somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাক্ষাৎকার» ‘আমাদের পরিবারগুলো যেন হয়ে ওঠে নারী-অধিকার ও নরীমর্যাদা রক্ষার আদর্শ অঙ্গন’ মাওলানা আবু তাহের মেসবাহ (১ম পর্ব)

০৯ ই এপ্রিল, ২০১১ রাত ১১:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

* আপনি নিশ্চয় জানেন, সম্প্রতি নারী-উন্নয়ন নীতিমালাকে কেন্দ্র করে দেশে বেশ একটা ‘কলহ’ উপস্থিত হয়েছে, তো এ সম্পর্কে আপনি কী বলেন?

** আমি বলি, ‘উন্নয়ন’ শব্দটাই আপত্তিকর। ভূমি-উন্নয়ন, কৃষি-উন্নয়ন, শিল্প-উন্নয়ন, নগর-উন্নয়ন, এগুলোর সমকাতারে এসে যাচ্ছে নারী-উন্নয়ন। আধুনিক যন্ত্রসভ্যতার সবচে’ কদর্য দিক এই যে, নারীকে ভোগের বস্ত্ত ও পণ্য ভাবা হয়। ঐ মানসিকতা থেকেই এসেছে নারী-উন্নয়ন। নারী কি বস্ত্ত বা পণ্য, যে তার উন্নয়ন করবেন?

* আপনার দৃষ্টিতে সঠিক শব্দটি তাহলে কী?

** আগে নির্ধারণ করতে হবে যে, আমরা কী চাই? নারীর উন্নয়ন, না তার মানবিক অধিকার ও মর্যাদা? যদি এটা চাই তাহলে তো বলা উচিত, ‘নারী-অধিকার নীতিমালা’।
দেখুন, কারো মনে হতে পারে যে, এটা নিছক ‘শব্দ-কলহ’, আসলে তা নয়। কারণ যে কোন আদর্শ ও দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিনিধিত্ব করার ক্ষেত্রে শব্দের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এজন্যই তো বেচারা নারী-নীতিওয়ালারা বারবার শব্দ পরিবর্তন করছে, আর বলছে, ‘হুজুররা না পড়েই সমালোচনা করে’।

* আচ্ছা, উন্নয়ন হোক, বা অধিকার ও মর্যাদা, আসল সমস্যাটা কোথায়?
** কী বলবো! বললে তো কঠিন কথাই বলতে হয়। আমার তো মনে হয়, আসল সমস্যা হচ্ছে তথাকথিত নারীবাদীদের অজ্ঞতা, কিংবা জ্ঞানপাপ। শত্রুরা চাচ্ছে ইসলামের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ যে পারিবারিক ব্যবস্থা, সেটা গুঁড়িয়ে দিতে। কারণ তাদের নিজেদের পারিবারিক ব্যবস্থা যেমনই ছিলো, তার বুনিয়াদ ধ্বসে পড়েছে এবং এখন আর পিছনে ফিরে যাওয়ার উপায় নেই। সুতরাং মুসলিম উম্মাহর পারিবারিক ব্যবস্থা, যার তুলনা বিশ্বের আর কোন জাতির কাছে নেই, তা ধ্বংস করা ছাড়া তাদের জয়ী হওয়ার আশা নেই।
শত্রুরা চারটি দিক থেকে আমাদের পরিবারব্যবস্থার বিরুদ্ধে হামলা চালায়, যখন যেদিক থেকে সুবিধা। কখনো তালাকবিধান, কখনো পুরুষের কর্তৃত্ব, কখনো বহুবিবাহ, আর কখনো উত্তরাধিকার আইন।
তো আমাদের মুসলিম নামধারী সুশীলসমাজ হয় কোরআন সুন্নাহ সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে ‘নারী-উন্নয়নের’ আন্তরিকতা থেকেই এসব করছে, না হয় বুঝে শুনেই শত্রুদের লেজুড়বৃত্তি করছে।

* বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে এসেছে, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, নারী-উন্নয়ন নীতিমালা নিয়ে একটি গোষ্ঠী বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছে, তারা নীতিমালাটি না পড়ে, বা না জেনে...
** মাপ করবেন, মাঝখানে কথা বলছি। আসলে জাতিগতভাবেই আমরা শিষ্টাচার রক্ষায় অভ্যস্ত না। কী আলেম, কী গর- আলেম। আলিমসমাজ তবু দ্বীনী তারবিয়াতের কারণে কিছুটা হলেও সংযমী।
শিক্ষানীতির বিরোধিতাকারীদের সম্পর্কে জাফর ইকবাল বলেছিলেন, কোন আলেম তা পড়েও দেখেননি। অবাক হয়েছিলাম। তিনি তো জ্ঞানী মানুষ। অন্যকে অজ্ঞ মনে করা নিজেরই অজ্ঞতার পরিচায়ক, এটা তো তার অজানা থাকার কথা নয়, তবু তিনি বলেছেন। এবার বললেন প্রধানমন্ত্রী এবং অনেকটা...। বাংলাদেশের মুসলিমসমাজে আলিমগণ কি নিছক একটি গোষ্ঠী? আর তারা বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছে? নীতিমালাটি না পড়ে না বুঝেই বলছে? আপনি আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। আমাদের কর্তব্য আপনার মর্যাদা রক্ষা করা, আর আপনার কর্তব্য আপনারই ভালো জানার কথা।

* আগের কথায় ফিরে আসি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, নারী-উন্নয়ন নীতিমালার কোথায় ইসলামবিরোধী কথা নেই, থাকলে কোথা আছে দেখিয়ে দেন, একটি শব্দও নেই।

** সত্যি কী বিচিত্র এই দেশ! আমার কথা হলো, দু’হাজার আটের নীতিমালায় কী ছিলো? তাতে শব্দপরিবর্তন কেন করতে হলো? তার চেয়ে বড় কথা, নারীনীতিমালা যেদিন মন্ত্রীসভায় অনুমোদন করা হলো তার পরের দিন প্রথম আলোসহ প্রায় প্রতিটি জাতীয় দৈনিকের শিরোনাম ছিলো, ‘উত্তরাধিকারে নারী-পুরুষের সমানাধিকার অনুমোদন’। কেন? তারা তো আলেম নন, তারাও কি পড়েননি? নাকি না বুঝেই বিভ্রান্তি ছড়িয়েছেন? আসলে সবাই বুঝতে পেরেছে যে, এটাই করা হচ্ছে, তাই এভাবে শিরোনাম করা হয়েছে। আর সরকার বা প্রধানমন্ত্রী প্রতিবাদও করেননি যে, এটা ভুল। তার মানে শব্দে স্পষ্ট না থাকলেও ধারণা এটাই দেয়া হয়েছে এবং পক্ষ-বিপক্ষ সবাই সেটাই গ্রহণ করেছে।

* প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রোনিক মিডিয়া প্রথমে সমস্বরে বললো যে, উত্তরাধিকার সম্পদে নারীর সমান অংশ নিশ্চিত করা হয়েছে, এখন আবার সমস্বরে বলছে, এমন কথা নীতিমালায় নেই? রহস্যটা কী?

** উৎসাহের আতিশয্যে প্রথমে মুখফসকে বা কলমফসকে কথাটা বের হয়ে গিয়েছিলো। পরে পরিস্থিতি সামাল দিতে ‘ইউটার্ন’ নিয়েছে। দুর্বল অবস্থান থেকে হলেও আলিমসমাজের সামান্য ‘নড়া-চড়াই সুফল এটা।

ওয়াকেবহাল মহল বলছে, মন্ত্রীসভায় ‘উত্তরাধিকারে সমানাধিকার’ এভাবেই অনুমোদন করা হয়েছে, কিন্তু প্রকাশ কারা হয়েছে, ঐ স্থানে ‘পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ’ শব্দ বসিয়ে। মানে চোখে ধুলা দেয়া। তাছাড়া সেখানে নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক সব আইন বিলুপ্ত করে সর্বক্ষেত্রে নারীর সমানাধিকার প্রতিষ্ঠার অঙ্গিকার রয়েছে, আর এখানেই যত আশঙ্কা। কারণ যে কোন সময় কোরআনের উত্তরাধিকার আইনকে ‘নারীর প্রতি বৈষম্য’ আখ্যা দিয়ে তাতে পরিবর্তন আনার সুযোগ থাকছে। তাহলে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে কোন্ গোষ্ঠী?

* প্রধানমন্ত্রী যে আলেমদের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েছেন তার কী হবে?
** সেটার কিছুই হবে না। ধরে নিন, আমরা বুঝতে পারিনি, সংবাদপত্রগুলোও আগে বুঝতে পারেনি, এখন বুঝতে পেরেছে, আর আমরা এখনো বুঝতে পারছি না। কিন্তু কথা অস্পষ্ট রাখা হচ্ছে কেন? স্পষ্ট করা হচ্ছে না কেন? এটা স্পষ্ট করে দিন না যে, উত্তরাধিকারের ইসলামী নীতি নিশ্চিত করা হবে। কোরআন-সুন্নায় সম্পদে নারীকে যে অধিকার দেয়া হয়েছে তা নিশ্চিত করা হবে। এটা লিখুন। এটাই করণীয় এবং নারীর স্বার্থেই করণীয়।

* প্রধানমন্ত্রী আরো বলেছেন, যাদের পুত্রসন্তান নেই তাদের মেয়েরা সম্পত্তির অধিকারী হতে পারে না; ভাই-বোন ও তাদের ছেলে-মেয়েরা সব দখল করে নেয়। এ মন্তব্য কতটা ঠিক?

** এ কথা তিনি কাকে বলছেন? শরীয়তকে? আলেমসমাজকে? কেন, শরীয়ত কি মেয়েকে অংশ দেয়নি? দুই মেয়ে হলে তো দুই তৃতীয়াংশ পায়! আর ভাই পাবে না কেন? ভাই কি কেউ না? জীবিত অবস্থায় বিপদে আপদে ভাই কি পাশে দাঁড়ায় না? বাকি থাকলো সব দখল করে নেয়া, তো আপনার পুলিশ, প্রশাসন, আইন-আদালত কোথায়? সমাধান কার হাতে? সরকারকেই তো শরীয়ত প্রদত্ত সকলের প্রাপ্য নিশ্চিত করতে হবে!

* এবার আসি কোরআনের উত্তরাধিকার প্রসঙ্গে। সম্পদে নারীর অধিকার পুরুষের অর্ধেক ...
** মাফ করবেন, আপনিও দেখছি, ওদের পাতা ফাঁদে পা রাখছেন! বণ্টনের ক্ষেত্রে কোরআন কিন্তু নারীর অংশকে মূল ধরেছে। কোরআনের ভাষায়-
للذكر مثل حظ الأنثيين
(পুরুষের জন্য রয়েছে দুই নারীর অংশের পরিমাণ), এটা এমনি এমনি বলা হয়নি, নারীকে মর্যাদা দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। সুতরাং আপত্তি করুন, আর প্রশ্ন করুন, কোরআনের ভাষায় করুন।

* আচ্ছা, তো পুরুষ পাবে দুই নারীর সমান, এটা কি বৈষম্য নয়?
** এটাই ওদের বড় আপত্তি। ওরা বলে এটা বৈষম্য। আমার প্রশ্ন, এটা করেছে কে? আলিমসমাজ, ফিকাহর ইমামগণ, খলীফাগণ, নবী, না স্বয়ং আল্লাহ, যিনি নারী-পুরুষ উভয়ের স্রষ্টা? তিনি তো সকল দয়ালুর শ্রেষ্ঠ দয়ালু, সকল প্রজ্ঞাবানের শ্রেষ্ঠ প্রজ্ঞাবান এবং সকল বিচারকের শ্রেষ্ঠ বিচারক! সুতরাং ‘বৈষম্য’ শব্দটি সভয়ে পরিহার করুন এবং জানার ইচ্ছা থাকলে জিজ্ঞাসা করুন যে, এ পার্থক্যের তাৎপর্য কী?

* জ্বি, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। তো কী কারণে এই পার্থক্য?
** আসলে আলিম ও মুসলিম বুদ্ধিজীবীগণ এ বিষয়ে এ পর্যন্ত যা লিখেছেন তাতে সবকিছু এসে গেছে। নতুন করে বলার কিছু নেই।
আমার মনে হয় একটা কাজ করা যায়। এ পর্যন্ত কোরআন-সুন্নাহর মীরাছ বণ্টনের বিধান ও তার তাৎপর্য সম্পর্কে যত লেখা পত্র-পত্রিকায় এসেছে, পরিপূর্ণ সম্পাদনার মাধ্যমে (বা সম্পাদনা ছাড়াই) সেগুলোর একটি সঙ্কলন প্রকাশ করা যায়, তাতে যারা বিষয়টি বুঝতে চায় তাদের অন্তত বিভ্রান্ত হওয়ার সুযোগ থাকবে না। চোখ থাকতেও যারা অন্ধ তাদের কথা অবশ্য আলাদা।

* তবু খুব সংক্ষেপে যদি কিছু বলতেন!
** দেখুন, আমি নিঃসঙ্কোচে স্বীকার করছি যে, এটা আমার বিষয় নয়, এ সম্পর্কে এ পর্যায়ে আলোচনা করার মত পর্যাপ্ত জ্ঞান আমার নেই। তবে আমি বিশ্বাস করি এবং আমার পূর্ণ ইতমিনান রয়েছে যে, আল্লাহর ফায়ছালা নিঃসন্দেহে ইনছাফপূর্ণ। অবশ্য আলোচনা করতে হলে বলবো, কোরআনের উত্তরাধিকার বিধানের খন্ডিত বিচার না করে সামগ্রিকভাবে, অর্থাৎ সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, এমনকি প্রাকৃতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করা কর্তব্য। তাহলে সহজেই বোঝা যাবে যে, মীরাছে নারীর প্রাপ্য পুরুষের চেয়ে অনেক বেশী।

* নারীর প্রাপ্য বেশী! উত্তরাধিকারে!! তাহলে তো বিষয়টি ভালোভাবে বুঝতে হয়!!
** জ্বি, অবাক হচ্ছেন কেন! সম্পদে বলুন, বা উত্তরাধিকার সম্পদে, একমাত্র ইসলামই নারীকে অধিকার, মর্যাদা ও নিরাপত্তা দিয়েছে। ইসলামের আগে-পরে কোন ধর্ম, বা সভ্যতা সত্যিকারের কোন অধিকার, বা মর্যাদা দেয়নি, বরং অপমান ও অমর্যাদার চূড়ান্ত করেছে?

* খৃস্টধর্ম? পাশ্চাত্য সভ্যতা?
** জনাব, খৃস্টধর্মে তো নারীই হচ্ছে সকল পাপের মূল এবং পুরুষের স্বর্গচ্যুতির কারণ। নারীর ভিতরে যে আত্মা আছে সেটাই তো খৃস্টধর্ম মানতে নারায!
খৃস্টধর্মের উত্তরাধিকার আইন শোনবেন? পুত্র থাকলে কন্যা কিছু পাবে না। সব পাবে পুত্র, আর বিধবা স্ত্রী কোন অবস্থাতেই কিছু পাবে না, মৃত ব্যক্তির পুত্র-কন্যা না থাকলেও না। সব সম্পত্তি যাবে ভাইদের দখলে।
মানবতার দাবিদার পাশ্চাত্য সভ্যতা তো নারীর উত্তরাধিকার স্বীকার করেছে মাত্র কিছুদিন আগে। ইনসাইক্লোপেডিয়া আমেরিকানা বলে, বৃটিশ আইনে বিবাহের পর নারীর সব অস্থাবর সম্পত্তি স্বামীর মালিকানায় চলে যেতো। আঠার শ সত্তর সালের আগে ইউরোপে নারীর কোন অধিকার ছিলো না চুক্তি করার এবং নিজের সম্পত্তির উপর দখল অর্জন করার। ঊনিশ শ আটত্রিশ সাল কি খুব দূরে? তখন পর্যন্ত ফ্রান্সে সম্পদের উপর নারীর কোন ধরনের অধিকার ছিলো না। অথচ মুসলিম নারী তা পেয়ে আসছে চৌদ্দশ বছর ধরে। আশ্চর্য, তারপরো কাঠগড়ায় দাঁড়াবে ইসলাম!

* কিন্তু আধুনিক সভ্যতা তো সম্পদে নারীকে সমানাধিকার দিয়েছে?
** তাই! কিন্তু নারীকে উপার্জন করতে হচ্ছে, নিজের ভরণপোষণ নিজেকেই করতে হচ্ছে, আর বার্ধক্যে তার আশ্রয় হচ্ছে কোথায়? বৃদ্ধাশ্রমে!

* আগের কথায় আসুন; উত্তরাধিকার সম্পদে নারীর অংশ বেশী হলো কীভাবে?
** প্রথমে দেখুন, কোরআনে মোট বারজনের জন্য মীরাছে অংশ নির্ধারণ করা হয়েছে, যাদের যাবিল ফুরূয বলা হয়। তাদের আটজনই নারী, চারজন পুরুষ। তদুপরি মীরাছ বণ্টনের আগে শর্ত হলো, স্ত্রীর মোহর অনাদায়ী থাকলে আগে তা আদায় করা, তারপর অবশিষ্ট সম্পদ বণ্টন করা।

* কিন্তু ঐ যে ‘পুরুষের জন্য নারীর দ্বিগুণ’?
** জ্বি, বলছি। দেখুন, অধিকার নির্ধারিত হবে দায় ও দায়িত্বের পরিমাণ হিসাবে, এটা তো যুক্তির কথা। আর স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা নারীকে সর্বপ্রকার অর্থনৈতিক দায়দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন এবং তা পুরুষের উপর অর্পণ করেছেন। স্ত্রীর জন্য স্বামী, মায়ের জন্য পুত্র, কন্যার জন্য পিতা এবং বোনের জন্য ভাই হলো অর্থনৈতিক নিরাপত্তার জন্য দায়িত্বশীল। তবু নারীকে মীরাছ থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। কিন্তু পুরুষের সমান হলে সেটা হবে পুরুষের প্রতি অন্যায়। পুরুষ তাহলে দায়িত্ব পালনে উৎসাহী হবে কেন? তারপরো বলতে হবে যে, এ পার্থক্যটা শুধু প্রতীকী। অন্যথায় বাস্তবে একজন পুরুষ উত্তরাধিকার সূত্রে যা পায় সারা জীবন তার চেয়ে খরচ করে অনেক বেশী। পক্ষান্তরে নারীর শুধু প্রাপ্তি আছে, ব্যয় নেই। নারী যদি স্বেচ্ছায় ব্যয় করে তবে সেটা হবে দান ও ইহসান। পুরুষ যদি তা গ্রহণ করে তবে তাকে হতে হবে নারীর প্রতি কৃতজ্ঞ।
দেখুন। ইসলামে একজন নারী প্রধাণত তিনটি সূত্রে সম্পদ লাভ করে। মোহরানা, ভরণপোষণ ও উত্তরাধিকার। পক্ষান্তরে পুরুষ কোনো কোনো ক্ষেত্রে উত্তরাধিকারে নারীর দ্বিগুণ পায় সত্য, তবে সে স্ত্রীকে মোহরানা ও ভরণপোষণ প্রদান করে। স্ত্রী যত ধনী হোক, পরিবারের জন্য ব্যয় করতে বাধ্য নয়। পক্ষান্তরে স্বামী গরীব হলেও তাকেই ব্যয় করতে হবে। ব্যয় করার সাধ্য না থাকলে তো তার বিবাহ করারই অধিকার থাকবে না।

* কিন্তু পুরুষের উপর নারীর আর্থিক নির্ভরতা তো পরিবারে তার অমর্যাদার কারণ। সুতরাং আর্থিকভাবে নারীর স্বাবলম্বী হওয়া প্রয়োজন। এ বিষয়ে কী বলেন?
** এটা তো আল্লাহপ্রদত্ত প্রাপ্য ও অধিকার, যা সে অর্জন করেছে সন্তান ধারণ, লালন ও প্রতিপালন এবং সংসার পরিচালনার মত গুরু দায়িত্ব পালনের বিনিময়ে, যা পালন করা পুরুষের পক্ষে কখনো সম্ভব নয়। তো এই গুরু দায়িত্বের তুলনায় নারীর প্রাপ্তি তো খুবই সামান্য। অমর্যাদার প্রশ্ন কোথায়?
আপনি বলবেন, বাস্তবে প্রায় প্রতিটি পরিবারে নারীকে অবজ্ঞা, লাঞ্ছনা ও নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে।
আমি বলবো, এর কারণ কিন্তু আর্থিক নির্ভরতা নয়, বরং ইসলামী শিক্ষা-দীক্ষা ও তারবিয়াতের অনুপস্থিতি, জড়বাদী চিন্তা-চেতনার আগ্রাসন এবং আধিপত্যের মানসিকতা। তাই দেখা যায়, কোন পরিবারে নারী শুধু পুরুষের কাছ থেকে লাঞ্ছনা ও নির্যাতনের সম্মুখীন হয় না, বরং নারীদের হাতেই বেশী নির্যাতন ও লাঞ্ছনার শিকার হয়।
বস্তি থেকে বালাখানা এবং গার্মেন্টস থেকে কর্পোরেট অফিস পর্যন্ত উপার্জনশীল নারীর অবস্থা জরিপ করে দেখুন। তাদের ঘামঝরা উপার্জনের উপর তাদের কতটুকু নিয়ন্ত্রণ আছে? সিংহভাগ চলে যায় স্বামী-শাশুড়ির দখলে। গত ঊনত্রিশে মার্চ মঙ্গলবার নয়াদিগন্তের নারীপাতায় আঞ্জুমান আরা বেগমের লেখা, ‘নারীর অর্থনৈতিক মুক্তি কত দূর’ পড়ে দেখুন। এগুলো বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা নয়। আমি নিজেও জানি এরকম অসংখ্য ঘটনা।

* সমাজ ও জীবনের বৃহত্তর কর্মক্ষেত্রে নারীর ব্যাপক অংশগ্রহণকে ইসলাম অনুমোদন করছে না কেন? এটা কি নারীর মেধা, যোগ্যতা ও প্রতিভার অবমূল্যায়ন নয়?
** দেখুন, মেধা, যোগ্যতা ও প্রতিভা নারী-পুরুষ উভয়েরই রয়েছে, তবে তা নিজ নিজ ক্ষেত্রে। নারী তার কর্মক্ষেত্রের বাইরে যদি নিজের মেধা ও যোগ্যতা ব্যবহার করতে যায়, হয়ত পারবে এবং পারছেও, কিন্তু যে সকল ভয়াবহ উপসর্গ ও পার্শ্ব -প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে এবং দিচ্ছে, তাতে সর্বগ্রাসী বিপর্যয় অনিবার্য এবং তা চোখের সামনে দেখতেও পাচ্ছি। স্বপ্নের দেশ আমেরিকায় পরিবারব্যবস্থা ভেঙ্গে যাওয়ার একটি বড় কারণ নারীর বহির্মুখী কর্মজীবন, একথা মার্কিন সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন। তাই নারীকে তারা গৃহমুখী হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। তদুপরি কর্মক্ষেত্রে পুরুষের চেয়ে একজন নারী বহুগুণ বেশী ‘হয়রানি’র সম্মুখীন হয়ে থাকে। হয়রানির অর্থ যদি বুঝতে না পারেন, মার্কিন সেনাবাহিনীতে নারী অফিসারদের দুর্গতির রিপোর্ট পড়ে দেখুন। আর এটা পুরুষ সহকর্মীদের দ্বারা যেমন হয়, তেমনি হয় ঊর্ধ্বতন অফিসারদের দ্বারা, এমনকি অধঃস্তনদেরও দ্বারা।
যিনি সৃষ্টি করেছেন তিনি নারী-পুরুষ উভয়কে সমান অধিকার ও মর্যাদা দিয়েই সৃষ্টি করেছেন, কিন্তু অভিন্নতা দিয়ে সৃষ্টি করেননি। নারী হলো মানব- জাতির সুন্দর অংশ, তবে দুর্বল অংশ। যা কিছু সৌন্দর্য, নারীর; পুরুষের সৌন্দর্য নেই, শক্তি আছে। সুতরাং উভয়ের কর্মক্ষেত্র অভিন্ন হতেই পারে না। নারীর কর্মক্ষেত্র হলো গৃহের শান্তসিণগ্ধ পরিবেশ, তার প্রধান দায়িত্ব হলো জাতির সন্তানদের আদর্শ নাগরিকরূপে গড়ে তোলা।
পুরুষের কর্মক্ষেত্র হলো বাইরের কোলাহলপূর্ণ সমস্যাসঙ্কুল জগত। তার দায়িত্ব হলো পরিবারের সকল সদস্যের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

* কিন্তু নারী নিজেই তো বাইরের কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণ করতে চায়। সে সুযোগ কেন তাকে দেয়া হবে না?
** চায় বলছেন? এবং স্বেচ্ছায় সাগ্রহে? কিছুতেই না; এমনকি উন্নত বিশ্বেও নারী বাধ্য হয়েই উপার্জনের জন্য বাইরের কর্মক্ষেত্রে যায়। তাদের তো না আছে ‘ঘর’, না আছে পরিবার, না আছে নিরাপদ কোন আশ্রয়? আচ্ছা, এককাজ করুন; পরিবারের ভিতরে আপনি নারীর অধিকার, মর্যাদা ও নিরাপত্তা, যা ইসলাম তাকে দিয়েছে, দয়া করে নয়, তার প্রাপ্য বলে, সত্যিকার অর্থে সেগুলো নিশ্চিত করুন, তারপর দেখুন, ঘরের ছায়া ত্যাগ করে বাইরে প্রখর রোদে দগ্ধ হতে আগ্রহী হয় শতকরা কতজন নারী?
গর্ভে সন্তান বহন করে, দুধের শিশুকে অন্যের কাছে রেখে এক মা ‘স্বেচ্ছায়’ দৌড়ঝাঁপ করবে বাইরের কর্মক্ষেত্রে, এটা শুধু পুরুষই ভাবতে পারে, কারণ সে পুরুষ। এমনকি ‘মাতৃত্বকালীন’ ছুটির তামাশা দিয়ে নিজেকে সে নারীবাদী ভেবে আত্মপ্রসাদও লাভ করতে পারে। কিন্তু একজন মা, মেয়ে, বোন এবং একজন স্ত্রী পুরুষের ধারণার চেয়ে অনেক ঊর্ধ্বজগতে বাস করে। শুধু তার প্রাপ্য অধিকার, মর্যাদা ও নিরাপত্তাটুকু নিশ্চিত করে দেখো। হাঁ, ঝলমলে জীবনের হাতছানি যদি কাউকে মোহগ্রস্ত করে থাকে তো ভিন্ন কথা, কিন্তু তারা শতকরা কতঅংশ?

* নারীনীতিমালার শুরুতে বেগম রোকেয়ার একটা কথা উদ্ধৃত করা হয়েছে, ‘তোমাদের কন্যাগুলিকে শিক্ষা দিয়া ছাড়িয়া দাও, নিজেরাই নিজেদের অন্নের সংস্থান করুক।’ তার এ আহবানে নারীর অধিকার অর্জনের পন্থা সম্পর্কে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা রয়েছে ...

** এবং এই দিকনির্দেশনা ভুল, যদি তা শাব্দিক অর্থে গ্রহণ করা হয়। শুধু ভুল নয়, আত্মঘাতী ভুল। কোরআন-সুন্নাহর দৃষ্টিতে এটা নারীর উপর যুলুম। পাশ্চাত্যে নারীর উপর এ যুলুমটা হচ্ছে। ইসলাম সকল অবস্থায় এ কঠিন দায়িত্ব, অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান-চিকিৎসা, নিজের ও সন্তানের ভরণপোষণ, এসব রুক্ষ-কঠিন দায়িত্ব থেকে নারীকে অব্যাহতি দিয়েছে। কারো অধিকার নেই নারীর উপর এটা চাপানোর। যদি কেউ চাপাতে চায় তাহলে রাষ্ট্রশক্তিকে নারীর পক্ষে দাঁড়াতে হবে এবং সবার আগে দাঁড়াতে হবে উম্মাহর আলেমসমাজকে।

* তাহলে কি ইসলামের দৃষ্টিতে ঘরের বাইরে নারীর কোন কর্মক্ষেত্রই নেই, জীবনরক্ষার প্রয়োজনেও না?
** কে বলছে নেই? জীবনের প্রয়োজন ইসলাম কবে, কোথায় অস্বীকার করেছে? নারীর উপযোগী যে সব কর্মক্ষেত্র আছে, সেখানে সে অবশ্যই কাজ করতে পারবে, তবে শরীয়তের বিধান রক্ষা করে, লঙ্ঘন করে নয়। আর সেখানে নারীর ইজ্জত-আবরু রক্ষার ব্যবস্থাও করতে হবে। (আশ্চর্য, সুশীলসমাজের এবিষয়ে কিন্তু কোন বক্তব্য নেই!)
যদি এমন হয় যে, নারীর অর্থনৈতিক নিরাপত্তা বিধানে কেউ এগিয়ে এলো না, বাবা, ভাই, পুত্র এবং সর্বশেষে ‘বাইতুলমাল’, কেউ না, তখন জীবনের প্রয়োজনে ‘যথাসম্ভব’ পর্দারক্ষা করে উপার্জনে যেতে পারে, তবে এজন্য সবাইকে আল্লাহর কাছে জবাবদেহি করতে হবে। কোন ইসলামী রাষ্ট্রে অভিভাবকহীন কোন নারী কল্পনা করা যায় না। সর্বশেষে রাষ্ট্রকে গ্রহণ করতে হয় তার অভিভাবকত্ব। যারা নারী-উন্নয়নের কথা বলেন, তারা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে এগুলো কার্যকর করুন, শরীয়তের বিধানে হস্তক্ষেপ করে কী লাভ?!

* নীতিমালার ক্রীড়া ও সংস্কৃতি- অধ্যায়ে ক্রীড়া, বিনোদন, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড, নাটক ও চলচ্চিত্রে, নারীর বর্ধিত অংশগ্রহণের কথা আছে। এসম্পর্কে কী বলেন?
** দেখুন, ইসলামের গন্ডীতে থেকেও যদি কেউ আল্লাহর নাফরমানিতে লিপ্ত হয়, তাহলে কী বলা যাবে! ইসলামী রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো কোরআন সুন্নাহ বিরোধী সকল কর্মকান্ড নির্মূল করা। আধুনিক যুগের কোন মুসলিম সরকার, ‘কোরআন -সুন্নাহবিরোধী কোন আইন পাশ করা হবে না’ এরূপ কৌশলী কথা বলে পার পেতে পারে, ইসলামী সরকারের সে সুযোগ নেই।
ক্রীড়া, বিনোদন, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড, এগুলো নারী-পুরুষ উভয়েরই অধিকার। শরীয়ত অধিকারের সীমারেখাও নির্ধারণ করে দিয়েছে। সেটা নারী-পুরুষ উভয়কে পালন করতে হবে। কারণ আমাদের জীবন শুধু মৃত্যু পর্যন্ত নয়, মৃত্যুর পর শুরু হবে অনন্ত জীবন, সেখানে প্রতিটি কর্মের হিসাব দিতে হবে আল্লাহর সামনে।
নারী খেলবে, নাচবে, গাইবে, আর পুরুষ তা উপভোগ করবে, এটা হারাম। শরীয়তের বিধান তো আমাদের বলতেই হবে। কেউ যদি গ্রহণ না করে সে দায় তার। আমর বিল মা‘রূফ ও নাহি আনিল মুনকারের শরীয়ত- নির্দেশিত যত পথ আছে সে পথে আমাদের চেষ্টা করতে হবে আল্লাহর নাফরমানি রোধ করার। তাতে লোকে আমাদের মৌলবাদী বলুক বা তালেবান। আমরা শান্তিভঙ্গ ও সীমালঙ্ঘন করবো না, আইন নিজের হাতে তুলে নেবো না, কারণ শরীয়ত তা বলেনি, কিন্তু চেষ্টা ত্যাগ করবো না। কারণ আমর বিল মা‘রূফ ও নাহি আনিল মুনকার হচ্ছে মুসলিম উম্মাহর প্রতিটি সদস্যের প্রতি আল্লাহর নির্দেশ। এবং নির্দেশের মাত্রা হবে ব্যক্তির স্তর অনুযায়ী। যেমন বলা হয়েছে-
من رأى منكم منكرا فليغيره بيده فإن لم يستطع فبلسانه فإن لم يستطع فبقلبه وذلك أضعف الإيمان
তোমাদের কেউ যদি কোন অন্যায় কাজ দেখে, তাহলে সে যেন তা হাত দিয়ে পরিবর্তন করে, আর যদি না পারে তাহলে মুখের কথা দিয়ে, আর যদি না পারে তাহলে অন্তরে ঘৃণা করার মাধ্যমে, আর সেটাই হলো দুর্বলতম ঈমান।
অবশ্য একটা কথা মনে রাখতে হবে। অনেকেরই চিন্তায় কথাটা আসে না। তা এই যে, ব্যক্তির ক্ষেত্রে যেমন এই শ্রেণীতারতম্য, সরকারের ক্ষেত্রেও তা হতে পারে। কারণ ব্যক্তির সামনে যেমন শক্তির ভয় থাকে, সরকারের সামনেও দৃশ্য-অদৃশ্য বহু শক্তির ভয় ও চাপ থাকে। সুতরাং সরকার-প্রধানকেও অনেক সময় মনে মনে ঘৃণা করে ক্ষান্ত থাকতে হয়।
আমার তো মনে হয়, নারী-উন্নয়ন নীতিমালা সম্পর্কে যা করা হচ্ছে অনেক ক্ষেত্রে অদৃশ্য শক্তির ভয়েই করা হচ্ছে।

* তার মানে আপনি ভাবছেন, নারী-উন্নয়ন নীতিমালা নিয়ে যা হচ্ছে তা স্থানীয় বিষয় নয়, আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র?
** আমাকে ভাবতে হবে কেন, আপনিই ভেবে দেখুন না! জাতিসঙ্ঘের সংবিধানে কী আছে? নারী-পুরুষের সমান অধিকারের এবং লিঙ্গভিত্তিক পার্থক্য বিলুপ্তির আহবান! (অথচ ইসলামের উত্তরাধিকার বিধান তো লিঙ্গভিত্তিক পার্থক্যের উপরই প্রতিষ্ঠিত!)
জাতিসঙ্ঘের তত্ত্বাবধানে এ পর্যন্ত যে চারটি নারী-উন্নয়নবিষয়ক সম্মেলন হয়েছে সেগুলোর ঘোষণাপত্র পড়ে দেখুন, সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে। সুতরাং শুধু সরকারের উপর দায় চাপিয়ে বসে থাকলে চলবে না। আলেমসমাজেরও কিছু করণীয় আছে। কিন্তু আফসোস...

* নীতিমালার ‘নারী ও প্রযুক্তি’ অধ্যায়ে বলা হয়েছে, ‘নারীর স্বার্থ বিঘ্নিত হলে গবেষণার মাধ্যমে ঐ প্রযুক্তিকে নারীর জন্য ক্ষতিকারক উপাদান থেকে মুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। প্রযুক্তিক্ষেত্রে নারীর স্বার্থের অনুকূল লক্ষ্যসমূহ অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন ও সংস্কার করতে হবে।’ এবিষয়টি আমরা কীভাবে দেখবো?
** নারী-পুরুষ, কারো জন্য ক্ষতিকর কোন প্রযুক্তি ইসলাম অনুমোদনই করে না। নারীর ইজ্জত-আবরুতে আঘাত আসে, পর্দার বিধান লঙ্ঘিত হয়, এমন প্রযুক্তি শরীয়ত কীভাবে মেনে নেবে? এটা কিন্তু অযৌক্তিক নয়। দেখুন, মানবক্লোনিং-এর প্রযুক্তি নিষিদ্ধ কেন? যেহেতু আশঙ্কা হচ্ছে যে, এটা মানবজাতির জন্য বিপর্যয় ডেকে আনবে। তো যেসকল প্রযুক্তি নারীনির্যাতনের দুয়ার খুলে দিচ্ছে, নারীর ইজ্জত-আবরু নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে, শরীয়তের বিধান তছনছ করে দিচ্ছে সেগুলো তো মানবজাতির স্বার্থেই নিষিদ্ধ হবে। এমন নাযুক ও সংবেদনশীল ক্ষেত্রে কি এমন শিথিল ও ‘মিঠা মিঠা’ কথা যথেষ্ট হতে পারে?
সাম্প্রতিক উদাহরণ দেখুন, জাপানে সুনামিপরবর্তী পারমাণবিক বিপর্যয়ের পর বিশ্বসম্প্রদায় কেমন বিচলিত হয়ে পড়েছে! এখনই প্রশ্ন উঠেছে যে, পারমাণবিক বিদ্যুৎব্যবস্থা লাভজনক, না ক্ষতিকর? এমন বিদ্যুতের কী দরকার, যা অস্তিত্বের প্রতি হুমকি হয়ে দাঁড়ায়? তো আমরাও বলি, ঐ প্রযুক্তির কী দরকার, যা আমাদের সমাজব্যবস্থায় বিপর্যয় ডেকে আনবে?
এরপর কথা হলো, ‘প্রযুক্তিকে নারীস্বার্থের জন্য ক্ষতিকর উপাদান থেকে মুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে’, এই তো? কিন্তু চাইলেই কি তা হয়ে যাবে? পর্নোব্যবসা এখন পৃথিবীর সবচে’ লাভজনক ব্যবসা; রোধ করতে পারছে কেউ? উন্নত দেশে আরো বেশী হচ্ছে। রোধ করার কোন উপায় নেই। হাঁ, যদি ধর্মের সাহায্য নেয়া হয় এবং গোড়া ধরে টান দেয়া হয় তাহলে এখনো হয়ত সুযোগ আছে।

* যারা এসব বলবে, তাদের উপর তো চাপিয়ে দেয়া হবে পশ্চাদগামিতার অপবাদ!
** হাঁ, আরো কত কিছু! এর মানে হলো, নারী-উন্নয়ন হোক, নারী-নির্যাতন বন্ধ হোক, এটা আসল উদ্দেশ্য নয়। আচ্ছা, নারী-দরদে যাদের কান্না আসে, তারা কি বলবেন, সরকারীভাবে পতিতালয় চলছে কীভাবে? নারী-নির্যাতনের এর চেয়ে জঘন্যরূপ আর কী আছে? সুশীলসমাজ বলে, এটা বন্ধ করা যাবে না। সামাজিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য এটা থাকা জরুরি। কত জঘন্য কথা! পতিতা না বলে যৌনকর্মী বললেই নারী-উন্নয়ন হয়ে গেলো? কত বড় খন্নাস!

* আশ্চর্যের বিষয় হলো, দুহাজার আটের নীতিমালায় পতিতাবৃত্তি বন্ধের সুপারিশ ছিলো, কিন্তু বর্তমান নীতিমালায় তা বাদ দেয়া হয়েছে!
** সরকারের কি শক্তি নেই, জাহান্নামের আযাব থেকে এই নারীদের উদ্ধার করার, পুনর্বাসন করার? নারী-উন্নয়নের জন্য, নারীর দারিদ্র্য বিমোচনের দাতারা যখন ‘দান’ করে তখন কি তারা শর্ত আরোপ করতে পারে না যে, পতিতাবৃত্তির অভিশাপ থেকে নারীদের উদ্ধার করতে হবে?

* নারীনীতিমালায় কিন্তু যৌন- নির্যাতন বন্ধের কথা আছে, তবে উপায় বলা হয়নি। সমাজ কিন্তু এখন দিশেহারা, আপনার মতে এটা বন্ধের উপায় কী?
** আরে বাবা, আমার-আপনার, বা অন্যকারো মনে করার কী আছে? আল্লাহ নিজেই তো সাফ সাফ বলে দিয়েছেন মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীকে, ‘তারা যেন নযর নীচু রাখে, আর লজ্জাস্থানের হিফাযত করে’। নযর নীচু রাখা এবং লজ্জাস্থানের হিফাযত করা ব্যাপক অর্থপূর্ণ বিষয়। সোজা কথায় এটা হলো ইসলামের পর্দাবিধান। কোন সমাজে যদি শরীয়তের এই পর্দাবিধান সামগ্রিকরূপে, হয়ত একদিনে হবে না, ধীরে ধীরে করতে হবে, যদি বাস্তবায়ন করা যায়, তাহলেই শুধু সমাজ ও নারীসমাজ যৌননির্যাতনের অভিশাপ থেকে উদ্ধার পাবে।
এছাড়া অন্যসব ব্যবস্থাপত্র যারা দিচ্ছেন, আমি তাদের সদিচ্ছাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবো না, শুধু বলবো, তারা বুঝতে পারছেন না, কোনটা রোগ, কোনটা উপসর্গ, কোথায় রোগের উৎস? পৃথিবীতে এখনো সবচে’ বেশী যৌননির্যাতনের ঘটনা ঘটে পাশ্চাত্যে, প্রাচ্যে নয়, মুসলিম- বিশ্বে নয়। এখানে যা কিছু ঘটে তাও ধর্মহীন পাশ্চাত্যশিক্ষারই বিষফল। অবশ্য একটা বিষয়, পাশ্চাত্যে আইনশৃঙ্খলাব্যবস্থা উন্নত হওয়ার কারণে নৃশংসতার ঘটনা ঘটে তুলনামূলক কম, তবে একেবারে কম নয়, বিভিন্ন জরিপ সেটাই প্রমাণ করে। তাই পাশ্চাত্যের নারী ইসলামের পর্দা- বিধান ধীরে ধীরে পছন্দ করতে শুরু করেছে এবং পর্দার বিধানে মুগ্ধ হয়েই ইসলাম গ্রহণ করছে। এই সেদিন একজন বিশিষ্ট নারী ইসলাম গ্রহণ করেছেন। নয়াদিগন্তে খবর ছাপা হয়েছে, এখন আমার হাতের কাছে নেই। তিনি বলেছেন, পর্দার মধ্যে থেকে নিজেকে তিনি সম্মানিত ও নিরাপদ মনে করছেন।
এই যে নারীদের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলো, কেন? শেরি ব্লেয়ার হলেন তার প্রধান। এশিয়ার বিভিন্ন দেশের মেয়েরা সেখানে পড়বে। কেন? কী পড়ানো হচ্ছে, কী আসল উদ্দেশ্য সেটা পরের কথা, কিন্তু নারী-পুরুষের আলাদা শিক্ষার কথাই তো আলেমসমাজ এত দিন বলে আসছেন! দেশের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এভাবে আলাদা করে ফেলা হোক না, শুধু এতটুকু করলেও যৌনহয়রানি অর্ধেক কমে যাবে।

* প্রসঙ্গত, প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা বা প্রস্তাবিত শিক্ষানীতিকে আপনি নারীশিক্ষার জন্য উপযোগী মনে করেন কি না?
** প্রশ্নটা ঠিক মনঃপূত হয়নি। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় নারী ও পুরুষকে কখনো আলাদা ভাবে চিন্তাই করা হয়নি। এখানে নারী-পুরুষ উভয়কে জীবিকা অন্বেষণ- কারী বুদ্ধিসম্পন্ন প্রাণী ধরে নিয়ে শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাই ধর্মশিক্ষার বিষয়টি যেমন ভাবা হয়নি তেমনি ভাবা হয়নি পুরুষের শিক্ষাব্যবস্থায় কী কী থাকবে এবং নারীর ক্ষেত্রে কী কী?
একটা কথা আমি আমার ছাত্রদের প্রায় বলে থাকি যে, জীবনের কোন কর্মক্ষেত্রে মানুষ উপযুক্ত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ছাড়া প্রবেশ করে না। কিন্তু সম্পূর্ণ অজ্ঞ ও অনভিজ্ঞ অবস্থায় দু’টি তরুণ-তরুণী দাম্পত্যজীবনে প্রবেশ করে, যা জীবনের সবচে’ কঠিন, জটিল ও সংবেদনশীল স্তর। কাল যে ছিলো একটি বালক ও বালিকা, আজ সে হয়ে গেলো স্বামী ও স্ত্রী, কিন্তু তাদের কিছুই জানা নেই সম্পর্কের চড়াই-উৎরাই সম্পর্কে, দায়-দায়িত্ব, অধিকার ও মর্যাদা সম্পর্কে। তদুপরি একটি সম্পর্কের ভিতরেই রয়েছে আরো অনেক সম্পর্ক! সেগুলোরও রয়েছে আলাদা দায়-দায়িত্ব।
আর এর জন্য প্রয়োজন দাম্পত্য জীবন সম্পর্কে ইসলামের শিক্ষা ও নির্দেশনা বা উপযুক্ত পন্থায় শিক্ষাদান ও শিক্ষাগ্রহণ। তারপর আজ যে ছিলো যুবক স্বামী এবং যুবতী স্ত্রী, কালই সে হয়ে যাচ্ছে বাবা ও মা। অথচ তাদের কিছুই জানা নেই বাবা ও মা হতে কী কী গুণের অধিকারী হতে হয়। কীভাবে সন্তানের সামনে আদর্শ মা-বাবারূপে নিজেদের তুলে ধরতে হয়। কীভাবে সন্তানের প্রতিপালন ও তারবিয়াত করতে হয়। কত কিছু তারা পড়েছে ও শিখেছে; পড়েনি আর শিখেনি শুধু বাবা ও মা হওয়ার বিষয়। এসকল শিক্ষার অভাবই কিন্তু আমাদের পারিবারিক সকল সমস্যার বড় কারণ। এর সমাধান না হলে, পুরো সম্পত্তি আপনি নারীকে দিয়ে দিন, নারীর ক্ষমতায়ন করুন, যা ইচ্ছা করুন, নতুন নতুন সমস্যাই শুধু সৃষ্টি হবে।

* উপরের বক্তব্যের আলোকে আমাদের মেয়েদের দ্বীনী শিক্ষার ব্যবস্থা সম্পর্কে আপনার কী মত?
** যত কম বলা যায় তত ভালো। আমাদের সবচে’ বড় অপরাধ কি জানেন? মেয়েদের আমরা দ্বীনের শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করে রেখেছি। আমাদের মেয়েরা না পায় দুনিয়ার শিক্ষা, না দ্বীনের শিক্ষা, আর না জীবনের শিক্ষা। শুরুটা তো এমন ছিলো না! ছাহাবা কেরামের যুগ বলেন, তাবেঈন ও পরবর্তী যুগ বলেন, মেয়েরা দ্বীন-দুনিয়ার শিক্ষা যেমন পেয়েছে, তেমনি পেয়েছে জীবনের শিক্ষা। ঘরে বসেই পেয়েছে। মায়ের কাছে। কারণ সেই মায়েরও শিক্ষা ছিলো।

* তো শিক্ষার আলো থেকে অজ্ঞতার অন্ধকারে আমাদের মেয়েরা কীভাবে নিমজ্জিত হলো?
** কীভাবে যে হলো সে এক অজ্ঞাত রহস্য। উত্তর আমার জানা নেই। সেদিন ‘‘কীমাতুয যামান ইনদাল উলামা’’ কিতাবটি খুলেছি, হঠাৎ নযরে পড়লো, বেশ পরের একজন মুহাদ্দিছ, তাঁর শায়খ-এর সংখ্যা আটশ-এর মত, আর শায়খা-এর সংখ্যা আশি। এখান থেকেই পুরো চিত্রটি বোঝার চেষ্টা করুন। কিন্তু তারপর? কীভাবে যে কী হয়ে গেলো!
বর্তমানে আমাদের ঘরে ঘরে মেয়েরা ইলমের তলবে অস্থির। কিন্তু তাদের পথ দেখাবার কেউ নেই। যদি আমরা উপযুক্ত পরিবেশে উপযুক্ত শিক্ষাব্যবস্থা দ্বারা দ্বীন ও দুনিয়ার শিক্ষা এবং সেই সঙ্গে জীবনের শিক্ষা দিতে পারি তাহলে তথাকথিত ‘নারীবিপ্লব’-এর যে সয়লাব আসছে, আমাদের মেয়েরাই ইনশাআল্লাহ এর সফল মোকাবেলা করতে পারবে।

[গত ২২ রবিউস সানী, ২৮ মার্চ, মঙ্গলবার মাদরাসাতুল মাদীনার কুতুবখানায় হযরত মাওলানা আবু তাহের মিসবাহ দামাতবারাকাতুহুম এই সাক্ষাতকারটি প্রদান করেন। সাক্ষাতকারটি গ্রহণ করেছেন মাওলানা মুহাম্মাদ যাকারিয়া আবদুল্লাহ। সঙ্গে ছিলেন মাওলানা আবদুল্লাহ মাসুম]
সুত্রঃ View this link
২য় পর্ব এখানেঃ Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই এপ্রিল, ২০১১ রাত ১:২৮
৭টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অতিরিক্ত বা অতি কম দুটোই সন্দেহের কারণ

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৩০

অনেক দিন গল্প করা হয়না। চলুন আজকে হালকা মেজাজের গল্প করি। সিরিয়াসলি নেয়ার কিছু নেই৷ জোসেফ স্টালিনের গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। তিনি দীর্ঘ ২৯ বছর সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রধান নেতা ছিলেন। বলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সীমানা পিলার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৮



বৃটিশ কর্তৃক এদেশে ম্যাগনেটিক পিলার স্থাপনের রহস্য।
ম্যাগনেটিক পিলার নিয়ে অনেক গুজব ও জনশ্রুতি আছে, এই প্রাচীন ‘ম্যাগনেটিক পিলার' স্থাপন নিয়ে। কেউ কেউ এটিকে প্রাচীন মূল্যবান ‘ম্যাগনেটিক’ পিলার... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাথায় চাপা ভূত ভূত ভূতং এর দিনগুলি

লিখেছেন শায়মা, ৩১ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৫


এই যে চারিদিকে এত শত কাজ কর্ম, ঝামেলা ঝক্কি, ক্লান্তি শ্রান্তি সব টপকে আমার মাথায় আজও চাপে নানান রকম ভূত। এক ভূত না নামতেই আরেক ভূত। ভূতেদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায় (দ্বিতীয় অংশ)

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:০৫


আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায় (প্রথমাংশ)
আমাদের সদ্য খনন করা পুকুরটা বৃষ্টির পানিতে ভেসে গেল। যা মাছ সেখানে ছিল, আটকানোর সুযোগ রইল না। আমি আর দুইবোন শিউলি ও হ্যাপি জালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজের পাসওয়ার্ড অন্যকে দিবেন না ;)

লিখেছেন অপু তানভীর, ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৭



কথায় আছে যে পাসওয়ার্ড এবং জাঙ্গিয়া অন্যকে দিতে নেই । মানুষ হিসাবে, বন্ধু হিসাবে প্রেমিক/প্রেমিকা হিসাবে অথবা আজ্ঞাবহ হওয়ার সুবাদে আমরা অন্যকে ব্যবহার করতে দিই বা দিতে বাধ্য হই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×