somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাড়াদেশ মত্ত এক লোহিত উৎসবে

১৪ ই এপ্রিল, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




আমার ছোটবেলায় পহেলা বৈশাখের পোষাকের রঙে লাল আবশ্যিক ছিলো না। আমার বয়স চৌত্রিশ। আমার ছোটবেলাটা আজ থেকে বাইশ থেকে উনত্রিশ বছর আগে। নারায়ণগঞ্জের টানবাজারে আমাদের সুতার গদি ছিলো। পহেলা বৈশাখে আমরা ঈদের মতোই নতুন জামা কাপড় পেতাম। বৈশাখের দিন সকালে গোসল করে যেতাম গদিতে। সেখানে মিলাদ পড়ানো হতো। মিষ্টি বিতরন হতো। হালখাতা হতো। আমরা মিষ্টি খেয়ে, মিষ্টি নিয়ে বাসায় ফিরতাম। বাসায় ফিরলেও পহেলা বৈশাখে আমরা মহলস্নার বিভিন্ন বাসায় বেড়াতে যেতাম। অন্যরাও আমাদের বাসায় আসতো। যাদের ব্যবসা আছে তারা মিষ্টি নিয়ে আসতো। পানত্দার প্রচলন ছিলো না। বাসায় পোলাও-মাংস রান্না হতো। সাড়াদিন যারা আসতো তারা খেতো। আমরাও কোন বাসায় গেলে প্রথমে মিষ্টি পরে পোলাও-মাংস বা চিকন চালের ভাতের সাথে মাংস সাধা হতো। বিকেলে আমরা যেতাম 'বাননি'তে। দেওভোগ আখড়ার বাননি চলে পুরো বৈশাখ মাস জুড়ে। প্রায় সোয়া দু'শ বছর ধরে একই নিয়মে চলছে এ মেলা। এ শহরের নাম 'নারায়ণগঞ্জ' রাখার দিন থেকে শুরম্ন হয়েছে এ মেলা। তখন ঢাকায় ছায়ানটের অনুষ্ঠান হয়। আমরা মাঝে মধ্যে রেডিও টিভিতে সে খবর পাই।
তবে চৈত্র-বৈশাখের গরমে আমরা পানত্দা ভাত খেতাম 'পেট ঠান্ডা' রাখার জন্য। পরে আসত্দে আসত্দে বৈশাখের প্রথম দিনে সকালে পানত্দা খাওয়া উৎসবের অঙ্গ হয়ে উঠলো। বৈশাখের পোষাকে লাল থাকবে এ বিষয়টি এসেছে আরো অনেক পরে। বোধ হয় পাঁচ-সাত বছর হবে। আসত্দে আসত্দে এটি বেশ গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে। বৈশাখের পোষাকে লাল কিভাবে ঢুকলো কে জানে। আজ সকালে নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বর্ষবরনের অনুষ্ঠানে ঢোকার সময় দেখলাম শহীদ মিনারের কৃষ্ণচুড়া গাছগুলিতে অপ্রস্ফুটিত কৃষ্ণচূড়া। কৃষ্ণচূড়ার লাল রঙটি-ই হয়তো কেউ ব্যবহার করেছিলো পহেলা বৈশােখর পোশাকের রঙ হিসেবে। আসত্দে আসত্দে এটি গ্রহণযোগ্য হয়ে গেছে। আজ সাড়াদিন রাজপথে মানুষের স্রোত। অনুষ্ঠানকেন্দ্রগুলিতে মানুষের উপচে পড়া ভীড়। টিভিতে দেখলাম সাড়া দেশেই এ অবস্থা। আর এ উৎসব উচ্ছল মানুষের পোষাকের বেশিরভাগ লাল। নইলে অন্য রঙের সাথে রয়েছে লালের ছটা। সাড়া দেশ যেন মত্ত এক লোহিত উৎসবে।



আমার ছোট বোন বলল ১৪০০ সালের পর পহেলা বৈশাখের উৎসবের এমন বিপুল ব্যাপ্তি আর সে দেখেনি। আমারও আজ তাই মনে হয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে উৎসবের ব্যাপ্তি বাড়ছিলো। কেন এ ক্রমাগত ব্যাপ্তি? আমার ছোটবেলায় নারায়ণগঞ্জে বৈশাখের অনুষ্ঠান হতো একটি বা দু'টি। মানুষজন সেখানে যেতো খুব কম। কিন্তু আজ নারায়ণগঞ্জে বৈশাখ উপলৰে আমার জানামতেই শতাধিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও জিয়া হলে বৈশাখের অনুষ্ঠানে এ মূর্হূতে (১ লা বৈশাখ, সন্ধা সাতটা) প্রচন্ড ভীড়। ছোটবেলায় আমরা পহেলা বৈশাখে আত্মীয় প্রতিবেশিদের বাসায় বাসায় বেড়াতে গেলেও আজ সাড়াদিনেও আমার বাসায় কেউ আসেনি। অর্থনৈতিক কারনে যৌথ পরিবার ভেঙ্গে গেছে। কোন মহলস্নায় মানুষে মানুষে যে সামাজিক বন্ধন তা-ও কমে গেছে। তাই উৎসবের প্রকৃতিও বদলে গেছে। বাংলা নববর্ষের এ উৎসবে মিলিত হতে মানুষ কারো বাসায় না গিয়ে আসছে পথে। মিলনায়তনে। অনুষ্ঠান কেন্দ্রে।্এটাও একরকম ভালো। পান্তার প্রচলনটাও ভালো। পান্তা সবাই খেতে পারে। পোলাও-মাংস এখন অনেকের পবক্ষই অসম্ভব। পান্তা দিয়ে শুধু লবন মেথখ খাওয়া থেকে শুরু করে যেকোন কিছু দিয়ে খাওয়া যায়। পোলাও যেকোন কিছু দিয়ে খাওয়া যায় না। যদি আমার এ বিশেস্নষন সত্যি হয় তবে আগামী দিনে পহেলা বৈশাখের উৎসব আরো ব্যাপক হবে। এমনও হতে পারে ব্যাপকতার দিক থেকে বৈশাখি উৎসব ঈদকে ছাড়িয়ে যেতে পারে। কারণ ঈদ সার্বজনিন না। বৈশাখ সার্বজনিন।
অন্যদিকে বাংলাদেশ একটি ভূমিকম্পের দ্বারপ্রানত্দে দাড়িয়ে আছে। ভূমিকম্পে ঢাকা ও আশেপাশের এলাকা মহামৃত্যুর নগরীতে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ভূমিকম্প লন্ডভন্ড করে দিতে পারে সাড়াদেশকে। একমাত্র এ প্রাকৃতিক দূর্যোগটি আগামী দিনে বৈশাখের ক্রমাগত ব্যাপকতাকে থামিয়ে দিতে পারে বলে মনে হয়। কারণ টিকে থাকার তাগিদে মানুষ তখন আবার একত্রিত হবে। বাধ্য হবে শহরত্যাগি হতে। তবে সেটা সাময়িক। অর্থনৈতিক ব্যবস্থা এরকমই থাকলে আবারও বৈশাখের ব্যাপকতা এ অবস্থায় ফিরে আসবে।
শুভ নববর্ষ। #
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×