কেক বানানো, এতে সুগন্ধি যোগ করা তার কাজের মান আরো বৃদ্ধি করে। এসব কাজ সে তার অক্ষমতাকে ছাড়িয়ে গিয়ে করতে সক্ষম হয়েছে। বিষয়টি অবশ্যই অনুপ্রেরণামূলক। কারণ, সে তার এ অবস্থার পরেও এমন কঠিন কাজ করে হেড অব দ্য হোটেল ফুড ডিপার্টমেন্ট হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। প্রথম দর্শনে যে কারও মনে হতে পারে, মেয়েটি হয়তো কাজ করতে গিয়ে ব্যথা পাবে। কিন্তু তার কাজ দেখলে বোঝা যায়, এ কাজে সে নিজেকে ভালোভাবেই প্রস্তুত করে নিয়েছে। সেই হোটেলের ম্যানেজার রেইস মারসেইল সম্পর্কে বলেন, ‘মেয়েটিকে কখনও অন্যরকম হিসেবে দেখা হয় না। সে সবসময় অন্য সবার মতই কাজ করে গেছে, তার অক্ষমতার কারণে সে কখনোই বিশেষ সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করেনি।’ আর এসব গুণাবলি ও তার কাজের দক্ষতা এত অল্প বয়সেই তাকে এত বেশি সুনাম এনে দিয়েছে। মারসেইল সম্পর্কে কিছু কথা মারসেইল ও তার পরিবার ২০০০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সপরিবারে তাদের গ্রাম মিন্ডানাও জামবোয়ানগা থেকে চলে আসে। অন্যভাবে বলা যায়, তাদেরকে একরকম গ্রাম থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিলো। জোর করে তাদের ভিটে ছাড়া করা হয়। এবং সব সম্পত্তি দখল হয়ে যায়। সে সময় মারসেইলের বয়স ১১ বছর ছিলো। সে এ অন্যায়ের বাধা দিতেও পারেনি। ভাগ্যকে মেনে নিতে হয়েছিলো সেসময়। ওই ঘটনায় হাত হারায় মেয়েটি। চোখ মেলে দেখে তার রক্তাক্ত কব্জি মাটিতে পড়ে আছে। তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে কিছু দেরি হয়ে গিয়েছিলো। কৃত্রিম হাত সংযোজন করা যেত কিন্তু তারা আর্থিকভাবে সচ্ছল না বলেই এ দুর্ভাগ্য তাকে মেনে নিতে হয়েছিলো। জীবনটা বলতে গেলে থেমেই গিয়েছিলো তার। পুরোপুরি তার মায়ের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে সে। এক সময় সে সাহস করে স্কুলে যাওয়া শুরু করে। কিন্তু সেখানেও দেখা দেয় সমস্যা। তার সহপাঠিরা তাকে বিভিন্নভাবে তার অক্ষমতা নিয়ে খোঁচায়। অশ্রু ছাড়া তার কাছে সান্ত্বনা বলতে আর কিছুই ছিলো না। এ সমস্যা কাটিয়ে ওঠার জন্য আর্চবিশপ লেডসমা মারসেইলের জন্য থাকার ব্যবস্থা করেন। ভর্তি করেন অক্ষমদের স্কুলে। এটি ২০০৪ সালের ঘটনা। সেখান থেকে তার শেখার শুরু হয়। জীবনটাকে সে দেখা শুরু করে নতুনভাবে। ধীরে ধীরে ঘরের কাজ করা শুরু করে সে। তার অক্ষমতাকে জয় করতে অনেকটাই সফল হয়। বলা যায়, সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে শুরু করে সে। খোদার উপর তার এটুকু ভরসা ছিলো বলেই এত সহজে তা সম্ভব হয়েছে বলে মনে করে ২২ বছরের এ মেয়েটি। মারসেইল হোটেল ম্যানেজমেন্ট-এ তার গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে। এরপর ‘কাগায়েন ডি ওরকো সিটি’-তে রান্না বিষয়ক আরো একটা কোর্স করে। সে বলে, মাত্র ৭ বছর বষয় থেকেই সে এ ধরনের কাজে খুব আগ্রহ পেত। তার সেই আগ্রহ থেকেই এক সময় সুযোগ পেয়ে যায় খ্যাতিসম্পন্ন এক হোটেলে কাজ করার। প্রথম দিকে তাকে দিয়ে টুকটাক হালকা কাজ করানো হতো। পরে সে কেকের অলঙ্করণের কাজ করা শুরু করে। আস্তে আস্তে তার কাজের পরিধি আরো বাড়তে থাকে।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

**অপূরণীয় যোগাযোগ*

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ২৮ শে মে, ২০২৪ ভোর ৫:১৯

তাদের সম্পর্কটা শুরু হয়েছিল ৬ বছর আগে, হঠাৎ করেই। প্রথমে ছিল শুধু বন্ধুত্ব, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তা গভীর হয়ে উঠেছিল। সে ডিভোর্সি ছিল, এবং তার জীবনের অনেক কষ্ট ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

গাজার যুদ্ধ কতদিন চলবে?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার আগে মহাবিপদে ছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু৷ এক বছর ধরে ইসরায়েলিরা তার পদত্যাগের দাবিতে তীব্র বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন৷ আন্দোলনে তার সরকারের অবস্থা টালমাটাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রায় ১০ বছর পর হাতে নিলাম কলম

লিখেছেন হিমচরি, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১

জুলাই ২০১৪ সালে লাস্ট ব্লগ লিখেছিলাম!
প্রায় ১০ বছর পর আজ আপনাদের মাঝে আবার যোগ দিলাম। খুব মিস করেছি, এই সামুকে!! ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরায় পার হয়েছে! আশা করি, সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যাঙ দমনের নেপথ্যে এবং রাষ্ট্রীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের সমন্বয়

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৭


ব্যাঙ দমনের বাংলায় একটা ইতিহাস আছে,খুবই মর্মান্তিক। বাংলাদেশে বহুজাতিক কোম্পানির কোন সার কেনা হতো না। প্রাচীন সনাতনী কৃষি পদ্ধতিতেই ভাটি বাংলা ফসল উৎপাদন করতো। পশ্চিমবঙ্গ কালক্রমে ব্রিটিশদের তথা এ অঞ্চলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পজ থেকে প্লে : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

লিখেছেন বন্ধু শুভ, ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:১৫


.
একটা বালক সর্বদা স্বপ্ন দেখতো সুন্দর একটা পৃথিবীর। একজন মানুষের জন্য একটা পৃথিবী কতটুকু? উত্তর হচ্ছে পুরো পৃথিবী; কিন্তু যতটা জুড়ে তার সরব উপস্থিতি ততটা- নির্দিষ্ট করে বললে। তো, বালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×