somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তারুণ্য ও ত্যাগের প্রতীক রুমী

২৯ শে মার্চ, ২০১১ বিকাল ৩:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ শহীদ শাফী ইমাম রুমীর ৬০তম জন্মদিন। ৬০তম জন্মদিনে তাকে গভীর শ্রদ্ধা ও ভালবাসা জানাই। রুমীকে নিয়ে আমার একটি লেখা আজ দৈনিক জনকন্ঠে প্রকাশিত হয়েছে। সেটাই সামুর ব্লগারদের জন্য শেয়ার করছি।

তারুণ্য ও ত্যাগের প্রতীক রুমী
মোঃ আবু ইউছুফ

২৯ মার্চ, ১৯৫১_জাহানারা ইমামের কোল আলো করে পৃথিবীর বুকে পদার্পণ করল রুমী। ছেলেকে ঘিরে দু'চোখ ভরা স্বপ্ন বাবা শরীফ ইমাম এবং মা জাহানারা ইমামের। কঠোর অনুশাসন এবং নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে গড়ে উঠলেও বাবা-মার সঙ্গে রম্নমীর সম্পর্ক ছিল বন্ধুত্বসুলভ। তাদের যোগ্য পরিচালনায় রম্নমী হয়ে ওঠে স্পষ্টভাষী, সাহসী এবং দৃঢ়চিত্তের অধিকারী। এক কথায় তারুণ্যের প্রতীক।
স্বাধীনতা পরবর্তীতে শহীদ পুত্রকে কেন্দ্র করে জাহানারা ইমাম রচনা করেন আমাদের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের অসামান্য দলিল 'একাত্তরের দিনগুলি'। একাত্তরের দিনগুলিতে বর্ণিত রুমীর কিছু উক্তির মধ্য দিয়ে ফুটে উঠেছে তার চারিত্রিক দৃঢ়তা, সহনশীলতা, দেশপ্রেম, আত্মত্যাগের চিত্র।
ছোটবেলা থেকেই বই পড়ার অভ্যাস গড়ে ওঠায় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ও আন্দোলনের ইতিহাস রুমী পড়ত। ফলশ্রম্নতিতে দেশের পরিস্থিতি কোনদিকে মোড় নিচ্ছে এবং তার প্রেক্ষিতে আমাদের করণীয় সম্পর্কে মেধাবী রম্নমী সঠিকভাবেই অনুধাবন করতে পেরেছিল_ তারই প্রেক্ষিতে সে মনত্মব্য করে,
"বুঝলে আম্মা, ব্যাপারটা আমার কাছে খুব সুবিধের ঠেকছে না। বন্ধুত্বপূর্ণ আলোচনা করতে এসে এত সেনাপতি, সামন্ত সঙ্গে নিয়ে আসার মানেটা কি ?"(১৭ মার্চ, ১৯৭১)
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পর রম্নমী ১৯৭০ সালে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। ১৯৭১ সালে রম্নমী আমেরিকার ইলিনয় ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে ভর্তির সুযোগ লাভ করে। সেপ্টেম্বর মাস হতে ক্লাস শুরম্ন হওয়ার কথা ছিল। মুক্তিযুদ্ধ শুরম্ন হয়ে গেলে রুমী নিশ্চিত এবং উজ্জ্বল জীবনের হাতছানিকে উপেক্ষা করে মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং যুদ্ধে যাওয়ার অনুমতি প্রদানের জন্য মাকে বলে,
"আম্মা, দেশের এই রকম অবস্থায় তুমি যদি আমাকে জোর করে আমেরিকায় পাঠিয়ে দাও, আমি হয়তো যাব শেষ পর্যন্ত। কিন্তু তাহলে আমার বিবেক চিরকালের মতো অপরাধী করে রাখবে আমাকে। আমেরিকা থেকে হয়ত বড় ডিগ্রী নিয়ে এসে বড় ইঞ্জিনিয়ার হব; কিন্তু বিবেকের ভ্রুকুটির সামনে কোনদিনও মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারব না। তুমি কি তাই চাও আম্মা?" (২১ এপ্রিল, ১৯৭১)।
বাবা মায়ের সম্মতিক্রমে রম্নমী ১৪ জুন প্রশিক্ষণের জন্য মেলাঘরের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করে এবং প্রশিক্ষণ শেষে ৮ আগস্ট অন্য গেরিলাযোদ্ধাদের সঙ্গে ঢাকায় প্রবেশ করে এবং গেরিলাযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। ২৯ আগস্ট পাকিসত্মান সেনাবাহিনী রুমীর বাসভবন হতে আনুমানিক রাত ১২টার দিকে রম্নমী এবং তার পিতা ও ছোট ভাইসহ বন্ধু এবং চাচাত ভাইকে ধরে নিয়ে যায়। কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে রম্নমী তার পরিবারের অন্য সদস্যদের কোন কিছু স্বীকার করতে নিষেধ করে এবং সমসত্ম দায়ভার নিজের ওপর নিয়ে নেয়। পিতাকে উদ্দেশ করে রম্নমী বলে, "আব্বু, এরা আমাকে ধরবার আগেই জেনে গেছে ২৫ তারিখে আমরা ১৮ আর ৫ নম্বর রোডে কি এ্যাকশন করেছি, কে কে গাড়িতে ছিলাম, কে কখন কোথায় গুলি চালিয়েছি, কতজন মেরেছি, সব, স-ব আগে থেকেই জেনে গেছে। সুতরাং আমার স্বীকার করা না করার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। কিন্তু তোমরা চারজনে কিছুতেই কিছু স্বীকার করবে না। তোমরা কিচ্ছু জান না, এই কথাটাই সব সময় বলবে।"(১ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১)।
এরই প্রেক্ষাপটে পরবতর্ীতে জাহানারা ইমাম স্মৃতিচারণমূলক রচনায় লিখেছেন,
"৭১-এর আগস্টে ধরা পড়ে রুমী পাক বাহিনীর কাছে তার রিপোর্টে লিখেছিল ২৫শে আগস্টের রাত্রে যা সে করেছে, তার সম্পূর্ণর্ দায়িত্ব তারই। কিছুতেই সে অন্য ছেলেদের নাম লেখেনি। এই কথা আমি শুনেছি আগা ইউসুফের কাছে। জেনারেল নিয়াজী আগা ইউসুফের বন্ধু ছিল। আগা রম্নমীর কথা জিজ্ঞেস করেছিল নিয়াজীকে। নিয়াজী তাকে এই কথা বলেছিল। রুমীর guts এর প্রশংসা করে বলেছিল_এমন ছেলে, নিজের ঘাড়ে সব দোষ নিয়েছে, অন্যদের incriminate করেনি।
রুমী! রুমী! বাসা থেকে ধরে নিয়ে যাবার পর তোদের সবাইকে M.P.A হোস্টেলের ছোট্ট রান্নাঘরে একত্রে রেখেছিল ঘণ্টাখানেক। তখনই তুই তোর আব্বু আর জামী, মাসুমদের বলেছিলি_তোমরা সব চেপে যাবে। কিচ্ছু জানো না তোমরা। তোমরা তিনজনই তোমাদের রিপোর্টে একই কথা লিখবে, তোমরা কিছু জানো না। আমি মুক্তিযোদ্ধা রুমী কি করি না করি, তোমরা কিছু জানো না।
রম্নমী, তুইতো কোনদিন পধফবঃ ছিলি না। তবে তুই কোথা থেকে শিখেছিলি এসব ?"
রুমীর জন্মদিনে বাবা-মায়ের আশীর্বাণী ছিল_ "বজ্রের মতো হও, দীপ্ত শক্তিতে জেগে ওঠ, দেশের অপমান দূর কর। দেশবাসীকে তার যোগ্য সম্মানের আসনে বসানোর দুরূহ ব্রতে জীবন উৎসর্গ কর।"
সেক্টর কমান্ডারের মনত্মব্য সম্পর্কে মাকে বলেছিল রম্নমী, "আমাদের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল খালেদ মোশাররফ কি বলেন, জান? তিনি বলেন, 'কোন স্বাধীন দেশ জীবিত গেরিলা চায় না; চায় রক্তাক্ত শহীদ'। অতএব মা মণি, আমরা সবাই শহীদ হয়ে যাব_এই কথা ভেবে মনকে তৈরি করেই এসেছি।" (২১ আগস্ট, ১৯৭১)
বাবা-মা এবং সেক্টর কমান্ডারের কথা নিজের জীবন বিসর্জন দিয়ে পালন করে গিয়েছিল রুমী।
রুমী যেন এক জ্বলন্ত নক্ষত্র। আজ বাংলাদেশের জন্য রম্নমী, বদি, জুয়েল, আজাদের মতো তরম্নণদের ভীষণ প্রয়োজন। প্রয়োজন নেই জীবন বিসর্জনের, কিন্তু প্রয়োজন রয়েছে একই মানসিকতায় দেশকে ভালবাসা আর তাহলেই গড়ে তোলা সম্ভব হবে লাখো শহীদের স্বপ্নের বাংলাদেশকে।

অরিজিনাল লেখা
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

#প্রিয়তম কী লিখি তোমায়

লিখেছেন নীল মনি, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৭:৫১


আমাদের শহর ছিল।
সে শহর ঘিরে গড়ে উঠেছিল অলৌকিক সংসার।
তুমি রোজ তাঁকে যে গল্প শোনাতে সেখানে ভিড় জমাতো বেলা বোস, বনলতা কিংবা রোদ্দুর নামের সেই মেয়েটি!
সে কেবল অভিমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভুল শুধু ভুল নয়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৬

এক
লেখাটা একটি কৌতুক দিয়ে শুরু করি। ১৯৯৫ সালের ৩০ নভেম্বর থেকে শফিপুর আনসার একাডেমিতে বিদ্রোহ হয়। ৪ ডিসেম্বর পুলিশ একাডেমিতে অভিযান চালায়। এতে চারজন আনসার সদস্য নিহত হয়েছিল। এটি ছিল... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। VF 3 Mini: মাত্র 60 মিনিটে 27 হাজার বুকিং!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২১ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:০৪



আমার ব্যাক্তিগত গাড়ি নেই কিন্তু কর্মসূত্রে বেঞ্জ , ক্যাডিলাক ইত্যাদি ব্যাবহার করার সুযোগ পেয়েছি । তাতেই আমার সুখ । আজ এই গাড়িটির ছবি দেখেই ভাল লাগলো তাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ময়লাপোতার কমলালেবুর কেচ্ছা!! (রম্য)

লিখেছেন শেরজা তপন, ২১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৩


বাংলাদেশের বিশেষ এক বিভাগীয় শহরে ময়লাপোতা, গোবরচাকা, লবনচোরা, মাথাভাঙ্গা, সোনাডাঙ্গার মত চমৎকার সব নামের এলাকায় দারুণ সব সম্ভ্রান্ত পরিবারের বাস।
আমার এক বন্ধুর আদিনিবাস এমনই এক সম্ভ্রান্ত এলাকায় যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাময়িক পোস্ট: বন্ধ হয়ে গেল সচলায়তন

লিখেছেন করুণাধারা, ২১ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


বন্ধ হয়ে গেল সচলায়তন! view this link

সামহোয়্যারইনব্লগ থেকে কয়েকজন ব্লগার আলাদা হয়ে শুরু করেছিলেন সচলায়তন বা সংক্ষেপে সচল ব্লগ। এটি বন্ধ হবার মূল কারণ উল্লেখ করা হয়েছে দুটি:

১)... ...বাকিটুকু পড়ুন

×