somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বরষা ভেজা স্মৃতির দুয়ার - পর্ব ২ (কবিতা এবং গানে বৃষ্টি স্মরণ)

০১ লা এপ্রিল, ২০১১ রাত ১:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি সাধারণত পর্ব করে ব্লগ লিখি না ।তবে এই বিষয় নিয়ে চলতেই থাকবে । যারা আগের পর্ব দেখেন নি তাদের জন্যে- বরষা ভেজা স্মৃতির দুয়ার - পর্ব ১

আমার প্রথম বৃষ্টি বিষয়ক পোস্টটা দেবার কদিন পরে বৃষ্টি এসছে । মৌসুমের প্রথম বৃষ্টি । এখনো সে রেশ রয়ে গেছে, মাঝে মাঝে তাই আকাশটা কেদে ওঠে । আর সে বৃষ্টি জল মেখে আমাদের কী আনন্দ!! আসুন আজকের আনন্দধারায় ভেসে যাই আমরা ।

একবার হল কী, বিকেল বেলা । আমার খেলতে যাবার সময় । আরেকটু পরেই পাড়াবেড়ানো আর খেলার ধুম (তখন আমি অনেক ছোট, ফোরে পড়ি)। এমন সময় দরজায় কলবেল । আমার মনে সন্দেহের আনাগোনা ! ঠিক যেমন ভাবা, তেমনই হল- আমার গৃহশিক্ষক এসেছেন । আমি শুরু করলাম কান্না । আম্মু ধমক দিয়ে পড়তে বসালেন । একটু পরেই দেখলাম আমার কান্না দেখে অসীম গগন মেলে দিল- তার অশ্রু সরোবর । প্রচন্ড বৃষ্টি শুরু হল । আমার কান্না তখন কোথায় ভেসে গেল!! একটু পড়ে শুনি হইচই । জানলা থেকে তাকিয়ে দেখি সারা মাঠ জুড়ে আমাদের কলোনীর (আরিচা কলোনী, পর্ব -১ দ্রষ্টব্য) ছেলেমেয়েরা কি যেন কুড়োচ্ছে । সেকি প্রবল উত্তেজনা । বুঝে ফেললাম ঘটানা টা কি ? ইতিমধ্যে আমাদের ঘরের বারান্দাতেও দু চারটে শীল পড়তে শুরু করেছে ।

বন্ধুরা, বলুনতো এই অবস্থায় আর পড়া চলে ?? বিকেল চারটা বাজে তখন । আমি একটা বাটি হাতে দরজা খুলে নেমে গেলাম । সবার সাথে গিয়ে শীলা গুলো কুড়োতে শুরু করলাম । ইয়া বড় বড় একেকটা, মাথায় যে পড়েনি, ভাগ্য । তবে অনেক মজা লাগছিল । কেউ তুলে তুলে রাখছে, কেউবা আবার চেখে দেখছে, কেউবা আবার চোপাটেও ওস্তাদ, অন্যেরটা চুরি করছে। সব মিলে স্মরণীয় একটা দিন আমার জীবনে।

যাই হোক পড়া বাদ দিয়ে বাইরে চলে যাওয়ায় ঘরে ফিরে কপালে কি জুটেছিল ঠিক মনে পড়ছে না...........

সন্ধাবেলায় টিভিতে গানের অনুষ্ঠাণ। আমার শোনা অন্যতম জঘন্য গান (তখন কার মানসিকতায়) চলছে টিভিতে । আমি মহা বিরক্ত । মনে মনে ভাবছি সন্ধাটাই মাটি । এখন মনে হয় কী অসাধারণ একটা গান । আহা...............



আরিচার সেই দিনগুলো আমি খুব মিস করি । আমার শৈশবের তিনটি বছর কেটেছে আরিচায় । যাই হোক, আমরা পরিবার ঢাকায় চলে এলাম । নতুন স্কুল, চলছে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা। ১৯৯৮ সালের কথা সবার নিশ্চয়ই মনে আছে । এই বছরে আমি একটা ভয়ংকর বৃষ্টি ভেজার মুখে পড়লাম । আমরা যেহেতু ঢাকায় নতুন তাই আমি স্কুলে যেতাম ভ্যানে করে । একদিন হল কি ভ্যান নষ্ট। এখন আমি কি করি । আমাদের বাসায় তখন ফোন নেই । আমার কাছে পুরোটা পথ রিক্সা ভাড়া দেবার মত টাকাও নেই । এখন?? আমি অনেকক্ষণ বসে রইলাম । এরপরে কমলাপুর রেলস্টেশনের ওভারব্রিজের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম ।

একটু পথ এগাতে না এগাতেই আকাশ কাল হয়ে এল । যারা মতিঝিল মডেল স্কুলের অবস্থিতি সম্পর্কে জানেন, তারা নিশ্চয় বুঝতে পারছেন ওভারব্রিজটা অনেক কাছে, পার হতে বরজোড় পনের মিনিট লাগবার কথা । আমি জোরে হাটতে শুরু করলাম । কিন্তু আকাশে যেন কোন এক চিত্রকরের প্লট হয়ে উঠেছে । নিজের আঁকা পছন্দ হয়নি বলে সে কালি গুলিয়ে দিল তাতে । আমার ভয় বাড়ছে ।

আমি ওভারব্রিজে উঠতে না উঠতেই এল বৃষ্টি । মুষল ধারা বৃষ্টি এবং সাথে ঝড়ো হাওয়া । সে কী মত্ত বায়ু, সে কী উচ্ছাস নিদারুণ প্রভঞ্জণের । আমি একদম ভিজে একসার । সাথে আবার উটকো ঝামেলা ব্যাগ ভর্তি বই । সে গুলো বাচাতে গিয়ে আমাকে আরো ভিজতে হচ্ছে । আমি জোরে পা ফেলেও শেষ করতে পারছিনা ব্রিজটা । অনেক বড় মনে হয়েছিল সেদিন ওটাকে। সেদিনের বৃষ্টিকে এই গানটা ঠিক ভাবে তুলে ধরে ।



আমার সমস্ত শরীর বৃষ্টিতে ভিজে একসার । আমি জীবনে কখনো এমন ঠান্ডা জলে ভিজিনি । আসলে বৃষ্টি যে এত ঠান্ডা হতে পারে আমার ধারণা ছিল না। ছোটবেলায় আমি খুবই দূর্বল ছিলাম । একটু বৃষ্টিতে ভিজলেই জ্বর আসত । তাই আমি খুবই দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম । যাই হোক বাসায় গিয়ে, জামা কাপড় বদলে টিভি ছেড়ে দেখি, এটা আসলে কালবোশেখী ছিল । বেশ কিছু গাছ ভুপাতিত, দুজন নিহত । যাই হোক সবচেয়ে আনন্দের সংবাদ এই যে- এত কাকভেজা হবার পরেও আমার সেরকম কোন জ্বর আসেনি ।




আজ আর কোন অভিজ্ঞতা নয় এবার গান এবং কবিতা । আজ আমার পছন্দের কিছু গান আপনাদের সাথে শেয়ার করি আগে । এই গানগুলোর বেশ কয়েকটা বোধহয় ইউটিউবে নেই । আমি নিজে আপলোড করলাম । তাই অন্য লিঙ্ক পাওয়া মুস্কিল ।


১) মেঘেমদুরো বরষায়- এই গানটি একটি নজরুল সঙ্গীত এবং রাগাশ্রয়ী । অনুপ ঘোষাল অসাধারণ গেয়েছেন ।


২) নাচ ময়ূরী নাচ রে- সুধীন দাস গুপ্তের কথা ও সুরে আশা ভোঁশলের একটা আধুনিক গান । এখানে এটি গেয়েছেন শাকিলা জাফর ।


৩) বৃষ্টি নিয়ে রুণা লায়লার দুটো বেশ সুন্দর গান আছে । তার একটি অনেক বৃষ্টি ঝরে তুমি এলে। এটি আমার খুব প্রিয় ।


৪) এই বৃষ্টি ভেজা রাতে চলে যেও না-রুণা লায়লা ।


৫) পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে - একটি বহুল প্রচারিত রবি বাবুর গান ।রবীন্দ্র সঙ্গীত যেভাবে গাওয়া হয়, তাতে আমার কোন আস্থা নেই । সবাইকে জানিয়ে রাখি, আমার দৃষ্টিতে পুরুষের কন্ঠ হবে ভরাট, উদার । আর মেয়েদের বেলায় উল্টো, চিকন এবং তীক্ষ্ণ পিচের । রবীন্দ্রসঙ্গীত যা আমরা শুনি (মোটা স্বরে) তার বেশির ভাগেই মেয়েদের কন্ঠ আমার পছন্দ নয় ।

তো এখানে শ্রাবণী সেনের গাওয়া গানটির লিঙ্ক দিলাম আপনাদের ভাল লাগবার কথা ।


অনেক কথা হল, গান হল এবারে কবিতা । আজকের আমার কবিতার নাম চিরসঙ্গী । এটি আমি এক বরষা ভেজা দুপুরে লিখেছিলাম । এটাই আমার প্রথম দুপুরে বা দিনে লেখা কবিতা । এর আগে যা লিখেছি সবই রাতে ।

চিরসঙ্গী

আমি তোমার চির সাথী-
আনন্দে সুখী,বেদনায় সমব্যথী!
আমি তোমার-আধাঁর ভরা রাতি-
দূর করিব জ্বালিয়ে সুখের বাতি!

আমি রব তোমার আশেপাশে-
সন্তর্পনে,নিরবে আসব কাছে।
থাকব তোমার আঁখিরো সামনে,
বইয়ের পাতাগুলোর মাঝখানে !
ধন্য হব আমি, তোমারই ছোয়ায়-
ভাসব সুখের ধারায় !

বাদলের দিনে,বরিষণেরো ক্ষণ-
সেদিন যদি কভু রুদ্ধ বাতায়ন,
মনের সুখে দাও খুলে-
হাত দুখানি ভেজাতে জলে!
তখনও পাবে মোরে,
আপনার বাহুডোরে।
আসব জলধারার মত ঝরঝর হয়ে-
যাব তোমার ছোয়া নিয়ে!

যদি আপন বসন্তের দিনে-
চাও ভেসে যেতে নবীন সমীরণে,
সে ক্ষণেও পাবে মোরে।
দেখবে,সেইদিনের তরে-
আসব বসন্ত বাতাস হয়ে,
যাব তোমায় ছুয়ে!
সেদিন হাসি আর মধুর গানে-
স্বপ্নীল সুর লয় তানে,
ভরে ওঠে যদি আনন্দে তব বসন্ত দিন!
তবে এই আমার প্রাণে-
প্রতি ক্ষণে-অণুক্ষণে,
উঠবে বেজে চেনা সুরে,আশারো বীণ্।

যখন হাটবে উজ্জ্বলতা ভরা মুখে-
স্বপ্ন জড়ানো দৃপ্ত চোখে,
শত ব্যস্ততায়,নিজের কর্মস্থানে-
আমিও রইব সেখানে।
উজ্জ্বল এক ছায়ারুপে,
তোমারি পাশে পাশে- চির সঙ্গী রুপে!

দিনের শেষে-যখন মিলবে অবসর।
ক্লান্তি নামবে চোখের পর-
আসবে ঘুমের ঘোর,
আসব তখনও আমি-স্বপ্ন হয়ে-
তোমার চিন্তায় রব ছেয়ে!
এভাবেই দেখবে আমি-রব
চিরকাল তব পাশে !
শেষের দিনের আগে,তোমার পাশে পাশে!

তারিখ : ১২-০৯-০৬ ইং দুপুর ২.০০ টা।

সবাইক ধন্যবাদ ধৈর্য্য নিয়ে পোস্ট টা পড়বার জন্যে । আশা করি ভাল লাগল । আগামীতে আবার কোন একদিন হয়ত চলবে বরষায় ভিজে ভিজে স্মৃতির ভেলায় ভাসা...................
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই আগস্ট, ২০১১ রাত ১২:৪২
২৪টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×