somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হাহাকার

৩০ শে মার্চ, ২০১১ রাত ১১:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেক বছর পর আকাশ আর রাসেলের দেখা হয়।

কতদিন পর দেখা। সেই কবে ৪/৫ টা বছর একসাথে কাটিয়েছিলো এখানে, এতদিন পর মনে পড়ে সেইসব কথা। ভিতরটা হাহাকার করে উঠে দুজনের। আহা! কি অসাধারন ছিল একেকটা দিন। পাশ করার পর কে যে কোথায় চলে গেল।
রাসেল লেকচারার হিসেবে জয়েন করলো বুয়েটে।
সায়েম,মাসুম আর তানিমরা GRE দিয়ে চলে গেল আমেরিকায়, কত বড় বড় ভার্সিটিতে ভর্তি হল তারা।
আশিক আর শফি জয়েন করলো ইউনিলিভার এ, বিশাল স্যালারী, বাড়ি গাড়ি হতেও বেশিদিন সময় লাগলো না।
আকাশের কথা অবশ্য আলাদা। একটা চাকরির জন্য ততদিনে অনেক জায়গায় ইন্টারভিউ দেয়া হয়ে গেছে। তবুও মিলল না একটা চাকরি।
"কোথায় আছিস এখন?"- রাসেল জিজ্ঞেস করে।
আকাশকে একটু বিব্রত দেখায়।রাসেলের রুমটা দেখতে থাকে সে। ইএমই বিল্ডিং এর দোতালার এই রুমটা বেশ সুন্দর করে সাজানো। চারপাশে মিষ্টি একটা গন্ধ ছড়ানো। ভালোই লাগে তার।
রাসেল আবার একই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে।
আকাশ উত্তর দেয়, "অগ্রনী ব্যাংক এ আছি"।
রাসেলের বিশ্বাস হয় না। এত অসাধারন একটা ছেলে, কত জটিল জটিল বিষয় নিয়ে ভাবত, কত কঠিন কঠিন সমস্যার সহজ সমাধান দিয়ে দিত, সে কিনা ইন্জিনিয়ারিং পাশ করে এখন একটা ব্যাংকে কাজ করছে!!
রাসেল চা দিতে বলে।
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হতে চলেছে। লাল টকটকে সূর্যটা মায়াবী একটা পরিবেশ তৈরী করেছে চারদিকে।
দুজনেই চুপচাপ বসে ভাবতে থাকে। বিকেলগুলোর কথা মনে পড়ে যায় তাদের। সীমান্ত,বাবলু আর ইশতিয়াকদের প্রাণোচ্ছল মুখগুলো ভেসে উঠে মুহূর্তের মধ্যে। শহীদ মিনার আর ক্যাফেটেরিয়ায় কত বিকেল একসাথে কাটিয়েছে, কত বিষয় নিয়ে তর্ক করেছে নিজেদের মধ্যে, কত জায়গা চষে বেড়িয়েছে একসাথে!!
আজ এতগুলো বছর পর মনে হচ্ছে , সার্থক ছিল একেকটা দিন, একেকটা বিকেল আর প্রতিটা মুহূর্ত।
মান্নান ভাই চা দিয়ে গেলেন রুমে।
"বিয়ে শাদী কিছু করেছিস?"- রাসেল জানতে চায়।
আকাশ কথা বলে না।
রাসেল সবকিছুই জানে। তবও কেন জানি জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হয়। অনামিকাকে প্রচণ্ড ভালোবাসতো আকাশ। অনামিকাও পছন্দ করত তাকে। কিন্তু তখন তার যে অবস্থা,চাকরি বাকরি নেই। অনামিকার বাবা এই ভেগাবন্ড টা কে পাত্র হিসেবে পছন্দ করলেন না। বিলেতফেরত আরেক ইন্জিনিয়ার সাহেবের সাথে চলে গেল অনামিকা। অভিমানী আকাশ আর কোনদিন বিয়েই করলো না!!
চা-টা শেষ করে জানালার কাছে যায় আকাশ। সূর্য ডুবে গেছে। দলে দলে ঘরে ফিরছে পাখিরা। তাদের কিচিরমিচির এ মুগ্ধ হয় সে। দূরের machine shop ল্যাবটার দিকে চোখ পড়ে তার। স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ে আবার। sessional ক্লাসগুলোর কথা মনে হয়। বিরক্তিকর sessional গুলো না থাকলে বুয়েট লাইফটা হয়তো এত আকর্ষনীয় হতো না।
রাসেল সিগারেট ধরায়।
বুধবারের রাতগুলোর কথা মনে পড়ে তাদের। কত প্রতীক্ষা ছিল এই রাতটার জন্য! কত প্রস্তুতি! পুরো সপ্তাহ ধরে lan থেকে মুভি নামানো, স্টার এ খেতে যাবার সিডিউল ঠিক করা,কিংবা ছাদের উপর candle light party কিভাবে arrange করা হবে, এ নিয়ে চলত বিরাট আয়োজন। দুপুরের বিরক্তিকর sessional ক্লাসগুলো করার সময় একটা জিনিসই inspiration ছিল- at the weekend বুধবার রাত আসবেই!!
বুধবার রাত আসতো। স্বপ্নের মতো একেকটা রাত। এখনো আসে। কিন্তু সেই সুর আর নেই।
"উঠিরে আজ"- আকাশ চলে যাবার জন্য তাড়াহুড়ো করতে থাকে।
রাসেলের বুকের ভেতরটা হাহাকার করে উঠে। কেন জানি তার মনে হয়,আকাশের সাথে আর হয়ত দেখা হবে না!!
আকাশ বেরিয়ে পড়ে। ইএমই বিল্ডিং এর সামনের রাস্তাটা দিয়ে হাটতে থাকে। চোখদুটো জলে ভিজে উঠে তার।
আগের জীবনে ফিরে যেতে ভীষন ইচ্ছে করে।
কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন জিনিস।
বাস্তবের আকাশ পলাশীর রাস্তাটা দিয়ে সোজা সামনের দিকে চলে যায়।











সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মে, ২০১১ সকাল ৯:৫৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×