somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রসঙ্গ: এবারের আদম শুমারিতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের গণনা কতটা সঠিকভাবে হয়েছে

০৭ ই এপ্রিল, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশ আয়োতনের দিক থেকে বিশ্বে ৯০তম হলেও জনসংখ্যার দিক থেকে ৭ম স্থানে রয়েছে। ২০০১ সালের আদম শুমারি অনুয়ায়ী বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৪ কোটি। এর মধ্যে ১.৬ ভাগ জনগোষ্ঠীকে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রতিবন্ধী নিয়ে কাজ করে এসব সংস্থা বা সংগঠন সমূহের মতে- সরকারের তথ্যের সাথে বাস্তবতার কোন মিল নেই।
একশন এইড বাংলাদেশ এবং সোসাল অ্যাসিসটেন্ট অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন ফর দি ফিজিক্যাল ভলনারেবল (সার্ভ)-এর যৌথ জরিপে পাওয়া গেছে- বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় ৮ দশমিক ৮ ভাগ প্রতিবন্ধী। বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী কল্যাণ সমিতি (বিপিকেএস)-এর মতে- এ হার ৭ দশমিক ৮ ভাগ। জাতীয় প্রতিবন্ধী ফোরামের মতে- ৫ দশমিক ৬ ভাগ প্রতিবন্ধী ব্যক্তি রয়েছে।
অথচ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুযায়ী বিশ্বের ১০ ভাগ জনগোষ্ঠী প্রতিবন্ধিতার শিকার। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো এবং বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যের মধ্যে বিরাট ফারাক রয়েছে। এর মূল কারণ হচ্ছে, বাংলাদেশে আদম শুমারিতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সেভাবে সণাক্ত করা হয় নি। আদম শুমারির তথ্য সংগ্রহে নিয়োজিত মাঠ কর্মীদের অধিকাংশই প্রতিবন্ধিতার সংজ্ঞা এবং ধরন সম্বন্ধে জানেন না বলে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সঠিক সংখ্যা নিরূপণ করা সম্ভব হয় নি। এতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের আশাতীত উন্নয়ন ঘটেনি। ইতোপূর্বে আমাদের দেশের গণপ্রজাতন্ত্রী সরকার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নের লক্ষ্যে যে সব পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে সেখানে ১.৬ ভাগ জনগোষ্ঠীদের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ফলে আরো ৮.৪ ভাগ বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী উন্নয়নের আওতা থেকে বাদ পড়েছে। এবারে ৫ম আদম শুমারিতেও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পুরোপুরি গণনা করা সম্ভব হয় নি। ৫ম আদম শুমারির সময় ছিল ১৫-১৯ মার্চ। সময়ও খুব একটা বেশি দেওয়া হয় নি।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা হচ্ছে সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এদের বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়ন অসম্ভব। আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ আজও প্রতিবন্ধিতা বিষয়টি সম্বন্ধে অবগত নয়। যে সব এলাকায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের স্ব-সংগঠন সমূহ রয়েছে সে সব এলাকার সাধারণ মানুষ বিষয়টি সম্বন্ধে অবগত। সে জন্য প্রতিবন্ধিতা বিষয়টি সম্বন্ধে অনেক মানুষের ধারণা না থাকায় আদম শুমারিতে অনেক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা গণনা থেকে যেমন বাদ পড়েছে। তেমনি অনেক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে প্রতিবন্ধী হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করে নি এবারের আদম শুমারিতে সংশ্লিষ্ট কাজে নিয়োজিত মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা।
২০ মার্চ দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকায় ‘ বহুমানুষকে বাদ রেখেই ৫ম আদম শুমারি ও গৃহ গণনা শেষ’ শিরোনামে শীর্ষক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। কিশোরগঞ্জ জেলার এক চেয়ারম্যান সংশিস্নষ্ট পত্রিকায় টেলিফোন করে অভিযোগ করেছে যে, পত্রিকায় প্রকাশিত আদম শুমারির জন্য যে ফোন নং দেওয়া হয়েছে তাতে সারাদিন ফোন করে কাউকে পাওয়া যায় নি।
গত ২১ মার্চ রিপোর্টাস্ ইউনিটিটিতে এক সেমিনারে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান মন্তব্য করেছেন যে, এবারের আদম শুমারিতেও অনেক সম্প্রদায় বাদ পড়েছে। এ মমত্মব্যকে দেশের একটি বহুল প্রচলিত জাতীয় দৈনিক অনলাইনে পাঠকের ওপর জরিপ চালিয়েছে। জরিপে অংশ নেওয়া ৭০.৪৮ ভাগ পাঠক ড. মিজানুর রহমানের সাথে একমত পৌষণ করেছে। ১৭.১৪ ভাগ পাঠক না উত্তর দিয়েছে এবং বাকি ১২.৩৮ ভাগ এ ব্যাপারে কোন মমত্মব্যই করেন নি। ২২ মার্চ, দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় পঞ্চম আদম শুমারিতে অনেক মানুষের বাদ পড়ার খবর প্রকাশিত হয়েছে।
এতে সহজেই আমরা উপলব্ধি করতে পারি যে, এবারের আদম শুমারিতেও সঠিকভাবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের গণনায় করা হয় নি। আবার অনেক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে গণনা করা হলেও তাদের প্রতিবন্ধিতার কথা জিজ্ঞাসা করা হয় নি। যা এ আদম শুমারিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে বলে অনেক অভিজ্ঞ মহলের ধারণা।
এছাড়া একটি কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, আদম শুমারিতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সণাক্ত করা সম্ভব নয়। ওদের জন্য বিশেষ আদম শুমারি প্রয়োজন। বিশেষ আদম শুমারি হলে বিষয়টি নিখুতভাবে ওঠে আসবে। তখন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যাবে। এবারের আদম শুমারির আগে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নে কর্মরত বিভিন্ন সংগঠন সংশিস্নষ্ট মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তরের সাথে মিটিং করেছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আদম শুমারির আগে ওসব সংগঠনের সাথে পরামর্শমূলক কোন মিটিং করে নি। অথবা আদম শুমারি কাজে নিয়োজিত কর্মীদের প্রতিবন্ধিতা বিষয়ে ওরিয়েন্টেশনের অভাব ছিল। কর্মীরা প্রতিবন্ধিতা বিষয়টি এড়িয়ে গেছে। অন্যদদেকে সময় কম হওয়ায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা বাদ পড়েছে। অমত্মত: ১ মাস সময় দেওয়া উচিত ছিল।
তৃণমূল পর্যায়ের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নে দীর্ঘ ৬ বছর কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে যতটুকু জেনেছি, তাতে বুঝতে পেরেছি অনেক বাড়িতে ঘরের কোণে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি রয়েছে। লোক লজ্জার ভয়ে এবং প্রতিবন্ধিতার ধরন না জানায় প্রতিবন্ধী হিসেবে পরিচয় দেন না। বিশেষ করে প্রতিবন্ধী নারীর ক্ষেত্রে রয়েছে পরিচয় দেওয়া ক্ষেত্রে এক বিরাট বাধা। প্রতিবন্ধী পরিচয় দিলেই বিয়ে হওয়ার সম্ভাবনা কম এ ধারণার জন্য প্রতিবন্ধী নারীরা গণনা থেকে বাদ পড়ে। প্রতিবন্ধী বিভিন্ন ধরনের। দৃষ্টি, শারীরিক, বাক-শ্রবণ, বুদ্ধি, অটিজম এবং বহুমুখী। প্রতিবন্ধিতার মাত্রা আবার তিন ধরনের। মৃদু, মাঝারি এবং গুরম্নতর। সমাজে এখনও অধিকাংশ মানুষ গুরম্নতর প্রতিবন্ধী বলতে শুধু গুরম্নতর দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এবং শারীরিক প্রতিবন্ধী (হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী)কে বুঝায়। অনেকে প্রতিবন্ধিতার প্রকারভেদ সম্বন্ধে অজ্ঞ। সে জন্য এবারের ৫ম আদম শুমারীতেও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়াও অসম্ভব।
বর্তমান সরকার যেহেতু ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে কাজ করছে। সেহেতু প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলে কিভাবে এ সুবিধা বঞ্চিত জনগোষ্ঠীদের উন্নয়নে সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করা সম্ভব হবে? এটা দেখার সময় এসেছে। সে জন্য সংশিস্নষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীদের বৃহৎ স্বার্থে একটি বিশেষ আদম শুমারি করবেন এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

লেখক-
আজমাল হোসেন মামুন
উন্নয়নকর্মী এবং সাংবাদিক
বিপিকেএস কমপেস্নক্স, দক্ষিণখান, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০।
মোবাইল নং-০১১৯১০৮৯০৭৫।


০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

**অপূরণীয় যোগাযোগ*

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ২৮ শে মে, ২০২৪ ভোর ৫:১৯

তাদের সম্পর্কটা শুরু হয়েছিল ৬ বছর আগে, হঠাৎ করেই। প্রথমে ছিল শুধু বন্ধুত্ব, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তা গভীর হয়ে উঠেছিল। সে ডিভোর্সি ছিল, এবং তার জীবনের অনেক কষ্ট ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

গাজার যুদ্ধ কতদিন চলবে?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার আগে মহাবিপদে ছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু৷ এক বছর ধরে ইসরায়েলিরা তার পদত্যাগের দাবিতে তীব্র বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন৷ আন্দোলনে তার সরকারের অবস্থা টালমাটাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রায় ১০ বছর পর হাতে নিলাম কলম

লিখেছেন হিমচরি, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১

জুলাই ২০১৪ সালে লাস্ট ব্লগ লিখেছিলাম!
প্রায় ১০ বছর পর আজ আপনাদের মাঝে আবার যোগ দিলাম। খুব মিস করেছি, এই সামুকে!! ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরায় পার হয়েছে! আশা করি, সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যাঙ দমনের নেপথ্যে এবং রাষ্ট্রীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের সমন্বয়

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৭


ব্যাঙ দমনের বাংলায় একটা ইতিহাস আছে,খুবই মর্মান্তিক। বাংলাদেশে বহুজাতিক কোম্পানির কোন সার কেনা হতো না। প্রাচীন সনাতনী কৃষি পদ্ধতিতেই ভাটি বাংলা ফসল উৎপাদন করতো। পশ্চিমবঙ্গ কালক্রমে ব্রিটিশদের তথা এ অঞ্চলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পজ থেকে প্লে : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

লিখেছেন বন্ধু শুভ, ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:১৫


.
একটা বালক সর্বদা স্বপ্ন দেখতো সুন্দর একটা পৃথিবীর। একজন মানুষের জন্য একটা পৃথিবী কতটুকু? উত্তর হচ্ছে পুরো পৃথিবী; কিন্তু যতটা জুড়ে তার সরব উপস্থিতি ততটা- নির্দিষ্ট করে বললে। তো, বালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×