somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নেতাদের হটাল মানুষ, আন্নার অনশনে পদ ছাড়লেন পওয়ার

০৭ ই এপ্রিল, ২০১১ রাত ৯:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পড়ন্ত বেলায় গেরুয়া বসনে যন্তর-মন্তরে এলেন উমা ভারতী। আন্না হাজারের দুর্নীতি-বিরোধী অভিযানে শরিক হতে। সমবেত জনতার চিৎকার, “নেতাগিরি নেহি চলেগি... নেহি চলেগি।” অগত্যা সলজ্জ মুখে ফেরত গেলেন একদা বিজেপির ‘অগ্নিকন্যা’।
একই দশা ওমপ্রকাশ চৌটালার। জনতার চাপে মঞ্চের ধারে-কাছেই ঘেঁষতে পারলেন না।
আর সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরি? ভেবেছিলেন যাবেন। সব দেখেশুনে আর ও মুখো হননি।
দুর্নীতি রোধে লোকপাল বিলের দাবিতে কাল থেকে আমরণ অনশনে বসেছেন বাহাত্তর বছর বয়সী সমাজকর্মী আন্না হাজারে। এর আগেও মহারাষ্ট্রে একাধিক বার অনশন করেছেন তিনি। কিন্তু এ বারে রাজধানীর স্নায়ুকেন্দ্রে তাঁর অনশন নিঃশব্দে বিপ্লব ঘটিয়ে দিচ্ছে। দিল্লির বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যেমন সাধারণ মানুষের সমর্থন আসছে, তেমনই দেশের বিভিন্ন স্তর থেকেও দুর্নীতির বিরুদ্ধে আওয়াজ উঠছে। আর মঞ্চে বসে খোদ আন্না হাজারে বলছেন, এখানে রাজনীতির কোনও জায়গা নেই। রাজনৈতিক নেতাদেরও ঠাঁই নেই।
সঙ্গে আছি... দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্না হাজারের আন্দোলনকে সমর্থন
মোমের আলোয়। বুধবার সন্ধ্যায় ইণ্ডিয়া গেটে। — পি টি আই
এবং সেই আন্দোলনের চাপে সরকারের প্রথম ‘উইকেট’ও পড়েছে। দুর্নীতিদমন বিষয়ক মন্ত্রিগোষ্ঠী থেকে ইস্তফা দিয়েছেন শরদ পওয়ার। আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকের পরে এ কথা জানানো হয়। এই সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে তাঁর উপরে কোনও চাপ ছিল কি না জানতে চাইলে পওয়ার বলেন, “আমি নিজেই প্রধানমন্ত্রীকে গিয়ে ইস্তফার কথা চিঠি লিখে জানাই। আর ওই মন্ত্রিগোষ্ঠীতে ফিরবও না।” পওয়ার অবশ্য আগেই বলেছিলেন, “আমাকে সব মন্ত্রিগোষ্ঠী থেকেই ‘মুক্তি’ দেওয়া হোক।” অনেকে মনে করছেন, এনসিপি প্রধান নিজে সরে গিয়ে কংগ্রেসের উপরেই পাল্টা চাপ তৈরির চেষ্টা করলেন।
দুর্নীতিদমন আন্দোলনে পওয়ার ছিলেন হাজারের অন্যতম ‘নিশানা’। তাই দুর্নীতিদমন বিষয়ক মন্ত্রিগোষ্ঠী থেকে কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রীর ইস্তফার খবর জানার পরে হাজারেকে অনেকেই প্রশ্ন করেন, এ বার তিনি কী করবেন? অনশন তুলে নেবেন কি? জবাবে হাজারে বলেন, “এক পওয়ার গেলে আর এক পওয়ার আসবে। তা ছাড়া উনি মন্ত্রিগোষ্ঠী থেকে পদত্যাগ করেছেন তো কী হয়েছে? ওঁকে মন্ত্রিসভা থেকেও পদত্যাগ করতে হবে।”
বিষয়টি নিয়ে আজ মন্ত্রিসভার বৈঠকের পরে কয়েক জন মন্ত্রীর সঙ্গে ঘরোয়া ভাবে আলোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। হাজারের অনশন ঘিরে যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, তা অবিলম্বে প্রশমন করা জরুরি, এ কথা মেনে নেন সকলেই। কিন্তু কী ভাবে? সরকারি সূত্রে বলা হয়েছে, প্রয়োজনে কয়েক জন মন্ত্রী গিয়ে হাজারের সঙ্গে তাঁর দাবিদাওয়া নিয়ে কথা বলতে পারেন। তিনি যাতে অনশন প্রত্যাহার করেন, সে জন্য বোঝাবেনও। মন্ত্রীরা না গেলেও সেই কাজ অবশ্য শুরু হয়ে গিয়েছে। পরিস্থিতি বুঝে সরকার যে সব দিক খোলা রাখছে, সে কথাও আজ উল্লেখ করেছেন আইনমন্ত্রী বীরাপ্পা মইলি। তিনি বলেন, “যৌথ কমিটির ক্ষেত্রেও বলেছি, আমরা সব দিক খোলা রেখেছি। নীতিগত ভাবে ‘না’ বলিনি।” তিনি জানান, হাজারের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীও কথা বলতে চান। মইলির বক্তব্য, “দুর্নীতি রুখতে প্রধানমন্ত্রী বদ্ধপরিকর। কিন্তু এখন নির্বাচনের জন্য অনেকেই প্রচারে ব্যস্ত। তাই বিলটি পেশের জন্য কিছুটা সময় তো দিতেই হবে।”
আসলে হাজারের আন্দোলন সরকারকে যথেষ্ট নাড়া দিয়েছে। বিশেষ করে নাগরিক সমাজ যে ভাবে মঞ্চ ঘিরে জড়ো হচ্ছে, তাতে বিপদই দেখছেন সরকারি নেতৃত্ব। সরকার-বিরোধিতার হাওয়ায় যাঁরা রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চেয়েছেন, সেই বিজেপি বা সিপিএম নেতৃত্বও হাজারের তালে তাল রাখার চেষ্টা করছেন। তবে হাজারের প্রস্তাবিত কমিটিতে অর্ধেক সদস্য নাগরিক সমাজ থেকে নেওয়ার যে দাবি, তার পক্ষে মুখ খোলেননি কেউই। সরকারও ঘরোয়া ভাবে বলছে, এই দাবি মোটেও বাস্তবসম্মত নয়। এটা হাজারেকে বোঝানোর চেষ্টাও চলছে।
নাগরিক সমাজ ও বিশিষ্টজনেরা কিন্তু সমানে হাজারের মঞ্চ ‘ঘিরে’ জড়ো হচ্ছেন। যন্তর-মন্তরে তাঁর মঞ্চ ঘিরে ভিড় কখনওই কমেনি। উল্টে সমর্থন এসেছে সমাজের বিভিন্ন অংশ থেকে। অভিনেতা আমির খান হাজারেকে সমর্থন করে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছেন। তিনি বাদে বলিউডের একটি বড় অংশও হাজারের পাশে দাঁড়িয়েছে। শেখর কপূর, অনুপম খের থেকে রাহুল বসু— কেউ টুইট করে, কেউ বিবৃতি দিয়ে নিজেদের সমর্থনের কথা জানিয়েছেন। আজ সন্ধ্যায় মোমবাতি নিয়ে পথে নেমেছে যুব সম্প্রদায়। দিল্লিতে ইণ্ডিয়া গেটের সামনে যেমন, তেমনই দেশের অন্যত্রও এই ছবি দেখা গিয়েছে।
এই জন-শক্তিই রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের সরিয়ে রেখেছে হাজারের মঞ্চের কাছ থেকে। প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে হাজারেও বলেছেন, ‘এই আন্দোলনকে অপমান করবেন না!’ কাল অবশ্য পরিস্থিতি কিছুটা হলেও অন্য রকম ছিল। জেডি (ইউ) নেতা শরদ যাদব-সহ বিজেপির কয়েক জন সেই মঞ্চে গিয়েওছিলেন। বিজেপি নেতা তরুণ বিজয় আজ বলেছেন, “আমি মঞ্চেও গিয়েছি। আন্না হাজারে বলেছেন ‘শাবাস’।” এর পরেই কংগ্রেস অভিযোগ তোলে, হাজারের পিছনে আরএসএস রয়েছে। তার পর থেকে আর রাজনৈতিক নেতাদের ধারেকাছে ঘেঁষতে দিচ্ছেন না হাজারে। সমবেত মানুষকে বলছেন, “রাজনীতির মানুষদের চিন্তাভাবনা যদি ভালই হবে, তবে এত দিনে দুর্নীতি রুখতে সমাজের সংস্কার করলেন না কেন? ওঁরা তো ‘দুর্বল’ লোকপাল বিলই পাশ করাতে পারেননি!” তবে হাজারের দাবিদাওয়া নিয়ে সরকারের ভিতরে বিরুদ্ধ মত রয়েছে। যদিও তাঁরা সামনে আসতে চাইছেন না। তাঁদের বক্তব্য, বিলের খসড়া তৈরির জন্য যে কমিটি, তার অর্ধেক সদস্য নাগরিক সমাজ থেকে নেওয়াটা একেবারেই বাস্তবসম্মত নয়। তার উপর আন্না হাজারে এক এক জনকে ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ বলে মন্ত্রিগোষ্ঠী থেকে বাদ দেওয়ার কথা বলছেন, তার পরিণতি কী? কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, “এমন দাবি মানলে রাজনৈতিক ব্যবস্থাটাকেই তুলে দিতে হবে।” অস্বস্তিতে বিজেপিও। এত দিন সংসদে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব হওয়ার পরে এ বার তাই নিয়ে পথে নেমে ফায়দা তুলতে চাইছে তারা। আজ দলের প্রতিষ্ঠা দিবসে সভাপতি নিতিন গডকড়ী দু’মাস ধরে দেশ জুড়ে দুর্নীতি-বিরোধী আন্দোলনেরও সূচনা করেন। কিন্তু এখন দুর্নীতি বিরোধিতা নিয়ে আন্দোলনের রাশ চলে গিয়েছে আন্না হাজারের হাতে। এই অবস্থায় বাধ্য হয়েই হাজারের আন্দোলনকে সমর্থন জানাচ্ছে গডকড়ীর দল। তাঁর প্রস্তাবিত বিলকেও। পাওনা বলতে একটাই। হাজারের আন্দোলনে মনমোহন সরকার বিদ্ধ হচ্ছে!
আনন্দবাজার পত্রিকা থেকে
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কথাটা খুব দরকারী

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ৩১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:৩৪

কথাটা খুব দরকারী
কিনতে গিয়ে তরকারি
লোকটা ছিল সরকারি
বলল থাক দর ভারী।

টাকায় কিনে ডলার
ধরলে চেপে কলার
থাকে কিছু বলার?
স্বর থাকেনা গলার।

ধলা কালা দু'ভাই
ছিল তারা দুবাই
বলল চল ঘানা যাই
চাইলে মন, মানা নাই।

যে কথাটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

অতিরিক্ত বা অতি কম দুটোই সন্দেহের কারণ

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৩০

অনেক দিন গল্প করা হয়না। চলুন আজকে হালকা মেজাজের গল্প করি। সিরিয়াসলি নেয়ার কিছু নেই৷ জোসেফ স্টালিনের গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। তিনি দীর্ঘ ২৯ বছর সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রধান নেতা ছিলেন। বলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সীমানা পিলার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৮



বৃটিশ কর্তৃক এদেশে ম্যাগনেটিক পিলার স্থাপনের রহস্য।
ম্যাগনেটিক পিলার নিয়ে অনেক গুজব ও জনশ্রুতি আছে, এই প্রাচীন ‘ম্যাগনেটিক পিলার' স্থাপন নিয়ে। কেউ কেউ এটিকে প্রাচীন মূল্যবান ‘ম্যাগনেটিক’ পিলার... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাথায় চাপা ভূত ভূত ভূতং এর দিনগুলি

লিখেছেন শায়মা, ৩১ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৫


এই যে চারিদিকে এত শত কাজ কর্ম, ঝামেলা ঝক্কি, ক্লান্তি শ্রান্তি সব টপকে আমার মাথায় আজও চাপে নানান রকম ভূত। এক ভূত না নামতেই আরেক ভূত। ভূতেদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজের পাসওয়ার্ড অন্যকে দিবেন না ;)

লিখেছেন অপু তানভীর, ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৭



কথায় আছে যে পাসওয়ার্ড এবং জাঙ্গিয়া অন্যকে দিতে নেই । মানুষ হিসাবে, বন্ধু হিসাবে প্রেমিক/প্রেমিকা হিসাবে অথবা আজ্ঞাবহ হওয়ার সুবাদে আমরা অন্যকে ব্যবহার করতে দিই বা দিতে বাধ্য হই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×