somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিশ্বকাপের শেষ চার--সাথে দু'চার কথা

২৬ শে মার্চ, ২০১১ রাত ১১:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এই মাত্র চূড়ান্ত হলো ২০১১ ক্রিকেট বিশ্বকাপের শেষ চার দলের হিসাব । ২৯ মার্চ মঙ্গলবার কলম্বোতে প্রথম সেমি-ফাইনালে খেলবে শ্রীলঙ্কা ও নিউ জিল্যাণ্ড। ৩০ মার্চ বুধবার মোহালীতে হবে বহুল আলোচিত পাক-ভারত দ্বৈরথ।

এই প্রথম উপমহাদেশের ৩ দল দখল করলো শেষ চারের ৭৫% জায়গা। এর আগে দু'টির বেশী দল শেষ চারের টিকিট পায়নি। এই চারে নেই শুধু বাংলাদেশ। হায় বাংলাদেশ !!

কোয়ার্টার ফাইনালে এসে বদলে গেছে কিছু বহুল চর্চিত অভ্যাস। প্রথম পর্বের ৬টি ম্যাচের সব ক'টিতে প্রতিপক্ষের সব উইকেট ফেলেছিলো দক্ষিণ আফ্রিকান বোলাররা। কোয়ার্টার ফাইনালে এসে ওরা প্রথম ব্যর্থ হলো সেটা করতে। নিউ জিল্যাণ্ডের ৮ উইকেট ফেলেছে ওরা। পারেনি অলআউট করতে। বাদ পড়ে গিয়ে তার প্রায়শ্চিত্ত করেছে।

প্রথম পর্বে ইংল্যাণ্ড মানেই ছিলো চরম রোমাঞ্চ। কি না করেছে ওরা। নেদারল্যাণ্ডসের সাথে প্রথমে বোলিং করে ওরা দেয় ২৯২ রান। অনায়াসে জিতে সব আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়।

এরপর ভারতের সাথে বোলাররা যাচ্ছেতাই বোলিং করে, অন্য কথায় বলতে হয় ভারত দুরন্ত ব্যাটিং করেছে। উঠে যায় ৩৩৮ রান। ইংল্যাণ্ড সবার হার্টের বারোটা বাজিয়ে ৩৩৮ রান করে টাই করে বসে।

আয়ারল্যাণ্ডের সাথে দারুন ব্যাটিং করে ৩২৭ রান তোলে। তারপর যা বোলিং করেছে ! আইরিশরা সেটা টপকে জিতে যায়। লেখা হয় আরেক আইরিশ রূপকথা।

দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে ১৭১ রানে অলআউট ইংল্যাণ্ড। সবাই ভাবলেন ইংল্যাণ্ড নাই। দেখা গেলো হারা ম্যাচ জিতে বসে আছে ইংলিশরা।

চট্টগ্রামে বাংলাদেশের সাথে প্রায় জিতে যাওয়া ম্যাচ হেরে যায় আমাদের পেসার-কাম ব্যাটসম্যান সফিউল আর পুরনো অলরাউণ্ডার রিয়াদের বীরত্বে। আবারো সবার হার্টের ওপর চললো চরম অত্যাচার।

ওয়েস্ট ইণ্ডিজের সাথে খেলতে গিয়ে মনে হচ্ছিলো এই বুঝি ইংল্যাণ্ড হেরে ভূত হলো। আর তাদের সৌজন্যেআমরা পরের রাউণ্ডে চলে যাবো। ওখান থেকেই ওরা লন্ডনের ফ্লাইট ধরলো বলে। কিন্তু কোথায় কি ? বাংলাদেশের সবাইকে শোক সাগরে ভাসিয়ে জিতে গেলো ইংল্যাণ্ড ! আমাদের বিদায় ঘন্টা বেজে যায়।

এমন রোমাঞ্চ উপহার দেওয়া ইংল্যাণ্ড আজ কি করলো ? টসে জিতে খুশীতে আট খানা হয়ে নিলো ব্যাটিং। লঙ্কার রাবন বাহিনীর বোলিং তোপে তুলতে পারলো ২২৯/৬। সর্বজ্ঞ কমেন্টেটররা বললেন, এটাই লড়াই করার জন্য পর্যাপ্ত। খুব আয়েস করে দিলশান আর থারাঙ্গা সেঞ্চুরী করলেন। মাত্র ১০ উইকেকেটে হেরে ডুবে গেলো বৃটিশ সাম্রাজ্যের সূর্য।

ব্যাটিং বোলিং ফিল্ডিং মিলে এক দুরন্ত দল নিয়ে আসেন দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক স্মিথ। নিজে দারুন ব্যাটসম্যান। সাথে আমলা, ডুমিনি, ডিভেলিয়ার্সের মতো ব্যাটসম্যান। ছিলেন দারুন পেসার স্টেইন, মরকেল,সতসবে। ক্যালিসের মতো অবিশ্বাস্য রেকর্ডের অলরাউণ্ডার। ইমরান তাহির আর পিটারসেনের স্পিনও কম গেলো কোথায় ? কিন্তু চোকার্স আখেরে রয়ে গেলো চোকারই।

নিউ জিল্যাণ্ড বাংলা ওয়াশের ঠেলায় পুরাই সাদা হয়ে গিয়েছিলো। ভারতও রাম ধোলাই দিতে ভোলেনি। অথচ তারাই হারিয়ে ভূত করে দিলো দারুন খেলা দল পাকিস্তানকে। শেষ আটের লড়াইতে প্রবল-প্রতাপ দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে চমকে দিয়েছে সবাইকে।

অস্ট্রেলিয়ার ভালো যাচ্ছিলো না দিনকাল। এ্যাশেজ হেরে জেরবার অবস্থা। কিন্তু একদিনের খেলায় দেখা গেলো আস্তে আস্তে ফিরে পাচ্ছে নিজেদের। জিততে শুরু করলো চিরকালীন ভঙ্গিতে। প্রথম সমস্যা করলো বৃষ্টি। কেউ ভাবলেন, বেঁচে গেলো অস্ট্রেলিয়া। কারো মতে পার পেয়ে গেছে শ্রীলঙ্কা। এই তর্ক চলবে চিরকাল। মীমাংসা মিলবে না। কিন্তু ধুম করে হেরে গেলো পাকিস্তানের কাছে। সেই এক যুগ আগে কবে হেরেছিলো পাকিস্তানের কাছেই ! কোয়ার্টার ফাইনালে এলো তৃতীয় স্থান নিয়ে !

পরাজয়ের বৃত্ত আর ভাঙ্গা হলো না। ভারতের দারুন নৈপুন্যের কাছে হার মেনে শেষ হলো টানা চতুর্থ বার বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন।

ভারত ছিলো হটেস্ট ফেভারিট। বাংলাদেশকে গুঁড়িয়ে দিয়ে শুরুটাও হলো তেমনই। কিন্তু ইংল্যাণ্ডের সাথে টাই করে বোলিং হয়ে গেলো ভিলেন। স্মিথদের কাছে হেরে গ্রুপে হয়ে গেলো দ্বিতীয়।

পাকিস্তানের ক্যাপ্টেনের নাম পাওয়া গেলো সবার শেষে। আফ্রিদী না মিসবাহ এই গোলকধাঁধাই শেষ হয় না পাক ক্রিকেট বোর্ডের ! এরপর কল্কে পেলেন আফ্রিদী। ভাঙ্গাচোরা দলের হতচ্ছিরি কাণ্ডারী। আফ্রিদী জানালেন, তাঁর লক্ষ্য প্রথমে শেষ আটে যাওয়া। এরপর সেমিতে। কথা শুনে অট্টহাসিতে ফেটে পড়লেন স্বয়ং কিং খান (ইমরান খান) ! হাসিতে সামিল হলেন কিং খানের শিষ্য ওয়াসিম আকরামও ( আফ্রিদীর প্রিয় ওয়াসিম ভাই)।

অথচ সেই পাকিস্তানই গ্রুপ সেরা হয়ে শেষ আটে। ওয়েস্ট ইণ্ডিজের ঘুম হারাম করে ১০ উইকেটে জিতে সোজা সেমিতে। যারা হাসাহাসি করেছিলেন তাদের এখন মুখ লুকানোর কোশেশ করতে হচ্ছে।

এই সব করে সেমিটা হয়ে গেছে স্বপ্নের সেমিফাইনাল ! পাক-ভারত দ্বৈরথ। সাবর ধারণা এটা খুব জমজমাট লড়াই হবে। যদিও গাভাস্কার ভারতের ফাইনালে চলে যাওয়াটা সহজই দেখতে পাচ্ছেন। তাঁর বিবেচনায় পাকিস্তানের এই দুর্বল দলের পক্ষে সেমিতে ভারতের কাছে অকাতরে হেরে যাওয়া ছাড়া বিকল্প নেই।

চরম আনপ্রেডিক্টেবল দল পাকিস্তানের কাজ কর্মে আনপ্রেডিক্বেবিলিটি আছেই। বুম বুম আফ্রিদীর ব্যাট বুম বুম ভুলে গেছে। অথচ বোলার আফ্রিদী কিনা চড়ে বসেছেন মগ ডালে। ৭ ম্যাচে গুনে গুনে নিয়েছেন ২১ উইকেট। উমর গুল করছেন দারুন বোলিং।

টেণ্ডুলকার শেবাগ চালিয়ে খেলছেন। কিন্তু সব হিসাব নিকাশ উল্টে দিয়ে আসল রাজা বনে গেছেন যুবরাজ সিং। ৭ ম্যাচের চারটিতেই ম্যান অব দা ম্যাচ ! ১১ উইকেট আর ৩৪১ রান নিয়ে শুধু ভারত সেরাই নয়। এখন পর্যন্ত বিশ্বাপেরই সেরা। জাহির খান নিজেকে জাহির করেই চলেছেন। এ পর্যন্ত ব্যাগে পুরেছেন ১৭ উইকেট।

আপনরাই বলুন, লড়াইটা কেমন হবে ?

তবে এবার অল-উপমহাদেশ ফাইনালের সুবাস পাচ্ছি যেন !!!!!!
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মার্চ, ২০১১ রাত ১১:৪৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাফসানের মা হিজাব করেন নি। এই বেপর্দা নারীকে গাড়ি গিফট করার চেয়ে হিজাব গিফট করা উত্তম।

লিখেছেন লেখার খাতা, ১১ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩


ছবি - সংগৃহীত।


ইফতেখার রাফসান। যিনি রাফসান দ্যা ছোট ভাই নামে পরিচিত। বয়স ২৬ বছর মাত্র। এই ২৬ বছর বয়সী যুবক মা-বাবাকে বিলাসবহুল গাড়ি কিনে দিয়েছে। আমরা যারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ এঁটেল মাটি

লিখেছেন রানার ব্লগ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৫৬




শাহাবাগের মোড়ে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলাম, মাত্র একটা টিউশানি শেষ করে যেন হাপ ছেড়ে বাঁচলাম । ছাত্র পড়ানো বিশাল এক খাটুনির কাজ । এখন বুঝতে পারি প্রোফেসরদের এতো তাড়াতাড়ি বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসুন সমবায়ের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচন করি : প্রধানমন্ত্রী

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১২ ই মে, ২০২৪ ভোর ৪:১০



বিগত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নিজ সংসদীয় এলাকায় সর্বসাধারনের মাঝে বক্তব্য প্রদান কালে উক্ত আহব্বান করেন ।
আমি নিজেও বিশ্বাস করি এই ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খুবই আন্তরিক ।
তিনি প্রত্যন্ত অন্চলের দাড়িয়ারকুল গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাইলট ফিস না কী পয়জনাস শ্রিম্প?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১২ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:৪০

ছবি সূত্র: গুগল

বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×