somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে স্বাধীনতা: আমরা কতটুকু পেয়েছি ?

২৬ শে মার্চ, ২০১১ বিকাল ৫:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রত্যেক মানুষই এক একটি অপার সম্ভাবনার নাম। প্রত্যেকের হৃদয়ের মধ্যে আছে এক অন্তহীন দিগন্তহীন জগৎ। এই জগৎটা হল সততা, নৈতিকতা, মানবতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, ন্যায়পরায়নতা দায়িত্ববোধ ও সর্বোপরি দেশপ্রেমের জগৎ। দেশপ্রেমের জগতে উদ্বুদ্ধ হয়েই অকুতোভয় বাঙালি মুক্তিসেনারা ঔপনিবেশিক দুঃশাসনের অবসান ঘটিয়ে দেশকে স্বাধীন করার লক্ষ্যে মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে লক্ষ্ প্রানের বিনিময়ে অর্জন করেছিল স্বাধীনতা। এই স্বাধীনতা লাভের মধ্য দিয়ে পুথিবীর বুকে জন্মলাভ করে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশ। স্বাধীনতার ৩৯ বছর পেরিয়ে গেলেও যাদের কারণে আমরা এই স্বাধীনতা অর্জন করলাম তারা এই স্বাধীনতার স্বাদ কতটুকু পেয়েছে বা পাচ্ছে তার খবর আমরা কেউ রাখিনা। এটা বড় লজ্জার বড় অপমানের। স্বাধীনতার মাস এলে শত শত মুক্তিযোদ্ধার জীবনের করুন কাহিনী আমাদের আহত করে, বিবেককে কটাক্ষ করে দেশের রাজনীতিবিদদের মনে করিয়ে দেয় হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধারা রণাঙ্গনের যুদ্ধে বিজয়ী হয়েও আজ তারা জীবন যুদ্ধে পরাজিত। আজ তারা অনেকে অসহায়। অনাহারে-অর্ধাহারে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। তারা আজ কেউ ভিক্ষুক, কেউ ভ্যানচালক, কেউ ফেরিওয়ালা, কেউ শ্রমিক। তারা দেশকে স্বাধীন করার জন্য জীবনের বিনিময়ে অসম্ভবকে সম্ভব করেছিল অথচ আজ আমরা দেশবাসী তাদের সঠিক মূল্যায়ন, সম্মান, মর্যাদা ও অধিকার প্রদানসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক মুক্তির নিমিত্তে কিছুই করছি না। বরং এদের বিজয়ের সুফল দিয়ে রাজনীতিবিদরা তাদের সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলছে। এলাকাভেদে বছরে দু’বার (১৬ ডিসেম্বর ও ২৬ মার্চ) দু’দিন কয়েকখানা মুক্তিযুদ্ধের গানের রেকর্ড বাজিয়ে ও ক্ষুদ্র নগণ্য কিছু খয়রাতি সাহায্য দিয়ে যেনতেনভাবে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের দায়সারা সংবর্ধনা প্রদান করি, যা অত্যন্ত লজ্জাজনক। মুক্তিযোদ্ধারা সাহায্য চান না। তারা চান সঠিক সম্মান, মর্যাদা, মূল্যায়ন, অধিকার ও অর্থনৈতিক মুক্তি। কালের বাস্তবতায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্থান সুমহান মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হোক- এটাই সকলের কাম্য হওয়া উচিত। রাষ্ট্রীয় ও সমাজ জীবনের সব ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধাদের অধিকার, মর্যাদা, সম্মান ও মূল্যায়ন নিশ্চিত করা জাতীয় কর্তব্য।
কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস- ঐতিহ্য ও চেতনাকে আজ আমরা হারাতে বসেছি, ভুলতে বসেছি। নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিস্মৃত হতে যাচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা চিরসমুন্নত রাখা ও নতুন প্রজন্মের কাছে তাই মুক্তি ও স্বাধীনতা সংগ্রামের সঠিক চিত্র তুলে ধরা শুধু প্রয়োজনই নয় বরং একান্ত অপরিহার্য। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বিজয়ের আনন্দ পৌঁছে দিতে হবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে। পরিতাপের বিষয় মহান মুক্তিযুদ্ধকে কতিপয় ব্যক্তিবর্গ বিদ্রূপ, পরিহাস ও কটাক্ষপূর্বক “গন্ডগোলের বছর” বলে আখ্যায়িত করে অপরিসীম ধৃষ্টতার পরিচয় দিয়ে থাকে, যা ক্ষমার অযোগ্য। এরাই আবার বলে বেড়ায়, ১৯৭১ এ যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধীতা করেছে,হত্যা খুন,ধর্ষন, লুটতরাজ,অগ্নীসংযোগ করেছে তারা নাকি এসব করছে ধর্ম রক্ষা করার জন্য। ধর্ম রক্ষার জন্য খুন, ধর্ম রক্ষার জন্য ধর্ষণ, ধর্ম রক্ষার জন্য গ্রামকে গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া। বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নিরীহ মানুষ মারা। বাংলাদেশ স্বাধীন হলে ইসলাম ধংস হয়ে যাবে, আমরা সবাই অমুসলিম-হিন্দু হয়ে যাব।

প্রায় চল্লিশ বছর পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় আজও সেই একই কথা বলা হচ্ছে। ১৯৭১-এ বলা হতো যে বাংলাদেশ স্বাধীন হলে, পাকিস্তান ভেঙে গেলে ইসলাম বিপন্ন হবে। আমরা সবাই অমুসলিম হয়ে যাব। একাত্তরের মতো একদল পিশাচ আবার এ দেশের সহজ-সরল-ধর্মপ্রাণ মানুষকে নৃশংসতা আর বর্বরতার দিকে ঠেলে দিতে উদ্যত হয়েছে। ধর্মের অপব্যাখ্যা করে দেশে আবার রক্তগঙ্গার পাঁয়তারা চলছে। এবার একাত্তরের চেয়ে আমার আশঙ্কা বেশি। প্রথমত এখন ধর্মীয় উন্মাদনা বিশ্বব্যাপী। দ্বিতীয়ত অস্ত্রশস্ত্র, বোমা-বন্দুকের সহজপ্রাপ্যতায় যুক্তি, মানসিকতা, সহনশীলতা ও গণতন্ত্র প্রতিনিয়ত হুমকির মুখে।
ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না। করেওনি। কিন্তু ইতিহাসের শিক্ষা হল এই যে, আমরা ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করি না। অথচ ইতিহাসের সবচেয়ে বড় শিক্ষা হল, ইতিহাসের যে কোন শিক্ষা অতিদ্রুত ইতিহাস হয়ে যায়। মিথ্যা ও ছলচাতুরী দ্বারা ইতিহাস কখনও কখনও আঘাতপ্রাপ্ত হয় কিন্তু অসত্যকে কখনও সত্য বলে চালিয়ে দেয় না। ইতিহাস বিকৃতদের ইতিহাস কখনও ক্ষমা করে না।
তাই আসুন আজ এই স্বাধীনতার মাসে আমরা নতুন করে শপথ করি আর যেন কোন মুক্তিযোদ্ধা অনাহারে, অর্ধাহারে, ভিক্ষুক হিসাবে মারা না যায়। আর যেন কোন কন্যাদায়গ্রস্ত মুক্তিযোদ্ধা আত্মহত্যা না করে। মৃত্যুর পর মুক্তিযোদ্ধাদের জাতীয় মর্যাদায় জাতীয় পতাকায় ঢেকে দাফন করে তাকে সন্মানিত করা হয়। দেশের রাজনীতিবিদদের কাছে আমার আবেদন আপনারা এদের মৃত্যূর পর নয় মৃত্যূর আগে ন্যায্য সন্মানটুকু নিয়ে বেঁচে থাকার ব্যবস্থা করুন।

আমার এই আবেদন কি দেশের রাজনীতিবিদদের কানে পৌঁছবে…………?
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অতিরিক্ত বা অতি কম দুটোই সন্দেহের কারণ

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৩০

অনেক দিন গল্প করা হয়না। চলুন আজকে হালকা মেজাজের গল্প করি। সিরিয়াসলি নেয়ার কিছু নেই৷ জোসেফ স্টালিনের গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। তিনি দীর্ঘ ২৯ বছর সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রধান নেতা ছিলেন। বলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সীমানা পিলার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৮



বৃটিশ কর্তৃক এদেশে ম্যাগনেটিক পিলার স্থাপনের রহস্য।
ম্যাগনেটিক পিলার নিয়ে অনেক গুজব ও জনশ্রুতি আছে, এই প্রাচীন ‘ম্যাগনেটিক পিলার' স্থাপন নিয়ে। কেউ কেউ এটিকে প্রাচীন মূল্যবান ‘ম্যাগনেটিক’ পিলার... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাথায় চাপা ভূত ভূত ভূতং এর দিনগুলি

লিখেছেন শায়মা, ৩১ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৫


এই যে চারিদিকে এত শত কাজ কর্ম, ঝামেলা ঝক্কি, ক্লান্তি শ্রান্তি সব টপকে আমার মাথায় আজও চাপে নানান রকম ভূত। এক ভূত না নামতেই আরেক ভূত। ভূতেদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায় (দ্বিতীয় অংশ)

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:০৫


আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায় (প্রথমাংশ)
আমাদের সদ্য খনন করা পুকুরটা বৃষ্টির পানিতে ভেসে গেল। যা মাছ সেখানে ছিল, আটকানোর সুযোগ রইল না। আমি আর দুইবোন শিউলি ও হ্যাপি জালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজের পাসওয়ার্ড অন্যকে দিবেন না ;)

লিখেছেন অপু তানভীর, ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৭



কথায় আছে যে পাসওয়ার্ড এবং জাঙ্গিয়া অন্যকে দিতে নেই । মানুষ হিসাবে, বন্ধু হিসাবে প্রেমিক/প্রেমিকা হিসাবে অথবা আজ্ঞাবহ হওয়ার সুবাদে আমরা অন্যকে ব্যবহার করতে দিই বা দিতে বাধ্য হই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×