চট্টগ্রামের পটিয়ায় মাত্র ৩ গজের মধ্যেই মসজিদ এবং মন্দিরের সহঅবস্থানকে কেন্দ্র করে দু-সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে মধুর সম্প্রীতির এক অনন্য দৃষ্টান্ত সর্বমহলে প্রশংসিত হচ্ছে। আর এ অসাম্প্রদায়িকতার উজ্জল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বৃট্রিশ বিরোধী আন্দোলনের প্রথম নারী শহীদ বীরকন্যা প্রীতিলতার জন্মভূমি স্মৃতিধন্য পটিয়া উপজেলার ধলঘাট ইউনিয়নের কৃষ্ণখালী দেওয়ান হাট জামে মসজিদ ও কৃষ্ণখালী মাতৃ মন্দির।
এ উপসনালয় গুলোতে প্রতিদিন নিজ নিজ ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান বিশেষ করে মুসলমানরা ৫ ওয়াক্ত নামাজ ও সনাতনীরা তাদের নিয়মিত পূজা-অর্চনা করে থাকে। শত বছর ধরে পারস্পরিক এ সহ অবস্থান থাকলেও এক মুর্হুতের জন্য এখানে ধর্মীয় কোন বিষয় আশয় নিয়ে কোন রকমের উত্তেজনা বা পরস্পর বিরোধের কোন ঘটনার অবতারনা হয়নি। ১৯৮৮ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ভারতের বাবরী মসজিদ নিয়ে হিন্দু-মুসলিম বিরোধ সারা দেশের ন্যায় পটিয়ায় ভীতি ছড়ালেও এ গ্রামে এর কোন প্রভাব সে সময়েও পড়েনি বলে স্থানীয় ব্যবসায়ী অরশুন কুমার দে জানান। ফলে পটিয়ায় এ দুই সম্প্রদায়ের মসজিদ ও মন্দিরকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির মডেল হিসেবে দেখা হচ্ছে।জানা যায়, পটিয়ার ধলঘাটের কৃষ্ণখালী দেওয়ান হাটে আজ থেকে ৭৬ বছর পূর্বে অর্থাৎ ১৯৪৪ সালে মুসলমানদের ইবাদতের জন্য স্থানীয় সমাজ সেবী আবদুল গফুরের অনুদানে নির্মিত হয় মসজিদ ও তার ২৬ বছর পূর্বে ১৯১৮ সালে নির্মিত হয় দেওয়ান হাট কৃষ্ণখালী মাতৃ মন্দির। মন্দিরের জায়গা দান করেন তৎকালীন জমিদার প্রসন্ন বাবু। স্থানীয় প্রদীপ দে জানান, মুসলমানরা প্রতিদিনের ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়া ছাড়াও প্রতি শুক্রবার জুমার নামাজ ও গুরশুত্ব্বপূর্ন বিভিন্ন দিবসে ইবাদত-বন্দেগী করে থাকে। অপরদিকে সনাতনীরা তাদের প্রত্যাহিক পুজা-অর্চনা ছাড়াও দূর্গাপুজা, মনসা পুজা সহ বিভিন্ন পুজা অনুষ্ঠান বেশ ধর্মীয় ভাবগাম্ভির্যের মধ্যদিয়েই পালন করে। এবার মন্দিরে বেশ ঘটা করে শারদীয় দুর্গোৎসব ও মুসলমানরা ১২ রবিউল আওয়াল ঈদে মিলাদুন্নবী (সঃ) পালন করেন।দুটি ধর্মের ভিন্ন ধারায় ইবাদত বন্দেগী হওয়ায় বিভিন্ন সময়ে কট্টর ধর্মালম্বীদের মাঝে তুচ্ছ বিষয়ে মুখোমুখি সংঘর্ষের মত হঠাৎ দূর্ঘটনার আশংকা থাকলেও বিগত ১০০ বছরে এখানে এ ধরনের কোন ঘটনা সৃষ্টিতো হয়নিই উপরন্তু সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি বেশ মধুর হওয়ায় পটিয়ার ধলঘাটে কৃষ্ণখালি দেওয়ান হাটের ৩ গজ দূরত্বে অবস্থিত এ দুটি মসজিদ ও মন্দির দেখার জন্য দেশের দূর দূরান্ত থেকে বিভিন্ন দর্শনার্থীরা এখানে প্রতিদিন ভীড় করে।
মসজিদের ইমাম মৌলানা নুরশুল হক জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে এ মসজিদের ইমামের দায়িত্ব পালন করছেন। এখানে কখনো ধর্মীয় বিষয় নিয়ে সনাতনীদের সাথে মুসলমানদের কোন বিরোধ হতে তিনি দেখেননি। এখানে যার যার ধর্ম সে নিজের মত করে পালন করে থাকে। মন্দিরের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্রাহ্মন গোপাল চক্রবর্ত্তী জানান, তিনি প্রায় ৪০ বছর ধরে এখানে মন্দিরের পূজা-অর্চনার দায়িত্বে নিয়োজিত। কখনো কেউ তাদের পূজা-অর্চনায় বাধা দিতে তিনিও দেখেননি। বরং উভয় সম্প্রদায় তাদের পরস্পরের যে কোন অনুষ্ঠানে সহযোগিতা দিতে তিনি দেখেছেন।
পদাধিকার বলে মসজিদের সভাপতি পটিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সহ-সভাপতি এস আই মাহাবুব, সাধারন সম্পাদক কামাল উদ্দিন সওদাগর ও মন্দির কমিটির সভাপতি মাষ্টার অশোক দে, সাধারন সম্পাদক দিপক ঘোষ। আর কমিটির উপদেষ্টা হচ্ছেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদ নেতা মেম্বার দীলিপ ঘোষ দিপু।
এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান ছালামত উলহ্মাহ মল্হ্ম বলেন পটিয়া হাজার বছর ধরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির চারন ভূমি। যার উজ্জল দৃষ্টান্ত ৩ গজের মধ্যে এ মসজিদ মন্দির। তিনি শত বছরের এ ঐতিহ্যকে লালন করতে সকল ধর্মের মানুষকে সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি বিধানে কাজ করার আহবান জানান।
এ ব্যাপারে আলাপ প্রসঙ্গে মসজিদ কমিটির সহ-সভাপতি এস.আই মাহাবুব বলেন, এ এলাকার সকল ধর্মের মানুষের মধ্যে পারস্পরিক ভাতৃত্বের বন্ধন শত বছরের ঐতিহ্যেরই অংশ। তিনি বলেন ৩ গজের মধ্যেই অবস্থিত এ মসজিদ-মন্দির সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির উজ্জল দৃষ্টান্ত। মন্দির কমিটির সাধারন সম্পাদক মাষ্টার অশোক দে ও উপদেষ্টা দিলীপ ঘোষ দিপু বলেন,সকল ধর্মের মর্মবাণী এক এবং অভিন্ন। সবাই মহান সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টির জন্যই আরাধনা করে। আর একেক জনের ইবাদতের ভাষা একেক রকম হলেও পটিয়ায় সকল ধর্মের মানুষ ধর্মপ্রান। যার ফলে আমাদের ভাতৃত্বের শত বছরের বন্ধন যে কত গভীর তার উজ্জল দৃষ্টান্ত হচ্ছে ৩ গজের মধ্যে এ মসজিদ মন্দির।
এব্যাপারে পটিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও মসজিদ কমিটির সভাপতি আবুল হোসেনের সাথে যোগযোগ করা হলে তিনি বলেন, পটিয়া যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির চারনভৃমি তার উজ্জ্বল দৃষ্টাুন্ত৩ গজের মধ্যে এ মসজিদ ও মন্দির।
পটিয়ায় ৩ গজের মধ্যে অবস্থিত শতবর্ষের মসজিদ-মন্দির
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
স্যামুয়েল ব্যাকেট এর ‘এন্ডগেম’ | Endgame By Samuel Beckett নিয়ে বাংলা ভাষায় আলোচনা
এন্ডগেম/ইন্ডগেইম/এন্ডগেইম- যে নামেই ডাকা হোক না কেনও, মূলত একটাই নাটক স্যামুয়েল ব্যাকেটের Endgame. একদম আক্ষরিক অনুবাদ করলে বাংলা অর্থ হয়- শেষ খেলা। এটি একটা এক অঙ্কের নাটক; অর্থাৎ... ...বাকিটুকু পড়ুন
প্রায় ১০ বছর পর হাতে নিলাম কলম
জুলাই ২০১৪ সালে লাস্ট ব্লগ লিখেছিলাম!
প্রায় ১০ বছর পর আজ আপনাদের মাঝে আবার যোগ দিলাম। খুব মিস করেছি, এই সামুকে!! ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরায় পার হয়েছে! আশা করি, সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন
ব্যাঙ দমনের নেপথ্যে এবং রাষ্ট্রীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের সমন্বয়
ব্যাঙ দমনের বাংলায় একটা ইতিহাস আছে,খুবই মর্মান্তিক। বাংলাদেশে বহুজাতিক কোম্পানির কোন সার কেনা হতো না। প্রাচীন সনাতনী কৃষি পদ্ধতিতেই ভাটি বাংলা ফসল উৎপাদন করতো। পশ্চিমবঙ্গ কালক্রমে ব্রিটিশদের তথা এ অঞ্চলের... ...বাকিটুকু পড়ুন
পজ থেকে প্লে : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
.
একটা বালক সর্বদা স্বপ্ন দেখতো সুন্দর একটা পৃথিবীর। একজন মানুষের জন্য একটা পৃথিবী কতটুকু? উত্তর হচ্ছে পুরো পৃথিবী; কিন্তু যতটা জুড়ে তার সরব উপস্থিতি ততটা- নির্দিষ্ট করে বললে। তো, বালক... ...বাকিটুকু পড়ুন
শিরোনামে ভুল থাকলে মেজাজ ঠিক থাকে?
বেইলি রোডে এক রেস্তোরাঁয় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে একজন একটা পোস্ট দিয়েছিলেন; পোস্টের শিরোনামঃ চুরান্ত অব্যবস্থাপনার কারনে সৃষ্ট অগ্নিকান্ডকে দূর্ঘটনা বলা যায় না। ভালোভাবে দেখুন চারটা বানান ভুল। যিনি পোস্ট দিয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন