somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সকল গরু অদৃশ্য হয়ে গেছে

০৯ ই এপ্রিল, ২০১১ রাত ১০:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

খুব পরিচিত একটা কৌতুক দিয়ে শুরু করা যাক। এতই পরিচিত যে, এই কৌতুক শুনে কেউ এখন আর হাসে না। কোন একজনকে নাকি নদীর রচনা লিখতে বলা হয়েছিল। বেচারার ঈমান ছিলো মুখস্ত বিদ্যায় আর কিছুতেই না। তিনি মুখস্ত করেছিলেন গরুর রচনা। লিখতে শুরু করলেন, ‘নদীর নাম মধুমতি। নদীর পাশে বিশাল একটা মাঠ। মাঠে একটা গরু বাধা ছিলো। গরু একটা গৃহপালিত প্রাণী। গরুর দুটি চোখ-দুটি কান-দুটি শিং….’।

গরুর রচনা- আমরা কারো কোনো লেখাকে তুচ্ছ করার জন্য হর-হামেশা এটা বলে থাকি [কাউকে তুচ্ছার্থে বলি গরু, আমিও জীবনে অনেককবার শুনেছি]। একবার টিউটোরিয়ালে প্রশ্ন ছিলো ‘রেনে ডেকার্টকে আধুনিক দর্শনের জনক বলা হয় কেন’?, আমার এক বন্ধু ‘রেনে ডেকার্টকে জনক কেন বলা হবে না, যেহেতু তিনি দর্শনের জনক, যেহেতু বলা হয়ে থাকে’, এই টাইপের কথা-বার্তা দিয়ে পাচ পৃষ্ঠা সাবাড় করে দিলো। এই নিয়ে ম্যাডামসহ আমরা বাদ-বাকি পোলাপান ক্লাসে ব্যাপক হাসাহাসি করলাম। কে যেন বলল এটা হলো গরুর রচনা। আবার হাসাহাসি। আসলে কি গরুর রচনা। কোন রকমে কিছুটা লিখে দিলেই কি গরুর রচনা হয়। অথবা একজাতের শিক্ষক আছে, তারা পৃষ্ঠা গুনে নাম্বার দেন। এই শিক্ষকের পরীক্ষাগুলোকে কেউবা গুরুত্ব দেয় না আবার কেউ স্বভাবজাত প্রতিভায় যা ইচ্ছে তা লিখে দিয়ে আসে। আমার এক বন্ধু ইস্কুলে বাংলা খাতায় লিখেছিল, ‘দেখা হে পেহেলী বার, সাজান কি আখো মে পেয়ার…’। এগুলোকেও বলা হয় গরুর রচনা। শেষ পর্যন্ত গরুর রচনার গুরুত্ব না বুঝে আমরা তাকে হেলার-ঠাট্টার বিষয় বানিয়ে ফেলেছি। অথচ, ছোট বেলায় যে গরুর রচনা লিখেছি তার অসাধারণ মূল্য ও মর্যাদা আছে- সেটা আমরা খেয়াল করি না।

ক্লাস সিক্সে ইংরেজীতে প্যারাগ্রাফ ‘দি কাউ’ আর বাংলায় রচনা ‘গরু’। বিড়ালের রচনা আসলেও একই ফর্মুলা, এধার-উধার মাত্র। তো গরু কেন? গরু এবং হাম্বা এই বঙ্গদেশে বর্ণপরিচয়ের মতো। যদিও এই শহরে এমনকি আজকের দিনে গ্রামে গরু দুস্প্রাপ্য হয়ে যাচ্ছে। এক কুরবান ঈদে এই জ্যান্ত প্রাণীটাকে দেখা যায়।

যখন আমরা কোন একটা জিনিসকে ব্যাখ্যা করতে যাই- তখন আসলে তার চারপাশে ঘুরে আসি। গরুর রচনা আর তো কিছু না, চেনা-জানা গরুর চারপাশে ঘুরে আসা। ব্যাখ্যার প্রথম ধাপে চেনা জিনিস দেওয়ার সুবিধা আছে। এতে ব্যাখ্যা দেবার ফর্মুলা শিখতে হয় না। দেখে শুনে বুঝে মনের মধ্যে সহজে সেট হয়ে যায়। আর দেখা এবং শ্রুতির মধ্যে তো পার্থক্য আছেই। তাহলে এটা হলো কোন কিছুকে কিভাবে পরিচিত করতে হয়, তা শেখানোর প্রথম ধাপ। একেবারে বস্তুগত বিষয়। কোন ছলনা নাই। এর মধ্য দিয়ে ব্যাখ্যা করার, বর্ণনা করার প্রবণতা তৈরী হয়। [যদিও জৈন দর্শন মতে দুনিয়ার কোন জিনিসকে সর্বাংশে চেনা যায় না, আসলেও তাই- তারপরও এটা ধরে নিয়ে বসে থাকলে চলবে কেন?]

দুনিয়াতে কল্পনাশক্তির দরকার আছে। কল্পনাশক্তির ব্যাপ্তি অনাগত সময়কে নিজের মতো সাজানোরও ফুসরত দেয়। কিন্তু তার আগে থাকা চাই দেখা দুনিয়াকে বা বস্তুকে বর্ণনা করার ক্ষমতা। শিশু মনের মধ্যে যে দুই তিনটা প্রাণীর ডাক কড়া ছাপ ফেলে, সেগুলো হলো হাম্বা, ম্যাও, কা-কা-কা। এই চেনা জানা জিনিসগুলোকে নিয়ে বেশি ততপরতা দেখালে সাধারণ দেখার বাইরে যে আরো কিছু আছে সেটা পষ্ট হয়। আর তা যখন বইয়ের মধ্যে উঠে আসে তখন শুধুমাত্র মুখস্ত করার চেয়ে নিজের দেখাকে বলতে পারার সুযোগ ঘটে। এই সুযোগও আসে কে কতো ভালোভাবে দেখল তা পরীক্ষা করার। আত্মবিশ্বাসের ব্যাপার বটে। অবশ্যই সেই সুযোগ মুখস্তের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে। আবার কল্পনার জগতের ব্যাখ্যাও চেনা জানা জগতের জিনিস-পত্তর দিয়ে হয়। যে দেখা দুনিয়াকে সুক্ষভাবে বর্ণনা করতে পারে না, তার পক্ষে অদেখা-বানানো দুনিয়ার বর্ণনা দেয়া সহজ নয়। অসম্ভবও হতে পারে। এটা যুক্তি পদ্ধতির মতো। জানা থেকে অজানায় যাওয়ায়। এর ভেতর নিয়ে একটা পদ্ধতিও তৈয়ার হয়। কিন্তু গরুর রচনার এই বিষয়টা কি আমরা সহজে খেয়াল করি। মনে হয় না। বরং, গরুর রচনা ব্যর্থ লেখকের কপালে কলংকের তিলক চিহ্ন হয়ে জ্বলজ্বল করে।

গরুর রচনার মধ্যে কি কি থাকে। গরুর দৈহিক বর্ণনা, উপকারিতা আর ক্ষেত্র বিষয়ে গরু রেগে তেড়ে আসে এবং গরু একটি উপকারী প্রাণী। এই বর্ণনার মধ্যে বাহুল্য নাই-অতি প্রশংসা নাই। আছে সহজভাবে দেখা। গুনের বর্ণনা। কিন্তু এই গরুর রচনা থেকে শেষ পর্যন্ত আমরা কি শিখি। কিছুই শিখি না। বড়জোড় বড়ো একটা লেখা কিভাবে ধৈর্য্য ধরে মুখস্ত করতে হয় আর লিখতে হয় তা শিখি। এর বেশি আর কি দরকার। কিন্তু সেই গরুর রচনাটাই শিখি না। যা শিখি, সেটাও ভুলে যাই। কেননা, আমাদের বয়সকালে কোন রচনাই আসলে গরুর রচনা থাকে না। নিজ নিজ মতাদর্শ, স্বার্থ, ধামা ধরতে গিয়ে আমরা লিখে যাই। সেইখানে কেউ ভিলেন কেউ নায়ক। কিন্তু কেউ একটা প্রকৃত গরুর মতো বর্ণিত হয় না। তাই আমাদের কোন প্রকৃত ইতিহাস নাই। তা প্রতিমুহুর্তে নির্মিত হয়। নানা জনে নানা ভাবে।

বাল্যকাল অপাপবিদ্ধ সময়। বড়ো হতে থাকলে পাপের খাতাও খুলে যায়। এখন যদি গরুর রচনা লিখতে যাই- সেই গরু হয়তো আকাশে উড়বে নয়তো গাছে থাকবে। এর চেয়ে এই ভাবি- আহা, গরু সকল অদৃশ্য হয়ে গেছে।

> পোষ্টে ব্যবহৃত ছবি নেয়া হয়েছে মানি সেভিং মম সাইট থেকে।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই এপ্রিল, ২০১১ রাত ১০:৩৬
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বর্গের নন্দনকাননের শ্বেতশুভ্র ফুল কুর্চি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ২২ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৭


কুর্চি
অন্যান্য ও আঞ্চলিক নাম : কুরচি, কুড়চী, কূটজ, কোটী, ইন্দ্রযব, ইন্দ্রজৌ, বৎসক, বৃক্ষক, কলিঙ্গ, প্রাবৃষ্য, শক্রিভুরুহ, শত্রুপাদপ, সংগ্রাহী, পান্ডুরদ্রুম, মহাগন্ধ, মল্লিকাপুষ্প, গিরিমল্লিকা।
Common Name : Bitter Oleander, Easter Tree, Connessi Bark,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচলের (সচলায়তন ব্লগ ) অচল হয়ে যাওয়াটই স্বাভাবিক

লিখেছেন সোনাগাজী, ২২ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬



যেকোন ব্লগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবর, একটি ভয়ংকর খারাপ খবর; ইহা দেশের লেখকদের অদক্ষতা, অপ্রয়োজনীয় ও নীচু মানের লেখার সরাসরি প্রমাণ।

সচল নাকি অচল হয়ে গেছে; এতে সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

হরিপ্রভা তাকেদা! প্রায় ভুলে যাওয়া এক অভিযাত্রীর নাম।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২২ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৩


১৯৪৩ সাল, চলছে মানব সভ্যতার ইতিহাসের ভয়াবহ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। টোকিও শহর নিস্তব্ধ। যে কোন সময়ে বিমান আক্রমনের সাইরেন, বোমা হামলা। তার মাঝে মাথায় হেলমেট সহ এক বাঙালী... ...বাকিটুকু পড়ুন

তুমি বললে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ২২ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৭

তুমি বললে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

খুব তৃষ্ণার্ত, তুমি তৃষ্ণা মিটালে
খুব ক্ষুধার্ত, তুমি খাইয়ে দিলে।
শ্রমে ক্লান্ত, ঘর্মাক্ত দেহে তুমি
ঠান্ডা জলে মুছে দিলে, ঊর্মি
বাতাস বইবে, শীতল হবে হৃদয়
ঘুম ঘুম চোখে পাবে অভয়।
তোমার আলপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনারই মেরেছে এমপি আনারকে।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২২ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


ঝিনাইদহ-৪ আসনের সরকারদলীয় এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ছিল তারই ছোটবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনার আক্তারুজ্জামান শাহীন!

এই হত্যার পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আরেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×