somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইসলামবিরোধী আন্তর্জাতিক ছবি "ব্ল্যাক" ও বাংলাদেশ

২৬ শে মার্চ, ২০১১ বিকাল ৪:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইসলামবিদ্বেষী অপশক্তির পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মীরজাফরের ভূমিকা নিয়েছে স্বদেশ ও স্বজাতির ভেতরেরই কিছু বিবেকবিবর্জিত মানুষ। লক্ষণীয়, এ ধরনের লোকেরাই আবার তথাকথিত প্রগতিবাদী ও মুক্তচিন্তার ঝাণ্ডা ওড়ায়। মিডিয়ার অন্যান্য শাখার মতো বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতেও শকুনদের নজর পড়েছে। বাংলাদেশে ইসরাইল ইসলামবিদ্বেষী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য বহু দিন ধরে বিশ্বস্ত মীরজাফরের খোঁজে ছিল এবং খুব সম্ভবত মোসাদ (ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্খা) তাকে খুঁজে পেয়েছে। পুরো সংবাদ পড়ুন।। তিনি আমাদেরই দেশ ও জাতির একজন, তবে ইসরাইলের বিশ্বস্ত হিসেবে অধিকতর পরিচিত, একটি ইংরেজি সাময়িকীর সম্পাদক। তাদের ইসলাম ও উম্মাহবিরোধী সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার প্রাথমিক অংশ হিসেবে বাংলাদেশে নির্মিত হচ্ছে ইসলামবিরোধী আন্তর্জাতিক ছবি ব্ল্যাক। গত ডিসেম্বর মাসে ছবিটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। ব্ল্যাক সিরিজে মোট সাতটি ছবি বানানো হবে, যার মূল উদ্দেশ্য হলো ‘ইসলাম ও ইসলামি শরিয়াহ কিভাবে মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে’ তা তুলে ধরা এবং শরিয়া আইন, জিহাদ, বোরকা, পাথর ছুড়ে মারা, বহুবিবাহ, বাল্যবিবাহ­ এসবের বিরুদ্ধে দেশে ও বিদেশে জনমত গঠন করা। ছবিটি বাংলা ভাষায় নির্মিত হলেও ইংলিশ, হিন্দি, ফেন্সঞ্চ, উর্দুসহ বিভিন্ন ভাষায় সাব টাইটেল করে সমগ্র বিশ্বে বিশেষভাবে মুসলিম বিশ্বে ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
যা থাকছে ব্ল্যাক সিনেমায়ঃ
শান্তি গ্রাম বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের একটি পল্লী। বহু বছর ধরে এখানে বিভিন্ন ধর্মের লোক শান্তিতে বসবাস করত। কিন্তু কয়েক দশক ধরে গ্রামে ইসলামপন্থীদের কর্মকাণ্ড ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। মোল্লারা শরিয়া আইন চালু করে জনগণের জীবনযাত্রা বিভীষিকাময় করে তুলেছঃ (!!!)। তারা গ্রামে পুরুষদের একাধিক বিবাহে উৎসাহিত করছে। যাদের একাধিক স্ত্রী আছে, তারা স্ত্রীদের সাথে দাসীর মতো ব্যবহার করছে, কৃষিকাজে স্ত্রীদের মজুরের মতো খাটানো হচ্ছে। উপরন্তু গ্রামে কোনো মহিলা অসুস্খ হলে মোল্লারা হাসপাতাল বা ডাক্তারের কাছে যেতে দেয় না। তারা বলে­ হাসপাতালগুলো হলো শয়তানের আড্ডাখানা, সেখানে নারী-পুরুষ পর্দা ছাড়াই অবাধে মেলামেশা করে। গ্রামে মোল্লা ও মাতবরদের সমন্বয়ে শরিয়া কমিটি করে দোররা মারাসহ শারীরিক শাস্তির ব্যবস্খা কায়েম করা হয়েছে। শান্তি গ্রামে বাউল সম্প্রদায়ের কিছু লোক বাস করত। এরা হলো হিন্দু ও সুফি মুসলিম গোত্রের মানুষ। বাউলরা ধর্মীয় সম্প্রীতির গান শোনাত। কিন্তু গ্রামের উগ্র ইসলামপন্থীদের প্রভাবে তাদের জীবন বিভীষিকাময় হয়ে ওঠে। মোল্লারা বাউলদের আলটিমেটাম (!)দেয়­ হয় মুসলিম হও, নয়তো গ্রাম ছাড়ো। এ দিকে ইসলামি এনজিও’র প্রভাব দিন দিন বাড়তে থাকে, তারা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টানসহ অমুসিলমদের ইসলাম গ্রহণের জন্য আর্থিকভাবে প্রলোভিত করে, ঋণ দেয়। যদি এতেও কাজ না হয়, তবে বল প্রয়োগের অংশ হিসেবে ওই সব অমুসলিম পরিবারের তরুণ-তরুণীদের অপহরণ করে জোরপূর্বক ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করা হয়। এভাবে গ্রামটি একদিন অমুসলিমশূন্য হয়ে পড়ে। অর্থাৎ ব্ল্যাক ছবির মূল প্রতিপাদ্য হলো­ ইসলামপন্থীদের চাপিয়ে দেয়া শরিয়া আইন কিভাবে মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে এবং সেই সাথে অমুসলিমদের নির্মূল করতে কতটা নিষ্ঠুর পথ গ্রহণ করে, তা বিশ্ববাসীর অবগতির জন্য তুলে ধরা।
কিছু বিষয়ের চিত্রায়ন এবং বাস্তব চিত্রঃ
বাংলাদেশে অসংখ্য গ্রামে বিভিন্ন ইসলামি সংগঠন ও এনজিও কাজ করছে। কিন্তু কোথাও উল্লিখিত অবস্খা দেখা যায়নি। এ ক্ষেত্রে যদি কোনো ব্যতিক্রম থাকে, তবে তা অপতৎপরতা এবং অপশক্তি পরিচালিত। বাংলাদেশের ইসলামি দল এবং এনজিও (যদি ব্যতিক্রম বাদ দেয়া হয়) অমুসলিমদের পূর্ণ অধিকারে বিশ্বাসী। ইসলামি এনজিওগুলো মুসলিম অমুসলিম সবাইকে সমভাবে সাহায্য করে থাকে। কারণ ইসলাম মানবতায় বিশ্বাসী ধর্ম। এখানে উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে, ঘূর্ণিঝড় আইলার পর আন্তর্জাতিক দাতা সংস্খা আইডিবি’র সহায়তায় যেসব ইসলামি এনজিও দক্ষিণের বিভিন্ন জেলায় কাজ করছে, তাতে কোনো ধরনের মুসলিম-অমুসলিম পার্থক্য করা হয়নি।
ছবিতে উল্লেখ করা হচ্ছে­ ইসলামপন্থী মোল্লারা অসুস্খ নারীদের হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে দেন না, এবং বহুবিবাহ, বাল্যবিবাহকে উৎসাহিত করেন­ এটা অসত্য ও কল্পনাপ্রসূত। নয়তো পরিকল্পিতভাবে ইসলাম ও মুসলমানদের ভাবমর্যাদা ক্ষুণí করার অপচেষ্টা মাত্র। বাংলাদেশে বিভিন্ন গ্রামে কিছু বাউল আছে; কিন্তু তাদের গ্রাম থেকে বের করে দেয়ার চেষ্টা করা হয়­ এ রকম তথ্য জানা নেই। এ কথা সত্য যে, ইসলামপন্থীরা চান­ মুসলমান কুরআন হাদিস মেনে চলুন। তারা নিশ্চয়ই চাইবেন না মুসলমান অন্য ধর্মকে অনুসরণ করুক। তেমনিভাবে হিন্দুরা বেদ উপনিষদ, বৌদ্ধরা গৌতম বুদ্ধ, খ্রিষ্টানরা যিশুকে অনুসরণ করতে চান।
ছবিতে দেখানো হচ্ছে­ ইসলামপন্থীরা প্রলুব্ধ করে, বল প্রয়োগ করে, এমনকি অপহরণ করে হলেও অমুসলিমদের মুসলমান বানানোর জন্য কাজ করছে­ এটা সর্বৈব মিথ্যা। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের কোথাও মুসলমানরা ধর্মপ্রসারে এমন হীন পথ অনুসরণ করেছে বলে জানা নেই। এটা ইসলামবিদ্বেষী অপশক্তির মিথ্যাচার। ধর্ম প্রসারে তাদের নিজেদের অনুসৃত পথকে ইসলামপন্থীদের ওপর চাপানোর প্রয়াস।
প্রস্তাবিত ব্ল্যাক ছবির সাথে­ বাংলাদেশের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনাচরণের কোনো সঙ্গতি খুঁজে পাচ্ছেন কি? সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ্বাসী মুসলিম ধর্মপ্রাণ মানুষ আদৌ কি অমুসলিম জাতিসত্তার প্রতি জিঘাংসামূলক বিদ্বেষ পোষণ করে? বাংলাদেশের প্রধান ইসলামি দলগুলোর কার্যকলাপের সাথে ছবিতে বর্ণিত অবস্খার সঙ্গতি কতখানি অথবা আদৌ কোনো সম্পর্ক আছে কি? ছবিতে বর্ণিত সমস্যাগুলো কি বর্তমান বাংলাদেশের সামাজিক সমস্যা? সততার সাথে বাস্তব অবস্খা পর্যবেক্ষণে প্রশ্নগুলোর উত্তর ‘না’ হবে। তাহলে আমাদের খুঁজে বের করতে হবে, বাংলাদেশে বসবাসরত বিভিন্ন জাতি ও গোষ্ঠীর ঐক্য ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, অমুসলিমদের মনে ইসলাম ও মুসলমানদের প্রতি ঘৃণা সঞ্চারিত হয়­ এমন ছবি বানানো হচ্ছে কার স্বার্থে?
প্রস্তাবিত ব্ল্যাক ছবির পরিচালক একজন অত্যন্ত বিতর্কিত ব্যক্তি এবং ইসরাইলি লবির লোক বলে গণ্য। তিনি যদি এটা তৈরি করেন এবং বিভিন্ন ভাষায় ডাবিং করে বিদেশে ছড়িয়ে দেন­ তবে তা সারা বিশ্বে বাংলাদেশের ইসলাম ও মুসলিম সম্পর্কে ভুল বার্তা পৌঁছে দেবে। আরব বিশ্বেও বাংলাদেশ সম্পর্কে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে, যা মুসলিম ভ্রাতৃপ্রতিম সম্পর্ককে করবে ক্ষতিগ্রস্ত। সম্প্রদায়গত ঐক্য বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় আরব দেশগুলো এ ধরনের ছবি তাদের দেশে প্রদর্শনের অনুমতি দিতে পারে না।
রাষ্ট্রীয় সাম্প্রদায়িক শান্তিপূর্ণ সহাবস্খান নিশ্চিত করতে ধর্মপ্রাণ মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ও অন্যান্য ধর্মমতাবলম্বী সবাইকে একযোগে এগিয়ে আসতে হবে­ এসব অশুভ উদ্যোগ প্রতিরোধে। ব্ল্যাকের মতো ছবি শুধু জাতিগত হিংসাবিদ্বেষ ঘৃণাই জন্ম দিতে পারে, ভালোবাসা নয়।
১০টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শৈল্পিক চুরি

লিখেছেন শেরজা তপন, ০১ লা জুন, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭


হুদিন ধরে ভেবেও বিষয়টা নিয়ে লিখব লিখব করে লিখা হচ্ছে না ভয়ে কিংবা সঙ্কোচে!
কিসের ভয়? নারীবাদী ব্লগারদের ভয়।
আর কিসের সঙ্কোচ? পাছে আমার এই রচনাটা গৃহিনী রমনীদের খাটো... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কোথায় বেনজির ????????

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা জুন, ২০২৪ দুপুর ১২:০৫




গত ৪ মে সপরিবারে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে পাড়ি দিয়েছেন সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ। সঙ্গে আছেন তার স্ত্রী ও তিন মেয়ে। গত ২৬ মে তার পরিবারের সকল স্থাবর সম্পদ... ...বাকিটুকু পড়ুন

‘নির্ঝর ও একটি হলুদ গোলাপ’ এর রিভিউ বা পাঠ প্রতিক্রিয়া

লিখেছেন নীল আকাশ, ০১ লা জুন, ২০২৪ দুপুর ১:৫৭



বেশ কিছুদিন ধরে একটানা থ্রিলার, হরর এবং নন ফিকশন জনরার বেশ কিছু বই পড়ার পরে হুট করেই এই বইটা পড়তে বসলাম। আব্দুস সাত্তার সজীব ভাইয়ের 'BOOKAHOLICS TIMES' থেকে এই বইটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিতর্ক করার চেয়ে আড্ডা দেয়া উত্তম

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ০১ লা জুন, ২০২৪ রাত ১১:২৬

আসলে ব্লগে রাজনৈতিক, ধর্মীয় ইত্যাদি বিতর্কের চেয়ে স্রেফ আড্ডা দেয়া উত্তম। আড্ডার কারণে ব্লগারদের সাথে ব্লগারদের সৌহার্দ তৈরি হয়। সম্পর্ক সহজ না হলে আপনি আপনার মতবাদ কাউকে গেলাতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে প্রাণ ফিরে এসেছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০১ লা জুন, ২০২৪ রাত ১১:৩৪



ভেবেছিলাম রাজিবের অনুপস্হিতিতে সামু রক্তহীনতায় ভুগবে; যাক, ব্লগে অনেকের লেখা আসছে, ভালো ও ইন্টারেষ্টিং বিষয়ের উপর লেখা আসছে; পড়ে আনন্দ পাচ্ছি!

সবার আগে ব্লগার নীল আকাশকে ধন্যবাদ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×