somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

‌'টেস্টটিউব বেবী' - ভোরের কাগজ

২৪ শে মার্চ, ২০১১ রাত ৮:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

‘ইন-ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন’ শব্দটি কিছুটা খটমটে এবং অনেকের কাছে অপরিচিত ঠেকলেও ‘টেস্টটিউব বেবী’- এখন আর এদেশে অপরিচিত কোন শব্দ নয়। যে পদ্ধতিতে টেস্ট টিউব বেবীর জন্ম হয় তার নাম ইন-ভিট্রো ফারটিলাইজেশন (আইভিএফ)। সোজা বাংলায় দেহের বাইরে নিষিক্তকরণ। প্রকৃতপক্ষে ভ্রƒণ টেস্টটিউবে বেড়ে ওঠে না, বাড়ে মায়ের জরায়ুতেই, অন্য আর দশটি বাচ্চার মতোই। এ পদ্ধতিতে পুরুষের শুক্রাণু আর নারীর ডিম্বাণুর নিষিক্তকরণটুকুই শুধু স্বাভাবিক পদ্ধতিতে না হয়ে দেহের বাইরে হয়। এ পদ্ধতিতে স্ত্রীর ডিম্বপাত বা ওভুলেশনের সময়, ডিম্বাণু যখন পরিপক্ক হয়, তখন তা ডিম্বাশয় থেকে বের করে আনা হয় ল্যাপারোস্কপি নামের এক পদ্ধতির মাধ্যমে। তা রাখা হয় টেস্ট টিউব অথবা বিশেষ ধরণের একটি পাত্রে যার নাম পেট্রিডিশ। এদিকে স্বামীর শুক্রাণু সংগ্রহ করে প্রক্রিয়াজাত করা হয়। পরে ডিম্বাণুসহ সেই ডিশ বা টিউবে শুক্রাণু রাখা হয়। এরপর ডিশ বা টিউবটি কয়েক ঘন্টা রাখা হয় ইনকিউবিটরে। ইনকিউবেটরের পরিবেশ রাখা হয় জরায়ুর অনুরূপ। এখানে শুক্রাণু আর ডিম্বাণুর নিষেকের ফলে মানবভ্রƒণের সৃষ্টি হয়। তারপর বিশেষ নলের সাহায্যে স্ত্রীর জরায়ুতে রাখা হয় ভ্রƒণটি।
ভ্রƒণটি যদি জরায়ুতে সংস্থাপিত হয় তাহলে এর পরের ঘটনা ঘটতে থাকে স্বাভাবিক গর্ভধারণের মতোই। মাতৃগর্ভে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় নিষেকের ফলে যেসব ভ্রƒণ বেড়ে ওঠে, তেমন করেই বেড়ে ওঠে টেস্টটিউব বেবীও। বাচ্চার প্রসবও স্বাভাবিকভাবেই হতে পারে অথবা দরকার হতে পারে সিজারিয়ান অপারেশনের। জন্ম নেয়া শিশুরা অস্বাভাবিক কিছু নয়, তারাও অন্যান্য শিশুর মতোই স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠে। কিছু গবেষণায় অবশ্য বলা হয়েছে, স্বাভাবিকভাবে জন্ম নেয়া শিশুদের চেয়ে টেস্টটিউব শিশুদের বিকলাঙ্গতা ও বিরল রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশী।
অনেক ক্ষেত্রেই এ প্রক্রিয়ায় একসাথে একাধিক অর্থাৎ দুই-তিন বা চারজন শিশু জন্ম নেবার কথা শোনা যায়। এর কারণ হচ্ছে, সাধারণত এ পদ্ধতিতে জরায়ুতে একাধিক ভ্রƒণ রাখা হয়। একটি ভ্রƒণ কোনভাবে বেড়ে উঠতে ব্যর্থ হতেও পারে এ আশংকাতেই এটি করা হয়। একাধিক ভ্রƒণ একই সাথে বেড়ে উঠলে তখন জন্ম হয় একাধিক শিশুর।
যেসব কারণে এ পদ্ধতির আশ্রয় নেয়া হয় তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- নারীর টিউবাল ডিফেক্ট বা ডিম্বনালীর সমস্যা। ওভুলেশনের সময় পরিপক্ক ডিম্বাণু সাধারণত ডিম্বনালীতে শুক্রাণুর সাথে নিষিক্ত হয় এবং এর মাধ্যমেই ভ্রƒণ জরায়ুতে প্রবেশ করে। জন্মগতভাবে বা রোগের কারণে এই নালী সঙ্কুচিত হলে, নষ্ট হলে, এর মুখ বন্ধ হয়ে গেলে বা দেয়ালের নমনীয়তা নষ্ট হয়ে গেলে কিন্তু ডিম্বাশয় ঠিক থাকলে এ পদ্ধতি ব্যবহার করা যায়। অন্যদিকে স্বামীর কার্যকর শুক্রাণুর সংখ্যা কম থাকলে বা জরায়ুর মুখ থেকে ডিম্বনালী পর্যন্ত প্রয়োজনীয় শুক্রাণু যেতে অসমর্থ হলেও এ পদ্ধতি সন্তান জন্মদানে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
বিশ্বে এ পদ্ধতিতে প্রথম শিশুর জন্ম হয় ইংল্যান্ডের ম্যানচেষ্টারে, ১৯৭৮ সালে। ২৫ জুলাই রাত এগারোটা ৪৭ মিনিটে ওল্ডহ্যাম এন্ড ডিস্ট্রিক্ট জেনারেল হাসপাতালে ডাঃ এডওয়ার্ডস ও স্ত্রীরোগ বিশেসজ্ঞ ডাঃ প্যাট্রিক স্টেপটোর তত্ত্বাবধানে জন্ম নেয় ২.৬১ কেজি (৫ পাউন্ড ১২ আউন্স) ওজনের এই ঐতিহাসিক কন্যাশিশুটি। শিশুর নাম রাখা হয় লুইস ব্রাউন। মা লেসলি ব্রাউনের গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপ জনিত এক ধরণের রোগ থাকায় শিশুটির জন্ম হয় সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে। ডিম্বনালী বন্ধ থাকায় লেসলি ব্রাউন ইন-ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন পদ্ধতি গ্রহণ করেন। সেই লুইস জয় ব্রাউন ২০০৬ সালের ২১ ডিসেম্বর প্রায় ছয় পাউন্ড ওজনের এক সুস্থ ছেলে শিশুর জন্ম দিয়েছেন স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায়। আর ২০১০ সালে চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন ইন-ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (আইভিএফ) প্রযুক্তির জনক বর্তমানে ব্রিটেনের ক্যামব্রীজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক রবার্ট জি এডওয়ার্ডস।
আইভিএফ প্রযুক্তির মাধ্যমে টেস্টটিউব বেবী জন্ম নেয়ার বিষয়টিকে ‘আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের মাইলফলক’ বলে অভিহিত করেছেন নোবেল পুরস্কার কমিটি। নোবেল কমিটির ভাষ্যমতে, পৃথিবীর শতকরা ১০ ভাগের বেশী দম্পতি স্বাভাবিক পদ্ধতিতে সন্তান জন্মদানে অক্ষম। অতীতে সন্তানহীন বন্ধ্যা দম্পতিরা সারা জীবন ভুগতেন বিষন্নতায়, হতাশায়। তাদের জন্য কার্যকর কোন ওষুধও তেমন ছিল না। কিন্তু হতাশার এই চিত্রটি বদলে গেছে আইভিএফ প্রযুক্তির সফলতার পর। বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ৪০ লাখ টেস্ট টিউব বেবী রয়েছে বলে কমিটি জানায়। তবে, এডওয়ার্ডসকে নোবেল পুরস্কার দেয়ায় সমালোচনার রবও উঠেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে সোচ্চার ভ্যাটিকান। ভ্যাটিকান ইন-ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন পদ্ধতিকে অনৈতিক মনে করে, কারণ, তাদের ভাষ্যমতে এ প্রক্রিয়ায় বিপুল সংখ্য্যক ভ্রƒণ নষ্ট করা হয়।
...........
ভোরের কাগজ ২৪-৩-১১ পরামর্শ পাতায় প্রকাশিত।


১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্যামুয়েল ব্যাকেট এর ‘এন্ডগেম’ | Endgame By Samuel Beckett নিয়ে বাংলা ভাষায় আলোচনা

লিখেছেন জাহিদ অনিক, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৮



এন্ডগেম/ইন্ডগেইম/এন্ডগেইম- যে নামেই ডাকা হোক না কেনও, মূলত একটাই নাটক স্যামুয়েল ব্যাকেটের Endgame. একদম আক্ষরিক অনুবাদ করলে বাংলা অর্থ হয়- শেষ খেলা। এটি একটা এক অঙ্কের নাটক; অর্থাৎ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রায় ১০ বছর পর হাতে নিলাম কলম

লিখেছেন হিমচরি, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১

জুলাই ২০১৪ সালে লাস্ট ব্লগ লিখেছিলাম!
প্রায় ১০ বছর পর আজ আপনাদের মাঝে আবার যোগ দিলাম। খুব মিস করেছি, এই সামুকে!! ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরায় পার হয়েছে! আশা করি, সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যাঙ দমনের নেপথ্যে এবং রাষ্ট্রীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের সমন্বয়

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৭


ব্যাঙ দমনের বাংলায় একটা ইতিহাস আছে,খুবই মর্মান্তিক। বাংলাদেশে বহুজাতিক কোম্পানির কোন সার কেনা হতো না। প্রাচীন সনাতনী কৃষি পদ্ধতিতেই ভাটি বাংলা ফসল উৎপাদন করতো। পশ্চিমবঙ্গ কালক্রমে ব্রিটিশদের তথা এ অঞ্চলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পজ থেকে প্লে : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

লিখেছেন বন্ধু শুভ, ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:১৫


.
একটা বালক সর্বদা স্বপ্ন দেখতো সুন্দর একটা পৃথিবীর। একজন মানুষের জন্য একটা পৃথিবী কতটুকু? উত্তর হচ্ছে পুরো পৃথিবী; কিন্তু যতটা জুড়ে তার সরব উপস্থিতি ততটা- নির্দিষ্ট করে বললে। তো, বালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামে ভুল থাকলে মেজাজ ঠিক থাকে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৫


বেইলি রোডে এক রেস্তোরাঁয় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে একজন একটা পোস্ট দিয়েছিলেন; পোস্টের শিরোনামঃ চুরান্ত অব্যবস্থাপনার কারনে সৃষ্ট অগ্নিকান্ডকে দূর্ঘটনা বলা যায় না। ভালোভাবে দেখুন চারটা বানান ভুল। যিনি পোস্ট দিয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×