somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পশুর জন্যও মায়া!!

০৭ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১২:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চারিদিকে আজ মানুষে মানুষে হানাহানি। হিংস্রতা আর নৈরাজ্য আমাদেরকে ঘিরে রেখেছে চারপাশ থেকে। মমতাবিহীন এক পৃথিবীতে ভালোবাসা ও দয়া বিদায় নিয়েছে অনেক আগে। ঘোর আঁধারের এমন দুঃসময়ে আমি আপনাদেরকে কিছু অন্যরকম গল্প শোনাতে চাই। উপদেশের উপসংহারে মোড়ানো কল্পকথা নয়, কিছু সত্য ও বাস্তব চিত্র ও চরিত্রের বর্ণনা নিয়েই এ লেখা।

মদীনার পরিবেশ। না গরম না ঠান্ডা। ঝিরঝিরে বাতাস। সকাল গড়িয়ে দুপুর আসে, তারপর বিকাল সন্ধ্যা হয়ে রাত নামে। কোথাও কোন উত্তেজনা নেই। আছে কৌতুহল। নারী-পুরুষ এমনকি শিশুরাও। সবার আগ্রহ একজন মানুষকে ঘিরে। তার চলাফেরা, কথা বলার সবকিছুকে নিয়ে অপেক্ষায় থাকেন মদীনার সহজ সরল মানুষগুলো। লোভ লালসা আর হিংসা এবং স্বার্থপরতা- মাত্র একজন মানুষের ছোঁয়ায় এসব ভুলে ভাই ভাই হয়ে এদের মেলামেশা।

রাসূল মদীনার অলিগলিতে হেঁটে বেড়ান। তার পরমাত্মীয় সাহাবাদের কুশল জিজ্ঞেস করেন। বাচ্চাদেরকে কোলে তুলে চুমু এঁকে দেন। পৃথিবীর সবচেয়ে এই ভালো মানুষটি নিজের উদারতা আর অপরিসীম সৌন্দর্য দিয়ে মোহিত করে রেখেছেন গোটা মদীনার পরিবেশ।

তিনি হাঁটছেন। তার পেছনে পেছনে সাহাবাদের কয়েকজন। তিনি যেখানেই যাবেন, পিছু পিছু সাহাবারাও হেঁটে চলেন। হঠাৎ তিনি থমকে দাঁড়ালেন। থেমে গেলেন সাহাবারাও। কই ! সামনে তো কেউ নেই! দেখার মতোও তো কিছু নেই। তবে তিনি দাঁড়ালেন কেন? সাহাবাদের চোখেমুখে কৌতুহল!

রাসূল তাকিয়ে আছেন একটি উটের দিকে। রাস্তার পাশে বেধে রাখা উট। এতে আর দেখার কী! তবে আর রাসূল কি দেখছেন অমন করে!!
একটি উট। নির্বাক পশু। মানুষের সাথে তার কথা বলার সাধ্য নেই। তার সুখ দুঃখের প্রকাশ সে মানুষকে বোঝাতে পারে না। রাসূলের তাকিয়ে থাকা উটটি সবার দৃষ্টি কেড়ে নিল। ক্ষুধা আর ক্লান্তিতে তার পেট ঠেকে আছে পিঠের সাথে। রাসূল তার সাহাবাদের দিকে তাকালেন। তিনি বললেন, আহা! তোমরা কি এই বোবা পশুগুলোর ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো না? আরোহণের সময় এবং এদেরকে প্রতিপালনের সময় তোমরা ভাল ব্যবহার করো।

আরেকদিন।
তিনি এক সাহাবীর বাগানে গেলেন। ওখানে দাঁিড়য়ে ছিল একটি উট। অবাক বিস্ময়ে সেটি তাকিয়ে আছে রাসূলের দিকে। রাসূলকে দেখে এই নিরীহ পশুটির দু চোখ থেকে পানি ঝরছে। কান্নার অশ্র“তে উট রাসূলকে তার কষ্ট ও যাতনার কথা জানিয়ে দিল।

শুধু কি মানুষের! তিনি যে পশুদেরও অতি আপন! এই বিশ্ব পৃথিবীর প্রতিটি জীবের জন্য তার বুকভরা মায়া ও ভালোবাসা। সে অনুভূতির ছোঁয়া পেয়ে রাসূলকে দেখে অমন করে কাঁদছে উটটি। রাসূল এগিয়ে গেলেন। নিজের হাত বাড়িয়ে তিনি উটটির চোখের পানি মুছে দিলেন। অসহায় পশুর এ বেদনা তাকেও যে আহত করেছে। এমন সরলতা আর মায়া নিয়ে এসেছেন বলেই তো তিনি বিশ্ববাসীর জন্য রহমত!!

উটটির কাছে দাঁড়িয়ে থাকলেন রাসূল। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এই উটটির মালিক কে?’ রাসূলের জিজ্ঞাসা শুনে দৌড়ে এলেন মালিক। তিনি রাসূলের একজন সাহাবী।
রাসূল তাকে বললেন, যে আল্লাহ তোমাকে এ উটটির মালিক বানিয়েছেন, তুমি কি এ ব্যাপারে তাকে একটুও ভয় করো না? এ উট আমার কাছে তোমার বিরুদ্ধে নালিশ জানিয়েছে- তুমি একে ক্ষুধার্ত করে রাখো আর বেশি বেশি কাজ করিয়ে ক্লান্ত বানিয়ে ফেলো।

প্রথম ঘটনাটির বর্ণনা এসেছে আবু দাঊদ ও ইবনে খুযায়মাহ নামক হাদীসের কিতাবদ্বয়ে, আর ২য় ঘটনাটি বর্ণিত হয়েছে মুসনাদে আহমদ ও আবু দাঊদে।

শুধু উট কিংবা ঘোড়া নয়। সামান্য চড়–ই পাখি। রাসূল সা. বলেছেন, কেউ যদি খেলার জন্য একটি চড়–ই পাখিকেও মেরে ফেলে, তবে সেটি কিয়ামতের দিন আল্লাহ পাকের কাছে ঐ লোকের নামে বিচার জানাবে। চড়–ই পাখিও সেদিন বলবে, ও আল্লাহ! এই লোকটি অহেতুক ও অনর্থকভাবে আমাকে মেরেছে, কোন কাজের জন্য নয়। (নাসাঈ ও ইবনে হিব্বান)
চলবে...
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১২:৫৫
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

#প্রিয়তম কী লিখি তোমায়

লিখেছেন নীল মনি, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৭:৫১


আমাদের শহর ছিল।
সে শহর ঘিরে গড়ে উঠেছিল অলৌকিক সংসার।
তুমি রোজ তাঁকে যে গল্প শোনাতে সেখানে ভিড় জমাতো বেলা বোস, বনলতা কিংবা রোদ্দুর নামের সেই মেয়েটি!
সে কেবল অভিমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভুল শুধু ভুল নয়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৬

এক
লেখাটা একটি কৌতুক দিয়ে শুরু করি। ১৯৯৫ সালের ৩০ নভেম্বর থেকে শফিপুর আনসার একাডেমিতে বিদ্রোহ হয়। ৪ ডিসেম্বর পুলিশ একাডেমিতে অভিযান চালায়। এতে চারজন আনসার সদস্য নিহত হয়েছিল। এটি ছিল... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। VF 3 Mini: মাত্র 60 মিনিটে 27 হাজার বুকিং!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২১ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:০৪



আমার ব্যাক্তিগত গাড়ি নেই কিন্তু কর্মসূত্রে বেঞ্জ , ক্যাডিলাক ইত্যাদি ব্যাবহার করার সুযোগ পেয়েছি । তাতেই আমার সুখ । আজ এই গাড়িটির ছবি দেখেই ভাল লাগলো তাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ময়লাপোতার কমলালেবুর কেচ্ছা!! (রম্য)

লিখেছেন শেরজা তপন, ২১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৩


বাংলাদেশের বিশেষ এক বিভাগীয় শহরে ময়লাপোতা, গোবরচাকা, লবনচোরা, মাথাভাঙ্গা, সোনাডাঙ্গার মত চমৎকার সব নামের এলাকায় দারুণ সব সম্ভ্রান্ত পরিবারের বাস।
আমার এক বন্ধুর আদিনিবাস এমনই এক সম্ভ্রান্ত এলাকায় যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাময়িক পোস্ট: বন্ধ হয়ে গেল সচলায়তন

লিখেছেন করুণাধারা, ২১ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


বন্ধ হয়ে গেল সচলায়তন! view this link

সামহোয়্যারইনব্লগ থেকে কয়েকজন ব্লগার আলাদা হয়ে শুরু করেছিলেন সচলায়তন বা সংক্ষেপে সচল ব্লগ। এটি বন্ধ হবার মূল কারণ উল্লেখ করা হয়েছে দুটি:

১)... ...বাকিটুকু পড়ুন

×