somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

''ধর্ষকের প্রতি কোনো কোনো ভিকটিমের মাঝে মধ্যে আকর্ষণ লক্ষ্য করা যায়'' (কপি-পেষ্ট পোস্ট)

৩০ শে মার্চ, ২০১১ বিকাল ৪:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

'নিজ দেশে খেললে দর্শকরা তাদের দলকে সমর্থন দেবেন এটাই স্বাভাবিক। আশ্চর্য হলেও সত্যি যে, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আমাদের খেলা হলেও গ্যালারি থেকে আমাদের পতাকা উড়িয়ে উৎসাহ দেওয়া হয়।' এ বক্তব্য পাকিস্তানি ক্রিকেটার আব্দুর রাজ্জাকের। 'বাংলাদেশ প্রতিদিন'-এ ২৩ মার্চে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছেন, বাংলাদেশিরা খেলার মাঠে নিজ দেশের বিরুদ্ধেও পাকিস্তানিদের সমর্থন দেন। এটা কি বিশ্বাসযোগ্য_ এটাও কি সম্ভব? বিচিত্র এই দেশে সবকিছুই হয়তো সম্ভব। আমরা দাবি করি আমাদের হাজার বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য, আমরা বলি এক সাগর রক্তের বিনিময়ে আমরা এদেশের স্বাধীনতা এনেছি। এ রক্ত কে নিয়েছিল, কে ৩০ লক্ষ লোককে হত্যা করেছিল এবং দুই লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমহানি করেছিল? উত্তর হচ্ছে_ পাকিস্তান। তবে কি নিজ দেশের বিরুদ্ধে ক্রিকেটযুদ্ধে পাকিস্তানিদের আমরা তাদের পতাকা দেখিয়ে উৎসাহিত করি?
রাজ্জকের পরের বক্তব্য_ 'আন্তর্জাতিক ম্যাচ ছাড়া লোকাল ক্রিকেটে আমি ঢাকার আবাহনীর পক্ষে খেলেছি। সেখানেও একই অবস্থা। গত বছর মোহামেডানের কাছে হেরে আবাহনী চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। তারপরও আমার প্রতি দলীয় সমর্থকদের ভালোবাসা দেখে অভিভূত হয়ে গিয়েছিলাম। এ দেশের লোক অন্য ক্ষেত্রে না হোক, ক্রিকেটে তারা যে পাকভক্ত তার প্রমাণ আমি বারবার পেয়েছি।' অনেকে বলবেন, ব্যাপারটা নিছক ক্রীড়াবিষয়ক! ক্রিকেটের মধ্যে রাজনীতি আসার কথা নয়। এ ক্ষেত্রে পাক-ভারত বা দেশ-বিদেশের প্রশ্ন অবান্তর। খেলাকে বিনোদনের অংশ হিসেবেই দেখতে হবে।
ব্যাপারটা কি আসলেই তাই? আমাদের কিছু ছেলে-মেয়ের শুধু পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের প্রতি এত উৎসাহ বা দুর্বলতা কেন? অন্য কোনো দেশের ক্রিকেট টিম বা ব্যক্তিগত কোনো খেলোয়াড়ের প্রতি এত বেশি আগ্রহ নেই যতটা রয়েছে পাকিস্তানিদের প্রতি। যদি ক্রিকেটই মুখ্য বিষয় হয় তাহলে বিশ্বের অন্যান্য সেরা টিম_ অস্ট্রেলিয়া, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতি এত অনাগ্রহ কেন? ২৪ মার্চ, বাংলাদেশ প্রতিদিন 'দেশপ্রেম না পাকপ্রেম' নামে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদক লিখেছেন- 'মহান স্বাধীনতার মাসে কেউ যদি ঢাকায় বসে পাকিস্তানি পতাকায় চুমু খান বা স্যালুট দেন তখন প্রশ্ন জাগে এরা কি পাগল না পাকপাগল? দেশের শীর্ষস্থানীয় এক ক্লাব কর্মকর্তা গতকাল পাকিস্তানি পতাকা নিয়ে শিশুর মতো নাচানাচি করলেন।' উপরের কর্মকাণ্ডগুলো রাষ্ট্রদ্রোহিতার পর্যায়ে পড়ে কিনা পাঠক বিবেচনা করতে পারেন। মনোবিজ্ঞানীরা এ বিষয়ে কি বলবেন জানি না। কেউ কেউ বলেন, কোনো কোনো দেশে কিছু লোকের মধ্যে দাসত্বসুলভ মনোভাব কাজ করে। পুরনো মণিবের প্রতি একটা সম্মান ও সমীহ থাকার কারণে Inferiority Complex এ ভোগে। ২৩ বছর আমরা পাকিস্তানের কলোনি ছিলাম, ছিলাম তাদের অধীনস্থ প্রজা। আমরা অনেকেই তাদের সেবা করে কৃতার্থ হয়েছি, ধন্য হয়েছি ভাঙ্গা উর্দু কথা বলে। কালো রংয়ের অনেক খর্বাকৃতি বাঙালি দীর্ঘদেহী গৌরবর্ণ পাঞ্জাবিদের গা ঘেঁষতে পেরে পুলকিত হয়েছেন।
জনপ্রিয় লেখক আনিসুল হক সম্প্রতি একটি লেখায় বলেছেন_ আওয়ামী লীগ জয়লাভ করলে তারাই শুধু জেতে, জয়ের ফল ভোগ করে। আওয়ামী লীগ হেরে গেলে সারা জাতি হেরে যায়, সবাই এ পরাজয়ের দুর্ভোগ পোহায়। একইভাবে ক্রিকেটের 'টিম বাংলাদেশ' জিতলে সারাদেশই জিতে, এ জয়ের গৌরববোধ করে আনন্দ উল্লাস করে। ক্রিকেট টিমটি যখন হেরে যায় সেদিন শুধু সাকিব আর তার ১১ জন টিম সদস্যই হারে, দেশ তার দায়দায়িত্ব নিতে চায় না। কিন্তু রাজ্জাকের দল আবাহনী হেরে গেলেও দলীয় বাঙালি সমর্থকদের ভালোবাসা এই পাকিস্তানিকে অভিভূত করেছে। হেরে যাওয়ার পর সাকিবকে আমাদের দেশের তথাকথিত ক্রিকেটপ্রেমীরা এই ভালোবাসা কি দেখিয়েছেন?
ব্রিটিশরা ভারতে দুইশ' বছর রাজত্ব করেছে। এর মধ্যে দুইশ' জন ভারতীয় নারীকে ধর্ষণ করেছে বলে জানা যায় না। দু'একটি অঘটনের ব্যাপারে যখন খবর রটেছে, সেগুলো নিয়ে প্রকাশ্য তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশে পাকিস্তানিরা মাত্র ৯ মাসের মধ্যেই দুই লাখ নারীর সম্ভ্রমহানির ঘটনা ঘটিয়েছে। এরপরেও এ দেশের দুই একজন মেয়ে কিভাবে ধর্ষণকারী পাকিস্তানি গোষ্ঠীর কোনো পুরুষকে কামনা করতে পারে? আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, কয়েক বছর আগে ঢাকা স্টেডিয়ামে গ্যালারিতে একটি মেয়ে প্লাকার্ড নিয়ে বসে আছে, তাতে লেখা 'Afridi, please marry me.' সম্প্রতি 'বাংলাদেশ প্রতিদিন'-এর খবরে প্রকাশ_ এক বাঙালি সুন্দরী আফ্রিদির সঙ্গ পাওয়ার জন্য এখনো হন্যে হয়ে ঘুরছে। হীনমন্যতা, নির্লজ্জতা, দেশপ্রেমের অভাবের অনেক দৃষ্টান্ত আমরা ক্রিকেট খেলার কারণে দেখতে পাচ্ছি।
পাশ্চাত্যের একটি টিভি টক শো দেখছিলাম; একজন মনোবিজ্ঞানী আলোচনা করছেন দর্শকদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে। এক প্রশ্নের উত্তরে অতিথি বক্তা জানালেন, ধর্ষকের প্রতি কোনো কোনো ভিকটিমের মাঝে মধ্যে আকর্ষণ লক্ষ করা যায়। খুন ও ধর্ষণের অপরাধে অভিযুক্ত পাকিস্তানিদের প্রতি কোনো বাঙালির কি এ ধরনের আগ্রহ বা আকর্ষণ রয়েছে? এই বিকৃতির ব্যাখ্যা কি আমাদের জানা নেই। অনেক ভারতীয়র মধ্যেও এ প্রবণতা লক্ষ করা যায়। পুরনো মনিব শ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশদের দেখলে ভারতীয়রা যেভাবে মাতামাতি করে সেটিও খুবই দৃষ্টিকটু।


(ঈষৎ সংক্ষেপিত)
আজকের বাংলাদেশ-প্রতিদিন এর সম্পাদকীয় পাতা থেকে-
মূল লিখাটির লেখক : সৈয়দ রেজাউল হায়াত। সাবেক সচিব
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মার্চ, ২০১১ বিকাল ৫:৫২
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আমার ড্রোন ছবি।

লিখেছেন হাশেম, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩

বৃহত্তর প্যারিস তুষারপাত।

ফ্রান্সের তুলুজ শহরে বাংলাদেশের প্রথম স্থায়ী শহীদ মিনার।

হ্যাসল্ট, বেলজিয়াম।

ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী ফ্রান্সের ফ্রিওল আইল্যান্ড।


রোডেসিয়াম এম রেইন, জার্মানি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতার সুফল কতটুকু পাচ্ছে সাধারণ মানুষ

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৮

(১) আমলা /সরকারের কর্মকর্তা, কর্মচারীর সন্তানদের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব হতাশাজনক। মুক্তিযুদ্ধের ১৯৭১ সালের রক্ত দেওয়া দেশের এমন কিছু কখনো আশা কি করছে? বঙ্গবন্ধু এমন কিছু কি আশা... ...বাকিটুকু পড়ুন

এলজিবিটি নিয়ে আমার অবস্থান কী!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১০ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৫

অনেকেই আমাকে ট্রান্স জেন্ডার ইস্যু নিয়ে কথা বলতে অনুরোধ করেছেন। এ বিষয়ে একজন সাধারণ মানুষের ভূমিকা কী হওয়া উচিত- সে বিষয়ে মতামত চেয়েছেন। কারণ আমি মধ্যপন্থার মতামত দিয়ে থাকি। এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×