somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কখনও বক্তৃতা দিয়েছেন? আসুন জীবনের প্রথম বক্তৃতা দেয়ার অভিজ্ঞতা শেয়ার করি। B:-/

০৯ ই এপ্রিল, ২০১১ রাত ১:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বন্ধুদের সাথে আড্ডাতে আমরা এক একজন তো বলা যায় বিশেষজ্ঞ হয়ে যাই। আর ব্লগে লিখতে গেলে তো মাশাল্লাহ আমরা বুদ্ধিজীবী! :) আমাদের মধ্যে এমন কয়জন আছি যারা মঞ্চে উঠে বক্তৃতা দিয়েছি? অনেক বেশি বক্তৃতা দেয়ার অভিজ্ঞতা থাকলে পরে আর তেমন কোন ব্যাপার মনে হয় না কিন্তু জীবনের প্রথম বক্তৃতা দেয়ার অভিজ্ঞতা আসলেই অন্য রকম।

আমার প্রথম অভিজ্ঞতা হয় আমি যখন সিক্স কি সেভেনে পড়ি। আগেই বলে রাখা প্রয়োজন আমি জীবনে ডিবেট করিনি, কোন কুইজে অংশ নেই নি, গান তো পারি ই না। :P এক্সট্রা কারিকুলার কিছুই করি নি। স্কুলে পড়ালেখা, গল্প করা, আর ক্রিকেট ফুটবল খেলা- বন্ধুদের সাথে এসব করেই আমার দিন কেটে যেত। ক্রিকেট ফুটবল খেলাকে এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটি বলতে চাই না, কারণ স্কুল থেকে কোন খেলা আয়োজন করা হলে তাতে আমি কোনদিন খেলতাম না। এ সম্পর্কে একটা মজার ঘটনা বলি। স্কুলে থাকতে আমার একটা বন্ধু খুব ভাল ছবি আঁকত। ওকে দেখতাম টেন্ডুলকার, ওয়াসিম আকরামের ছবি হুবহু একে ফেলত। আমরা মুগ্ধ হয়ে দেখতাম আর উৎসাহ দিতাম। যাইহোক, কেন যে ও বরাবর ড্রয়িং পরীক্ষাতে খারাপ করত আমরা ভেবে পেতাম না। আমাদের এক বন্ধু মজা করতে বলত, আরে পরীক্ষার সিলেবাসের ড্রয়িং যে লেখাপড়া(!) তাই সে পারে না। যদি এটা লেখাপড়া না হত তাহলে এটাও সে ভাল করত! :P

অনেক আজাইরা পেচাল পাড়লাম এবার আসল ঘটনাতে ফিরে আসি। আমাদের এক স্যার আমাদের নিয়ে অনুষ্ঠান করতেন মাঝে মাঝেই। উনি আমাদের ইংরেজি পড়াতেন। একবার এক অনুষ্ঠানের আগে উনি আমাদের বলে দিলেন এবার মঞ্চে উঠে বক্তৃতা দিতে হবে। আমরা সবাই না না করে রব তুললাম। স্যার তো নাছোড়বান্দা! না দিতেই হবে, আবার তাও দিতে হবে ইংরেজিতে! আমরা ভয় পেয়ে গেলাম। স্যার সাহস দিয়ে বললেন আরে ভয়ের কিছু নেই কারা কারা বক্তৃতা দিবে আগেই ঠিক করা থাকবে। ওরা আগে থেকে কিছুটা প্রস্তুতি নিয়ে রাখলেই হবে। স্বাভাবিক ভাবেই আমি ঐ লিস্টে ছিলাম না। অনুষ্ঠানে আমরা বন্ধুরা একসাথে মজা করে গেলাম। প্রথমে কুইজ হল, আরো অনেক কিছু হল বিস্তারিত বলছি না। যাইহোক খাবার আগে আমাদের অতিথিরা কিছু বললেন। তার পরে স্টুডেন্টদের বলার পালা। এক এক করে থ্রি ফোরের বাচ্চারা বক্তৃতা দিল। ওদের ইংরেজি শুনে যারা বাইরে থেকে এসেছে ওরা তো অবাক। আগে থেকে ঠিক করা লিস্ট থেকে এক বড় ভাই নাম ডাকছে আর একজন একজন করে উঠে যাচ্ছে বক্তৃতা দিতে। কেঊ ভুল কিছু বললে আমরা মজা করে চিৎকার দিচ্ছি। কুইজের রেজাল্ট দিতে একটু দেরি হচ্ছে তাই ভাইয়া দেখলাম লিস্টের বাইরে থেকেও দুই একজনকে ডাক দিল। এবার আমাদের তো ভয়ে জান হাতে, কি আজব এটা কি! এই সময়ে আমার নাম ডাকা হল। আমি তো বরফের মত ঠান্ডা হয়ে গেলাম। :| আগেই বলেছি আমার এসবে কোন অভিজ্ঞতা নেই, তার উপর কোন প্রস্তুতি ছাড়া ইংরেজিতে এত দর্শকদের সামনে কথা বলতে হবে। ভাইয়া আবার আমার নাম ধরে ডাক দিল। আমি তো ভাবলাম দৌড় দিয়ে পালাই! এক বন্ধু আমাকে ঠেলে দাড় করিয়ে দিল। X(( ইচ্ছে করছিল ওর পাছায় একটা লাত্থি মারি, আর বড় ভাইরে ইচ্ছে করছিল গুলি করি। X( যদি পিস্তল থাকত করেও দিতে পারতাম! কি আর করা পালাবার উপায় নেই। কাপা কাপা পায়ে মঞ্চে উঠে গেলাম। মাইকে কথা বলতে গিয়ে অন্য রকম অভিজ্ঞতা। নিজের কথা এত জোরে নিজে শুনে তো আমার জিব্বায় পেচ লেগে যাওয়ার অবস্থা। ভাবলাম এখনো সময় আছে, পালাই! :| বুদ্ধি করে আগে যারা বক্তৃতা দিয়েছে তাদের কিছু লাইন মনে করে বলে দিলাম। কিন্তু টাইম তো পার হয় না, চার পাচ লাইন বলার পরে আমার তো বলার আইটেম শেষ হয়ে গেল। এদিকে এতক্ষণ আমরা পিছন থেকে পচাইছি, এখন একজন হটাত করে বলে উঠল, কিরে বাসা থেকে মুখস্ত করে আসনি! মেজাজ গেল পুরা বিলা হইয়া। আরে হারামি, আমি কি জানি নাকি আমাদের মঞ্চে উঠতে হবে! /:) কোনমতে আরো দুই এক লাইন বলে থাঙ্কু বলে কথা শেষ করে আমার সিটে ফিরে আসলাম। :( সিটে ফেরত আসার পরে বন্ধুরা উৎসাহ দিতে লাগল, আরে দোস্ত ভালই বলেছিস, আমরা হলে তো এক লাইনও বলতে পারতাম না! শুনে নিজেকে আমি কি হনুরে টাইপ মনে হতে লাগল। B-)

পরের দিন ক্লাসে গেলে স্যার বলল, "তোমরা তো ভালই বলেছ। আমার জীবনের প্রথম বক্তৃতা দিতে গিয়ে আমি মঞ্ছের পিছনের পর্দার নিচে দিয়ে পালিয়েছিলাম!" :P শুনে আমি মনে মনে বলি, "স্যার, আমিও পালাতাম কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমাদের পর্দার ওপাশে দেয়াল ছিল, তাই পারিনি!" :( আহা! সেইদিনের কথা মনে হলে এখনো গায়ে কাটা দেয়। আর এখন আমি কারণে অকারণে এত বেশি লেকচার দেই যে আমার বন্ধুরা আমাকে লেকচারার ডাকে। :P

আমার কথা তো অনেক বললাম। আপনাদের এমন কোন অভিজ্ঞতা থাকলে শেয়ার করতে পারেন। :)
১২টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×