somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আদিমতার ফ্রেমে আটকে যায় আধুনিক প্রেম

২২ শে মার্চ, ২০১১ বিকাল ৩:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সূর্যটা ডুবে গেছে বেশ কিছুক্ষণ আগে। দিনের আলো শেষ প্রায়। সাঁঝের অন্ধকারের আলিঙ্গনে দিনের আলো ম্লান হতে চলেছে। শিশির আর বন্যা গায়ে গা মিলিয়ে বসে আছে। দু’জনের মাঝে চুল পরিমাণ ফাঁকা নেই। বন্যা শিশিরের কাঁধে মাথা হেলিয়ে দিয়েছে। হাতের আঙ্গুল ধরে নাড়া চাড়া করে বলছে, আচ্ছা তুমি কবে কি করবে আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না। শিশির বললো, আচ্ছা তুমি কি বুঝাতে চাইছো, স্পষ্ট করে বলো তো? বন্যা বলছে, মনে হচ্ছে কিচ্ছু বোঝো না। ন্যাকা, শোন এসব ঢং ছাড়ো। বিয়ে করবে কবে তাই বলো। এক গাল হাসলো শিশির। বন্যা বললো, হেসো না, প্লিজ আমি তোমাকে সিরিয়াস কোন কথা বললেই তুমি হেসে উড়িয়ে দাও। তুমি বুঝতে পারছো আমি কি বলতে চাচ্ছি? এসব কথা বলতে বলতে কিছুটা উত্তেজিত হয়ে গেল বন্যা। এবার আর মুচকি হাসি নয়। বেশ আওয়াজ করে হা হা করে হেসে উঠলো শিশির। চরম বিরক্তির ছাপ বন্যার চোখে মুখে। সে বলল কি ব্যাপার আমি কি হাসির কমিকস না জোকস বললাম, তুমি দাঁত কেলিয়ে হাসছো। হাসি বন্ধ করে শিশির বললো, রাগলে তোমায় চমৎকার লাগে। আর তুমি ক্ষেপে গেলে তার মাত্রা বাড়াতে আমার কেনো যেনো ভালোলাগে। বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো বন্যা। যাও তোমার সাথে কথা বলে কোন লাভ নেই, তুমি বসে থাকো আমি চললাম বলেই হাঁটা দিলো। শিশির উঠে দাঁড়িয়ে বন্যার হাতটা ধরে বলে, রাগ করো না সোনামণি বলেই বুকে জড়িয়ে ধরল। বন্যা বললো, ছাড়ো আমায়, লাগবে না তোমার ভালোবাসা।

শিশির বললো, এই পিচ্ছি তোমার বিয়ের বয়স হয়েছে? এবার দু’হাতের বাহুতে চেপে ধরলো বন্যাকে। অন্ধকার বেড়েই চলছে। মোবাইলে রিং টোনের আওয়াজে ঘুম ভাঙ্গে বন্যার। স্ক্রীণে জান আমার সেভ করা নামটি ভেসে উঠেছে। কানের কাছে সেল ফোনটি নিয়ে বন্যা বললো, কি ব্যাপার তুমি এত সকালে ফোন দিলে। ও পাশ থেকে শিশির বললো, গুড মর্নিং জান। বন্যা বলল, মানে কী? শিশির বলে, না তুমিতো প্রতিদিন আমাকে ঘুম থেকে জাগাও আজ আমি তোমাকে জাগালাম। বন্যা বললো, আসল কাহিনী বলো সোনার চান? শিশির বলে, কি যা তা বলো, আসল কাহিনী মানে। হু, এতো সকালে তোমার ফোন রহস্যজনক মনে হচ্ছে। শিশির বলে, না শরীরটা বেশি ভাল না জ্বর হয়েছে, তাই তোমাকে জানালাম। সময় পেলে বাসায় এসো এক ফাঁকে। তোমার জ্বর কি খুব বেশি? হু, জ্বরের মাত্রা বাড়ছে, শরীরের টেমপারেচার বেড়ে যাচ্ছে। আমি কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছি তোমার দরদ লাগলে এক ফাঁকে দেখে যেও। আচ্ছা ঠিক আছে, তুমি ঔষধ খাও, আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। তো ঠিক আছে এবার একটা কিস করো। আচ্ছা তোমার না জ্বর? হুম। জ্বরের মধ্যে তোমার মনে এতো রং আসে কোত্থেকে? না, মন চাইলো তাই বললাম।

২ ঘন্টা পার হওয়ার পর বন্যা এসে হাজির। কলিং বেল চাপতেই দরজা খুলে দিল শিশির। রুমে প্রবেশ করতেই দরজা বন্ধ করে দেয়া হলো। বন্যা বলল কি ব্যাপার মিথ্যা বললা কেনো তোমার গায়ে তো ১ ফোটা জ্বরও নেই, গা তো সাপের মতো ঠান্ডা। তুমি আসছ তাই জ্বর চলে গেছে। দেখ চান্দু মিথ্যা বলবা না তোমার জ্বরটর কিছু হয়নি তুমি মিথ্যা বলছ। আর তোমার বাসার লোকজন কোথায়? সবাই খালার বাসায় বেড়াতে গেছে, রাতে আসবে। ও বুঝতে পারছি, তোমার মতলবতো সুবিধার মনে হচ্ছে না, আমি চললাম। শিশির বন্যাকে জড়িয়ে ধরে খাটে শুয়ে পড়ল। বন্যা বলল ছাড়ো প্লিজ, অসভ্যতা করো না দিনে দুপুরে। কে কার কথা শুনে। প্রস্তুুতি চলছে আদিমতার আলিঙ্গনের।

শিশিরের হদিস নেই বেশ কিছুদিন। মোবাইল ও বন্ধ। আসল ব্যাপার কি তা বুঝতে পারছে না বন্যা। একদিন কথা না বলে যে লোক থাকতে পারে না, আজ পাঁচদিন তার কোন যোগাযোগ নেই। ব্যাপারটা কুয়াশাচ্ছ্ন্ন মনে হচ্ছে। শিশিরের বাসার সামনে বন্যা, কলিং বেল টিপতেই সমবয়সি একটা মেয়ে দরজা খুলে বেড়িয়ে এলো। এই মেয়ে তো শিশিরদের বাসায় নয় ভেবে চোখ কপালে উঠার উপক্রম বন্যার। মেয়েটি বলর কাকে চাই? ভাবানার অবসান ঘটিয়ে বন্যা বললো, এই বাসায়...? হুম আমরা থাকি, এই মাসে ভাড়া এসেছি। শিশিররা কোথায় গেছে বলতে পারেন? স্যরি বলতে পারব না, আমি তাদের দেখিওনি চিনিও না, বাসা ফাঁকা হওয়ার দু’দিন পর আমরা উঠেছি। বন্যার মাথাটা কেমন যেন ঘুরছে। সবকিছু অন্ধকারে ঢেকে যাচ্ছে। দেয়ালটা শক্ত করে ধরে দাড়াবার চেষ্টা করছে বন্যা।

বন্যার ধারনা ছিল হয়তো তাড়াহুড়া করে বাসা পরিবর্তন করায় শিশির যোগাযোগ করতে পারেনি। নিশ্চই সে যোগাযোগ করবে। কিন্তুু তার এমন বিশ্বাসের কপালে ছাই দিল শিশির। আজ দেড় মাস হতে চলেছে কোন যোগাযোগ নেই ফোন ও বন্ধ। নিশ্চই ফোনকার্ড পরিবর্তন করেছে। এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বন্যার মন প্রচন্ড খারাপ। কি করবে দিশে পাচ্ছে না। বারান্দায় বসে গত দেড় মাস ধরে শিশিরের মোবাইলে ট্রাই করে যাচ্ছে বন্যা। যদি ফোন খোলা পাওয়া যায়, কিন্তু না, পাওয়া যায় না খোলা। মোবাইল পাশে রেখে চোখ বন্ধ করে ভাবছে কি করা যায়। এর মধ্যে ফোনটা বেজে উঠল। বন্যার চোখে মুখে একটা উচ্ছলতার ছাপ। হয়তো শিশির ফোন করেছে, কিন্তু না, চয়নের নাম্বার ভেসে উঠেছে স্ক্রীনে। চয়ন বন্যার একজন ভালো বন্ধু। ও পাশ থেকে চয়ন যা বলল তা শুনে কানে আর মোবাইল ধরে রাখতে পারল না বন্যা। হাত থেকে পড়ে মেবাইল কয়েকটা ভাগে বিভক্ত হয়ে গেল। আকাশ ভেঙ্গে পড়লো মাথায়। কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। ভাবতেই কেমন গা ঘিনঘিন করছে। এমন নোংড়া কাজ মানুষ করতে পারে। ছিঃ ছিঃ কি লজ্জা।

দরজা বন্ধ করে কন্না করছে বন্যা। মনে খুব কষ্ঠ। বদমায়েশটা এমন একটা কাজ করবে সেটা বুঝতেই পারেনি। ভালবাসার মুখোশ পড়ে বদমায়েশি করে পালিয়ে যাবে এমন পরিস্থিতির জন্য একদম প্রস্তুুত ছিলো না বন্যা। বিষয়টা নিয়ে কয়েক জন ফোন করেছে বন্যাকে। যতটানা লজ্জা পেয়েছে বন্ধুদের ফোন পেয়ে, তার চেয়ে কয়েকগুন বেশি লজ্জা পেয়েছে আজ। বাসায় প্রবেশ করারা পূর্বে পাড়ার ছেলেগুলো পেছন থেকে যে সব বাজে মন্তব্য করে হাসছিলো। আর বলছিল একরাত কত? আইসো বকশিস ও পাইবা। এসব কথা শুনে তখনই মরে যেতে ইচ্ছে করছিল বন্যার। কিন্তু কোন পথ ছিলো না মরার।

বন্যা এখন অন্য এক জগতে বসবাস করছে। অজপাড়াগাঁ, এখানে কেউ চেনে না তাকে। বাঁচ্চাদের লেখাপড়া শেখায়। শুধু তাকে থাকা খাওয়ার বন্দোবস্থো করে দিয়েছে একটা এনজিও। সারাদিন ছোট বাঁচ্চাদের নিয়ে কাটে। তবে রাতটা কোন মতেই কাটতে চায় না। বারাবার মনে পড়ে শিশিরের বদ... কাজটার কথা। মনে মনে গালাগালি করে। মাথায় জেদ চেপে যায় সামনে পেলে হয়তো কামড়ে খেয়ে ফেলবে। এমন নোংরা কাজটা সে কিভাবে করলো। আর করেই তা বাজারজাত করল কি করে। কোন সুস্থ মানুষ পক্ষে একাজ সম্ভব কি করে হয়, তা ভেবে পাচ্ছে না সে। যখন মনে হয় পাড়ার সেই বখাটেগুলো মোবাইল নিয়ে কয়েকটি মাথা ঝটলা পাকিয়ে স্ক্রীনে তাকিয়ে বলে ইস...। ভাবতেই মাথা হেট হয়ে আসে, বন্যা ভাবে হায় আধুনিক প্রেম তুমি আদিমতার ফ্রেমে আটকে গিয়ে, মানুষের মোবাইলে বিচরণ করো। বিষয়টা ভাবতেই গা শিহরে উঠে বন্যার।



০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সচীবদের সম্পর্কে এখন কিছুটা ধারণা পাচ্ছেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ২০ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৭



সামুর ব্লগারদের মাঝে ১ জন সচীব আছেন,(বর্তমানে কর্তব্যরত ) তিনি বর্তমানে লিখছেন; আধামৃত সামুতে তিনি বেশ পাঠক পচ্ছেন; উৎসাহের ব্যাপার! এরচেয়ে আরো উৎসাহের ব্যাপার যে, তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোথাও ছিলো না কেউ ....

লিখেছেন আহমেদ জী এস, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৯




কখনো কোথাও ছিলো না কেউ
না ছিলো উত্তরে, না দক্ষিনে
শুধু তুমি নক্ষত্র হয়ে ছিলে উর্দ্ধাকাশে।

আকাশে আর কোন নক্ষত্র ছিলো না
খাল-বিল-পুকুরে আকাশের ছবি ছিলো না
বাতাসে কারো গন্ধ ছিলোনা
ছিলোনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

নারীবাদ, ইসলাম এবং আইয়ামে জাহেলিয়া: ঐতিহাসিক ও আধুনিক প্রেক্ষাপট

লিখেছেন মি. বিকেল, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৪



আইয়ামে জাহিলিয়াত (আরবি: ‏جَاهِلِيَّة‎) একটি ইসলামিক ধারণা যা ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর আবির্ভাবের পূর্ববর্তী আরবের যুগকে বোঝায়। ঐতিহাসিকদের মতে, এই সময়কাল ৬ষ্ঠ থেকে ৭ম শতাব্দী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

#প্রিয়তম কী লিখি তোমায়

লিখেছেন নীল মনি, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৭:৫১


আমাদের শহর ছিল।
সে শহর ঘিরে গড়ে উঠেছিল অলৌকিক সংসার।
তুমি রোজ তাঁকে যে গল্প শোনাতে সেখানে ভিড় জমাতো বেলা বোস, বনলতা কিংবা রোদ্দুর নামের সেই মেয়েটি!
সে কেবল অভিমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। VF 3 Mini: মাত্র 60 মিনিটে 27 হাজার বুকিং!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২১ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:০৪



আমার ব্যাক্তিগত গাড়ি নেই কিন্তু কর্মসূত্রে বেঞ্জ , ক্যাডিলাক ইত্যাদি ব্যাবহার করার সুযোগ পেয়েছি । তাতেই আমার সুখ । আজ এই গাড়িটির ছবি দেখেই ভাল লাগলো তাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×