somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শেয়ারবাজার তদন্ত প্রতিবেদন প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা

১৫ ই এপ্রিল, ২০১১ বিকাল ৪:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

http://barta24.net/news/8760


নিজস্ব প্রতিবেদক
বার্তা২৪ ডটনেট
ঢাকা, ১৫ এপ্রিল : সাম্প্রতিক পুঁজিবাজার কেলেঙ্কারির কারণ খতিয়ে দেখতে সরকার গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে জড়িত হোতাদের বাঁচাতে অপচেষ্টা চলছে। প্রতিবেদন ও তদন্ত কমিটির প্রধানের বিরুদ্ধে অসমাঞ্জস্যপূর্ণ সমালোচনার মাধ্যমে প্রতিবেদনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাচ্ছে জড়িত ও তাদের সহযোগীরা।

এর ফলে পুঁজিবাজারে সাধারণ মানুষের বিনিয়োগ আবারো হুমকির মুখে পরবে বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

এসইসি’র সাবেক চেয়ারম্যান ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বার্তা২৪ ডটনেটকে বলেন, ‘‘তদন্ত প্রতিবেদনে কোনো অসম্পূর্ণতা থাকলে তা নিয়ে কথা বলা অন্যায় কিছু নয়। তবে এটাকে মূল ইস্যু বানিয়ে প্রতিবেদনের মৌলিক বিষয়গুলোকে বিতর্কিত করার চেষ্টা কারোই কাম্য হতে পারে না।’’

‘‘তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে বিভিন্ন মহলে কী ধরনের আলোচনা হচ্ছে সেটা বড় কথা নয়। মূল বিষয় হলো সরকার বিষয়টি নিয়ে কী ভাবছে’’, বলেন তিনি।

মির্জা আজিজুল ইসলাম আরো বলেন, ‘‘তদন্ত প্রতিবেদনে যাদের অভিযুক্ত করা হয়েছে সরকারের দিক থেকে তাদের আড়াল করা বা রক্ষা করার কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।’’

‘‘তদন্ত প্রতিবেদনের সামগ্রিক দিকগুলো বিবেচনা করে সরকার সঠিক পদক্ষেপ নিতে চাইলেই কোনো বিশেষ মহলেরও নেতিবাচক প্রচারণায় খুব বেশি লাভ হবে বলে মনে হয় না’’ বলে মনে করেন তিনি।

পুঁজিবাজারে বিশাল দুর্নীতির চিত্র মাত্র দুমাস সময়ে তদন্ত করা কার্যত কঠিন। কিন্তু তারপরও তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে সংগঠিত দুর্নীতির সবগুলো দিক নিয়েই পর্যালোচনা করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

প্রতিবেদন অর্থমন্ত্রীর কাছে পেশ করার আগে তদন্ত কমিটির প্রধান খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘সময় সীমিত হলেও আমরা কখনোই দায়সারাভাবে কাজ শেষ করতে চাইনি। শুরু থেকেই আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্ত শেষ করার বিষয়ে সচেতন ছিলাম। এ কারণে কম সময়ে সবচেয়ে বেশি কাজ করার চেষ্টা করেছি।’’

‘‘এমন একটি প্রতিবেদন তৈরি করতে চেয়েছি যাতে সরকার চাইলে পুঁজিবাজারে কারসাজির কারণ ও এর নেপথ্যে থাকা ব্যক্তিদের সহজেই শনাক্ত করতে পারে।’’

‘‘পাশাপাশি সরকার ইচ্ছা করলে তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পুঁজিবাজারের আমূল সংস্কার সাধন করতে পারবে, যা কারসাজি বন্ধের ক্ষেত্রে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব রাখতে সক্ষম’’ বলেছেন ইব্রাহিম খালেদ।

সরকারিভাবে না হলেও মিডিয়ার কল্যাণে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, বড় ধরনের কারসাজি ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিভিন্ন লেদদেনের তথ্য এবং পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক সীমাবদ্ধতা ও শৈথিল্য সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

সময় স্বল্পতার কারণে প্রতিটি সমস্যা চিহ্নিত করতে গিয়ে দৈবচয়ন ভিত্তিতে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘‘পুঁজিবাজারে সংঘটিত বিপুল অনিয়ম-অনৈতিকতা এবং অনিয়ম-অনৈতিকতার সঙ্গে জড়িত বিশাল অঙ্কের লেনদেন পর্যালোচনায় তদন্ত কমিটির অনুমিত হলো, এ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি বিদ্যমান। একেকটি লেনদেন তদন্ত করে দুর্নীতি নিরূপণ করা বেশ সময় সাপেক্ষ। সামগ্রিক লেনদেন তদন্ত করে দুর্নীতির সামগ্রিক চিত্র উন্মোচন অসম্ভব না হলেও তাতে কয়েক বছরের কর্মপরিকল্পনার প্রয়োজন। তাই তদন্ত কমিটি অল্প কয়েকটি নমুনা হিসাবের লেনদেন পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেয়। এত অল্পসংখ্যক নমুনায় দুর্নীতি থাকতে পারে, নাও থাকতে পারে, কারণ সব হিসাবেই দুর্নীতি থাকে না। তবে পরীক্ষান্তে কমিটি নিশ্চিত হয়েছে যে, এত অল্প নমুনার মধ্যেও দুর্নীতি প্রমাণিত হয়েছে। দুর্নীতির নির্দেশক হিসেবে সুনির্দিষ্টভাবে প্রাপ্ত তথ্যগুলো পরিবেশিত হলো। এসইসি পুনর্গঠিত হয়ে সক্ষমতা অর্জন করলে, একই প্রক্রিয়ায় সংস্থাটি সন্দেহজনক লেনদেন হিসাব পরীক্ষাকার্য গ্রহণ করতে পারে।’’

প্রতিবেদনে কয়েকটি ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করতে না পারলেও অনেকের সম্পর্কে প্রাথমিক তথ্য দেয়া হয়েছে। এসব তথ্য উল্লেখ করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারের পক্ষ থেকে অধিকতর তদন্তে সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।

প্রতিবেদন পাওয়ার পর ৭ এপ্রিল বিকেলে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, “প্রতিবেদনে যাদের নাম এসেছে তাদের বিষয়ে অধিকতর তদন্তে পর প্রমাণিত হলে অবশ্যই শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।”

গত বুধবার অর্থমন্ত্রী বলেন, “ফৌজদারি (ক্রিমিনাল অফেন্স) কোনো অপরাধ সংগঠিত হয়ে থাকলে সে হিসেবেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।”

ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা মনে করেন, মিডিয়ায় তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর প্রতিবেদনে কী আছে এবং এর ভিত্তিতে সরকারের পক্ষ থেকে কী ধরনের পদক্ষেপ নেয়া উচিত, সেসব আলোচনা বাদ দিয়ে এখন প্রতিবেদনের অসম্পূর্ণতাকে মূল আলোচ্য বিষয়ে পরিণত করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে।

তারা আরো বলছেন, তদন্তে মাধ্যমে যেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রমাণ পাওয়া যায়নি তাদের বিষয়ে নেতিবাচক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এমন ব্যক্তির নাম না থাকা নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে যার কাছ থেকে জড়িতরা পদে পদে বাধার সম্মুখীন হয়েছে। কিন্তু এখতিয়ার না থাকায় তার পক্ষ পুরোপুরি ভেটো দেয়া সম্ভব হয়নি।

দেখা যাচ্ছে, একইসঙ্গে তদন্ত কমিটির সদস্যদের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। প্রশ্ন তোলা হচ্ছে তদন্ত কমিটির প্রধানের সততা নিয়েও।

তদন্ত কমিটির কার্যপরিধির বাইরের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশদ পর্যালোচনার বিষয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে কমিটি প্রধানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আগের পদে থাকার বিষয়টি উত্থাপন করে। যদিও তদন্ত প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংক, এসইসি ও স্টক একচেঞ্জের সমন্বয়হীনতাও যে বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টিতে ভূমিকা রেখেছে সে বিষয়টিও স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

এমনকি এসইসি ও স্টক একচেঞ্জের যেসব কর্মকর্তা তদন্ত কাজে সহযোগিতা করেছেন তাদের নানাভাবে চাপের মুখে ফেলা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

নাম না প্রকাশের শর্তে শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট স্বন্যামখ্যাত এক বিশ্লেষক বার্তা২৪ ডটনেটকে বলেন, “অর্থমন্ত্রীর এমন উক্তি ও সরকারের পক্ষ থেকে এখন শেয়ার কেলেঙ্কারির সাথে জড়িতদের বিষয়ে জোরালো কোনো অবস্থান না নেয়ার প্রেক্ষাপটেই জড়িতরা তাদের অনুচরদের দ্বারা সমালোচনার পাহাড় গড়ে তুলছেন।”

তিনি বলেন, ‘‘সরকারের দীর্ঘসূত্রিতার সূযোগ নিয়ে অনেকটা ‘বলতে বলতে মিথ্যাও সত্য হয়ে যায়’ প্রবাদকে কাজে লাগানোর পদ্ধতি নেয়া হয়েছে।’’

খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ, তদন্ত প্রতিবেদন, প্রতিবেদনে নাম না আসা বাজার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সম্পর্কে আক্রমণাত্বক সমালোচনার কারণে কিছুটা আতঙ্কগ্রস্ত হওয়ায় এই বাজার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি তার নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যাড গাই গুড গাই

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

নেগোশিয়েশনে একটা কৌশল আছে৷ ব্যাড গাই, গুড গাই৷ বিষয়টা কী বিস্তারিত বুঝিয়ে বলছি৷ ধরুন, কোন একজন আসামীকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে৷ পারিপার্শ্বিক অবস্থায় বুঝা যায় তার কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

টান

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২২


কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর
বিচ্যুতি ঠেকা‌তে ছু‌টির পাহাড়
দিগন্ত অদূর, ছ‌বি আঁকা মেঘ
হঠাৎ মৃদু হাওয়া বা‌ড়ে গ‌তি‌বেগ
ভাবনা‌দের ঘুরপাক শূণ্যতা তোমার..
কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর।
:(
হাঁটুজ‌লে ঢেউ এ‌সে ভাসাইল বুক
সদ্যযাত্রা দম্প‌তি... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরী

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৯

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরীঃ


১। নিজের সিভি নিজে লেখা শিখবেন। প্রয়োজন অনুযায়ী কাস্টোমাইজ করার অভ্যাস থাকতে হবে। কম্পিউটারের দোকান থেকে সিভি বানাবেন না। তবে চাইলে, প্রফেশনাল সিভি মেকারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৫

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না
অহনা বলেছিল, আমি জানি আমি তোমাকে পেয়েছি সবখানি
আমি তাই নিশ্চিন্তে হারিয়ে যাই যখন যেখানে খুশি

অহনা বলেছিল, যতটা উদাসীন আমাকে দেখো, তার চেয়ে
বহুগুণ উদাসীন আমি
তোমাকে পাওয়ার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিয়াল ফিলিস্তিনীরা লেজ গুটিয়ে রাফা থেকে পালাচ্ছে কেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১১ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



যখন সারা বিশ্বের মানুষ ফিলিস্তিনীদের পক্ষে ফেটে পড়েছে, যখন জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে সাধারণ সদস্য করার জন্য ভোট নিয়েছে, যখন আমেরিকা বলছে যে, ইসরায়েল সাধারণ ফিলিস্তিনীদের হত্যা করার জন্য আমেরিকান-যুদ্ধাস্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×