somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পশু বিবেক জাগ্রত হোক!

২২ শে মার্চ, ২০১১ রাত ৯:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পশুরা খুব বেশী সভা সমিতি করেনা। এ সবে তাদের বিশ্বাস নেই, সুযোগও হয় না খুব একটা। পশু তো, তাই। সারাদিন গাধার খাটুনি, অবলা গরুর হাল বাওয়া, কুকুর তাড়া আর ছাগল পিটুনি খেয়ে তাদের ুধার অন্ন জোগার করতেই সময় বয়ে যায়। তাই আড্ডা মারা, ফুর্তি টুর্তি করা বা সভা সমাবেশ করার ফরসুত তাদের হয়না, অবশ্য একবার একটা বড় সভা হয়েছিল ‘ফুড কনফারেন্স’ নামে। আবুল মনসুর আহমদের লেখা থেকে আমরা তা জানতে পারি। সে অনেক দিন আগে।
আজকে আবার এমনি একটা সভা ডাকার কথা তারা সাংঘাতিক ভাবে অনুভব করল।
পশুদের পে সভা ডাকা সহজ কথা নয়। তাদের কোন সভা করার ময়দান নাই। বাস্তবে তাদের নিজেদের কোন ঘর দোরই তো নাই। মানুষের ঘরেই তারা স্থান করে নেয়, দয়ালু মানুষ কিছু খেতে টেতে দিলে তারা খায়। অবশ্য যারা জংগলে থাকে তাদের কথা ভিন্ন। বাস্তবে জংগলের পশুদের সাথে মানব সমাজের পশুদের খুব একটা দেখা সাাত নাই, মিল মিশ ও নাই। জংগলের পশুরা গৃহপালিত পশুদের ঠাট্টা করে ডাকে নপংশুক, বলে এরা পশু সমাজের কলংক। স্বাধীনতা বিক্রি করে পশুদের ব্যক্তিত্ব (পশুর ভাষায়- পশুত্ব) বিলিন করে মানুষের করুনায় জীবন কাটায় বলে বনের পশুরা মনুষ্য সমাজের পশুদেরকে তাদের সমাজে ঠাঁই দিতে চায় না। অপর পে মানুষের সমাজে বাস করা পশুদের একটা অহংকার হল ,এরা খোদার সৃষ্টির মধ্যে সেরা সৃষ্টি মানুষের কাছে থাকে। মেনে নিতেই হয় যে মানুষ সবচে উন্নত প্রাণী। অনেক কিছু আবিস্কার করেছে। এসব আবিস্কারের সুযোগ মানুষের সংগে থাকার সুবাদে তারাও ভোগ করতে পারে । বনের পশুরা জংগলের প্রতিকুল পরিবেশে মানবেতর (পশুদের ভাষায়- পশুবেতর) জীবন কাটাতে বাধ্য হয়। সভ্যতার কোন ছোয়াঁই তাদের জীবনে নাই। যদিও মানুষের অনেক অত্যাচার অবিচার নিরবে সয়ে যায় মনুষ্য সমাজের পশুরা, তবে এসব ঘটনা বেশী প্রচার করে না তারা, পাছে বনের পশুরা জানতে পারলে আরো বেশী সমালোচনা মুখর হয়ে উঠে ।
কিন্তু আজ তাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকেছে। বনের পশু আর গৃহপালিত পশু তাই এক হয়ে সভা ডেকেছে। পশু হলেও তাদের একটা মর্যাদা আছে। মার কাট আপত্তি নাই। মানুষ হয়ে জন্মেছ, তাই বড় বলে মানি, গলাটা তোমাদের ছুড়ির তলে দিয়ে জীবন উৎসর্গও করি, কিন্তু তাই বলে আমাদের আত্মসম্মানটুকুও কেড়ে নেবে তোমরা ?!

সভার সময় ঠিক হলো- মধ্যরাত। কেননা এসময় মানবকুল বেঘোরে ঘুমায়। দ’ুএকজন মাতাল আর চোর ছেঁচর কেবল জেগে থাকে। তারা কেউ পশুদের সভা নিয়ে মাথা ঘামাবে না। মাতালরাতো বুঝবেই না কি কথা হচ্ছে। আর চোরেরা বরাবরই তাদের কর্মে অতিশয় আন্তরিক। দু’একজন পুলিশ থাকতে পারে। বরং পুলিশ থাকলে ভালই হয়। বলাতো যায়না, টের পেয়ে মানুষরা যদি সভায় হামলা করে বা বোমা ফাটায়। মানুষেরা আবার এসব কাজে পটু। তা ছাড়া পশু সমাজে পুলিশ বাহিনী নাই (না থাকাটা একদিক দিয়ে ভালই)। সভার স্থান ঠিক হল- ঈদগাহ মাঠ। স্থান ঠিক করতে বেশ ভাবতে হয়েছে। টাউন হলে স্থান সংকুলান হবে না। আর ঈদগাহ মাঠের বিষয়ে পশুদের কেউ কেউ বললো, মানুষদের উপাসনাস্থলে সভা হলে মানুষেরা শেষে কিনা ফতোয়া দিয়ে বসে। একটা চালাক চতুর রামছাগল ছিল, যেমনি সংস্কৃতিমনা তেমনি বুদ্ধিমান। সে বললো, এতে কি, আমিতো ঈদগাহে দেখেছি গরু ভাইরা আর ছাগলমনিরা ঘাস খায়। মানুষতো আপত্তি করেনা। সবাই বললো, ঠিকইতো, আমরাও তা দেখেছি। এভাবে আলোচনা করে ভেন্যু ঠিক হয়ে গেল। তারিখ ঠিক হল- পহেলা মে। মে দিবসে তারিখ ঠিক হতেই ছাগলেরা ম্যা ম্যা করে সায় দিল। তারিখটা ঠিক করেছিলেন পশুদের দলপতি, পাশব গরুনন্দ খোয়ারী। তিনি সমবেত ছাগলদের বললেন-
ম্যা ম্যা করে সায়তো দিলে, বুঝেছ কি কিছু? কেন পহেলা মে কে বেছে নিলাম?
সব ছাগল চুপ। পাশব গরুনন্দ খোয়ারী এই অঞ্চলে পশুদের একছত্র নেতা। খোয়ারী তার উপাধী। একবার ুধার জ্বালায় দড়ি ছিড়ে এক খেপাটে মানুষের তরকারী েেত লতাপাতা খেতে গিয়ে ধরা পরে তাকে খোয়ারে যেতে হয়েছিল। তিন দিন তিন রাত খোয়ারে ছিলেন তিনি । জেলে গেলে মানুষের হয় রাজনৈতিক জীবনের সূচনা, আর গরুদের খোয়ারে গেলে হয়- অনুসূচনা। খোয়ারে গিয়ে গরুনন্দের একটা পবিত্র খোয়াব দেখার সৌভাগ্য হয়। এতে তার দিব্য দৃষ্টি খুলে যায়। সেই থেকে তার চলনে বলনে ভাবনা চিন্তায় উন্নত মানসিকতার (পশুদের ভাষায়- পাশবিকতার) পরিচয় পেয়ে পশুরা তাকে বিনা ভোটে, বিনা তর্কে নেতা মেনে নেয়।
মে দিবসের ভাবনা ও চেতনার ভিতর পশুরা নেপথ্যে বিদ্যমান। আর্ন্তজাতিক ভাবে এই প্রথম পশুদের খাটাখাটনির মূল্যায়ন করা হয়। শ্রমিকেরা পশুর মত খাটছে, এ কথা উচ্চারণ করে পশুদের খাটা খাটনিকে প্রথম বাবের মত স্বীকৃতি দেয়া হয়। এ জন্যেই পশু সমাজে মে দিবসের গুরুত্ব মানব সমাজের চেয়ে কোন অংশে কম নয়। বরং বেশী। এ কারনেই মে দিবসকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য দিনটি বেছে নেয়া হয়েছে। গরুনন্দের কথা শুনে সমবেত পশু পরিষদ তার জ্ঞানের গভীরতায় গাভীর মত গম্ভির হয়ে গেল।
যথারীতি সভার কাজ শুরু হল। পশুদের সভার কিছু সুবিধা রয়েছে। প্রচলিত অর্থে তাদের কোন ধর্ম নাই? অধর্মও নাই, এমনকি ভিন্ন ধর্মও নাই। একটি অতি ুদ্র শ্লোকই তাদের জাতিয় বানী। কবে কখন এ বানী তারা শিখেছিল এ ইতিহাস অজানা। ইতিহাস নিয়ে গবেষনা লব্ধ টানাটানির মগজ তাদের নাই, বোধ হয় উৎসাহও তেমন নাই। মতা পেলে ইতিহাস বদলে ফেলার তাড়নাও তাদের নাই। কাজ করতেই তারা বেশী পছন্দ করে। অবশ্য এর বাইরে তাদের আর কিইবা করার আছে। একটি মাত্র শ্লোক বাক্যেই সকল পশুসমাজ যুগলবন্দী। বলা চলে এটাই তাদের ধর্মবাণী কিংবা মর্মবানী অথবা জাতিয় ম্লোক। আর তা হল-
“খাইতে হইলে সইতে হইবে,
আইছি ভবে বইতে হইবে।”
পশুর সভার নিয়ম হল, সমস্বরে এ শ্লোক উচ্চারনের পর সরাসরি বক্তব্য উপস্থাপন করা । পশুর সভার যিনি সভাপতি তিনিই একমাত্র বক্তা, অন্যরা শ্রোতা ও একান্ত প্রয়োজনে সংযোজন বা পরামর্শ দাতা। তাদের সমাজে ডজন ডজন বুদ্ধিজীবি না থাকায় তারা শুনে বেশী, বলে কম। কাজেই মঞ্চে একগাদা নেতা পশুকে ডেকে তোলার বালাইও নাই, এত সব গুনী পশুর গুনগান করে বক্তব্য দীর্ঘায়িত করারও ঝামেলা নাই।

সমস্বরে ‘শ্লোকবাক্য’ পাঠের পর গরুনন্দ খোয়ারী ভূমিকা ছাড়াই ভ্যা ভ্যা করে মাইক্রোফোন পরীা করে, বক্তব্য শুরু করলেন-
আজ একটি গুরুত্বপুর্ণ বিষয়ে সভা ডেকেছি, পশুদের মান ইজ্জতের উপর হামলা হচ্ছে, তাই সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে, মূল বক্তব্যে যাবার আগে কুকুর ভাইদের ও কুকুরী বোনদের দু পায়ে দাঁড়াতে বলছি।
কুকুর কুকুরীরা তাই করলো। গরুনন্দ বললেন-
দেখো, কুকুর কুকুরী ভাইবোনেরা, রাতে পশুদের কোন মানুষ মনিবের ঘরে কাজ থাকেনা, এটাও রাতে সভা ডাকার একটা কারন, কেবল তোমরা ছাড়া, তোমাদের কাজ হল রাতে মনিবের বাড়ী পাহারা দেয়া। এ কাজেই তোমাদের অন্ন প্রাপ্তি। অন্নটা হালাল করে খেতে হবে, সভায় হাজিরা হয়ে গেছে, এখন আপন আপন কাজে জলদি হাজিরা দাও। সভার বিষয়বস্তু তোমাদেরকে অবশ্যই পরে জানানো হবে।
কুকুরেরা বললো- ঠিকই বলেছেন মহামান্য খোয়ারী হুজুর, আমরা নিমকহারামী শিখি নাই।
এ বলে তারা যার যার কাজে চলে গেল। এবার গরুনন্দ মূল আলোচনা শুরু করলেন। সবাই মনোযোগ দিয়ে তা শুনতে লাগলো।
পশুদের প্রতিনিধি গরুনন্দ সেদিন যা বললেন তার সারসংপে মানুষের জ্ঞ্যাতার্থে এখানে তুলে ধরছি। কারণ বিষয়টি জনগুরুত্বপুর্ণ। কেননা এখানে মানব সমাজকে সরাসরি আক্রমন করা হয়েছে। তিনি বলেন, বেশ কিছুকাল যাবৎ মানুষেরা পশু সমাজকে মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে, পত্রপত্রিকায়, এমনকি আলোচনা-বক্তৃতায়। তিনি আরো বলেন-
আমরা বা আমাদের পূর্বপুরুষ বোমা বানাইনি, মানুষেরা তা বানিয়ে অন্য মানুষদের হাজারে হাজারে মেরে ফেলে বলছে এ হল পাশবিক কাজ। তারা গণতন্ত্র ও সুবিবেচনার ধারক হিসাবে একটা জাতিসংঘ বানিয়েছে, সেখানে গণতন্ত্রের ‘গ’ ও নাই, একটা মোড়ল দেশ যেভাবে চালায় সংঘটাও ঐ ভাবেই চলে, মোড়লটা যখন যাকে খুশি হামলা করে, নিধন করে, আবার এতসব নাশকতাপূর্ণ কাজ করেই শুধু শান্ত নয়, কে সহিংস ও কে অহিংস এই সংজ্ঞাও মোড়লটাই দেয়। এতসব বাদই দিলাম, নিজ দেশের দিকে চলো এবার তাকাই। এই বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের অর্জন, আমরা পশুরাও মুক্তিযুদ্ধে না খেয়ে আগুনে পুড়ে, বোমার আঘাতে হাজারে হাজারে প্রাণ দিয়েছি। জংগলে মুক্তিযোদ্ধা ভেবে পাক হানাদার আমাদের গুলি করে মেরেছে, বহু রক্তে অর্জিত এই দেশে আজ কি হচ্ছে? বর্ননা করতে আমাদের লজ্জা হয়। মানুষ মানুষকে কেটে কয়েক টুকরা করে বস্তায় ভরে পানিতে ফেলে দিচ্ছে, পুড়িয়ে জনসমুদ্রে রাজপথে জীবন্ত মানুষ হত্যা করে কয়লা বানিয়ে ফেলা হচ্ছে, এসিড দিয়ে মেয়েদের মুখ ঝলসানো হচ্ছে, দিন দুপুরে মানুষ মানুষকে পিটিয়ে মেরে স্লোগান দিয়ে চলে যাচ্ছে। (এই সময় সমবেত একটি ধনি উঠল, ছি...) । মাতা পরপুরুষের সঙ্গে ফস্টিনষ্টি করতে গেলে সন্তান যখন জেগে উঠল, জন্মদায়ী সেই ডাইনী মা সন্তানকে গলাটিপে হত্যা করে ফেললো।(সমবেত ধনি, ইস.. )। শিশুকে গনধর্ষন করে মেরে ফেলা, স্ত্রী হত্যা, স্বামী হত্যা, কাজের মেয়ে হত্যা, শিশু অপহরণ করে ধর্ষন, মুক্তিপন না পেয়ে স্কুল ছাত্রকে মেরে ফেলা, এসব এখন মানুষের কাছে অতি সাধারণ ঘটনা। স¤প্রতি ছেলে তার মাকে মেরে ফেলেছে কম্পিউটার থেকে গেইম মুছে ফেলার দায়ে। উপাসনালয় কিংবা সভায় অথবা উৎসব সমাবেশে বোমা মেরে মানুষ তাদেরই জাতি ভাইকে হত্যা করেছে, পা হাত মাথা উড়ে গিয়ে রক্তের বন্যা যখন বইছে তখন এসব নিয়েও হচ্ছে রাজনীতি। তাদের নেতাদের কয়েকটা চরিত্রের কথা শোন। মতা পেলে তারা খামচে ধরে। খেতে পেলে তারা এত বেশী প্লেটে তুলে নেয় যে শেষে বমি করে , আমাদের বাঘ-সিংহের স্বভাবেও যা নাই। তারা নেয়ার সময় দরাজ দিল, দেয়ার সময় কিপটা। আমাদের পশুদের মৃত্যু হলে হয় তথাস্থ, আর মানুষের হয় যথাস্থ। কাফন পড়ে তারা এ দুঃখ নিয়ে শেষ যাত্রায় যায় যে, কাফনে পকেট থাকে না। তারা হাত নাড়ে তিন সময়- মঞ্চে উঠে, লাল দালানে যাবার সময় আর লাল দালান থেকে বের হবার সময়। তাদের প্রতিহিংসা প্রবনতা এখন এমনই সর্বগ্রাসী যে বিবেক বিবেচনারও আর বালাই নাই।
এতসব জঘন্য কাজের বিবরণ দিতে আমাদের লজ্জা ও ঘৃনা হয়। আমাদের পূর্ব পুরুষেরা বাপের জনমেও এইসব নৃসংশতা চোখে দেখেনি। কপাল দোষে আমরা এখন তা দেখছি। মানুষ এই সব কু কাজ করে, আর বলে কিনা- এ হলো নাকি পাশবিক কাজ। বড়ই আপত্তিকর ,বড়ই অপমানকর। এ হলো আমাদের সমাজের উপর জঘন্য জুলুম। আমরা অতীতে এমন সব কাজ করিনি, এখনও করি না, ভবিষ্যতেও করবো না। নিশ্চই এসব পাশবিক কাজ নয়, এগুলো হল ‘মানবিক কাজ’। এ পর্যায়ে সবাই সমস্বরে ‘জাতিয় শ্লোক’ উচ্চরণ করলো-
“খাইতে হইলে সইতে হইবে,
আইছি ভবে বইতে হইবে।”
গরুনন্দের কথাগুলো সমবেত পশুসমাজ পিনপতন নিস্তদ্ধতায় শুনছিল।এই প্রথম তারা রাগে দুঃখে অপমানে নিয়ম ভেংগে একই সভায় দুইবার ‘জাতিয় শ্লোক’ উচ্চরন করলো, এবং গরুনন্দ মহাশয়ও এতে আপত্তি করলেন না। এ পর্যায়ে অনুমতি নিয়ে এক শিয়াল পন্ডিত বললো -আমাদের এর বিরুদ্ধে হরতাল করা উচিত, প্রতিবাদ করা উচিত। গরুনন্দ মুখ খেঁচিয়ে বললেন-
শেয়ালটা খেপেছে, রাতে আহার হয়নিতো তাই মাথা গুলিয়ে গেছে তার, তাকে একটু খাবার দে, আরে বুদ্ধু, হরতাল তো এমনিতরো আরেকটা মানবিক কাজ, হরতাল করবো কোন দুঃখে, না খেয়ে মরতে? নিজের পায়ে নিজে কুড়াল! তবে হ্যা, যদিও আমাদের প্রকাশ্যে প্রতিবাদ মুখর হওয়া উচিত কিন্তু তার সুযোগ নাই। আমরা পশু হয়ে জন্মেছি, একথা ভুললে চলবে না। এ সভা ডাকার উদ্দেশ্য ভিন্ন। উদ্দেশ্য কি শুনতে চাও তোমরা?
সবাই বললো- অবশ্যই জনাব।
পাষব গরুনন্দ খোয়ারী তখন বললেন, মানুষ আমাদেরকে দেখে যেন শিখে সে ব্যবস্থা আমরা করবো, তা হলেই তাদের বোধদয় হবে। আজকাল অনেক কিছুই তারা আমাদের দেখে শিখছে । যেমন ধরো, শিশু পালনের কথা। আমাদের সমাজে নিজের সন্তানকে মা তার দুধই খাওয়ায়, মানুষের দুধ খাওয়ায় না, মানুষ কিন্তু তাদের শিশুকে আমাদের অর্থাৎ গাভীর দুধ খাওয়ায়, তাদের মায়েদের নাকি দুধ থাকে না, এখন আমাদের দেখে দেখে তাদের সমাজের ডাক্তাররা জিগির দিয়ে শিখাচ্ছে, মায়ের দুধ মানব শিশুর জন্য, গাভীর দুধ বাছুরের জন্য। এমনি আরোও অনেক কিছুই তারা আমাদের সন্তান লালন পালন করা থেকে শিখছে। পাখীদের সমাজের একটি প্রাণী হলো কাক। একটি কাক পানিতে পড়লে হাজার কাক কা কা করে তাকে সাহায্যের চেষ্টা করে, বেচারা কাকেরা প্রযুক্তির অভাবে কিছু করতে না পেরে চিৎকার করে মানুষের সাহায্য চায় । আমাদের সাহায্য করবে তো দূরের কথা, সগোত্রিয় মানুষ ছিনতাইকারী বা সন্ত্রাসীর কবলে পড়লেও অপর মানুষ আপন জান নিয়ে পালায়। এমনকি কেউ অসুস্থ হয়ে কাতরালেও তাকে সাহায্যের জন্য মানুষ এগিয়ে আসেনা। আজ আমাদের পশু বিবেক জাগ্রত হোক। আমরা যেন এসব মানবিক কাজের ধারে কাছেও না যাই। খাদ্য নিয়ে কামড়া কামড়ি না করে আগে শিশু ও মহিলাদের দিতে হবে। আমাদের কোন কাজে মানুষ ত্যাক্ত হয়ে যেন ঘৃনাভাবে আমাদের উপমা না টানতে পারে।
সবশেষে গরুনন্দ বললেন, যত কথাই বলিনা কেন সকল মানুষ সমান নয়, সকল সমাজও নষ্ট নয়। এখনও অধিকাংশ মানবকুলই কুলিন্য বজায় রেখেছে। মানুষের মানবিকতায়ই আমরা বাঁচি ও উন্নত জীবন পাই। মানুষ আমাদের জন্য হাসপাতাল বানিয়েছে, আমাদের দুঃখেও তাদের কেউ কেউ ব্যাথা পায় ,কাঁদে। মানুষ ও পশু একে অন্যর উপর নির্ভরশীল, এ দুনিয়াকে সুন্দর ও বাসযোগ্য করতে সবারই ভূমিকা আছে।
বক্তব্য শেষ হয়েছে বুঝতে পেরে রামছাগলটা আবার ম্যা ম্যা করে বললো ‘এই সুন্দর সভার বক্তব্যগুলি কাঁঠাল পাতার মতই সুস্বাদু। একটা প্রেস রিলিজ দেয়া অতিব জরুরী’। শুনে গরুনন্দ বিরক্তভরা কন্ঠে বললেন ‘এই সেড়েছে, ছাগলতো আবার সব কিছুকে খাদ্য মনে করে, এজন্যই তো মানুষে বলে- ছাগলে কিনা খায়, পাগলে কিনা কয়’। ছাগলটাকে গরুনন্দ মহাশয় বললেন, ‘তুমিও একটু সংযত হও বাপু’ , প্রেস রিলিজের কথা ভালই বলেছ, কিন্তু প্রেসার না দিলে যে প্রেস রিলিজও ঠিক মত যায় না, তা বোধ হয় ভুলে গেছ । তবে আশা করি তার প্রয়োজন হবে না। কেননা কোন রাতজাগা পাতি কাকের মতো পাতি লেখক তার লেখার বিষয়বস্তু খুঁজতে গিয়ে নিশ্চয়ই এ গভীর রাতে ঘুম মারা চোখে বারান্দায় পায়চারী করছে। তিনি অবশ্যই আমাদের সভা শুনছেন, কালই দেখো তার কলমের খোঁচায় এ লেখা উঠে আসবে কোন না কোন পত্রিকার পাতায়।
##


ইকবাল আনোয়ার

পশুরা খুব বেশী সভা সমিতি করেনা। এ সবে তাদের বিশ্বাস নেই, সুযোগও হয় না খুব একটা। পশু তো, তাই। সারাদিন গাধার খাটুনি, অবলা গরুর হাল বাওয়া, কুকুর তাড়া আর ছাগল পিটুনি খেয়ে তাদের ুধার অন্ন জোগার করতেই সময় বয়ে যায়। তাই আড্ডা মারা, ফুর্তি টুর্তি করা বা সভা সমাবেশ করার ফরসুত তাদের হয়না, অবশ্য একবার একটা বড় সভা হয়েছিল ‘ফুড কনফারেন্স’ নামে। আবুল মনসুর আহমদের লেখা থেকে আমরা তা জানতে পারি। সে অনেক দিন আগে।
আজকে আবার এমনি একটা সভা ডাকার কথা তারা সাংঘাতিক ভাবে অনুভব করল।
পশুদের পে সভা ডাকা সহজ কথা নয়। তাদের কোন সভা করার ময়দান নাই। বাস্তবে তাদের নিজেদের কোন ঘর দোরই তো নাই। মানুষের ঘরেই তারা স্থান করে নেয়, দয়ালু মানুষ কিছু খেতে টেতে দিলে তারা খায়। অবশ্য যারা জংগলে থাকে তাদের কথা ভিন্ন। বাস্তবে জংগলের পশুদের সাথে মানব সমাজের পশুদের খুব একটা দেখা সাাত নাই, মিল মিশ ও নাই। জংগলের পশুরা গৃহপালিত পশুদের ঠাট্টা করে ডাকে নপংশুক, বলে এরা পশু সমাজের কলংক। স্বাধীনতা বিক্রি করে পশুদের ব্যক্তিত্ব (পশুর ভাষায়- পশুত্ব) বিলিন করে মানুষের করুনায় জীবন কাটায় বলে বনের পশুরা মনুষ্য সমাজের পশুদেরকে তাদের সমাজে ঠাঁই দিতে চায় না। অপর পে মানুষের সমাজে বাস করা পশুদের একটা অহংকার হল ,এরা খোদার সৃষ্টির মধ্যে সেরা সৃষ্টি মানুষের কাছে থাকে। মেনে নিতেই হয় যে মানুষ সবচে উন্নত প্রাণী। অনেক কিছু আবিস্কার করেছে। এসব আবিস্কারের সুযোগ মানুষের সংগে থাকার সুবাদে তারাও ভোগ করতে পারে । বনের পশুরা জংগলের প্রতিকুল পরিবেশে মানবেতর (পশুদের ভাষায়- পশুবেতর) জীবন কাটাতে বাধ্য হয়। সভ্যতার কোন ছোয়াঁই তাদের জীবনে নাই। যদিও মানুষের অনেক অত্যাচার অবিচার নিরবে সয়ে যায় মনুষ্য সমাজের পশুরা, তবে এসব ঘটনা বেশী প্রচার করে না তারা, পাছে বনের পশুরা জানতে পারলে আরো বেশী সমালোচনা মুখর হয়ে উঠে ।
কিন্তু আজ তাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকেছে। বনের পশু আর গৃহপালিত পশু তাই এক হয়ে সভা ডেকেছে। পশু হলেও তাদের একটা মর্যাদা আছে। মার কাট আপত্তি নাই। মানুষ হয়ে জন্মেছ, তাই বড় বলে মানি, গলাটা তোমাদের ছুড়ির তলে দিয়ে জীবন উৎসর্গও করি, কিন্তু তাই বলে আমাদের আত্মসম্মানটুকুও কেড়ে নেবে তোমরা ?!

সভার সময় ঠিক হলো- মধ্যরাত। কেননা এসময় মানবকুল বেঘোরে ঘুমায়। দ’ুএকজন মাতাল আর চোর ছেঁচর কেবল জেগে থাকে। তারা কেউ পশুদের সভা নিয়ে মাথা ঘামাবে না। মাতালরাতো বুঝবেই না কি কথা হচ্ছে। আর চোরেরা বরাবরই তাদের কর্মে অতিশয় আন্তরিক। দু’একজন পুলিশ থাকতে পারে। বরং পুলিশ থাকলে ভালই হয়। বলাতো যায়না, টের পেয়ে মানুষরা যদি সভায় হামলা করে বা বোমা ফাটায়। মানুষেরা আবার এসব কাজে পটু। তা ছাড়া পশু সমাজে পুলিশ বাহিনী নাই (না থাকাটা একদিক দিয়ে ভালই)। সভার স্থান ঠিক হল- ঈদগাহ মাঠ। স্থান ঠিক করতে বেশ ভাবতে হয়েছে। টাউন হলে স্থান সংকুলান হবে না। আর ঈদগাহ মাঠের বিষয়ে পশুদের কেউ কেউ বললো, মানুষদের উপাসনাস্থলে সভা হলে মানুষেরা শেষে কিনা ফতোয়া দিয়ে বসে। একটা চালাক চতুর রামছাগল ছিল, যেমনি সংস্কৃতিমনা তেমনি বুদ্ধিমান। সে বললো, এতে কি, আমিতো ঈদগাহে দেখেছি গরু ভাইরা আর ছাগলমনিরা ঘাস খায়। মানুষতো আপত্তি করেনা। সবাই বললো, ঠিকইতো, আমরাও তা দেখেছি। এভাবে আলোচনা করে ভেন্যু ঠিক হয়ে গেল। তারিখ ঠিক হল- পহেলা মে। মে দিবসে তারিখ ঠিক হতেই ছাগলেরা ম্যা ম্যা করে সায় দিল। তারিখটা ঠিক করেছিলেন পশুদের দলপতি, পাশব গরুনন্দ খোয়ারী। তিনি সমবেত ছাগলদের বললেন-
ম্যা ম্যা করে সায়তো দিলে, বুঝেছ কি কিছু? কেন পহেলা মে কে বেছে নিলাম?
সব ছাগল চুপ। পাশব গরুনন্দ খোয়ারী এই অঞ্চলে পশুদের একছত্র নেতা। খোয়ারী তার উপাধী। একবার ুধার জ্বালায় দড়ি ছিড়ে এক খেপাটে মানুষের তরকারী েেত লতাপাতা খেতে গিয়ে ধরা পরে তাকে খোয়ারে যেতে হয়েছিল। তিন দিন তিন রাত খোয়ারে ছিলেন তিনি । জেলে গেলে মানুষের হয় রাজনৈতিক জীবনের সূচনা, আর গরুদের খোয়ারে গেলে হয়- অনুসূচনা। খোয়ারে গিয়ে গরুনন্দের একটা পবিত্র খোয়াব দেখার সৌভাগ্য হয়। এতে তার দিব্য দৃষ্টি খুলে যায়। সেই থেকে তার চলনে বলনে ভাবনা চিন্তায় উন্নত মানসিকতার (পশুদের ভাষায়- পাশবিকতার) পরিচয় পেয়ে পশুরা তাকে বিনা ভোটে, বিনা তর্কে নেতা মেনে নেয়।
মে দিবসের ভাবনা ও চেতনার ভিতর পশুরা নেপথ্যে বিদ্যমান। আর্ন্তজাতিক ভাবে এই প্রথম পশুদের খাটাখাটনির মূল্যায়ন করা হয়। শ্রমিকেরা পশুর মত খাটছে, এ কথা উচ্চারণ করে পশুদের খাটা খাটনিকে প্রথম বাবের মত স্বীকৃতি দেয়া হয়। এ জন্যেই পশু সমাজে মে দিবসের গুরুত্ব মানব সমাজের চেয়ে কোন অংশে কম নয়। বরং বেশী। এ কারনেই মে দিবসকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য দিনটি বেছে নেয়া হয়েছে। গরুনন্দের কথা শুনে সমবেত পশু পরিষদ তার জ্ঞানের গভীরতায় গাভীর মত গম্ভির হয়ে গেল।
যথারীতি সভার কাজ শুরু হল। পশুদের সভার কিছু সুবিধা রয়েছে। প্রচলিত অর্থে তাদের কোন ধর্ম নাই? অধর্মও নাই, এমনকি ভিন্ন ধর্মও নাই। একটি অতি ুদ্র শ্লোকই তাদের জাতিয় বানী। কবে কখন এ বানী তারা শিখেছিল এ ইতিহাস অজানা। ইতিহাস নিয়ে গবেষনা লব্ধ টানাটানির মগজ তাদের নাই, বোধ হয় উৎসাহও তেমন নাই। মতা পেলে ইতিহাস বদলে ফেলার তাড়নাও তাদের নাই। কাজ করতেই তারা বেশী পছন্দ করে। অবশ্য এর বাইরে তাদের আর কিইবা করার আছে। একটি মাত্র শ্লোক বাক্যেই সকল পশুসমাজ যুগলবন্দী। বলা চলে এটাই তাদের ধর্মবাণী কিংবা মর্মবানী অথবা জাতিয় ম্লোক। আর তা হল-
“খাইতে হইলে সইতে হইবে,
আইছি ভবে বইতে হইবে।”
পশুর সভার নিয়ম হল, সমস্বরে এ শ্লোক উচ্চারনের পর সরাসরি বক্তব্য উপস্থাপন করা । পশুর সভার যিনি সভাপতি তিনিই একমাত্র বক্তা, অন্যরা শ্রোতা ও একান্ত প্রয়োজনে সংযোজন বা পরামর্শ দাতা। তাদের সমাজে ডজন ডজন বুদ্ধিজীবি না থাকায় তারা শুনে বেশী, বলে কম। কাজেই মঞ্চে একগাদা নেতা পশুকে ডেকে তোলার বালাইও নাই, এত সব গুনী পশুর গুনগান করে বক্তব্য দীর্ঘায়িত করারও ঝামেলা নাই।

সমস্বরে ‘শ্লোকবাক্য’ পাঠের পর গরুনন্দ খোয়ারী ভূমিকা ছাড়াই ভ্যা ভ্যা করে মাইক্রোফোন পরীা করে, বক্তব্য শুরু করলেন-
আজ একটি গুরুত্বপুর্ণ বিষয়ে সভা ডেকেছি, পশুদের মান ইজ্জতের উপর হামলা হচ্ছে, তাই সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে, মূল বক্তব্যে যাবার আগে কুকুর ভাইদের ও কুকুরী বোনদের দু পায়ে দাঁড়াতে বলছি।
কুকুর কুকুরীরা তাই করলো। গরুনন্দ বললেন-
দেখো, কুকুর কুকুরী ভাইবোনেরা, রাতে পশুদের কোন মানুষ মনিবের ঘরে কাজ থাকেনা, এটাও রাতে সভা ডাকার একটা কারন, কেবল তোমরা ছাড়া, তোমাদের কাজ হল রাতে মনিবের বাড়ী পাহারা দেয়া। এ কাজেই তোমাদের অন্ন প্রাপ্তি। অন্নটা হালাল করে খেতে হবে, সভায় হাজিরা হয়ে গেছে, এখন আপন আপন কাজে জলদি হাজিরা দাও। সভার বিষয়বস্তু তোমাদেরকে অবশ্যই পরে জানানো হবে।
কুকুরেরা বললো- ঠিকই বলেছেন মহামান্য খোয়ারী হুজুর, আমরা নিমকহারামী শিখি নাই।
এ বলে তারা যার যার কাজে চলে গেল। এবার গরুনন্দ মূল আলোচনা শুরু করলেন। সবাই মনোযোগ দিয়ে তা শুনতে লাগলো।
পশুদের প্রতিনিধি গরুনন্দ সেদিন যা বললেন তার সারসংপে মানুষের জ্ঞ্যাতার্থে এখানে তুলে ধরছি। কারণ বিষয়টি জনগুরুত্বপুর্ণ। কেননা এখানে মানব সমাজকে সরাসরি আক্রমন করা হয়েছে। তিনি বলেন, বেশ কিছুকাল যাবৎ মানুষেরা পশু সমাজকে মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে, পত্রপত্রিকায়, এমনকি আলোচনা-বক্তৃতায়। তিনি আরো বলেন-
আমরা বা আমাদের পূর্বপুরুষ বোমা বানাইনি, মানুষেরা তা বানিয়ে অন্য মানুষদের হাজারে হাজারে মেরে ফেলে বলছে এ হল পাশবিক কাজ। তারা গণতন্ত্র ও সুবিবেচনার ধারক হিসাবে একটা জাতিসংঘ বানিয়েছে, সেখানে গণতন্ত্রের ‘গ’ ও নাই, একটা মোড়ল দেশ যেভাবে চালায় সংঘটাও ঐ ভাবেই চলে, মোড়লটা যখন যাকে খুশি হামলা করে, নিধন করে, আবার এতসব নাশকতাপূর্ণ কাজ করেই শুধু শান্ত নয়, কে সহিংস ও কে অহিংস এই সংজ্ঞাও মোড়লটাই দেয়। এতসব বাদই দিলাম, নিজ দেশের দিকে চলো এবার তাকাই। এই বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের অর্জন, আমরা পশুরাও মুক্তিযুদ্ধে না খেয়ে আগুনে পুড়ে, বোমার আঘাতে হাজারে হাজারে প্রাণ দিয়েছি। জংগলে মুক্তিযোদ্ধা ভেবে পাক হানাদার আমাদের গুলি করে মেরেছে, বহু রক্তে অর্জিত এই দেশে আজ কি হচ্ছে? বর্ননা করতে আমাদের লজ্জা হয়। মানুষ মানুষকে কেটে কয়েক টুকরা করে বস্তায় ভরে পানিতে ফেলে দিচ্ছে, পুড়িয়ে জনসমুদ্রে রাজপথে জীবন্ত মানুষ হত্যা করে কয়লা বানিয়ে ফেলা হচ্ছে, এসিড দিয়ে মেয়েদের মুখ ঝলসানো হচ্ছে, দিন দুপুরে মানুষ মানুষকে পিটিয়ে মেরে স্লোগান দিয়ে চলে যাচ্ছে। (এই সময় সমবেত একটি ধনি উঠল, ছি...) । মাতা পরপুরুষের সঙ্গে ফস্টিনষ্টি করতে গেলে সন্তান যখন জেগে উঠল, জন্মদায়ী সেই ডাইনী মা সন্তানকে গলাটিপে হত্যা করে ফেললো।(সমবেত ধনি, ইস.. )। শিশুকে গনধর্ষন করে মেরে ফেলা, স্ত্রী হত্যা, স্বামী হত্যা, কাজের মেয়ে হত্যা, শিশু অপহরণ করে ধর্ষন, মুক্তিপন না পেয়ে স্কুল ছাত্রকে মেরে ফেলা, এসব এখন মানুষের কাছে অতি সাধারণ ঘটনা। স¤প্রতি ছেলে তার মাকে মেরে ফেলেছে কম্পিউটার থেকে গেইম মুছে ফেলার দায়ে। উপাসনালয় কিংবা সভায় অথবা উৎসব সমাবেশে বোমা মেরে মানুষ তাদেরই জাতি ভাইকে হত্যা করেছে, পা হাত মাথা উড়ে গিয়ে রক্তের বন্যা যখন বইছে তখন এসব নিয়েও হচ্ছে রাজনীতি। তাদের নেতাদের কয়েকটা চরিত্রের কথা শোন। মতা পেলে তারা খামচে ধরে। খেতে পেলে তারা এত বেশী প্লেটে তুলে নেয় যে শেষে বমি করে , আমাদের বাঘ-সিংহের স্বভাবেও যা নাই। তারা নেয়ার সময় দরাজ দিল, দেয়ার সময় কিপটা। আমাদের পশুদের মৃত্যু হলে হয় তথাস্থ, আর মানুষের হয় যথাস্থ। কাফন পড়ে তারা এ দুঃখ নিয়ে শেষ যাত্রায় যায় যে, কাফনে পকেট থাকে না। তারা হাত নাড়ে তিন সময়- মঞ্চে উঠে, লাল দালানে যাবার সময় আর লাল দালান থেকে বের হবার সময়। তাদের প্রতিহিংসা প্রবনতা এখন এমনই সর্বগ্রাসী যে বিবেক বিবেচনারও আর বালাই নাই।
এতসব জঘন্য কাজের বিবরণ দিতে আমাদের লজ্জা ও ঘৃনা হয়। আমাদের পূর্ব পুরুষেরা বাপের জনমেও এইসব নৃসংশতা চোখে দেখেনি। কপাল দোষে আমরা এখন তা দেখছি। মানুষ এই সব কু কাজ করে, আর বলে কিনা- এ হলো নাকি পাশবিক কাজ। বড়ই আপত্তিকর ,বড়ই অপমানকর। এ হলো আমাদের সমাজের উপর জঘন্য জুলুম। আমরা অতীতে এমন সব কাজ করিনি, এখনও করি না, ভবিষ্যতেও করবো না। নিশ্চই এসব পাশবিক কাজ নয়, এগুলো হল ‘মানবিক কাজ’। এ পর্যায়ে সবাই সমস্বরে ‘জাতিয় শ্লোক’ উচ্চরণ করলো-
“খাইতে হইলে সইতে হইবে,
আইছি ভবে বইতে হইবে।”
গরুনন্দের কথাগুলো সমবেত পশুসমাজ পিনপতন নিস্তদ্ধতায় শুনছিল।এই প্রথম তারা রাগে দুঃখে অপমানে নিয়ম ভেংগে একই সভায় দুইবার ‘জাতিয় শ্লোক’ উচ্চরন করলো, এবং গরুনন্দ মহাশয়ও এতে আপত্তি করলেন না। এ পর্যায়ে অনুমতি নিয়ে এক শিয়াল পন্ডিত বললো -আমাদের এর বিরুদ্ধে হরতাল করা উচিত, প্রতিবাদ করা উচিত। গরুনন্দ মুখ খেঁচিয়ে বললেন-
শেয়ালটা খেপেছে, রাতে আহার হয়নিতো তাই মাথা গুলিয়ে গেছে তার, তাকে একটু খাবার দে, আরে বুদ্ধু, হরতাল তো এমনিতরো আরেকটা মানবিক কাজ, হরতাল করবো কোন দুঃখে, না খেয়ে মরতে? নিজের পায়ে নিজে কুড়াল! তবে হ্যা, যদিও আমাদের প্রকাশ্যে প্রতিবাদ মুখর হওয়া উচিত কিন্তু তার সুযোগ নাই। আমরা পশু হয়ে জন্মেছি, একথা ভুললে চলবে না। এ সভা ডাকার উদ্দেশ্য ভিন্ন। উদ্দেশ্য কি শুনতে চাও তোমরা?
সবাই বললো- অবশ্যই জনাব।
পাষব গরুনন্দ খোয়ারী তখন বললেন, মানুষ আমাদেরকে দেখে যেন শিখে সে ব্যবস্থা আমরা করবো, তা হলেই তাদের বোধদয় হবে। আজকাল অনেক কিছুই তারা আমাদের দেখে শিখছে । যেমন ধরো, শিশু পালনের কথা। আমাদের সমাজে নিজের সন্তানকে মা তার দুধই খাওয়ায়, মানুষের দুধ খাওয়ায় না, মানুষ কিন্তু তাদের শিশুকে আমাদের অর্থাৎ গাভীর দুধ খাওয়ায়, তাদের মায়েদের নাকি দুধ থাকে না, এখন আমাদের দেখে দেখে তাদের সমাজের ডাক্তাররা জিগির দিয়ে শিখাচ্ছে, মায়ের দুধ মানব শিশুর জন্য, গাভীর দুধ বাছুরের জন্য। এমনি আরোও অনেক কিছুই তারা আমাদের সন্তান লালন পালন করা থেকে শিখছে। পাখীদের সমাজের একটি প্রাণী হলো কাক। একটি কাক পানিতে পড়লে হাজার কাক কা কা করে তাকে সাহায্যের চেষ্টা করে, বেচারা কাকেরা প্রযুক্তির অভাবে কিছু করতে না পেরে চিৎকার করে মানুষের সাহায্য চায় । আমাদের সাহায্য করবে তো দূরের কথা, সগোত্রিয় মানুষ ছিনতাইকারী বা সন্ত্রাসীর কবলে পড়লেও অপর মানুষ আপন জান নিয়ে পালায়। এমনকি কেউ অসুস্থ হয়ে কাতরালেও তাকে সাহায্যের জন্য মানুষ এগিয়ে আসেনা। আজ আমাদের পশু বিবেক জাগ্রত হোক। আমরা যেন এসব মানবিক কাজের ধারে কাছেও না যাই। খাদ্য নিয়ে কামড়া কামড়ি না করে আগে শিশু ও মহিলাদের দিতে হবে। আমাদের কোন কাজে মানুষ ত্যাক্ত হয়ে যেন ঘৃনাভাবে আমাদের উপমা না টানতে পারে।
সবশেষে গরুনন্দ বললেন, যত কথাই বলিনা কেন সকল মানুষ সমান নয়, সকল সমাজও নষ্ট নয়। এখনও অধিকাংশ মানবকুলই কুলিন্য বজায় রেখেছে। মানুষের মানবিকতায়ই আমরা বাঁচি ও উন্নত জীবন পাই। মানুষ আমাদের জন্য হাসপাতাল বানিয়েছে, আমাদের দুঃখেও তাদের কেউ কেউ ব্যাথা পায় ,কাঁদে। মানুষ ও পশু একে অন্যর উপর নির্ভরশীল, এ দুনিয়াকে সুন্দর ও বাসযোগ্য করতে সবারই ভূমিকা আছে।
বক্তব্য শেষ হয়েছে বুঝতে পেরে রামছাগলটা আবার ম্যা ম্যা করে বললো ‘এই সুন্দর সভার বক্তব্যগুলি কাঁঠাল পাতার মতই সুস্বাদু। একটা প্রেস রিলিজ দেয়া অতিব জরুরী’। শুনে গরুনন্দ বিরক্তভরা কন্ঠে বললেন ‘এই সেড়েছে, ছাগলতো আবার সব কিছুকে খাদ্য মনে করে, এজন্যই তো মানুষে বলে- ছাগলে কিনা খায়, পাগলে কিনা কয়’। ছাগলটাকে গরুনন্দ মহাশয় বললেন, ‘তুমিও একটু সংযত হও বাপু’ , প্রেস রিলিজের কথা ভালই বলেছ, কিন্তু প্রেসার না দিলে যে প্রেস রিলিজও ঠিক মত যায় না, তা বোধ হয় ভুলে গেছ । তবে আশা করি তার প্রয়োজন হবে না। কেননা কোন রাতজাগা পাতি কাকের মতো পাতি লেখক তার লেখার বিষয়বস্তু খুঁজতে গিয়ে নিশ্চয়ই এ গভীর রাতে ঘুম মারা চোখে বারান্দায় পায়চারী করছে। তিনি অবশ্যই আমাদের সভা শুনছেন, কালই দেখো তার কলমের খোঁচায় এ লেখা উঠে আসবে কোন না কোন পত্রিকার পাতায়।
##

০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×