somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দীর্ঘরাতের এক বন্ধুর প্রতি ভালোবাসা

০৬ ই মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১২:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ও গো আমার প্রিয় বন্ধু,

তোমার আমার সম্পর্কটা বেশ পুরোনো। কত হবে? প্রায় সাড়ে আড়াই বছরের একটু বেশি! তোমার-আমার সম্পর্কটা যদিও কেবল রাতের, তবু বা তা কম কীসে! এতগুলি রাত তুমি আমাকে পাহারা দিয়েছো বিশ্বস্ত প্রেমিকের মত। তোমার কোলের ভেতর ঢুকে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়েছি আমি। স্বপ্ন দেখেছি নির্ভয়ে। আর তুমি? সারারাত তোমার অভেদ্য প্রহরা দিয়ে রক্ষা করেছ আমার রক্তচোষা, সর্বভুক নিশাচর প্রাণীকুলের হাত থেকে। আমাকে ছুঁতে পারেনি কোনও ভয়ংকর শুড়ওয়ালা রক্তপিপাসু দানব অথবা দূরারোগ্য জীবানুবাহি কদাকার উড়ন্ত দস্যু!

তুমি আমার রাতের প্রহরী, তুমি আমার নিশিকালের সঙ্গী। যদিও আমিই তোমার প্রথম নই, নও তুমিও আমার। হলজীবনে আমার প্রাক্তন বেডমেটের প্রহরীই তোমার আগে আমার জীবনে এসেছিল। তখন তুমি আমার খালার পুরোনো বাক্সে বন্দী হয়ে ছাদের চিলেকোঠায় অবসর জীবনযাপন করছিলে। আমার ভাইয়ার মেডিকেল শিক্ষাজীবনে প্রায় ৭টি বছর সেবা দিয়ে তুমি তখন জীর্ণ, শীর্ণ হয়ে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছিলে। কবে তোমাকে টুকরো টুকরো করে থালাবাসন মাজার মাজুনি হিসেবে ব্যবহার করা হবে বোধহয় সে কথা ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলছিলে। তখন কি ভেবেছিলে এই তুমি আবার এক ঝাঁক উচ্ছ্বল তরুনীদের বাসস্হানে নতুন করে দায়িত্ব পালনের সুযোগ পাবে? হরেক রকমের ফিতা আর দড়িতে আবদ্ধ হয়ে ঝুলতে থাকবে সুন্দরী রমনীর রাত্রিশয্যার ওপর?
আমি তখন ডাবল থেকে সিংগেল হয়ে নিজস্ব বিছানায় একলা শুয়ে রক্তচোষা আর ফরফরে উড়ুক্কু বাহিনীর হাতে ঘায়েল। প্রয়োজন হল নিরাপত্তার জন্য তোমার মত কাউকে। খালার কাছে চাইতেই তোমাকে পেয়ে গেলাম। মিথ্যে বলব না, প্রথম দর্শনে তোমার চেহারা আর গন্ধ কোনওটাই আমাকে মুগ্ধ করেনি। তবু "নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভাল" এই নীতিবাক্যটি আমাকে প্রলুব্ধ করল তোমাকেই রাত্রিকালিন প্রহরী করে নিতে। সেই থেকে শুরু! প্রতিটি রাত তুমি আমার বিশ্বস্ত সঙ্গী।
তোমার প্রতি আমার একনিষ্ঠ ভালবাসা জগতে অনন্য দৃষ্টান্ত স্হাপন করতে পারে। তোমার ১০ বছরের পুরোনো দেহে ছিদ্র রাশি রাশি। তবু আমি তা আমলে নেইনি। কারণ আমি ছিদ্রান্বেষী নই। জীর্ণ, শীর্ণ, ছিড়া ফাটা, ক্ষেত্রবিশেষে কয়েক ইঞ্চি বিস্তৃত শূন্যস্হান সবই আমি পূরন করে নিয়েছি জোড়াতালি দিয়ে। এই কাজে ধীরে ধীরে আমি বেশ দক্ষ হয়ে উঠলাম। প্রথম দিকে যত্ন করে সুঁই সুতোর ফোঁড় দিলেও পরে স্টাপলার, স্কচটেপ, এমনকি দড়ি দিয়ে গিট্টু দিতেও দ্বিধা করিনি। তুমি ব্যথা পেয়ে থাকলে ক্ষমা করে দিও। কিন্তু ভেবে দেখো তোমার প্রতি আমার একনিষ্ঠ আর বিশ্বস্ত প্রেমের কথা। তুমি আছো বলে আমি কখনও নতুন কোনও সঙ্গীর কথা ভাবিনি। নীলক্ষেতের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় রং বেরঙের বাহারি নকশা করা অনেক সুদর্শন, তরুন প্রহরীদের দেখেও চোখ ফিরিয়ে নিয়েছি। কারণ আমার আছো তুমি। রক্তপিপাসুদের হাত থেকে আমায় রক্ষা করতে পারোনি। সকালে উঠে স্বাস্হ্যবান রক্তচোষাদের তোমার গায়ে বসে ভেংচি কাটতে দেখেও নির্লিপ্ত থেকেছি। শুধু কখনও তাদের পিষে দিয়েছি তোমারই গায়ে। তুমি রাগ করোনি জানি, কারণ তোমার গায়ে ওসব অনেক চিহ্ন আছে। সবই কালের সাক্ষী।

পরিশেষে বলতে চাই, আমার প্রিয় বন্ধু, দীর্ঘদিনের রাতের সঙ্গী, তুমি এখনই ইন্তেকাল করোনা। আর ক'টা দিন আমাকে তোমার বুকের মাঝে সুরক্ষিত করে রাখো। কথা দিচ্ছি আর ১ বছর পরে তোমাকে যথাযোগ্য মর্যাদায় সমাধিস্হ করবো। হয়তো তোমাকে বাঁধাই করে সাজিয়ে রাখব আমার নতুন ঘরের দেয়ালে। তুমি তখন পরিণত হবে "আধুনিক শিল্পকর্মে"!
কী খুশি? ভাল থেকো আমার প্রিয় নীল মশারি।

তোমার প্রতি কৃতজ্ঞতায়,
হলবাসী জনৈকা দরিদ্র ছাত্রী
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×