somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেডিকেল এর ব্রিটিশ রাজদরবার

০২ রা এপ্রিল, ২০১১ দুপুর ১:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাঙালি হিসেবে আমরা কেমন তা আমি জানি না, বস্তুত বলতে গেলে যেখানে আমি নিজেই বাংলাদেশে থাকি সেখানে আমার থেকে পক্ষপাত হবেই। কিন্তু সেদিন ফার্মা ক্লাসে বারী স্যারের কথা শুনে বুকটা হাহাকার করে উঠলো।আমরা আসলে একটা সাইকেলের মধ্যে ঢুকে গেছি। আমরা গরীব বলে আমাদের জন্ম থেকেই টাকার সন্ধানে নামতে হয়, এই নামতে গিয়ে আমরা হারিয়েছি মনের প্রানকে। ফলে যা হবার তাই হচ্ছে, গবেষনা হচ্ছে না। আমাদের দেশে যেখানে প্রধান সমস্যা হল, ম্যালরিয়া, ডায়রিয়া, কলেরার মত রোগসমুহ, সেখানে আমাদের ডাক্তারী করবার সময় পড়তে হচ্ছে কঠিন রোগ গুলো, আমাদের উদ্দেশ্য হল-বিদেশে গিয়ে টাকা উপার্জন করা।ফলে সামান্য রোগশোকে দেশকে অনেক বিপদে পড়তে হয়। বাইরের দেশ অনেক এগিয়ে গেলেও আমরা পড়ে আছি সেই আমাদের বাপদাদারা যে সিস্টেম দিয়ে গেছেন তার মাঝে। তবে হ্যা পরিবর্তন এসেছে।একটা পরিবর্তন না বললেই নয়, আমাদের স্যার রা তাদের স্যারকে যমের মত ভয় করতেন। আমরা মাঝে মাঝে স্যারকে বলতে পারি, থাআআআআক স্যার।
আমেরিকান ব্রিটিশ বই পড়েই আমাদের দিনাতি পাত। অনেকে কথায় কথায় ব্রিটিশদের মুন্ডুপাত করে।আবার কেউ সুনাম করে।এ প্রসঙ্গে আমার কিছু বলার নেই। তবে বারী স্যারের কথা শুনবার পর নেমে গেলাম, ব্রিটিশদের এদেশে আগমন, তাদের উথান, তাদের জীবন যাপন নিয়ে পড়াশুনা করবার কাজে।বেশিরভাগ বইতে মুলত কাজ করা হয়েছে ইন্ডিয়ান রাজনীতি নিয়ে,তাদের কর্মকান্ড নিয়ে।ব্রিটিশদের হত্যাকান্ড নিয়ে।হিন্দি মুভিগুলোর কথা নাই বললাম। লগান সিনেমাটা তাও ব্রিটিশদের সামান্য দাম দিয়েছে।এটা বলবেন না যে আমি ব্রিটিশ পক্ষ করছি। সে যাই হোক, অবশেষে একটা বই পেলাম-মুনতাসির মামুন এর কোই হ্যায়।দুটি দিক থেকেই তিনি তুলে ধরেছেন।
এদেশে ব্রিটিশ্ রা এসেছিল বানিজ্য করতে,......শেষ পর্যন্ত শাসন করে চলে গেল।নিজেদের মধ্যে অসম্ভব নিয়মানুবর্তি তারা। কোন আই সি এস যখন কোথাও প্রথম আসতেন তার রীতি থাকত এলাকার সকল মেমসাহেব দের দাওয়াত দেয়া, এবং বড় কর্মকর্তাদের সাথে পরিচিত হওয়া।কর্মকর্তা যদি পরিচিত হতেন তবে সদস্য সংখ্যা অনুযায়ি কল কার্ড দিয়ে আসতে হত।যদি বাসায় কোন অবিবাহিত মেয়ে থাকত, এবং দাওয়াতদানকারী অকৃতদার হতেন, তবে কলকার্ডের কোনা কেটে দিতে হত।দাওয়াত নিতেও কত কস্ট। আরও একটা মজার ব্যাপার না বললেই নয়, ধরেন আপনি কোন মেমসাহেবের বাড়ি গিয়েছেন। আপনি ইচ্ছা করলেই আপনার টুপিটি সেখানে খুলে রাখতে পারবেন না,আপনি যতই আপনার টুপি হাতে নিয়ে ঘুরান না কেন, মেমসাহেব না বলা পর্যন্ত আপনি তা পারবেন না। আর অনুমুতি পেলেই হল!সাপার এর দাওয়াত।এই নিয়মানুবর্তিতা তাদের নিজেদের মধ্যে বলা চলে।এদেশের আমজনতার সাথে তাদের আচরন পরের কয়েকটা লাইন পরলেই টের পাবেন।
প্রথম দিকে কোম্পানীর কর্মকর্তাদের বেতন ছিলে এরকম, একজন এপ্রেন্টিস পেতেন ৫ পাউন্ড, কাউন্টার ১০ পাউন্ড।প্রেসিডেন্ট পেতেন এরকম বাড়তে বাড়তে সর্বোচ্চ ৫০০ পাউন্ড। অথচ দেশ থেকে তারা যখন ফিরে যান—ড্রেকস নিয়ে গেছেন ২,৮০,০০০ পাউন্ড।ক্লাইভ ১৯,০০,০০০ পাউন্ড।নিজ দেশে তারা সহায় সম্পত্তি কিনে নবাবের মত জীবন যাপন করতেন।তাদের জীবন ছিল চাকর বাকর দিয়ে পরিপুর্ন। এই সম্পর্কে জেমস ফারলনয়ে যা বলেন
“Life in India for those who rules it has always been life with trains of servants”
সিভিলিয়ানদের কমপক্ষে ঘরে ১০-২৫ জন, বাইরে ১৭ জন চাকর থাকতো।তাই হয়তো অনেক সিভিলিয়ান তাদের জীবন অবসান ঘটান এই বঙ্গেই। এক রিপোর্ট ছিল এরকম যে- ১৫৭(ঠিক মনে নেই) থেকে মাত্র ৩৭ জন দেশে ফিরে এসেছিলেন।ভাগিস ব্রিটিশ আমলে জন্মাই নি, নতুবা আমাকে আর পড়াশুনা করতে হত না।মেডিকেল পড়াশুনা করা তো দুরের কথা।চাকর হয়ে থাকতে হত।
সেই সময়ে হয়তো হাজার হাজার নেটিভে যে এলাকা নিয়ে বসবাস করতেন, কয়েকজন সিভিলিয়ান তার চারগুন এলাকা নিয়ে থাকতেন। এখনও ব্রিটিশরা বোধ হয় এভাবেই থাকে।এখনও তাই ব্রিটিশদের পক্ষে হরর ছবি বানানো সম্ভব হচ্ছে।আমাদের দেশে কেউ ভুতের ভয়ে বাড়ী আগে ছাড়ুক না, দুদিন পরে দখল হয়ে যাবে(ব্যাতিক্রম আছে)।আমাদের পদ্মানদীর মাঝি টাইপ বাড়ীতে যেখানে রাতের শব্দ পর্যন্ত পাশের বাড়িতে শোনা যায়-ভুতের থাকার জায়গা কই?তাদের বাড়ি সম্পর্কে এক দুই লাইন না তুলে দিলেই নয়ঃ
November 1977, hickey “শেষ রাতে জোয়ার এল পানসি ছাড়ল। নদীর পুর্বতীরে গার্ডেন রিচের দৃশ্য ধীরে ধীরে আমাদের চোখের সামনে ভেসে উঠল। চমৎকার সব বাগান ঘেরা বড় বড় বাড়ী। দেখতে অতি মনোরম, এরকম সুন্দর দৃশ্য দেখলে কার না আনন্দ হয়। কোম্পানির বড় বড় কর্তাব্যাক্তিরা এখানকার সুন্দর সুন্দর পরিবেশে বাস করেন।চারদিকে গাছপালায় যেন সবুজের বাস নেমেছে মনে হয়”
এত সুনাম গাচ্ছি কেন?সুনাম যে এতটুকুই। আর বাকিটা দুর্নাম। আমাদের প্রশাসনিক, অর্থনীতি এখনও ব্রিটিশ নিয়মে চলে। দুর্নীতি বাদে। বলা হয় ব্রিটিশ আমলেই জেলা শাসন ব্যাবস্থা এমন ভাবে গড়ে উঠেছিল যে, সিভিলিয়ান দের দরকার ছিল না। কিন্তু ওই যে প্রভু ব্যাতিত আমাদের চলে না। আমরা নিজে থেকে কিছু করতে পারি নে। প্রভুরা কষ্ট করে আমাদের যে ওষুধ দিবেন তাতেই আমরা খুশি। আমরা হলাম স্যাম্পল। এ প্রসঙ্গে একজনের উক্তি না তুলে ধরলে বক্তব্য স্পষ্ট হয় না, “কুয়েক পুরুষ ধরিয়া ব্রিটিশগন ভারতবর্ষকে নিজেদের বৃহৎ মফস্বল এর বাড়ি বলিয়া ভাবিতেই ব্যাস্ত। এ বাড়ীতে তাহারাই বড়লোক এবং ভালো অংশে বসবাস করিবেন। ভারতীয়রা চাকরদের ঘরে, আস্তাবলে, রান্নাঘরে থাকিবেন............সময় সময় আমরা অতি দুর্লভ সম্মান পাই, বৈঠক খানায় আমাদিগকে এক আধখানা পেয়ালা চা খাইতে দেয়া হয়...অস্ত্রবলে জয় বা কূট রাজনীতির কৌশলে জয় অপেক্ষা মানসিক দাসত্বই আসলে ইংরেজদের আসল জয়।প্রাচীনকালে জ্ঞানী ব্যাক্তিরা যেমন বলেন-যে ক্রীতদাস নিজেকে ক্রীতদাস হিসেবে ভাবিতে আরম্ভ করে”
আমিও তাদের বই পরছি। দেশের মানুষকে দূর থেকে দেখছি। ডাক্তার দের যেখানে সবচেয়ে কাছের মানুষ হিসেবে পাওয়ার কথা। আমরা ভান করে আছি।বলি আর কতদিন। আমরা নিজেরা নিজেদের সমস্যাগুলোর দিকে তাকাই। পাটের জীনের রহস্য বের হয়েছে, একনাগাড়ে ব্রিটিশ, আমেরিকান বই না পড়ে, নিজেরা তাদের সমকক্ষ বই লিখি।বিদেশে গিয়ে শিক্ষা নিয়ে দেশের উপজেলা গুলোতে সেবা দেই।বাংলাদেশে কেন জন্মালাম বলে অদৃষ্টকে দোষ দিয়ে লাভ নেই, ছুটির আগের রাতে প্রেমিকার গালি খেয়ে কতদুর যাবেন।হাসিমুখে এগিয়ে যাই না-
“কিসের তরে অশ্রু ঝরে, কিসের লাগি দীর্ঘশাস
হাস্যমুখে অদৃষ্টরে করব মোরা পরিহাস
রিক্ত যারা সর্বহারা, সর্বজয়ী বিশ্বে তারা
গর্বময়ী ভাগ্যদেবীর নয়কো তারা ক্রীতদাস
হাস্যমুখে অদৃষ্টরে করব মোরা পরিহাস”
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৫

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না
অহনা বলেছিল, আমি জানি আমি তোমাকে পেয়েছি সবখানি
আমি তাই নিশ্চিন্তে হারিয়ে যাই যখন যেখানে খুশি

অহনা বলেছিল, যতটা উদাসীন আমাকে দেখো, তার চেয়ে
বহুগুণ উদাসীন আমি
তোমাকে পাওয়ার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিয়াল ফিলিস্তিনীরা লেজ গুটিয়ে রাফা থেকে পালাচ্ছে কেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১১ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



যখন সারা বিশ্বের মানুষ ফিলিস্তিনীদের পক্ষে ফেটে পড়েছে, যখন জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে সাধারণ সদস্য করার জন্য ভোট নিয়েছে, যখন আমেরিকা বলছে যে, ইসরায়েল সাধারণ ফিলিস্তিনীদের হত্যা করার জন্য আমেরিকান-যুদ্ধাস্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসানের মা হিজাব করেন নি। এই বেপর্দা নারীকে গাড়ি গিফট করার চেয়ে হিজাব গিফট করা উত্তম।

লিখেছেন লেখার খাতা, ১১ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩


ছবি - সংগৃহীত।


ইফতেখার রাফসান। যিনি রাফসান দ্যা ছোট ভাই নামে পরিচিত। বয়স ২৬ বছর মাত্র। এই ২৬ বছর বয়সী যুবক মা-বাবাকে বিলাসবহুল গাড়ি কিনে দিয়েছে। আমরা যারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ এঁটেল মাটি

লিখেছেন রানার ব্লগ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৫৬




শাহাবাগের মোড়ে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলাম, মাত্র একটা টিউশানি শেষ করে যেন হাপ ছেড়ে বাঁচলাম । ছাত্র পড়ানো বিশাল এক খাটুনির কাজ । এখন বুঝতে পারি প্রফেসদের এতো তাড়াতাড়ি বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাইলট ফিস না কী পয়জনাস শ্রিম্প?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১২ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:৪০

ছবি সূত্র: গুগল

বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×