somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অশান্ত হয়ে উঠছে পার্বত্য চট্টগ্রাম

২৮ শে মার্চ, ২০১১ রাত ১১:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সশস্ত্র সংঘাতে পার্বত্য চট্টগ্রাম এখন উত্তপ্ত। প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো সংঘাত ঘটছে। রাজনৈতিক দলের বাইরে বেশ কয়েকটি সশস্ত্র গোষ্ঠীও এসব সংঘাতে যুক্ত হয়ে পড়েছে।
এ পরিস্থিতির পাশাপাশি ভূমি-বিরোধ নিষ্পত্তিসহ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে আছে। ভূমি কমিশন আইনের মাত্র দু-তিনটি ধারা সংশোধনের জন্য শুধু প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাগুলোতেও এসব বিষয় আলোচিত হয় না। অথচ ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সম্পাদিত পার্বত্য চুক্তির মূল উদ্দেশ্যই ছিল ওই অঞ্চলের সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান।
পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলোর সূত্র ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, এসব নিয়ে ওই অঞ্চলের সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে তীব্র হতাশা-অসন্তোষ এখন প্রত্যন্ত অঞ্চলের ঘরে ঘরে পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। এই অসন্তোষে নতুন অনুষঙ্গ হিসেবে যুক্ত হয়েছে আদিবাসী জনগণকে ‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী’ হিসেবে সংবিধানে পরিচিতি দেওয়ার বিষয়ে একটি মন্তব্য।
বর্তমানের এই জটিল ও সংঘাতময় পার্বত্য পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, সংঘাতগুলো ঘটে সাধারণত প্রত্যন্ত এলাকায় এবং হঠাৎ করে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষে এগুলো প্রতিরোধ করা কঠিন। চুক্তির বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আপাতত এ সম্পর্কিত কার্যক্রম বন্ধ আছে। জনসংহতি সমিতি ও সংশ্লিষ্ট অন্যরা সরকারকে আস্থায় নিয়ে সহযোগিতা না করলে এ ক্ষেত্রে অগ্রগতি শ্লথ হতে বাধ্য। সরকার মনে করে কিছু কাজ এখনই করা সম্ভব। কিন্তু জনসংহতি সমিতি ভূমি কমিশন আইন সংশোধন ও ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির আগে অন্য কোনো কাজ করতে দিতে চায় না।
৭০০ হত্যাকাণ্ড: সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলগুলো ও সুশীলসমাজের বিভিন্ন সূত্রের হিসাব অনুযায়ী, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরের পর এখন পর্যন্ত ওই অঞ্চলে সাত শতাধিক রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড হয়েছে। জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সূত্র জানায়, শান্তিবাহিনীর সদস্য ছিলেন—এমন ৭০ জনসহ তাঁদের দুই শতাধিক সদস্য এখন পর্যন্ত খুন হয়েছেন। এসব খুনের জন্য তারা প্রধানত দায়ী করে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টকে (ইউপিডিএফ)।
অপরদিকে ইউপিডিএফের সূত্রগুলোর দাবি, এখন পর্যন্ত তাদের নেতা-কর্মী-সমর্থক মিলে প্রায় ৫০০ জন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। তারা এসব ঘটনার জন্য দায়ী করে জনসংহতি সমিতিকে।
তবে অন্যান্য নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, এর মধ্যে কিছুসংখ্যক হত্যাকাণ্ড ঘটেছে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার বাইরে। চাঁদাবাজিসহ কিছু সমাজবিরোধী কাজে অতিষ্ঠ হয়ে অন্য কোনো সশস্ত্র গোষ্ঠীও হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে। এভাবে পার্বত্যাঞ্চলে এখন একাধিক সশস্ত্র গোষ্ঠী তৎপর রয়েছে। অতি সম্প্রতি ‘বোরখা বাহিনী’ নামে এ রকম একটি নতুন সশস্ত্র গোষ্ঠীর তৎপরতা শুরু হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
দেড় হাজার অপহরণ: হত্যাকাণ্ডের পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রামে ঘটছে অপহরণের ঘটনাও। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরের পর এখন পর্যন্ত এ ধরনের প্রায় দেড় হাজার অপহরণের ঘটনা ঘটেছে বলে সূত্রগুলো জানিয়েছে।
জেএসএস সূত্র জানায়, এ পর্যন্ত তাদের প্রায় ৩০০ নেতা-কর্মী ও সদস্য প্রতিপক্ষের হাতে অপহূত হয়েছে। এদের মধ্যে কয়েকজনকে আর ফিরে পাওয়া যায়নি। ইউপিডিএফের দাবি, তাদের দলের অপহূত নেতা-কর্মীর সংখ্যা এক হাজারের বেশি। তাদের মধ্যেও কয়েকজনকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়।
সশস্ত্র সংঘাত ও অপহরণ বন্ধে জেএসএস ও ইউপিডিএফের মধ্যে একাধিকবার আলোচনা-সমঝোতা হয়েছে। কিন্তু একবারও তা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। ফলে হত্যা ও অপহরণের ঘটনা ঘটেই চলেছে।
এ পরিস্থিতিতে জেএসএস কী করছে জানতে চাইলে, দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শক্তিপদ ত্রিপুরা প্রথম আলোকে বলেন, সংগ্রাম করেই এ পরিস্থিতি বদলাতে হবে। জেএসএসের সেই সংগ্রামী কর্মসূচি চলছে।
সংস্কারপন্থী জেএসএসের আহ্বায়ক রূপায়ন দেওয়ান বলেন, সরকারের ভেতরে চুক্তিবিরোধী একটি প্রভাবশালী অংশ সক্রিয় আছে। তারা সব সময়ই চুক্তির বাস্তবায়ন বিঘ্নিত করেছে। এখনো সে চেষ্টা করছে। সরকার যদি এ ব্যাপারে সচেতন না হয় এবং সরকারের বর্তমান মেয়াদেও যদি পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়িত না হয়, তাহলে পার্বত্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক না-ও থাকতে পারে।
অসন্তোষের নতুন অনুষঙ্গ: সংবিধান সংশোধনের জন্য গঠিত বিশেষ কমিটির কো-চেয়ারম্যান ও আইন মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের একটি মন্তব্য পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারা দেশের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মধ্যে নতুন করে হতাশা ও অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে। তিনি সংবিধানে আদিবাসীদের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী হিসেবে উল্লেখ করার কথা বলার পর আদিবাসীরা এর প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধন পর্যন্ত করেছে।
কয়েকজন আদিবাসী নেতা প্রথম আলোকে বলেন, এখন তাঁদের মনে হচ্ছে, কথা যতই হোক তাঁদের সমস্যা মিটবে না। আর্থ-সামাজিক সমস্যার পাশাপাশি তাঁদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির সমস্যা থেকেই যাবে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ান প্রথম আলোকে বলেন, আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষ এ বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। কারণ, তারা আশা করেছিল, এবার তাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির বিষয়টি নিষ্পত্তি হবে। পার্বত্য পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, সেখানকার বিদ্যমান পরিস্থিতি যথেষ্ট খারাপ। সমগ্র অঞ্চলের প্রতিটি ঘরে ও পরিবারে এখন উদ্বেগ। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সরকারের সক্রিয় হওয়া উচিত।
সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা: এ বছরের ১৯ জানুয়ারি জেএসএস ও ইউপিডিএফের মধ্যে সংঘাতে বড়কলে একজন, ২১ জানুয়ারি জুড়াছড়িতে পাঁচজন ও কাপ্তাইয়ে একজন এবং ১২ ফেব্রুয়ারি লংগদুতে একজন নিহত হন। ২০১০ সালের ৯ জুন দীঘিনালা সড়ক ও জনপথ কার্যালয়ের মাঠে প্রতিপক্ষের হাতে খুন হন জনমিত্র চাকমা (২৫)। ওই বছর ২৬ জুন চিত্রসেন কার্বারিপাড়ায় খুন হন সুশীল ত্রিপুরা ও বারিজা চাকমা।
২০০৯ সালের ২৩ অক্টোবর খাগড়াছড়ির সারোয়াতলী ইউনিয়নের শিজক বাজারে প্রতিপক্ষের হাতে খুন হন টিপু চাকমা। ওই বছর ১১ ডিসেম্বর মনের মানুষ এলাকায় গুলি করে হত্যা করা হয় জীতেন চাকমাকে। ২৭ ডিসেম্বর বড়দাম এলাকায় কুপিয়ে হত্যা করা হয় প্রদীপ চাকমাকে।
এর আগে, ২০০৮ সালের ১৯ আগস্ট বৈরফা গ্রাম থেকে অপহূত হন ললিত মোহন চাকমা। ওই বছরের ৪ সেপ্টেম্বর একই গ্রাম থেকে অপহরণ করা হয় জগদীশ চাকমা রণতূর্য ও লক্ষ্মীচন্দ্র চাকমাকে।
২০০৭ সালের ১৬ জানুয়ারি মিলন চাকমা রিংকু, ৩০ জানুয়ারি শিশিমণি চাকমা ও ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রীতি কুমার চাকমা প্রতিপক্ষের হাতে খুন হন।
এ ছাড়া গত দু-তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় সংঘাতের ঘটনা ঘটে গত বছর ১৯-২০ ফেব্রুয়ারি, খাগড়াছড়ির বাঘাইহাটে। রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারের তৎপরতা নিয়ে ওই ঘটনার সূত্রপাত। পরে তা পাহাড়ি-বাঙালি ভয়াবহ দাঙ্গায় রূপ নেয়। সেখানে দুজন নিহত হন। প্রায় ৫০০ ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
এর পরপরই ২২-২৩ ফেব্রুয়ারি খাগড়াছড়ি শহরে এবং এ বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি লংগদুতে একই ধরনের সংঘাতের ঘটনা ঘটে।
সরকারি-বেসরকারি সূত্রগুলো জানায়, এসব ঘটনা পুলিশের নথিভুক্ত। এ ছাড়া অনেক ঘটনা আছে, যা পুলিশের নথিতে অন্তর্ভুক্ত হয়নি
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রোড জ্যাম ইন ভিয়েতনাম

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৭



আমার ধারনা ছিল জটিল জ্যাম শুধু বাংলাদেশেই লাগে । কিন্তু আমার ধারনা ভুল ছিল । ভিয়েতনামে এরকম জটিলতর জ্যাম নিত্য দিনের ঘটনা । ছবিটি খেয়াল করলে দেখবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×