somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফ্যাশন কারখানা

১৫ ই এপ্রিল, ২০১১ রাত ৮:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


 ফ্যাশনের বাইরে বোকা হবার চেয়ে বরং ফ্যাশনের মধ্যে বোকা হওয়া ভালো- ইমানূয়েল কান্ট
 পোশাক কেবল বিপরীত অবস্থার দিকেই ইঙ্গিত ছুড়ে দেয়- কার্ল মার্কস

এ লেখাটি ডঃ আজফার হোসেনের ফেসবুকের নাতিদীর্ঘ প্রবন্ধের ছায়া অবলম্বনে তৈরী। উদ্ধৃতিগুলো যখন অনুবাদ করছি, তখন নব্য-ইউরোপ কেন্দ্রিকতার আশংকা আষ্ঠেপিষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে। কিন্তু আমি এও জানি যে, আমরা এমন এক সময়ে বাস করি, যখন পশ্চিমা বুদ্ধিজীবীদের সমালোচনা নিত্যকার ঘটনা, যুগের চাহিদা। অনেক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও, এ দু’জন দার্শনিক আমাদের চেতনার প্রতিষ্ঠানিক নিষ্পেষণ ও বঞ্চনার কথা ঐতিহাসিকভাবে তুলে ধরেছেন বেশ জোরালোভাবেই।

যদি প্রশ্ন করা হয় ফ্যাশন ও অর্থনীতির মধ্যে সম্পর্ক কী ? ফ্যাশন কী রাজনীতি নিরপে কোন বিষয়? সমাজে প্রশ্নহীন কিশে যাপনে আমরা যেভাবে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি তাতে এমন খোঁড়াখুঁড়ি বাস্তবতার ভিন্ন আঙ্গিঁক আমাদের সামনে খুলবে এমন আশা থেকেই কথাগুলো বলা। আর এদেশে চিন্তু-চর্চা যেভাবে নানা ইজম ও পীর-মুর্শিদে বন্দী হয়ে আছে কেউ সহজে ‘নির্দিষ্ট-রশি’ হাতছাড়া করতে চান না। বিষয়টি রাজনীতি-অর্থনীতির জায়গা থেকে দেখলে কেমন লাগবেÑ এমন অনুভব থেকেই প্রশ্নটি তোলা। ফ্যাশনোলজি নামে অক্সফোর্ড প্রকাশনা থেকে ছাপা হয় এ সংক্রান্ত একটি বই, ২০০৫ সালে। লিখেছেন ইয়ূনিয়া কাওয়ামুরা। বইটিতে ফ্যাশনকে একটি প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাবস্থা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এটিতে দেখানো হয়েছে ফ্যাশন কিভাবে আইডিয়া বা ধারণা তৈরি থেকে নিত্য ব্যবহার্য সকল বিষয়কে তার অঙ্গঁ-সহযোগী প্রতিষ্ঠান-সমূহের চর্চার মধ্যে দিয়ে হাজির রাখে। এতে আরও বলা হয়, মানুষের আবেগ ও বিশ্বাসকে কিভাবে সামাজিক উৎপাদন প্রক্রিয়ার মধ্যে গেঁথে ফেলা হয়। ফলে যাপন হয়ে ওঠে এ পদ্ধতিরই অংশ। উদাহরণস্বরূপ, মানুষের পরিধেয় সকল পোশাক-আশাকই এক ধরনের রূপান্তর প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যায়Ñ যেসবের গায়ে ফ্যাশন নামক লেবেল সেঁটে থাকে।

ওহ! দারুন বলেছেন ইয়ূনিয়া। বেশ কিছুদিন আগে রোঁল্যা বার্থের লেখা দি ফ্যাশন সিষ্টেমের (১৯৬৭) কথা এখানে স্মরণযোগ্য। বইটিতে বার্থ আধুনিক-পুরাণের (গড়ফবৎহ গুঃয) ধারণাটি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে পোশাক ডিজাইনারকে ‘জিনিয়াস’ হিসাবে তুলে ধরার প্রয়োজনের মূল-কারণ ব্যাখ্যা করেন। এ ধরণের নয়া আধুনিক-পুরানের জন্য ডিজাইনারকে নিয়ে ফাকানো বুলির রহস্য তুলে ধরেন তিনি। বার্থ বলেন, শেষ বিচারে ফ্যাশন কখনই ব্যক্তিগত পছন্দের ব্যাপার নয় যা প্রায় প্রত্যেকেই ভাবতে অভ্যস্ত। বরং উল্টোটি সঠিক। ফ্যাশন মানেই সামষ্টিক বিষয় যা এর অন্তর্গত উৎপাদন-সম্পর্কের মতাদর্শকেই নানা ভাবে উৎপাদন ও পুনরুৎপাদন করছে। এেেত্র কেউ বার্থের মিথলজিস বইটির কথাও স্মরণ করতে পারেন। লেখায় কওয়ামুরাকে বার্থের লেখার বেশ ভক্ত মনে হলো। ইতালীয় মার্কসবাদী তাত্ত্বিক এন্থোনিও গ্রামসির কথাও উল্লেখ করা বাদ দেননি তিনি। বিশেষত: ফ্যাশনের মতাদর্শকে আধিপত্যবাদী কাঠামোর মধ্যে জায়গা করে নেয়ার প্রক্রিয়ার কথা উল্লেখ করেছেন বেশ জোর দিয়েই।

কিন্তু এতো কিছুর পরও পশ্চিশা ফ্যাশন কারখানা বৈশ্বিক পোশাক, সঙ্গীত ও তত্ত্বের দুনিয়াতে কি করে নিজেকে জারি রেখে পুনঃকেন্দ্রিকতা তৈরি করছেÑ তার কথা তিনি বলেননি। আর এও বলতে ভুলে গেছেন যে, এসবের ফলে মতা-সম্পর্কের পশ্চিমা কর্তাসত্তাই পুনরুৎপাদিত হচ্ছে। সারা দুনিয়ার ‘রুচি’ তৈরিতে পশ্চিমা এ ‘স্বাভাবিক’ আধিপত্যের কথা না-বলে নিরবতায় তা অস্বীকার করেছেন বললে অত্যুক্তি হবে কি?
তারিখ ঃ ১৭/০৩/২০০৯
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসলামে পর্দা মানে মার্জিত ও নম্রতা: ভুল বোঝাবুঝি ও বিতর্ক

লিখেছেন মি. বিকেল, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১:১৩



বোরকা পরা বা পর্দা প্রথা শুধুমাত্র ইসলামে আছে এবং এদেরকে একঘরে করে দেওয়া উচিত বিবেচনা করা যাবে না। কারণ পর্দা বা হিজাব, নেকাব ও বোরকা পরার প্রথা শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×