somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কাসেম একজন পুরুষ মানুষ

০৩ রা এপ্রিল, ২০১১ রাত ১২:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এক
ঝুম বৃষ্টি পড়ছিল সেদিন। দুপুরবেলা শহরতলির মোড়ের বাসস্ট্যান্ডে এসে থামলো পুরানো লক্কর-ঝক্কর মার্কা একটি বাস। বাসের অবস্থা যা তাতে সেটাকে বাস না বলে মুড়ির টিন বলাই ভালো। জরাজীর্ণ বাসের মরিচা ধরে যাওয়া ফুটোগুলো দিয়ে তাই বৃষ্টির ছোটখাট ফোটাগুলো ভেতরে ঢুকে পরার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। বাসের ভেতরে এতণ বৃষ্টির ফোটাগুলোকে ফাঁকি দিয়ে বেশ চালিয়ে নিয়েছিলো কাসেম। কিন্তু এখন এই শহরতলীর মোড়েই নামতে হবে তাকে। না হলে বৃষ্টির মাঝে এই বাস তাকে কোথায় নিয়ে যাবে কে জানে!

বাস থামতেই এলাকার ভেতরের গলির দিকে দৌড় দিল কাসেম। যদি কোথাও কোন একটা আশ্রয় পাওয়া যায়। কিন্তু কোথায় কি! ঝুম বৃষ্টির মাঝে কেউ একটা চায়ের দোকানও খোলা রাখেনি। ছাতি মাথায় যে কেউ একটু বাইরে হাটাহাটি করছে তা-ও নয়। চারপাশ সুনশান। শুধু বৃষ্টির একটানা শব্দ আর মাঝে মাঝে দূরে কোথাও বৃষ্টির আনন্দে ডেকে ওঠা ব্যাঙের ডাক-ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ! ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ!

দৌড়ে অনেকটা পথ চলে এসেছে কাসেম। কিন্তু বৃষ্টির সাথে খুব বেশি সুবিধা করা যাচ্ছে না। বাসায় পৌছাবার আগেই বৃষ্টি তাকে পুরোপুরি ভিজিয়ে ফেলবে-বুঝতে পারছিলো কাসেম। তাই আর উপায়ন্তর না পেয়ে শেষপর্যন্ত মর্জিনাদের বাড়ির জানালার কার্নিশের নিচেই দাঁড়িয়ে পড়লো সে। বৃষ্টির ঝাঁঝ একটু কমে এলেই নিজেকে আবার খানিকটা এগিয়ে নেয়া যাবে, মনে মনে সেটা ভেবে নিলো কাসেম।

কার্নিশের নিচেই পর্দাঢাকা বন্ধ কাচের জানালা। কাসেমের জন্য সেটা ভালোই হয়েছে। পর্দা না থাকলে এখানে দাঁড়াতে ভীষণ অস্বস্তি লাগলো তার। কিন্তু বৃষ্টি আজ আর কমছে না কেন!

হঠাৎ জানালা খোলার শব্দে চমকে পেছনে ফিরে তাকায় কাসেম। জানালার ওপাশে মর্জিনাকে দেখেই বুকটা ধ্বক করে উঠলো। এটা অবশ্য নতুন কিছু নয়। মর্জিনাকে দেখে এমনটা আগেও হয়েছে তার। ভালোবাসার মানুষরা নাকি এমনি করেই হৃদয়ে অনুভতির জন্ম দিয়ে যায়। মর্জিনা হাসি হাসি মুখে জিজ্ঞাসা করে, ‘আরে কাসেম ভাই আপনি?’

এমনিতেই কাসেম মর্জিনার প্রতি খানিকটা দুর্বল । তারপর আবার এই ঝুম বৃষ্টিতে মর্জিনার রহস্যময় মায়াবী হাসি যেন খানিকটা এলোমেলো করে দেয় কাসেমকে। কি বলবে চট করে ঠিক বুঝে উঠতে পারে না। রুমাল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে নিজেকে সামলে নেয় কাসেম। তারপর ইতঃস্তত গলায় বললো, ‘আর বলো না, কি যে বৃষ্টি শুরু হয়েছে! একদম ভিজে গেছি।’

কথাটা বলেই কাসেমের মনে হলো, আজ বোধহয় মর্জিনা তাকে ঘরের ভেতর বসতে বলবে। এরপর হাতে ধরিয়ে দেবে একটা পরিস্কার সাদা তোয়ালে আর এক কাপ গরম চা! কল্পনার সমুদ্রের ঢেউ তাকে আরও অনেকদূর নিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু মর্জিনা এ সময় কাসেমের দিকে এক ভাবনায় তাকিয়ে থেকে বললো, ‘বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছেন বলে আপনি এখানে দাড়িয়ে আছেন! বৃষ্টিকে ভয় পান? আপনি না পুরুষ মানুষ? পুরুষ মানুষ বৃষ্টিকে ভয় পায় নাকি?’

মর্জিনার কথা শুনে কাসেমের মুখ লাল হয়ে যেতে শুরু করলো। মর্জিনা তার পৌরুষে আঘাত করেছে। তার ভালোলাগার মেয়েটি তার পৌরুষ নিয়ে প্রশ্ন তুলবে-এই ব্যাপারটা কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। কাসেম আর কথা বাড়ায় না। আস্তে আস্তে সেই ঘোর বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে বাড়ির পথে হাটতে শুরু করলো। কাসেম খানিকদূর সামনে যেতেই পেছন থেকে মর্জিনার হাসির আওয়াজ শুনতে পায়। এই হাসি শোনার জন্য যদি মর্জিনা তাকে শিলা বৃষ্টির মাঝেও হেটে যেতে বলে কাসেম তাতেও পিছপা হবে না। আহা! কি অপূর্ব সেই শব্দ!

দুই

কয়েকদিন পর। প্রচন্ড জ্বর নিয়ে বিছানায় কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে কাসেম। বাইরে আজও প্রচন্ড বৃষ্টি পড়ছে। বৃষ্টির রিমঝিম শব্দে কাসেম ক্রমশ যেন কেমন এক ঘোরের মাঝে চলে যাচ্ছিল। কাসেম চেষ্টা করছিলো সেই ঘোর কাটাতে। কিন্তু জ্বরের দুর্বল শরীর তাকে সেই ঘোরের মাঝে আরও টেনে নিয়ে যাচ্ছিল। কাসেম হঠাৎ করে সেই ঘোরের মাঝে চোখ খুলে দেখতে পায় মর্জিনা তার সামনে দাড়িয়ে থেকে বলছে, ‘কাসেম ভাই, বাহিরে বৃষ্টি পড়ছে আর আপনি ঘরের ভিতরে শুয়ে আছেন? আপনি না পুরুষ মানুষ?’

একটু পর দেখা যায় কাসেম সেই ঘোর বর্ষণের মাঝে কাঁথা মুড়ি দিয়ে বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে। বৃষ্টির ফোটাগুলো তুমুল বাতাসে ভেসে এলোমেলো ছুঁয়ে যাচ্ছে তাকে। বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে এসময় আবারও মর্জিনার হাসির শব্দ শুনতে পায় কাসেম।
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বৃদ্ধাশ্রম।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১৬



আগে ভিডিওটি দেখে নিন।

মনে করেন, এক দেশে এক মহিলা ছিলো। একটি সন্তান জন্ম দেবার পর তার স্বামী মারা যায়। পরে সেই মহিলা পরের বাসায় কাজ করে সন্তান কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

টের পেলে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৭

টের পেলে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

টের পেলে গুটিয়ে যায় লজ্জাবতী/ পরিপূর্ণ যৌবনে যুবতীর নিখুঁত অনুভূতি। আমার চাওয়া, ইচ্ছে, স্বপ্ন! আমার পছন্দ বুঝদার, সুন্দর হৃদয়ের রূপ! সৌন্দর্য সুন্দর যা চিরন্তন সত্য। কিন্তু সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের চার খলিফার ধারাবাহিকতা কে নির্ধারণ করেছেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৭




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব)... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×