-কালকের খেলাটা দেখেছো?
-না।
-সারাদিন পড়ো তাই না?
-না তো।
-তাহলে খেলা দেখো না কেনো?
আমি ক্লাস সেভেনে এই স্কুলে আসি।এসেই নওশিন নামের মেয়েটার সাথে বন্ধুত্ব।সে খেলা পাগল মেয়ে।বাংলাদেশের এমন কোন ম্যাচ নাই সে দেখে নাই।খুব ভাল লাগত ওকে।একসাথে বসতাম।কিন্তু ওর কথা বার্তার প্রধান প্রসংগ থাকত ক্রিকেট খেলা।ঐ ম্যাচে কে ভাল করল,সেই ম্যাচে কে খারাপ করল এই সব।কিন্তু আমি তখনও ক্রিকেট খেলার তেমন কিছুই বুঝি না।তাই খেলা দেখার আগ্রহও তেমন পাই না।বুঝলাম,ওর সাথে কথা চালিয়ে যেতে হলে আমারও খেলা দেখতে হবে।
শুরু করলাম খেলা দেখা।বুঝতে শুরু করলাম খেলার খুটি-নাটি।তারপর সারাক্ষন খেলা নিয়ে কথা-বার্তা।
নওশিন যদি ক্রিকেট পাগল না হত তাহলে জানি না আমি এখন ক্রিকেটের
এতো বড় ভক্ত হতাম কিনা।এখন আমি বাংলাদেশের কোন ম্যাচই বাদ দেই না।যত কিছুই হোক খেলা আমি দেখিই দেখি।এজন্য এবার অন্য অনেক ফ্রেন্ডদের কাছ থেকে কত কথা শুনতে হয়েছে!!এই যেমন…”তুই এখনো খেলা দেখিস?”,”আজকে পদার্থ পরীক্ষা আর তুই কালকে রাতে খেলা দেখেছিস?”আমার কথা শুনে ওরা যতটা অবাক হয়েছে,আমি ওদের কথা শুনে ঠিক ততটাই অবাক হয়েছি।কারন,এস এস সি পরীক্ষা বলে কি খেলা দেখা বাদ দিব??অবশ্য খেলা দেখার সময় মাথায় দুটো টেনশন একসাথে ঘুড়ত।একটা,পরের পরীক্ষা নিয়ে।অন্যটা খেলা নিয়ে।
আমাকে অবশ্য খেলা দেখার জন্য কেউ কিছুই বলত না তখন।কারন সবাই জানে,খেলা বাদ দিয়ে পড়লেও আমার কোন কাজ হবে না।মনটা খেলাতেই পড়ে থাকবে!সবার লাই পেয়ে আমিও দেখেছি খেলা।কোন বকা-ঝকা খাওয়া ছাড়া খেলা দেখলেও নওশিনকে ছেড়ে দেই নি।মনে মনে অনেক বকেছি।কারন ওই তো আমাকে এমন করেছে!সব দোষ তো ওরই!
ওর সাথে শেষ ক্লাস করলাম ক্লাস নাইনে।আমরা বিজ্ঞান বিভাগ নিব।সবাই খুশি।নওশিনও খুশি।
সেদিন দেরী হয়ে গেলো স্কুলে যেতে।স্কুল মাঠে সবাই লাইনে দাঁড়িয়ে আছে।আমি দৌড়ে ক্লাসে গেলাম ব্যাগ রাখতে।নওশিনের ব্যাগ খুজলাম।ওর পাশেই বসব।কিন্তু অনেক খুজেও ওর ব্যাগটা খুজে পেলাম না!ভাবলাম নতুন ক্লাস,হয়ত নতুন ব্যাগ নিয়ে এসেছে।ব্যাগ রেখে লাইনে দাড়াতে এলাম।খুজে বের করলাম ওকে।
-কি রে?নতুন ব্যাগ আনলি নাকি?
-না তো!
-তাহলে ব্যাগ কোথায়?পেলাম না কেন?
-আমি গ্রুপ চেঞ্জ করেছি।
-কি বলিস? কেনো?
ও আমাকে বোঝানো শুরু করল কেনো সে গ্রুপ পরিবর্তন করল।কিন্তু আমি কিছুই বুঝি নি।আমি বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না!!
সেই আলাদা হলাম আমরা।তবুও টিফিনে কথা বলতাম নিয়মিত।পাশাপাশি ক্লাস হলেও কেন যেন এক ক্লাসের মেয়েরা অন্য ক্লাসে যেত না।আমি যেতাম।ও-ও আসত।কিন্তু টেনে উঠে যেন সবাই ব্যস্ত হয়ে গেলাম।টিফিনেও সময় পাই না।মোবাইলের যোগাযোগও কমে আসল।একসময় আমাদের বাসার নাম্বার পরিবর্তন হল।ওর ফোন নাম্বারও পাল্টালো!
চলে এলো এস এস সি পরীক্ষা।ভাবলাম এবার নিব নাম্বার।যোগাযোগটা তো থাকবে।কিন্তু দুইজনের কেন্দ্র আলাদা।কথাও হল না।
জানি না,আমার মত ও-ও খেলা নিয়ে এতো হইচই করেছে কিনা!!!
জানি না,আমার মত ওরও আমাকে এতো মনে পড়ে কিনা।
জানি না,আমাদের সেই আড্ডা নিয়ে এখনো ভাবে কি না ও!!
নশু,
বলে রাখলাম…আমাকে যদি মনে না করিস…আমাকে যদি ভুলে যাস…তাহলে কিন্তু তুই মাইনাচ!!!
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুন, ২০১১ সকাল ১১:৪১