পেশাগত কারণে আজ স্টেডিয়ামে যেতে হয়েছিল, ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও। স্টেডিয়ামে গিয়ে কিছু ব্যাপার অনুধাবন করতে পেরেছি। সেই উপলব্ধিগুলো আমাকে সুখি করতে পারেনি, বরং হতাশায় কাঁদিয়েছে।
গ্যালারিতে আজ ২৩,৩৫০ জন দর্শক ছিলো, এর ভেতর সম্ভবত ২৩,৩০০ জনই ছিলো পাকিস্তানের সাপোর্টার। সাপোর্ট করতেই পারে, কিন্তু এই বাংলাদেশে জন্ম নেয়া হাজার হাজার নারী-পুরুষ যেভাবে পাক সার জমিন সাদ বাদ বাজানোর সময় চাঁন-তারা খচিত পতাকা উড়িয়ে দাঁড়িয়ে উল্লাস করলো, যেভাবে সারামুখে পাকিস্তানের পতাকা এঁকে নিয়ে আসলো, যেভাবে উর্দুতে শ্লোগান দিলো, "পাকিস্তান জিতেগা, পাকিস্তান জিতেগা" বলে গলা ফাটালো, প্রেসবক্সে বসে, গ্যালারিতে গিয়ে আমি বারবার দ্বন্দ্বে পড়েছি। আমি কি ঢাকার মিরপুর স্টেডিয়ামে আছি নাকী লাহোর বা ইসলামাবাদে? যখন বুঝেছি নাহ, মিরপুরেই তো খেলা হচ্ছে তখন নতুন করে দ্বিধায় পড়েছি, আজ কি পাকিস্তানের খেলা হচ্ছে এখানে, নাকী বাংলাদেশের?!!?
অনেকেই বলেন, খেলার ভেতর রাজনীতি না আনতে! খেলা কখনোই রাজনীতির বাইরে নয়। রাজনীতি কী, তা আগে ভালো করে বুঝুন। ১৯৪৭-১৯৭১ এর শোষণ, ৫২, ৬২, ৬৬, ৭১ কিভাবে মূল্যহীন হয়ে গেছে মাত্র ৪০ বছরেই তা বুঝলাম। লাখ লাখ শহীদের রক্ত, মা-বোনদের ইজ্জতের বিনিময়ে স্বাধীনতা, মহান মুক্তিযুদ্ধ সবই বৃথা।
আজ আমার কয়েকজন পরিচিতজন খেলা দেখতে গিয়েছিলেন ব্ল্যাকে টিকিট কেটে। তারা কেউই বাংলাদেশের ৬টা ম্যাচের একটিও দেখতে যান নি। এই ধরণের মানুষের সংখ্যা আজ অনেক ছিল, যারা নিজের দেশের পতাকা নিয়ে, গালে লাল-সবুজ এঁকে বাংলাদেশের একটা ম্যাচও দেখতে যান নি। বিশেষত রমনীরা। এদেরকে আপনি কি বলবেন?? ওয়াকার ম্যাচশেষে বলেছেন, "আমরা তো মনে হলো নিজেদের মাটিতেই খেলেছি!" কি বুঝলেন?
বুঝলাম, ৭১ সালে পাক সেনাদের রেখে যাওয়া উত্তরসুরীদের সংখ্যা এখন অনেক। তাদের সাথে মুক্তিযোদ্ধার রক্তও মিশে যাচ্ছে নীরবে। বাংলাদেশের ভবিষৎ কী, তা নিয়ে এখন আবারো ভাবছি।