somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সংকটের প্রত্যক্ষ কারণ

০৭ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ৯:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অপ্রীতিকর হইলেও আজ শুভ্র বর্ণকে শুভ্র আর কৃষ্ণ বর্ণকে কৃষ্ণই ডাকিবো। চূড়ান্তবিচারে, ড. সলিমুল্লাহ খান সাহেবের কথাই প্রমাণিত হইলো। শাহবাগ আন্দোলনের প্রথম দিকে তিনি লিখিয়াছিলেন, যদি চলমান জামায়াত-শিবির-যুদ্ধাপরাধী বিরোধী আন্দোলনে গ্রামের কৃষক আর শহর-মফস্বলের শ্রমিক শ্রেণিকে যুক্ত করা সম্ভব হয়, তাহা হইলে এই সব দেশ-বিরোধী, সমাজ-বিরোধীদিগ পালাইতে পথ পাইবেনা। তাহা না হইলে আন্দোলনের শেষ পরিণতি কী হইবে বলা মুশকিল। আজ দেখিতে পাইতেছি, প্রায় সেই কার্যই চক্ষুর সম্মুখে চলিতেছে, শুধু বিপরীত দিক হইতে। জামায়াত-এ-এসলামি অত্যন্ত সফলতার সহিত সেই কার্যটি করিয়াছে। তাহারা সর্বস্থানে না হইলেও, স্থানে-স্থানে, গ্রামের কৃষক আর মফস্বলের নিম্ন-মধ্যবিত্ত খাটিয়া খাওয়া মানুষের ভেতরে তাহাদের একটি প্রভাব বলয় গড়িয়া তুলিয়াছে। তাহা চাকুরি-ব্যবসা-কাজ ইত্যাকার সুযোগ-সুবিধা দিয়াই হোক, আর ধর্মের ভয়, বিবিধ প্রপাগান্ডা, বা সাঈদি’র ক্যাসেট কিংবা চন্দ্রপৃষ্ঠে তাহার বদন-মোবারক প্রদর্শন করাইয়াই হোক। দূরদর্শনে দেখিতেছি আর খবরের কাগজে পড়িতেছি, উত্তর বঙ্গের দুইটি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিভাগ, আর খুলনা বিভাগের দক্ষিণ অংশের জেলাগুলিতে আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা, চাষা-মজুর-ছেলে-বুড়ো অনেকেই জামায়াতের বিষের বাঁশিতে মন্ত্রমুগ্ধ হইয়া পথভ্রষ্ট পতঙ্গের মতন হুতাশনের বুকে অকাতরে ঝাপাইয়া বৃথাই জীবনত্যাগ করিতেছেন। কিন্তু এই দুর্দশা কি রূপে আসিলো, কি করিয়া দেশের একটি বৃহত অংশে বহু স্বাধের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্তবুদ্ধির এই বিপর্যয় ঘটিলো? সে কি শুধুই ধর্মের বড়ি খাওয়াইয়া? তাহা কি শুধুই চাষী কল্যাণ সমিতির কেরামতি? ইহাতে কি আর কাহারো অবদান নাই? সবার প্রথমে জামায়াতের এই সাফল্যের ভাগীদার করিতে চাই মহাজোট সরকারকে, তাহা তাহারা চাহেন আর নাই চাহেন। দেখা যাইতেছে, তাহাদের কোনই হোমওয়ার্ক নাই। গত চার বছর ধরিয়া তাহারা তবে কী কাজটি করিয়াছেন? তাহারে কি গ্রামে-গঞ্জে গিয়া-গিয়া সাধারণ মানুষকে বুঝাইয়াছেন, বেয়াল্লিশ বছর পার হইয়া গেলেও কেনো ’৭১ এর পাপীদের বিচার করা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্য জরুরী? তাহারা কি মফস্বল-টাউনের লোকদিগের সাথে কথা বলিয়া তাহারা বিচারের ব্যাপারে কি মনে করেন বা কি উপদেশ দেন তাহা জানিতে চাহিয়াছেন? মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস আর রাজাকার-আল-বদর-আল-শামস বাহিনীর কৃত অপরাধের কথা সবিস্তারে আপামর জনসাধারণকে পুনরায় স্মরণ করাইয়া দিয়াছেন? বিশেষ করিয়া যে সকল বড় বড় গাদ্দারদিগকে আটক করিয়া বিচার করা হইতেছে, তাহাদের ভূমিকা ও আসল রূপ কি আদ্বিজচন্ডালের সম্মুখে নূতন করিয়া উদ্ঘাটন করিতে কোনো প্রয়াস লইয়াছেন? জানি, উত্তরে বিভীষিকাময় নীরবতা ব্যতীত আর কিছুই মিলিবে না। আন্তর্জাতিক ভাবে যেমন মিডিয়া-প্রচারণায় আর লবিং-এ আওয়ামী-সরকার জামায়াতের নিকট পরাজিত হইয়াছেন, ঠিক তেমনই পরাজিত হইয়াছেন দেশের মানুষের কর্ণে নিজেদের কথা ও যুক্তি পৌছাইয়া দিতে। ঢাকা শহরই কেবল দেশ নহে, তাহার বাহিরেও হাজার-হাজার বর্গমাইল রহিয়াছে।

তাহার পর আসিতেছে দেশের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক দলসমূহের ভেতর আলোচনা, বোঝা-পড়া, আর ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে জামায়াতকে কোণঠাসা করিবার প্রশ্নটি। এসলাম-পন্থী দলগুলির কথা না হয় বাদই দিলাম, বিএনপি ও তাহার সমমনা গণতান্ত্রিক দলসমূহের সহিত কি যুদ্ধাপরাধের বিচারের মত এত বড় একটি ইস্যু নিয়া বিন্দুমাত্র কোন আলোচনা চলিয়াছে? আমরা পছন্দ করি আর নাই করি, তাহারা যে দেশের প্রায় ৩৫-৪০ ভাগ লোকের প্রতিনিধিত্ব করেন, তাহা তো অস্বীকার করিবার কোনো উপায় নাই। তাহার বদলের কি দেখিলাম? সরকার তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুকে কেন্দ্র করিয়া রাজনীতির যুদ্ধক্ষেত্র দ্বিতীয় ফ্রন্টটি খুলিলেন। য়ুরোপের সমস্ত বৃহত বৃহত শক্তির সহিত সমর বাঁধাইয়া নেপোলিয়নের ন্যায় মহান সমর আর রাষ্ট্রনায়ক শেষ পর্যন্ত পরাজিত হইয়াছিলেন। পূর্ব্ব আর পশ্চিমে রণাঙ্গন খুলিয়া ইতিহাসের নৃশংসতম ন্যাতসি বাহিনী অবধি হারিয়া গিয়াছিলো। সেই একই ভুল করিলো আওয়ামী লীগ। তাহারা গাছেরটাও খাইতে চাহিলেন, আবার তলারটিও কুড়াইতে গেলেন। ফলে যুদ্ধাপরাধীদিগের বিচারের মতন ইতিহাসের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে কোন জাতীয় ঐক্য হইলো না, জাতির আকাশ হইতে দুর্যোগের ঘনঘটাও সরিলো না। লীগ সরকারের উচিত হয়ে নাই এই বিচার লইয়া রাজনীতি করা, উচিত হয় নাই ইহা লইয়া দর কষাকষি করিয়া ভোটের সমীকরণ মিলাইতে যাওয়া, উচিত হয় নাই ইহাকে নির্বাচন জিতিবার ট্রামকার্ড হিসাবে ব্যবহার করিতে চাওয়া। তাহাতে হিতে বিপরীত হইয়াছে, আম-ছালা উভয়ই গিয়াছে; লাঠি ইতমধ্যে ভাঙ্গিয়া গিয়াছে, কিন্তু দেখিতে পাইতেছি, কালনাগিনী অদ্যবধি ফনা বিস্তার করিয়া উদ্যত রহিয়াছে। মহাকালের ভাগ্যদেবী আমাদিগকে একটি সুবর্ণ হরিণ দান করিয়াছিলেন, তাহা আমারা বোধকরি লোভ-হিংসা-মোহ ইত্যাদি রিপুর যুপকাষ্ঠে বলি দিয়া ফেলিতেছি। এখনো সময় আছে কি নাই তাহা আমার ন্যায় অর্বাচীন কহিতে পারিবে না, তাহা নির্ধারন করিয়া রাহুমুক্তির আশু পথ-প্রদর্শন করিতে হইবে সুধী ও সাধু জনকেই।

পরিশেষে শুধু এইটুকুনই বলিবো, এই বিশাল কর্মযজ্ঞে, কৃষক-শ্রমিকের মাঝে কার্যের ক্ষেত্রে বামপন্থি-প্রগতিশীল শক্তির কি দশা বা ভূমিকা বা বর্তমান অবস্থা তাহা শহরের বালাখানায় বসিয়া আমার পক্ষে মন্তব্য করা সমীচিন হইবে না, তাহা যেন একটু কষ্ট করিয়া আমার সার্বক্ষণিকের পেশাদার মার্ক্সবাদী বন্ধুগণ নিজেদের কাছে প্রশ্ন রাখিয়াই জানিয়া লন। শুদ্ধ বলিবো, আপনারাই আমাদিগের শেষ ভরসা, আশাহত করিবেনা।

০৪/০৩/১৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×