গৃহকর্তাসহ পরিবারের সদস্যদের নির্যাতনে সারা শরীরে ক্ষত নিয়ে নওগাঁর একটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে দশ বছর বয়সী লতা।
Published : 29 Jul 2013, 08:42 PM
একটু ভাল থাকবে বলে ব্যাংক কর্মকর্তা শামীম আহমেদ বাসিদের বাসায় সে কাজ নিয়েছিল।
রোববার রাত এগারোটার দিকে হাসপাতালে দাদী রেজিয়া বেগমকে জড়িয়ে ধরে রেখেছিল আতঙ্কিত লতা।
এ সময় সাংবাদিকদের কাছে অত্যাচারের বর্ণনা দেয় সে।
লতা নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলার ভরট্ট গ্রামের রেজাউল ইসলাম ও সাবিনা দম্পতির মেয়ে। বাবা-মা দুজনেই ঢাকায় তৈরি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। লতাকে দেখাশোনা করতেন দাদী।
এ ব্যাপারে থানায় একটি মামলা করা হয়েছে।
ঘটনার পর থেকেই নওগাঁ মার্কেন্টাইল ব্যাংকের কর্মকর্তা শামীম আহমেদ বাসিদ, তার স্ত্রী স্কুল শিক্ষিকা মমি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পলাতক আছেন।
লতা সাংবাদিকদের বলে, গৃহকর্তা তার স্ত্রী এবং তাদের দুই মেয়ে শাম্মী ও সাওদা সবসময় কাজের ভুল ধরে গালাগাল ও মারপিট করত।
“আমাকে বাসার সবাই মারত। খেতে দিত না। আর কান্নাকাটি করলে গলা চেপে দেয়ালে ঠেসে ধরত।”
বেশি খাওয়ার অভিযোগে বড় মেয়ে শাম্মি একদিন তার মুখের মধ্যে পাইপ ঢুকিয়ে বাম দিকের একটি দাঁত ভেঙ্গে দেয়। এ সময় রক্ত বের হলেও পানি দিয়ে মুখ ধুতে দেয়নি বলে অভিযোগ করে লতা।
“মেঝে পরিষ্কার করা ব্রাশের একটি ভাঙ্গা পাইপ সোজা করে ধরে আমাকে তার উপড় বসতে বাধ্য করে মমি। এতে পায়ু পথ কেটে যায়। অসহ্য যন্ত্রণায় চিৎকার দিয়ে উঠলে সারা শরীরে গরম পানির ছিটা দেয় সে।”
লাতার দাদী রেজিয়া বেগম বলেন, শামীম আহমেদ বাসিদ ও স্ত্রী মমি লতার সমস্ত দায়-দায়িত্ব বহনের কথা বলে নওগাঁ শহরের মাস্টারপাড়া মহল্লার বাসায় নিয়ে ঘরের কাজ করায়।
“গত বৃহস্পতিবার লতার সঙ্গে দেখা করার জন্য গেলে প্রথমে দেথা হবে না বলে জানালেও কাকুতি-মিনতির পর বাসার ভিতর থেকে লতাকে ডেকে আনে বাসিদ। এ সময় দাদীকে দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে লতা।”
শরীরের অবস্থা আঁচ করতে পেরে তিনি জোর করে লতাকে এনে ওইদিনই হাসপাতালে ভর্তি করান।
“আর ২/৩ দিন পরে ওই বাসায় গেলে আমার নাতনীকে আর জীবিত পাওয়া যেত না।”
রেজিয়া বেগম দাবি করেন, রোববার সন্ধ্যায় হাসপাতালে এসে এক লাখ টাকার বিনিময়ে বিষয়টি মিটিয়ে ফেলার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন বাসিদ ও তার স্ত্রী।
নওগাঁ সদর মডেল থানার ওসি (তদন্ত) সমীর চন্দ্র সূত্রধর বলেন, বিষয়টি জানার পর লতাকে নিরাপত্তা দেয়া হয়েছে। শামীমকে আটকের চেষ্টা করা হয় কিন্তু বাসায় কাউকে পাওয়া যায়নি।
“সোমবার তার কর্মস্থল মার্কেন্টাইল ব্যাংকে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।”
এ ঘটনায় সদর মডেল থানায় রেজিয়া বেগম বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়েরে করেছেন।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য শামীম আহমেদ বাসিদের মোবাইল ফোনে চেষ্টা করে এবং বাসায় ও ব্যাংকে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।