জলাতঙ্ক রোগ ও উটকো বিড়ম্বনা থেকে নগরবাসীকে মুক্ত রাখতে ঢাকা সিটি করপোরেশন (ডিসিসি) গত চার বছরে এক লাখ ২৭ হাজার ৪৫১টি বেওয়ারিশ কুকুর নিধন করেছে। আপাতদৃষ্টিতে সংখ্যাটি সন্তোষজনক মনে হলেও ডিসিসি কর্মকর্তাদের মধ্যেই রয়েছে ভিন্নমত। তাঁদের অনেকেরই অভিমত, বাস্তবে এত কুকুর নিধন করা হয়নি। যদি করাই হতো তাহলে পাড়া-মহল্লায় বেওয়ারিশ কুকুরের দৌরাত্ম্য এত থাকত না। আসলে কাগজ-কলমে সংখ্যা দেখিয়ে কুকুর নিধন কাজে জড়িতরা সে অনুযায়ী টাকা তুলে নিচ্ছেন।
ডিসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার মো. নাসিরউদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এটা আমাদেরও প্রশ্ন। আমাদের শীর্ষ কর্মকর্তারাও বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তাঁরা প্রশ্ন করেন, কুকুর না মেরেই নিধনকারীরা কি বিল তুলে নেয়? পরে আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি, কুকুর মারার অর্থ লুটপাটের ব্যাপারে যতটা শোনা যায়, বাস্তবে অতটা হয় না। ওরা ৫-১০টা এদিক-সেদিক করতে পারে। সেটাকে স্বাভাবিক হিসাবে ধরে নেওয়া যায়।'
কুকুর নিধনের তদারককারী ডিসিসির ভেটেরিনারি কর্মকর্তা ডা. আজমত আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, 'শহুরে কুকুর বছরে দুবার বাচ্চা দেয়। একেকবার ছয়টা করে বাচ্চা দেয়। অনেক সময় আটটাও দেয়। ফলে কুকুরের বিস্তার দ্রুত বাড়ে। এ ছাড়া শহরের বাইরে থেকেও কুকুর এসে জড়ো হয়। এখন আমরা কুকুরগুলোকে বন্ধ্যা করার চিন্তা করছি।'
জানা গেছে, কুকুর নিধনের জন্য বর্তমানে দুটি ভ্রাম্যমাণ দল রাজধানীতে কাজ করছে। তারা কুকুর মেরে মাতুয়াইলে ডাম্পিং স্টেশনে নিয়ে যায়। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মকর্তারা মৃত কুকুরের সংখ্যা গুনে খাতায় হিসাব লিপিবদ্ধ করেন। কিন্তু গণনার স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন আছে।
ডিসিসির একাধিক কর্মকর্তা জানান, নিধনকারীদের সঙ্গে গণনাকারীরা বোঝাপড়া করে সংখ্যা বাড়িয়ে লিখিয়ে নিয়ে অতিরিক্ত বিল তুলে নেয়। যে কারণে আগে কুকুরের লেজ জমা দেওয়ার নিয়ম থাকলেও কয়েক বছর যাবৎ লেজ জমা বন্ধ করে দিয়েছে চক্রটি। ডিসিসির এক কর্মকর্তা জানান, আগে একই লেজ বারবার দেখানোর ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু এখন লেজ জমা দেওয়ার বিধান না থাকায় কুকুর নিধনের নামে আবার লুটপাট শুরু হয়েছে।
জানা গেছে, বর্তমানে দুটি টিম কুকুর নিধনের কাজ করছে। ডিসিসি একেকটি কুকুর নিধন বাবদ ঠিকাদারকে দেয় ৪০ টাকা। তারা বিষযুক্ত কোচ বা টেঁটা জাতীয় অস্ত্র দিয়ে কুকুরকে গেঁথে ফেলে। এতে দ্রুতই কুকুরটি মারা যায়।
গত ফেব্রুয়ারি মাসের হিসাবে দেখা গেছে, কুকুর নিধন দল 'ক' ৯৪০টি ও 'খ' দল ৯৪৮টি কুকুর নিধন করেছে। এ বাবদ ডিসিসিকে বিল পরিশোধ করতে হয়েছে ৭৫ হাজার ৫২০ টাকা। এ ছাড়া গত পাঁচ বছরের হিসাবে দেখা গেছে, ২০০৬ সালে ৩৭ হাজার ৫১৫টি, ২০০৭ সালে ২০ হাজার ২৭৪টি, ২০০৮ সালে ২২ হাজার ৪০৬টি, ২০০৯ সালে ২৬ হাজার ২৫৬টি ও ২০১০ সালে ২১ হাজার কুকুর নিধন করেছে ডিসিসি। কিন্তু বাস্তবে এর অর্ধেকও নিধন করা হয়নি বলে অনেকের ধারণা।
এ ব্যাপারে কুকুর নিধনের ঠিকাদার দেলোয়ার হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরা প্রতিদিন ১০-১৫টা কুকুর মারি। এ কুকুর নিয়ে মাতুয়াইলে জমা দেই। ওখানে দায়িত্ব পালনকারীরা সেগুলো গুনে খাতায় লিখে দেয়। কাজেই না মেরে বিল করার তো সুযোগ নেই।'
ঠিকাদার দেলোয়ার হোসেন আরো বলেন, 'আগে একেকটি কুকুর নিধনের জন্য ডিসিসি দিত ১০ টাকা। পরে ২৫ টাকা করে। গত ৬ জুলাই থেকে ৪০ টাকায় উন্নীত করেছে। অথচ সরকারের পশুসম্পদ অধিদপ্তরও কুকুর মারে। তারা একটি কুকুর মারতে বিল দেয় ৫৫ টাকা। অথচ আমাদের ১৫ টাকা কম দেওয়া হচ্ছে।'
সূত্র: কালের কণ্ঠ
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা এপ্রিল, ২০১১ সকাল ১১:১৮