somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ও আমার বন্ধু , আমার নির্ভেজাল ভালোবাসারা (কমলগঞ্জ কলেজ এর সহপাঠী এবং প্রিয় বন্ধু ! তৃতীয় অংশ

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১১ দুপুর ১২:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রক্ত চাও ?
এই নাও দিলাম
হাত দাও --
বিপ্লব দিলাম ।
আর কিছু ?
আর নয় !
এই নাও দিচ্ছি মিছিল আর বিজয় ।

১৯৯০ সাল , ডিসেম্বর মাস গণতন্ত্রের জন্য উত্তাল পুরো দেশ । তাও কলেজ যাচ্ছি তীব্র নেশা পেয়ে বসেছে আড্ডা , বাস ভ্রমণ আর স্যারদের ক্লাশ । স্বৈরাচার আর গণতন্ত্র কে ঘামায় মাথা ? বরং মজাই লাগতো এসব মিটিং - মিছিল । ৬ ডিসেম্বর মিষ্টির বন্যা কলেজ পৌঁছে দেখি । ডিগ্রী শ্রেণীর ছাত্র শাহীন ভাই আমাদের এসে বললেন "চলো সবাই মিছিলে আসো"। ঘাবড়ে গেলাম বলে কি ! সবাই দেখলাম যাচ্ছে , আমায়ও যেতে হলো । জীবনের প্রথম এবং একমাত্র মিছিলের আনন্দ নিলাম । পুরো কমলগঞ্জ থানা ঘুরলাম , দারুন মজা লাগলো ।

তারপর কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচন । মিন্টু বললো আমায় মহিলা এবং সাংস্কৃতিক সম্পাদিকা পদে দাঁড়াতেই হবে ছাত্র ইউনিয়ন থেকে । ও ভগবান ভালোবাসার এতো বিড়ম্বনা যে বাধ্য হলাম রাজী হতে । রাজনীতির বুঝি না কিছু । বাসা থেকে কখনোই তেমন কোনো কঠিন বাঁধা আসেনি । তবু নিজের থেকে মন সায় দিচ্ছিলো না । ছাত্র ইউনিয়নের বই আনলাম রিপনদার থেকে । যদিও রসহীন তবুও পড়লাম । এর কয়েকদিন পরেই কলেজে গন্ডগোল চোখের সামনে দেখলাম চিরচেনা প্রিয় বন্ধুরা ছাত্রলীগ আর ছাত্রদল এর জন্য নিজেদের মধ্যে মারামারি করছে । মাথায় কি চেপে গেলো দৌঁড়ে গেলাম ওদের ঠিক মধ্যখানে গিয়ে দাঁড়ালাম । ওদিকে স্যারেরা চিৎকার দিয়ে যাচ্ছেন আমার নাম ধরে । কে শোনে কার কথা ! হঠাৎ মিন্টু এসে আমায় টানতে লাগলো :"চল এখানে থাকিস না । তুই কি রে ?" আমি বললাম :"ঐসব পার্টির জন্য এতো আপন কে মারবে ? হাসিনা - খালেদা ওদের আপন বেশী ?" চিৎকার করে আরো বললম "তোরা মারামারি কর আমায় মারবি তারপর সরবো । আমার বন্ধুরা এতো খারাপ হতে পারেনা । কখনোই না ।" বেলাল ছিলো নেতা জোর করে মিন্টু আর ও আমায় সরিয়ে নিলো । প্রচন্ড জেদী আমি আবার গেলাম এবং থামালাম । বিশ্বজিৎ স্যার বলেই ফেললেন সাহসী মেয়ে । আর রায়হান স্যার বললেন এমন বোকামী যেনো না করি ।তবে আনন্দের ব্যাপার হলো আমাদের নির্বাচন স্থগিত হয়ে গেলো । বেঁচে গেলাম ।

মার্চে হলো আমাদের নবীন বরন অনুষ্ঠান । কলেজে প্রথম অনুষ্ঠান আমার "জগতে আনন্দযজ্ঞে আমার নিমন্ত্রণ" গাইলাম । সিনিয়র ক্লাশের ভাইয়া - আপুরা আমাদের বরন করার পর আমি সবার পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করলাম একটা মানপত্র তৈরী করে । এমন ভাবে ধন্যবাদ জ্ঞাপন কেউ কখনোই করেনি । তার জন্য আমি পেলাম বিশাল উপহার । নবীনদের উদ্দেশ্য করে তৈরী করা মানচিত্র আমায় তুলে দেয়া হলো চিরতরে । অবাক করে দিয়ে আমাদের ক্লাশের দু'শত ছাত্র
- ছাত্রী হাত উঠিয়ে সম্মতি জানিয়েছিলো । আধুনিক গান নিয়ে মজার কথা মনে পড়ছে , আমি গেয়েছিলাম অনুপ জালোটার "ভরেনা তোমায় দেখে দেখে মন" । ক্লাসিক গান কি আর চলে চঞ্চল বয়সে ? তৃতীয় হলাম আর বিশ্বজিৎ স্যার তো রেগে অস্থির :"এই তুই মন মানেনা অথবা ও বন্ধুরে এই সব গাইলি না কেন ? এরার মাথায় কিছু আছে ওই গান বুঝার ?" হেসে ফেললাম । যাক "যেমন খুশী তেমন সাজ" শুরু হলো গাঁয়ের বধূ সাজলাম । থিম ছিলো গাঁয়ের বধূ পুজো দিচ্ছে
। আমি একটু অন্য ভাবে করলাম । পুজোর থালা - গ্লাস নিয়ে পুকুরে গেলাম যাবার পথে অনেক ভীড় । সব বন্ধুরা এসে ভীড় সরালো । তারপর শুরু হলো ওদের জ্বালাতন । আমার ছাত্র জীবনে সাজগোজ করিনি কখনোই । সবাই ওই প্রথম সাজ দেখে চমকে গেলো , অনেকে প্রেমেও যে পড়েনি তা বললেও ভুল হবে । না সামনে এসে কেউ কোনোদিন ভালোবাসি কথা বলার সুযোগ পায়নি । তবে এটা ঠিক সুযোগ দিয়েছিলাম এক জনকে , থাক তাকে আমার বন্ধু ভূবনে আনতে চাই
না । তবে সে আসবে পরে কোনো এক সময়ে ।

লিলি ওর জন্য নতুন কবিতা লিখতে হতো প্রতিদিন । একদিন তাড়া থাকায় দৌড়ালাম , বাসে উঠার পরই লিলি হাত বাড়ালো । লিখে না আনাতে মন খারাপ ওর
, সেই মূহুর্তে লিখলাম :

খুব ইচ্ছে করে খুব জ্বালাতে ।
কাকে জানো ?
এই হৃদয় কে ।

না তাতেও মন ভরলো না । "এতো ছোট ! আরেকটা নীলাঞ্জনা প্লিজ"।

অঙ্কুরিত হইনি এখনও
তবু মাথার 'পরে ছাদ
প্রস্ফুটিত হবার পরে
কোন বুকে থাকবো আমি ?

ভালোবাসা একেই বলে । ইচ্ছে করছে না তবুও হাসি মুখে করা । তবে সেখানে কৃত্রিমতাকেও আশ্রয় না দেয়া । কলেজ থেকে ফেরার পথে কুমকুম আপার বান্ধবী সুফিয়া / রোকেয়া (নাম ভুলে গেছি তবে এ দুইয়ের মাঝে অবশ্যই একজন ) আপা আমায় বললেন :"নীলা একটা কথা আছে । তোমায় একজন ভালোবাসে । সে তোমাকে চিঠি দিয়েছে ।"
-----"আমি বললাম আপনি কি আপনার ছোট বোন কে এভাবে দিতে পারবেন ? যদি পারেন তবে আমি নেবো"।
তিনি ভুল বুঝতে পারলেন । তবে কি করে জানি সবাই জেনে গেলো সেলিম ভাইয়ের কথা । বেচারার নামই পড়ে গেলো মজনু মিয়া । শান্ত - শিষ্ট মানুষটার এই নামকরণ হলো নাসিমার থেকে । হায়রে পরে উনি সবার যন্ত্রণায় কলেজ আসাই বন্ধ করে দিলেন । করা উচিৎ ছিলো না যদিও বেশ কৌতুক করেছি তাঁকে নিয়ে আমরা সবাই । কুমকুম আপা একদিন বললো বিরহে পড়ে সেলিম ভাই সিঙ্গাপুর চলে গেছেন । আর যায় কোথায় তাঁর অবর্তমানে একটা সিনেম্যাটিক নামের জন্ম হলো : মজনু এখন সিঙ্গাপুরে ।

আমার কন্ঠের জোর অনেক । একদিন বাস চলে গেলো কলেজ গেট থেকে অনেকটা দূর । সবাই বলছে হায় , হায় ! এমন চিৎকার করে ডাকলাম বাস থেমে গেলো । সবাই বললো এরপর থেকে বাস থামানোর দায়িত্ব আমার । আরেকদিন বাসের কোনো খবর নেই । শোনা গেলো বাস - ট্রাক ধর্মঘট । কমলগঞ্জ থেকে সবাই মিলে হেঁটে শমশেরনগর । নাহ্ কষ্ট হয়নি । রাস্তার মালিক আমরা । গান - গল্প - হৈ - হুল্লোড়ে বিভিন্ন বাড়ি থেকে লোকজন উঁকি মেরে দেখছিলো । এভাবেই আরো একদিন ট্রাকের পেছনে ওঠার সৌভাগ্য হয়েছিলো । সেদিন তো আরো আনন্দ প্রথম ট্রাকের পেছনে ।

ওদিকে রায়হান স্যার আমার কবিতার পেছনে লেগেই আছেন । এই কবিতা পাঠাও , নয়তো ওটা । রবীন্দ্রসঙ্গীত নিয়ে লেখা একটা প্রবন্ধ বেশ সুনাম অর্জন করেছিলো । বিঞ্জানের ছাত্রী ছিলাম , আর্টিক্যাল লিখেছি পরজীবি , অভিস্রবণ আরো কতো কি । সবই প্রকাশিত হয়েছে স্যারের উৎসাহে । আমাদের বাসায় সব সময় দুটো পত্রিকা আসতো ইংলিশ এবং বাংলা । সৈয়দ আলী বাগানের পিয়ন পত্রিকা আনতো সকাল এগারোটারও পরে । একদিন নয়টার সময় দেখি মিন্টু দৌড়ে
দৌড়ে আসছে । তখন আমি বাগানে জল দিচ্ছিলাম । হাঁপাতে হাঁপাতে বললো :"তোর আরেকটা কবিতা ছাপা হয়েছে । দেখ , দেখ ।" আমি একটু রাগ করে বললাম এমন করে কেউ দৌঁড়ায় ?পরেই তো দেখতে পারতাম" । না সে আমায় তখুনি দেখাবে । দেখলাম আমার "মূল্য" কবিতা :

যেন নদী
বাঁধ না মানা
জোয়ারে ভাসাই
পংক্তিমালা ---
আপন পৃথিবী ।

কন্ঠ নিঃসৃত সুরে ,
দু'কূল প্লাবি ,
উচ্ছ্বলতা বারংবার
অথচ কখনো বুঝিনা
ভালোবাসার দারুণ খরায়
হৃদয়ের মূল্য একটু বেশী ।


ভেবে পাইনা এখনো , কেন আমায় এতো ভালোবাসতো ওরা ? কি ছিলো আমার মাঝে ? বলতো আমার মনটা নাকি অনেক ভালো । আচ্ছা যদি ভালোই আমার মন , সে কেন বুঝলো না ?

নীলাঞ্জনা নীলা

ক্রমশ-----

১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জলদস্যুরা কি ফেরেশতা যে ফিরে এসে তাদের এত গুণগান গাওয়া হচ্ছে?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭


জলদস্যুরা নামাজি, তাই তারা মুক্তিপণের টাকা ফেরত দিয়েছে? শিরোনাম দেখে এমনটা মনে হতেই পারে। কিন্তু আসল খবর যে সেটা না, তা ভেতরেই লেখা আছে; যার লিংক নিচে দেওয়া হলো।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×