আগের পর্ব পড়তে নিচে লিঙ্কে ক্লিকানঃ
Click This Link
পর্ব ০২
রাত ১০ টায় ফ্লাইট কুয়ালালামপুর থেকে লন্ডন নন স্টপ। অনেক দীর্ঘ জার্নি, প্রায় ১৩ ঘন্টা ডাইরেক্ট ফ্লাইট। সাড়ে ৯ টায় গেট খুলে দিলে আমরা সবাই লাইনে দাঁড়িয়ে এক এক করে বিমানের পেটের মধ্যে ঢুকে পড়ি। বিশাল দ্বিতল বিশিষ্ট বিমান, দেখেই ভয় লাগে, এত বড় দেহ নিয়ে উড়বে কিভাবে? ঠিক মত সিট দেখে বসে পড়লাম আমি আর আমার কোরিয়ান ল্যাব মেট। বিমান ছাড়ার টাইম হয়েছে, ১০ টা বেজে গেছে, তাও বিমান ছাড়ে না! ঘটনা কি? ১০ মিন পড়ে ক্যাপ্টান ঘোষনা দিল, টেকনিক্যাল প্রব্লেম, বিমান আর ১৫ মিনিট পরেই ছাড়বে। যাইহোক এইসব মুহুর্তে সময়গুলো কাটতে চাই না, তারপর আবার মনের ভিতর একটা অজানা ভয় ঢুকে গেল, উড়ার আগেই যদি টেকনিক্যাল প্রব্লেম বলে, তাইলে আকাশে যেয়ে কি হবে? তখন যদি টেকনিক্যাল প্রবলেম হয়? যাইহোক, এইসব চিন্তা করতে করতে ১৫ মিনিট কেটে গেল, তাও বিমান ছাড়ে না। একটু পরে আবার বিমানের ক্যাপ্টেন ঘোষনা দিল, বিমানে একটু বড় ধরনের টেকনিকাল প্রবলেম, বিমান ১ ঘন্টা পরে ছাড়বে, আপনারা যারা বিমান এর বাইরে যেতে চান, তারা পাসপোর্ট জমা দিয়ে বিমান বালার কাছ থেকে একটা টোকেন নিয়ে বাইরে যেতে পারেন। আমি এই সুযোগটায় চাচ্ছিলাম। এম্নিতেই একটু টেনশন, তারপর আবার প্রাই ১৪ ঘন্টা বিমান এর ভিতরেই থাকতে হবে, তাই এই ফাঁকে ধুমপান করে আসি (আমি মাঝে মধ্যে ধুমপান করি, কোরিয়া এসে এইটা রপ্ত করেছি। বাংলাদেশে গেলে অবশ্যই ছেড়ে দিব)।
এইভাবে ৪০ মিনিট বাইরে ঘোরাঘুরি করে বিমানে আবার ফিরে আসলাম। এবং শেষ পর্যন্ত বিমান আকাশে উড়াল দিল তার সুবিশাল দেহ নিয়ে প্রায় ৫০০ যাত্রি সহ। আমরা বিমানের একটা সেকশন এর একদম পিছনের সিটে বসেছিলাম, যাতে চেয়ার টা ভাল করে ফল্ডিং করা যায়, পিছনের কেউ যাতে ডিস্টার্ব ফিল না করে। যাইহোক, অনেক সময় ধরে বিমান জার্নি, ইন ফ্লাইট এন্টারটেইনমেন্ট উপভোগ করে সময় পার করতেছিলাম। নতুন নতুন মুভি খুঁজে দেখছিলাম। একসময় বিমান বাংলাদেশের উপর দিয়ে যাচ্ছিল, তখন মনটা একটু খারাপ হয়, কারন, সেইসময় কোরিয়া তে আসা আমার ২ বছর সময় পার হয়েছিল, কিন্তু এর মধ্যে একবারো বাংলাদেশে যাই নাই। কি আর করা, জানাল দিয়ে উপর থেকে বাংলাদেশ দেখার চেষ্টা করলাম, কিছুই দেখা গেল না (৪২ হাজার ফুট উপর দিয়ে চলছিল বিমান, নিচে শুধু সাদা আকাশ।)। যাইহোক এইভাবে মুভি দেখে, বিমানের খাবার খেয়ে, একটু একটু ঘুমিয়ে সময় পার করতেছিলাম। বিমান ভারত পার হয়ে ইরান, তুর্কি পার হয়ে ইউরোপের মূল আকাশে চলে আসলো এক সময়। তখন প্রায় সকাল হয়ে গেছে। একসময় বেলজিয়ামের আকাশে বিমান আসল। তার প্রায় ঘন্টা পরে ফ্রান্সের পাশ দিয়ে ইংল্যান্ডের আকাশে বিমান চলে আসলো।
১) লন্ডনের আকাশে বিমানঃ
বিমান হিথ্রো এয়ারপোর্টে ল্যান্ড করলো। আমার মনের ভিতর এক ধরনের উত্তেজনা কাজ করতেছে। বিমানের গেট থেকে বের হয়ে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। এত লং জার্নি কী করে? কোরিয়ান ল্যাব মেট কে বিজ্ঞের মত বুঝানোর ট্রায় করলাম, ও বেচারাও খুব টায়ার্ড। ইমিগ্রেশন অফিসার বার বার আমার দিকে তাকাচ্ছিল, আর পাসপোর্ট এর ছবি মেলাচ্ছিল। এক ইয়াং অফিসার আমার ছোটখাট একটা ইন্টারভিউ নিতে শুরু করলো। কোন কনফারেন্সে যাবা, কোথায় হবে? কোন পেপার প্রেজেন্ট করবা। একসময় বলে বসল, আচ্ছা পেপারটা প্রেজেন্ট করতো? এমনিতে ক্লান্ত দীর্ঘ জার্নি, এই প্রশ্ন শুনে গেল মে্জাজ খারাপ হয়ে। আমি বললাম, আমি কি পেপার প্রেজেন্ট করব, তুমি কি বুঝবা? তুমি কি ইমেজ প্রসেসিং নিয়ে কিছু বুঝ? যাইহোক, তখন সিনিয়র অফিসার জুনিয়র টাকে থামিয়ে বলল, স্টপ, ইনাফ, ইউ ক্যান গো, হ্যাভ এ গুড টাইম ইন ইংল্যান্ড।
হিথ্রো এয়ারপোর্টের বাইরে এসে, চারিদিকে তাকিয়ে দেখলাম, সবাই ইংরেজীতে কথা বলে এমন কি ছোট বাচ্চারাও !!! হাহাহা, আসলে কোরিয়া তে থাকার জন্য ইংরেজী কথা বলা এমন পরিবেশ দেখিনাই, তাই সব কিছু কেমন জানি পরিচিত মনে হচ্ছিল। আমার কোরিয়ান ল্যাব মেট এখনতো আমার উপর পুরাপুরি ডিপেন্ডেন্ট (এর ইংলিশ জ্ঞান খুবি কম, ২/৪ টা বাক্য বলতে গেলে হাফিয়ে যায়, এখন অবশ্য অনেক ভাল হয়েছে)। আমাদের টার্গেট হল, মিডলসেক্স ইউনিভার্সিটি, হেনডন। সেন্ট্রাল লন্ডনের বাইরে। আগে থেকেই আমার সব প্রস্তুতি ছিল, টিউব ট্রেনের ম্যাপ নেট থেকে ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে নিয়ে এসেছিলাম। কোথা থেকে কিভাবে ট্রেনে করে হেনডন যাবো, সব প্রি-প্লান করা ছিল, যার জন্য কোন সমস্যা হয় নাই। ঠিক মত হেনডন স্টেশনে নেমে পড়লাম।
মিডলসেক্স ইউনিভার্সিটির ডরমিটরির দুইটা সিঙ্গেল রুম রিকুয়েষ্ট করা ছিল, তাই দুজনে ১৫*২*৩=৯০ পাউন্ড দিয়ে ৩ দিনের জন্য রুম নিয়ে নিলাম। রুম গুলো আমাদের খুবি পছন্দ হয়েছিল। একদম সব দিক দিয়ে পারফেক্ট। এই জন্য শেষ ৪ দিনের জন্য সেন্ট্রাল লন্ডনের একটা হোটেলের রুমের টাকা আগে থেকে শোধ করে রাখার জন্য আফসোস হচ্ছিল। কারন প্রথমত হোটেল ভাড়া ছিল অনেক বেশি, প্রতিদিন ৩৫ পাউন্ড করে। নেট লাইন ছিল, খুবি বাজে। রুম ছিল ৪ তলায়, অনেক পুরানো বাড়ি, তাই লিফট ছিল না। যাইহোক, আগে থেকে টাকা পরিশোধ করা থাকায় আর কিছুই করার ছিল না। ডরমে ব্যাগ রেখে একটু ফ্রেশ হয়ে দৌড়াইলাম আমার কনফারেন্সে।
২) টিউব ট্রেনের ম্যাপ এবং ট্রেনে করে হেনডন যাত্রাঃ
৩) আমার ডরমের রুমঃ
৪) আমার কনফারেন্স ভেন্যু এবং এর আসে পাশেঃ
৫) ফোন বুথ থেকে আমার এক বাংলাদেশী বন্ধু কে ফোন করছিলাম, আর সেই সময় আমার কোরিয়ান বন্ধু আমার ছবি তুলেছিলঃ
পরের দিন আমার প্রেজেন্টেশন সকালে ছিল, তাই আগে থেকে রেডি হয়ে সকালেই ডরম থেকে বের হয়ে কনফারেন্স ভেন্যুতে চলে যাই। প্রেজেন্টেশন শেষ হওয়ার পরে নিজেকে এত হালকা মনে হইলো যে কি বলব। নিজেকে খুবি রোমান্টিক চার্মফুল চিয়ারিং ফিলিন্স কাজ করতেছিল। আমি আমার কোরিয়ান বন্ধুকে বললাম, চিগুম থা লন্ডন ফোগো সিফফয়ো... এখন আমরা পুরা লন্ডন ঘুরে দেখব... সব প্লান আগে থেকেই আমার করা ছিল। কোথায় কখন কিভাবে যাব। প্রথমেই গেলাম, লন্ডন আই, টেমস নদীর তীরে। লন্ডন আই সার্কেলে উঠলাম, প্রত্যেকে ১৫ পাউন্ড দিয়ে। এখানে একটা ব্যাপার, লন্ডন খুবি ব্যায়বহুল নগর। যায় করি, যেখানেই যাই, শুধু পাঊন্ড আর পাউন্ড । ৫/১০ পাউন্ড কোন ঘটনায় না। একটা ফোন করব, ফোন বুথ থেকে তাও ৪০ সেকেন্ডের জন্য ১ পাউন্ড, মানে ১২০ টাকা।
লন্ডন আই থেকে পুরা লন্ডন শহর দেখলাম। অনেক পুরানো শহর লন্ডন, শুধু ডাউনটাউন বাদ দিয়ে আমার তো মনে হয় পুরা সেন্ট্রাল লন্ডনের সব বাড়ি মিনিমাম ১০০ বছরের পুরান। টেমস নদী দেখে শেক্সপিয়ারের কবিতার লেখার কথা মনে হল। অনেক উপর থেকে লন্ডনকে কেমন যেন গল্পের বইতে পড়া সেইসব বিলাতি রুপকথার শহরের মত মনেহয়। এই লন্ডন থেকেই এদের বাপ দাদারা আমাদের দেশে যেয়ে ২০০ বছর রাজত্ব করে এসেছে। একসময় লন্ডন আই থেকে নেমে বিগ বেন ঘড়ি দেখতে গেলাম। পাশেই ছিল এটি (লন্ডন পার্লামেন্ট ভবন)। এইদিন এখানে রাত পর্যন্ত থেকে আবার হেনডনে মিডলসেক্স ইউনিভার্সিটি তে ফিরে আসলাম। পরের দিন বাকিংহাম প্যালেস, মাডাম তুসো, লন্ডনের চায়না টাউন, মিউজিয়াম এইসব ঘুরে বেড়ালাম। (চলমান)
৬) লন্ডন আইঃ
৭) লন্ডন আই থেকে তোলা ছবিঃ
৮) সন্ধায় টেমস নদীর তীরেঃ
৯) বিগ বেন
১০) রাতের লন্ডনে রিকশাঃ
১১) চায়না টাউন
১২) ট্রেনিং হিসেবে আমার কোরিয়ান বন্ধু কে এক ইংরেজের কাছে পাঠায় হেল্প নেওয়ার জন্য, আর এই ফাকে আমি ওর ছবি তুলে ফেলি
পরের পর্বে শেষ হবে আশা করি। সবাইকে ধন্যবাদ...
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই এপ্রিল, ২০১১ সকাল ৯:০২