somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অবিশ্বাস্য প্রতারণা

০৮ ই এপ্রিল, ২০১১ রাত ১২:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রতিদিনের মতো সেদিনও রাত নয়টার দিকে গুলিস্তান মোড় হয়ে আমার নিবাস সূর্যসেন হলে ফিরছিলাম। স্বাভাবিক নিয়মেই চলছে গুলিস্তানের হৈচৈ, হকারদের লেন এশশো (নেন একশ) মার্কা পরিবেশ কাঁপানো খিস্তিখেউর, জ্যাম, ধুলোবালি, ভিুকের উৎপাত, গোলাপ শাহ মাজারে স্তুতি দিতে আসা ভক্তদের বৈচিত্রময় সব কর্মকান্ড। আশপাশে ভ্রুপে না করেই পায়ে হেটে আমি সামনে এগুচ্ছি। আন্ডারগ্রাউন্ড মার্কেট হয়ে মাজার মোড় পার হয়ে টেলিফোন একচেক্স ভবনের সামনে আসার পর প্রায় শ খানেক লোকেরএকটি বিশাল জটলা দেখলাম। জটলার মাঝখানে মাঝ বসয়ী এক লোককে এ সময় ‘হায় খোদা! আমার সব নিয়ে গেল’ বলে আকাশ কাঁপানো বিলাপের পর অজ্ঞান হয়ে দাঁড়ানো থেকে পড়ে যেতে দেখলাম। এখানে এমন জটলা অহরহ হয়। কেননা, গুলিস্তানে নিত্যনৈমিত্তিক এমন জটলার জন্য বিখ্যাত। অভিজ্ঞ যে কেউ মাত্রই জানেন, এখানে ২০০ টাকায় মোবাইল, ৫০ টাকায় ঘড়ি, ১০০ টাকায় লুঙ্গি, শার্ট বা জুতা যেমন পাওয়া যায়। তেমনি ২০ টাকায় ১ ঘন্টার মধ্যে যৌন শক্তিবর্ধক চিকিৎসা বা কিডনি রোগের ঔষধ, নখ কাটার ব্লেড, নালার উপর ভাতের রেস্টুরেন্ট বা চুলের জেলসহ সব কিছু নিয়েই জটলা বাঁধতে দেখা যায়। প্রথমে জটলার প্রতি কোন ধরনের আগ্রহ ছিলনা। কিন্তু একটু পরেই কি চিন্তা করে কেন যেন বিষয়টি জানার জন্য জটলার কাছে ঘেষলাম। তাছাড়া লোকটির পড়ে যাওয়া স্বাভাবিক ছিলনা বলেও মনে হয়েছে। কিছুণ দাঁড়ানোর পর যা শুনলাম, তা একদিকে যেমন অবিশ্বাস্য অন্যদিকে যেমনিই দু:খজনক। ঘটনার সারমর্ম মোটামুটি এ রকম, ‘অজ্ঞান হওয়া ব্যক্তি সিরাজগঞ্জের একজন কাপড় ব্যবসায়ী । নগদ ২ল টাকা নিয়ে তিনি ঢাকা এসেছেন তার দোকানের মাল কেনার জন্য। গুলিস্তান মোড়ে সদর ঘাটে যাওয়ার গাড়ির জন্য অপো করছিলেন। এ সময় তার পাশে বাচ্চা কোলে দাঁড়ানো এক সুন্দরী মহিলা তার পরণের শাড়ির মুল ভাঁজ (গিট) খুলে যাওয়ার অজুহাত দেখিয়ে অনুনয় বিনয় করে লোকটির কাছে কোলের বাচ্চাটিকে একটু ধরার জন্য অনুরোধ করল । লোকটি বাচ্চাটিকে কোলে নিলে মহিলা শাড়ির গিটটি ঠিক করে হাটতে পারবেন বলে জানান। অনেকটা মানবিক দিক বিবেচনা করে ব্যবসায়ী লোকটি যখন বাচ্চাটি কোলে নিলেন । ঠিক তখন মহিলাটি ওরে বাবারে! ওরে মারে! বলে চিৎকার শুরু করল। এ সময় চারদিক থেকে শ খানেক লোক জমায়েত হলে মহিলা তাদেরকে বলল, “বাচ্চা কোলে নিয়ে দাঁড়ানো লোকটি তার স্বামী। তিন বছর আগে লোকটি বিভিন্ন লোভ দেখিয়ে এ মহিলাকে বিয়ে করার পর পালিয়ে ঢাকা চলে আসে। এরপর থেকে তার কোনো খোঁজÑখবর নেই। কোলের বাচ্চাটি লোকটিরই ঔরষজাত । আজ লোকটির সন্ধান পাওয়া গেলে লোকটি তার স্ত্রী-বাচ্চাকে অস্বীকার করে আবার পালানোর চেষ্টা করছে’ বলে অভিযোগ তুলে মহিলা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উপস্থিত লোকদের কাছে এর বিচার চাইতে থাকে। এ সময় লোকটিকে আত্মপ সমর্থনের কোনো সুযোগ না দিয়েই ঝটলার ভেতরেরই কয়েকজন লোক পুলিশে দেয়ার কথা বলে পাশে নিয়ে তার কাছে থাকা নগদ টাকা, মোবাইলসহ মুল্যবান সব কিছু কেড়ে নিয়ে তাকে কী যেন একটা শুকিয়ে দিয়ে রাস্তার পাশে ফেলে চলে যায়। পথচারীরা তাকে ধরে পাশের মার্কেটে নিয়ে ফ্যানের নিচে শুইয়ে মাথায় পানি ঢাললে একটু পর তার জ্ঞান ফিরে আসে। জ্ঞান ফেরার পরপরই তিনি ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। ততণে সুন্দরী মহিলা, ফুটফুটে বাচ্চা, টাকা হাতিয়ে নেয়া পুরো চক্রটিই লাপাত্তা। এসে কাউকে না পেয়ে হাউমাউ করে বুক চাপড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে আবার মুর্চা যান।

এই হলো সংেেপ পুরো ঘটনা। প্রতিদিন আমরা অসংখ্য লোক গুলিস্তানের উপর দিয়ে চলাচল করি। যাতায়াতের সময় আমরা স্থানটিতে বিভিন্ন শ্রেনী-পেশা, ধর্মÑবর্ণসহ নানা ধরনের মানুষ দেখি। ‘বাহিরের অবয়বে সবাইকে মানুষ হিসেবে দেখলেও রাজধানীর অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টের মতো এখানেও অসংখ্য অমানুষ বিভিন্ন ধান্ধার উদ্দেশ্যে ঘাপটি মেরে বসে থাকে।’ উপরে বর্ণিত ঘটনার বিচারে বাক্যটি ভুল বলিনি বলে আমার মতো অনেকেই মত দিবেন। গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এমন ঘটনা অহরহ ঘটলেও পুরো বিষয়টিই আমার কাছে অবিশ্বাস্য ঠেকছে। বিষয়টি নিয়ে হলের এক বড় ভাইয়ের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, ‘ধান্ধাবাজÑপ্রতারক এ শ্রেনীর একটি বড় চক্র রয়েছে। সংঙ্ঘবদ্ধ হয়ে অত্যন্ত পরিকল্পিত উপায়ে দীর্ঘ সময় ধরে টার্গেটকে নজরদারিতে রেখে চক্রটি এমন অবিশ্বাস্য সব অপরাধ ঘটিয়ে থাকে। টার্গেটকে সহজে বশে আনার জন্য এরা কম বয়সী সুন্দরী যুবতী মেয়েদের ব্যবহার করে থাকে। গুলিস্তানে এ চক্রটি প্রায়ই এমন ঘটনা ঘটিয়ে থাকে । এদের বিষয়ে অনেক েেত্র আইন-শৃংখলা বাহিনীও অবগত রয়েছে বলেও জানান তিনি।

এমন ঘটনা আমার জন্য নতুন হলেও ব্লগারদের মধ্যে অনেকেই হয়তো এর চেয়েও ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন। এমন অভিজ্ঞতা আপনাদের ঝুঁলিতে থাকলে দয়া করে ব্লগে শেয়ার করুণ। এমন অপ্রত্যাশিত ঘটনার হাত থেকে বাঁচার জন্য মানবিক দিক বিবেচনা করে সচেতনতা ও সতর্কতার বিকল্প নেই বলে আমি মনে করি। প্রিয় পাঠক বিয়ষটি অন্যের সঙ্গে শেয়ার করুন। অপ্রত্যাশিত তির হাত থেকে নিজে বাঁচুন অন্যকে বাঁচাতে সাহায্য করুন। জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে এগিয়ে আসুন। সম্পদ ও জীবন হানি থেকে সতর্ক হোন।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই এপ্রিল, ২০১১ রাত ৮:৪৬
১২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আমার ড্রোন ছবি।

লিখেছেন হাশেম, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩

বৃহত্তর প্যারিস তুষারপাত।

ফ্রান্সের তুলুজ শহরে বাংলাদেশের প্রথম স্থায়ী শহীদ মিনার।

হ্যাসল্ট, বেলজিয়াম।

ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী ফ্রান্সের ফ্রিওল আইল্যান্ড।


রোডেসিয়াম এম রেইন, জার্মানি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতার সুফল কতটুকু পাচ্ছে সাধারণ মানুষ

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৮

(১) আমলা /সরকারের কর্মকর্তা, কর্মচারীর সন্তানদের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব হতাশাজনক। মুক্তিযুদ্ধের ১৯৭১ সালের রক্ত দেওয়া দেশের এমন কিছু কখনো আশা কি করছে? বঙ্গবন্ধু এমন কিছু কি আশা... ...বাকিটুকু পড়ুন

এলজিবিটি নিয়ে আমার অবস্থান কী!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১০ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৫

অনেকেই আমাকে ট্রান্স জেন্ডার ইস্যু নিয়ে কথা বলতে অনুরোধ করেছেন। এ বিষয়ে একজন সাধারণ মানুষের ভূমিকা কী হওয়া উচিত- সে বিষয়ে মতামত চেয়েছেন। কারণ আমি মধ্যপন্থার মতামত দিয়ে থাকি। এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×