somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ও আমার বন্ধু , আমার নির্ভেজাল ভালোবাসারা (কমলগঞ্জ কলেজ এর সহপাঠী এবং প্রিয় বন্ধু ! দ্বিতীয়অংশ

২৫ শে মার্চ, ২০১১ সকাল ৭:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কতোটা পথ অতিক্রম করলে
আমি আবার মানুষ হবো ?
একজন শুদ্ধ মানুষ !

প্রিয় এ কবিতা হারিয়ে গেছে । যে বয়সে মানুষ প্রেমের কবিতায় স্বপ্ন আঁকে সেই সতেরো বছর বয়সে আমি পরিপূর্ণ মানুষ হবার চিন্তা করতাম । যথেষ্ট আবেগী আমি , এখনও ।তাইতো ভালো বন্ধু পেয়েছি জীবনে । যদিও আমায় দেখে সবাই ভাবতো খুব অহঙ্কারী , যেই না মিশেছে অমনি সব ভুলের মরণ হয়েছে ।

পরের দিন রায়হান স্যারের ক্লাশে অনেক ছেলে - মেয়ে । আমার পাশে নাসিমা , অন্য পাশে নাহার । আমরা ছিলাম "এন কিউব"। রোল কল হচ্ছে এমন সময় আমার কোলে একটা কাগজের গোল্লা । আমি ধরার আগেই ছোঁ মেরে নাসিমা নিয়ে নিলো ।অবাক দৃষ্টি ! কি হলো কিচ্ছুই বুঝলাম না । ক্লাশ শেষ হবার পর একটা রাগত স্বর :

ওই কোন বান্দোরে এই কাজ করসে রে ? শালা সামনে আয় । মেয়ে দেখলেই প্রেম করতে সাধ জাগে , না ?"
----"এই নাসিমা কি হলো রে ? এসব বাজে কথা বলতে হয়না , ছিঃ !"

একটা ছেলে (পরে জেনেছি তার নাম হিরণ ) আমায় প্রেমপত্র দিয়েছে তাই নাসিমার এতো রাগ । ও যে অসম্ভব রাগী এটা সবাই জানতো , এতে আমারও লাভ হয়েছিলো কেউ আমায় ঘাটাতো না । ওই ঘটনার পরে ক্লাশের বেশ কিছু ছেলেও ক্ষেপে গেলো । ওদের কথা হলো আমরা সবাই বন্ধু । ওসব প্রেমপত্র আর কখনো কাউকে দেয়া যাবেনা । সেদিনই বন্ধুত্ত্ব হলো শওকত (কিপ্টুস নং এক , পুরো কলেজ জীবনে একমাত্র সৌভাগ্যবতী আমি-ই যে পাঁচটি টাকার খাবার খেয়েছিলাম , সবাই কে অবাক করে দিয়ে ), আব্দুল আহাদ মিনার (বোন নেই বলে আমায় দিদি ডাকলো , আমার বাপি - মামনি কে বাপি - মামনি ডাকতো । বর্তমানে সে ওয়ার্কাস পার্টির নেতা , শামসুল হক মিন্টু (খুব শান্ত - শিষ্ট এবং গুছানো ছেলে ), কাইয়ূম (মজার ছেলে , আমি দিনে তাকে কতোটা মারলাম তার হিসাব করতো ), আবুল (স্মাইলিং ফেস ), বদরুল (প্রচন্ড রাগী , রাগলে মুখ লাল হয়ে যেতো । অদ্ভূত এই যে রাগের সময় আমি দাঁড়ালে রাগ শেষ , জমসেদ (দুষ্টুমি করতো যথেষ্ট বোঝা যেতো না ), বুরহান খুব ভালো , সৎ ছেলে আওয়ামী রাজনীতি করে , কিন্তু নিজের
কোনো স্বার্থ কাজ করে না , এমন নেতায় দেশ ভরলে দেশ আজ কোথায় থাকতো । বয়সে বড়ো , কিন্তু আমাদের বন্ধুত্ত্বটা অনেক আন্তরিক এখনও, তপন, শাহাবুদ্দিন (বর্তমানে ডাঃ ), মাহবুবুর রহমান বেলাল সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু আমার , লোক আমাদের কতোবার যে প্রেমিক জুটি আখ্যা দিয়েছে আর কতোবার বিয়ে করিয়েছে , তবুও আমাদের বন্ধুত্ত্বের নির্ভেজাল ভালোবাসায় কোনো দাগ পড়েনি ,জাহাঙ্গীর শান্ত প্রকৃতির কিন্তু হাসতো প্রাণখোলা , গুলজার মজাদার একটা ছেলে যার সাথে থাকলে অনেক কষ্ট মিলিয়ে যায় , সত্যবাবু আমার মনিপুরী বন্ধু যার হাসিটা খুব সহজ ভালোবাসার আর তার মুখে আমার নামটা শুনতে খুব ভালো লাগতো ।

বেলালের সাথে বন্ধুত্ত্বটা হলো একেবারে নাটকীয়তায় । রসায়ন ক্লাশে বিশ্বজিৎ স্যার রোল কল করছেন , যেই আশি নম্বর এলো , স্যার জানতে চাইলেন এই নম্বরের ছেলেটা কে ? এখন পর্যন্ত তাকে তিনি দেখেননি । যেই নাম জানলাম বললাম , "স্যার ওকে তো দেখি সারাদিন আড্ডাই মারে । বাজে , বদমাশ ছেলে । সায়েন্স এর ছাত্রই শুধুই নামে , কাজে নয় ।" সেদিন তো গেলো । পরেরদিন সবাইকে আমাদের বাসায় আসতে বললাম , ২৮ আগষ্ট ছিলো আমার জন্মদিন । ভেবেছিলাম কলেজে ওঠার পর প্রথম জন্মদিন আর বাপি - মামনির সাথে সবার পরিচয় করিয়ে দেবো । নাসিমা , পপি , লিলিসহ কয়েকজন মেয়ে এসেছিলো । আর চা' বাগানে বাপির সহকর্মীরা । রাত ৯টা বেজে গেলো কেক তখনো কাটা হয়নি বন্ধুরা আসবে । নাসিমাই বললো ওরা কেউ আসবে না । বেলাল কে কেউ কিছু বললে সবাই তাকে নাকি পরিহার করে । শুনে মনটা এতোটাই খারাপ হলো যে আমি কাঁদতে পারিনা বলেই কেমন অস্থির লাগছিলো । বাপি - মামনি সামলে নিলো । আর আমার পরে এতোটাই রাগ উঠলো (রাগলে আমি এখনও মারাত্মক হয়ে যাই রীতিমতো সবাই ভয় পায় ) যে পরের দিন কলেজ গিয়েই ধরলাম মিন্টু কে এভাবে আমায় অপমান করা কি তাদের উচিত হয়েছে ? তখনই জানলাম সেদিন স্যারের ক্লাশে বেলাল কে অমন বলায় সবাই একযোগে আমায় বয়কট করেছে । চরম রাগ তখন মাথায় , গেলাম বেলালের সামনে জানতে চাইলাম স্যারকে যা বলেছি তা কি ভুল ছিলো ? আর এই বলার জন্য সবার সামনে একজন বন্ধুকে অপমান করতে পারলো কি করে ? সে একটু থতোমতো খেলো :"আমি তো তাদের যেতে না করিনি ! ওরা আমার জন্য না গেলে আমি কি করতে পারি ?" তখন আমি বললাম , "বন্ধু হয়ে আমন্ত্রণ করেছিলাম বন্ধুকে , ক্লাশের জন্য সম্পর্ক যে গড়তে পারেনা তার কাছে বন্ধুত্ত্বর দাবী করাই বৃথা । আর কোনোদিন তোমার ভালো - মন্দে এই নীলাঞ্জনা নিজেকে জড়াবে না " ---- বলে সরে তো এলাম । বিকেলে বাসায় এলাম । ও মা সন্ধ্যায় দেখি সবাই এসেছে । জীবনের দ্বিতীয় সারপ্রাইজ । প্রথমটি ছিলো প্রাথমিক বৃত্তি পাবার পর বাসায় ফিরে আচমকা পার্টি । সেদিন বন্ধুরা বলেছিলো বাপি - মামনিকে :"আঙ্কেল - আন্টি নীলা কে নিয়ে চিন্তা করবেন না । প্র্যাক্টিক্যাল সন্ধ্যায় শেষ হলেও ওকে দিয়ে যাবো ।" সত্যি এরপর থেকে আমরা কখন যে "তুই" এ চলে এসেছি , নির্ভর করে গেছি আর শুদ্ধ ভালোবাসায় বন্দী হয়েছি । মনে নেই ।বেলাল কম মার খায়নি , আমিও খেয়েছি হাত মুচড়ে ধরতো । বাপিকে বলতাম হাত ব্যথা ওই বেলালটা ব্যথা দিয়েছে বাপি । বাপিও বলতো :"তুই দিস কেন ? তোরও তো হাত চলে , না মারলে কেউ কি সাধে মারে ?" বাপির বুকে মাথা রেখে বলতাম "কি করবো রাগ উঠলে ?"

বন্ধু তোর মনে আমায় রাখিস
কি রাখবি ?
স্বার্থহীন ভালোবাসা দিলাম
কে , কি বলে ? কি এসে যায় !
পুরোনো দিন হবে যখন
এই সময়গুলো
ব্যস্ততায় ডুববি
তখনও জানিস এই আমি তোরই কথা ভাবছি

সেই বাস-এ বসে লেখা এই রাফ লেখাটা এভাবে সত্য হয়ে যাবে , তখন ভাবিনি । আমি এখনও তাদের ভুলতে পারিনি । আমি চাই ও না ভুলতে ..........

নীলাঞ্জনা নীলা

ক্রমশ------

ল্যুভেন - লা - ন্যুউভ , বেলজিয়াম
০৪ - ০২ - ১০ ইং
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মার্চ, ২০১১ সকাল ৭:৫১
২০টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×