(তুমি মেয়ে, তুমি খুব ভালো করে মনে রেখো- তুমি যখন ঘরের চৌকাঠ ডিঙোবে,লোকে তোমাকে আড়চোখে দেখবে।তুমি যখন গলি ধরে হাঁটতে থাকবে, লোকে তোমার পিছু নেবে-শিস দিবে।তুমি যখন গলি পেরিয়ে বড় রাস্তায় উঠবে, লোকে তোমাকে চরিত্রহীন বলে গাল দেবে।--- যদি তুমি অপদার্থ হও,তুমি পিছু ফিরবে।আর তা না হলে- যেভাবে যাচ্ছ,যাবে।)
ছেলের দুর্নামের চেয়ে মেয়ের দুর্নামের প্রকৃতি ও পরিনিতি খুব ভয়ংকর হয়।একটি ছেলে যদি ঘরে মন না বসে,তাতে অন্যায় নেই,কিন্তু একটি মেয়ের যদি তা হয়- তবে আর মুখরক্ষা হয় না।ছেলেদের বিকেল-সন্ধ্যা আড্ডা দেওয়া খুব গ্রহনযোগ্য ঘটনা।একটি মেয়ের যদি সারা বিকেল আড্ডা দেবার অভ্যেস হয় তবে ঘরে-বাইরে তার আর সম্মান থাকে না।এই বিশ্ব সংসারে পুরুষদের চেয়ে নারীর বৈচিত্র ও বৈশিষ্ট্য অনেক বেশি।পুরুষ যতই সুপুরুষ বা শক্তিশালী হোক নারীর দেহ- লাবন্যের কাছে সে তুচ্ছ।পৃথিবীর মতো নারী পরম সহনশীলা।তাই তো সে সন্তানের জন্ম দেয়।সব কিছুতেই পুরুষ নারীর কাছে পরাজিত।আরব ললনাদের সম্পর্কে এতদিন পশ্চিমাদের ধারনা ছিল,মুসলিম নারীদের জীবন চার দেওয়ালে আবদ্ধ।বোরকার অন্তরালেই তাদের সব চিন্তা-চেত্না।কিন্তু সময় এখন বদলেছে।অন্তঃপুর থেকে বেরিয়ে এসে মধ্যপ্রাচ্যের অবহেলিত নারীরা জেগে উঠেছে।বিশেষ করে তিউনিসিয়া ও মিসরের সফল সরকারবিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্রে ছিল নারী।মধ্যপ্রাচ্যের বেশির ভাগ শহরই আজ টি-শার্ট,জিন্স,হিজাব ও বোরকাপরা নারীর সোচ্চার কন্ঠে মুখরিত।বাহরাইনের হাজার হাজার শিয়া বিক্ষোভকারীদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন নারীরা।মধ্যপ্রাচ্যে একসময় কেবল গুটিকয়েক সম্ভান্ত পরিবারের নারীই বিশ্ববিদ্যালয়ে যেত।কিন্তু এখন সে দৃশ্য পালটে গেছে।মিসরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখন সিংহভাগ নারী শিক্ষার্থী রয়েছে।
একটা মেয়ে যদি বিয়ের রাতেই জানতে পারে যে,তার স্বামী মাদকাসক্ত।কলেজ লাইফ থেকেই গাঁজা,হেরোইন,ফেনসিডিল ইত্যাদি খাওয়ার সিদ্ধহস্ত।তখন সেই মেয়েটির মানসিক অবস্থা কেমন হয়?প্রতিটা মেয়ের উচিত যে কোনও একটা পেশায় নিজেকে ব্যস্ত রাখা।বাবা-মা'র উচিত ছেলেমেয়ে টিনএজে পৌছলে তাদের পার্টটাইম জবে উৎসাহিত করা।ইদানিং আধুনিক বাবা-মা'রা তাদের মেয়েদের বলেন, পড়াশোনা করেছ,চাকরি করো।নিজের ক্যারিয়ারটা গড়ে নাও।পড়াশোনাটাকে কাজে লাগাও।এই সমর্থন টা আগে পাওয়া যেত না।পরিবার থেকে সমর্থন না পেলে একটি মেয়ের ক্যারিয়ার গড়া খুব কঠিন।কিন্তু দুঃখের বিষয় মেয়েই আছেন,তারা পড়াশোনা করেছেন ভালো ও যোগ্য একটা পাত্রের জন্য।বর্তমান সময়ে মেয়েদের এ ধরনের মানিসিকতা পরিহার করা উচিত।
আমাদের দেশে কোরআন-সুন্নাহর ওপর ভিত্তি করেই নারীনীতি প্রণয়ন করা হয়েছে।রাষ্ট্রধর্মের কারনে মেয়েরা পর্দার মধ্যে থাকতে বাধ্য হচ্ছে।মানুষ শিক্ষিত হলে সাধারনত সচেতন হয়।সচেতন মানুষ যে-কোনও অন্যায় ও অসুন্দরের বিপক্ষে বলবার যোগ্যতা অর্জন করে।মানুষের প্রধান প্রয়োজন স্বাধীনতা।নারীর এই স্বাধীনতাকে রাষ্ট্র অবরোধ করছে।পরাধীনতা মানুষকে অসুস্থ করে,বিকৃত করে,মন এবং শরীরকে পঙ্গু করে।দধর্ম মানুষকে হাসতে দেয় না,যেমন ইচ্ছে চলতে দেয় না।ধর্ম মানূষকে 'অমানুষ'-এ পরিনত করে,ধর্ম নারীকে করে পুরুষের ক্রীতদাসী।একটা হাদীস খুব মনে পড়ছে-"যে সমস্ত স্ত্রীলোক স্বামীর দ্বিতীয় বিবাহে হিংসা না করিয়া ছবর করিয়া থাকে,তাহাদিগকে আল্লাহ শহিদের তুল্য সওয়াব দান করিবেন।"ধর্মের দালানকোঠা যদি মানুষে-মানুষে ভালোবাসা নষ্ট করে তবে এই পৃথিবী থেকে ধ্বংশ হয়ে যাক মন্দির,মসজিদ,গির্জা ও প্যাগোডার সকল অস্তিত্ব।ইট সুরকির চেয়ে ভালোবাসা বড়।
বিশ্বসুন্দরী প্রতিযোগিতা- যে প্রতিযোগিতা নারীকে পন্য হিসেবে ব্যবহার করবার একটি উৎকৃষ্ট মাধ্যম- সেই প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহনকে তারা নারীর মুক্তি বলে রায় দিচ্ছে।মোহ মানুষকে কতটা অন্ধ করে,উন্মাদ এবং অবিবেচক করে!তসলিমা নাসরিন বারবার নারীকে বলেছেন- স্বাবলম্বী হতে,বলিষ্ঠ হতে,ব্যক্তিত্ব কে প্রধান করতে।নারীর মনোমুগ্ধকর শরীর ব্যবহার করে বাহবা পাওয়ার পক্ষপাতী তসলিমা নন;তসলিমা নাসরিন চাইতেন,নারী তার রুপ নয়,গুন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হোক।
যে কোনও পন্যের বিজ্ঞাপনের নারীও এক ধরনের পন্য।তার চোখ,ভুরু,চুল,নাক,ঠোঁট,ঠোঁটের হাসি,বুক,বুকের গঠন- বাজারের পন্যের চেয়েও বড় পন্য হিসেবে বিচার করা হয়।পুরুষের শেভিং-এর ব্লেড,আফটার শেভ,শার্টিং-স্যুটিং,জুতোমোজা,শ্যাম্পু-সাবান সব কিছুতেই অনাবশ্যক নারী এনে হাজির করা হয়।যেদিন এই সমাজ নারীর শরীর নয়- শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নয়-নারীর মেধা ও শ্রমের মূল্য দিতে শিখবে,কেবল সেদিনই নারী 'মানুষ' বলে স্বীকৃত হবে।
(চলবে....)
সাহসী নারী তসলিমা নাসরিন অথবা নারী এক প্রকার বৃক্ষ -৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
৬টি মন্তব্য ১টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
একাত্তরের সংগ্রামী জনতার স্লুইস গেট আক্রমণ
(ছবির লাল দাগ দেয়া জায়গাটিতে গর্ত করা হয়েছিল)
শহীদুল ইসলাম প্রামানিক
২৩শে এপ্রিল পাক সেনারা ফুলছড়ি থানা দখল করে। পাক সেনা এলাকায় প্রবেশ করায় মানুষের মধ্যে ভীতিভাব চলে আসে। কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন
বাড়ির কাছে আরশিনগর
বাড়ির কাছে আরশিনগর
শিল্পকলা একাডেমির আশেপাশেই হবে চ্যানেলটার অফিস। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করল মৃণাল। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না সে। এক-দু'জনকে জিগ্যেসও করল বটে, কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছে না।
কিছুদূর এগোনোর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমি ভালো আছি
প্রিয় ব্লগার,
আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন
স্বাধীনতার সুফল কতটুকু পাচ্ছে সাধারণ মানুষ
(১) আমলা /সরকারের কর্মকর্তা, কর্মচারীর সন্তানদের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব হতাশাজনক। মুক্তিযুদ্ধের ১৯৭১ সালের রক্ত দেওয়া দেশের এমন কিছু কখনো আশা কি করছে? বঙ্গবন্ধু এমন কিছু কি আশা... ...বাকিটুকু পড়ুন
এলজিবিটি নিয়ে আমার অবস্থান কী!
অনেকেই আমাকে ট্রান্স জেন্ডার ইস্যু নিয়ে কথা বলতে অনুরোধ করেছেন। এ বিষয়ে একজন সাধারণ মানুষের ভূমিকা কী হওয়া উচিত- সে বিষয়ে মতামত চেয়েছেন। কারণ আমি মধ্যপন্থার মতামত দিয়ে থাকি। এ... ...বাকিটুকু পড়ুন