somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দুই কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা লাগবে এইবারে আমাদের

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমাদের দেশের যে হাল, তাতে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য আমাদের সবাইই উম্মুখ থাকেন। তা উপজেলা চেয়ারম্যানই হোক, আর সংসদ সদস্যই হোক না কেন। আগেকার দিনে যা ছিল জমিদারি, এখনকার দিনে তাই হয়েছে স্থানীয় সরকার। ফলে গুণগতভাবে কোনই পরিবর্তন হয় নাই কোথাও। যারা যে পদে নির্বাচিত হয়, তারা সেই পদকে বাপ-দাদার সম্পত্তি বলেই মনে করে। কেউই তাদের নির্বাচিত পদ এবং সে সাথে অর্পিত দায়িত্বকে জনগণের পবিত্র আমানত বলে মনে করেন না।

আমাদের সংসদ সদস্যগণ মনে করেন যে তারা যে শুধু স্থানীয় জমিদারীই প্রাপ্ত নন, তারা একই সাথে দেশের ভালো-মন্দের দায়িত্ব প্রাপ্ত। তাই তাঁরা স্থানীয় সরকারকে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবেই গণ্য করেন। তাই উপজেলা পদ্ধতি বহাল হলেও তা কার্যকর হতে পারে না। এমন একটি আইন করা হয়েছে, যা কিনা আমাদের স্থানীয় সরকার পদ্ধতিকেই প্রশ্নের সম্মুখিন করেছে।

এই সব বিষয়ে বলতে গেলে প্রথমে একটু সংবিধান থেকে উদ্ধৃতি দিতেই হয়। না হলে পাঠকরা ভাববেন যে লেখক আইনকানুন তেমন জানেন না! তাই বলছি, সংবিধানের ১১ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, "প্রজাতন্ত্র হইবে একটি গণতন্ত্র যেখানে মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকিবে' মানবসত্তার মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত হইবে এবং প্রশাসনের সকল পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হইবে।"

আরো বলা আছে, [ অনুচ্ছেদ ৫৯(১) ] 'আইনানুযায়ী নির্বাচিত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত প্রতিষ্ঠানসমূহের উপর প্রজাতন্ত্রের প্রত্যেক প্রশাসনিক একাংশের স্থানীয় শাসনের ভার প্রদান করা হইবে।' এর ব্যত্য় করা যাবে না। এই বিধানাবলীর উপরে কোন সংশোধনীও আসে নি আজ পর্যন্ত।

স্থানীয় উন্নয়নের জন্য 'বাকশাল'-এ প্রতিটি মহকুমাকে জেলা ঘোষনা করে তাতে একজন করে গভর্নর নিয়োগ করা ছিল স্থানীয় প্রশাসনে সরকারী হস্তক্ষেপের প্রথম পদক্ষেপ। এরপরে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে জেলা সমন্বয়কারী করে প্রতি জেলায় একজনকে দায়িত্ব দেয় দেশ উন্নয়ন সমন্বয় করতে। এরশাদ জমানার শেষে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি ক্ষমতায় এসে উপজেলাসহ তা বাতিল করা হয়। এ সংক্রান্ত মামলার রায়ে উচ্চ আদালত স্থানীয় সরকার নির্বাচিত করার নির্দেশ দেয়।

বিএনপি উপজেলা ও জেলা পরিষদ পুনর্বহাল না করলেও '৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট রহমত আলীর নেতৃত্বে স্থানীয় সরকার কমিশন গঠন করে দীর্ঘ আলোচনা, মতবিনিময় শেষে উপজেলা ও জেলা পরিষদ নির্বাচন করার জন্য পুনর্বহাল করে। কিন্তু নানা কারণে তা আর হয়নি। বিএনপি জোট এসে নির্বাচন করতে পারেনি। ড. ফখরুদ্দীনের সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার জেলা ও উপজেলা পরিষদে নিয়োগদানের তালিকা চূড়ান্ত করতে বললেও সাংবিধানিক কারণে তা করতে ব্যর্থ হয়। ২০০৮ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনার মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এসে উপজেলা নির্বাচন করলেও তা ঠুঁটো জগন্নাথ বানিয়ে রেখেছে। এ নিয়ে চেয়ারম্যানরা আন্দোলনে।

এখন শোনা যাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী জেলা প্রশাসক হিসাবে নির্বাচনের মাধ্যমে কাউকে নিয়োগ না দিয়ে মনোনীত প্রশাসক নিয়োগ দিতে আগ্রহী। এর পেছনে উনার ভয়েরও কারন আছে। পৌর ও উপনির্বাচনে হোঁচট খাওয়া শাসকদল এ মূহুর্তে বিরোধী দলের মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবির মুখে জেলা পরিষদ নির্বাচনও আয়োজন করবে না। কিন্তু সংবিধান মোতাবেক তা হবার নয়।

আমাদের মনে হয় আমাদের দেশে যেখানে উপজেলা চেয়ারম্যান আর সংসদ সদস্যদের ভেতরেই মারামারি চলছে, সেখানে কয়েকজন এমপির উপরে এমন করে জেলা প্রশাসক বসালে সেই গন্ডোগোল আরো বেড়া যাবে। ফলে জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠার বদলে দেশের ভেতরে দুঃখজনকভাবে হানাহানি আরো বেড়ে যাবে।

তাই আমাদের প্রস্তাব হলো আমাদের আইনসভাকে দুই কক্ষ বিশিষ্ট করা উচিৎ। তাতে নিম্ন কক্ষে প্রতিনিধি হিসাবে থাকবেন উপজেলা চেয়ারম্যানগণ। তারা প্রতি তিন বছর পর পর নির্বাচিত হবেন। তারা স্থানীয় উন্নয়ন দেখভাল করবেন, আর বছরের যে সময়গুলোতে আইনসভা অধিবেশনে থাকবেন, সে সময় অবশ্যই অধিবেশনে যোগদান করবেন। যতগুলো উপজেলা, অতগুলো প্রতিনিধি থাকবেন নিম্নকক্ষে। এমন কি অধিবেশন চলা কালে উপজেলা চেয়ারম্যানদের উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানগণ পালাক্রমে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে যাবেন।

অন্যদিকে জেলা প্রশাসকগণ নির্বাচিত প্রতিনিধি হবেন বলে তারা উচ্চ কক্ষে প্রতিনিধি হবেন। তারা নিম্ন কক্ষে পাশ করা আইনগুলোকে ভেটিং করবেন। তাঁরা নতুন আইন তৈরীর প্রস্তাব নিম্ন কক্ষের নিকট পাঠাতে পারবেন। এ ছাড়া তারা সংখ্যায় কম বলে তাঁদের যে কোন সময়ে দ্রুত বৈঠকে বসার সুযোগ থাকবে। জরুরী আইন জারির ক্ষমতা এদের হাতে দেওয়া যেতে পারে।

দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং প্রেসিডেন্ট দুই কক্ষের সর্বোচ্চ ভোটে নির্বাচিত হতে পারবেন। অথবা, এমনও করা যেতে পারে যে, প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রী একে অপরের পার্টনার হিসাবে সরাসরি ভোটে জিতে আসতে পারেন, এবং তারা যে সরকার গঠন করবেন তা দুই কক্ষেই আলাদা আলাদা ভাবে অনুমোদিত হতে হবে।

দুই কক্ষের প্রতিনিধিরাই নির্বাচনকালে তত্ত্বাবধয়ায়কের দায়িত্ব পালন করতে পারেন। সেটা নিশ্চয়ই ঠিক করা এমন কঠিন কোন কাজ হবে না। এবং দুই কক্ষে নির্বাচিত হবার জন্য কোন রাজনৈতিক দলের সদস্য হওয়াই লাগবে, এমন কোন বিধান করা যাবে না। এতে করে সৎ বা কর্মবান লোকেরাও আইনসভাতে প্রতিনিধিত্ব করতে পারবেন।

আরো অনেক খুঁটিনাটি বিষয় এখানে আলোচনা করা হল না। কিন্তু প্রয়োজনে সে সব আলোচনা করা যেতে পারে। আমাদের দেশের যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকার-এর মত একটি উদ্ভট ব্যবস্থা চালু থাকতে পারে, তা হলে স্থানীয় সরকার আর এমপিদের ভেতরে কাইজ্যা বন্ধের জন্য উপরের প্রস্তাবটি কি আলোচনা করা যায় কিনা তা পাঠকদের অনুরোধ করছি।

১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

উপকূলের ভাই-বোনদের প্রতি গভীর সমবেদনা

লিখেছেন বিষাদ সময়, ২৭ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৭




আমরা ঢাকার পাকা দালানে বসে যখন আয়েস করে চায়ে চুমুক দিয়ে বৃষ্টি বিলাসে বিভোর, ঠিক সেই সময় আমাদের উপকূেলের ভাই-বোনেরা হয়তো কেউ স্বজন, কেউ ঘর, কেউ ফসল, কেউবা গবাদী... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা: অশ্লীলতা কি পোশাক দিয়ে নির্ধারণ করা উচিৎ নাকি মানসিকতা ও চরিত্র দিয়ে?

লিখেছেন লেখার খাতা, ২৭ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫২


ছবিটি -ফেসবুক থেকে সংগৃহীত।

কহিনুরের, ফ্লোরা ওরিয়েন্টাল বিউটি সোপ।১৯৭৮ সালের বিজ্ঞাপন। ছবিটি ফেসবুকে পেয়েছি। ব্লগার সোনাগাজী, ব্লগার কামাল ১৮ সহ যারা মুরুব্বি ব্লগার রয়েছেন তারা হয়তো এই বিজ্ঞাপনটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

রেমাল ঘূর্ণিঝড়ে

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ২৭ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫৪



কতোজনে ভাসছে জলে
পথ ঘাট সব যে পানির তলে
রেমালের কবলে পড়ে।
কতোজনে আজ দূর্বিপাকে
ভাবছি বসে তাদের কথা
কতৈনা দূর্গতি, বাড়িঘর
ফসলী জমি গৃহস্থালি;
ভাসছে আজ জোয়ার জলে
প্রকৃতির বিষম খেয়ালে।
জেলেরা আজ ধরছে না মাছ,
স্কুল কলেজে নেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন বেনজীর আহমেদ ও আমাদের পুলিশ প্রশাসন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৭ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৪২



বৃষ্টিস্নাত এই সন্ধ্যায় ব্লগে যদি একবার লগইন না করি তাহলে তা যেন এক অপরাধের পর্যায়েই পরবে, যেহেতু দীর্ঘদিন পর এই স্বস্তির বৃষ্টির কারণে আমার আজ সারাদিন মাটি হয়েছে তাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

গাজার যুদ্ধ কতদিন চলবে?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার আগে মহাবিপদে ছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু৷ এক বছর ধরে ইসরায়েলিরা তার পদত্যাগের দাবিতে তীব্র বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন৷ আন্দোলনে তার সরকারের অবস্থা টালমাটাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×