somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নোয়াখালী এবং তাদের খাবার।

২১ শে মার্চ, ২০১১ রাত ১০:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


চাকরির জন্য প্রায় দু বছর নোয়াখালীতে কাটাতে হয়েছে। সেখানের কালচার, ঐতিহ্য ইত্যাদি আমার কাছে যেমন লেগেছে। আজকের পর্ব কেবল খাবারের জন্য।

আমি যেহেতু ম্যাসে থাকতাম। প্রায়ই খেতে হতো হোটেলে। তাদের নিজস্ব একটা হোটেল কালচার আছে। নোয়াখালীতে রেস্টুরেন্ট গুলোতে মানুষের ভীড় সব সময় লেগেই থাকে। বিকাল থেকে রাত। একটু কথা বলে বলে যে আয়েশ করে খাব তার কোন সুযোগ নাই। খাওয়া শেষ হওয়ার আগে আর একজন এসে পাশে দাঁড়িয়ে থাকে। আগে কয়েকটা হোটেলের নাম বলে নিই। সবচেয়ে ঐতিহ্য বাহি হলো: মোহাম্মদিয়া হোটেল, সুপার মোহাম্মদীয়া,স্টার হোটেল, কিরন হোটেল, ফরিদ বেকারি, আলামিন... আর নাম মনে করতে পারছি না। কিন্তু সবহোটেলেই খাবার দাবার একেবারে কমন। প্রতিটি হোটেলে খাবার মেনু একটাই। কোন বৈচিত্র নাই। স্বাদ গন্ধও প্রায় এক। তারা সম্ভবত বৈচিত্র পছন্দ করে না। অভ্যস্ত হয়ে যাওয়া তাদের মাঝে প্রবল। ঢাকাকে তারা প্রানপনে নকল করার চেষ্টা করে। নিজস্বতায় তাদের কোন আস্থা আছে বলে মনে হয় না।

নোয়াখালীর খাবারের সাথে ডাল নিয়মিত থাকে। ভাতের সাথে ডালনিয়ে প্রথমে খেতে থাকে , খাবারের শুরুটা এমনই। তাই হোটেল গুলোতে ভাত দেবার পরেই ডাল পরিবেশন করে। আর একটা মজার ব্যাপার হচ্ছে নোয়াখালীর অনেক হোটেলেই ডাল ফ্রী হিসেবে দেয়া হয়। বিনা টাকায় ডাল বিতরনে তারা বেশ উদার। শুকনো ভাত তারা খেতে পারে না। সব কিছু তাই এটু ভেজা ভেজা হতে হয়। পুই শাক তারাও খায় কিন্তু কেবল শাক হিসেবে নয় তরকারি হিসেবে। তেলে ভাজা খাবারের প্রতি তাদের অকর্ষন মনে হয় কিছুটা কম।
বিকালের নাস্তায় তাই পুরি, সিঙ্গারা, সমাচা ইত্যাদি থাকেনা। কখনো যদি পিয়াজো পাওয়া যায় তাও মচমচে নয় কিছুটা সিদ্ধ সিদ্ধ ভাব থাকে। সন্ধা হবার কিছু আগে থেকেই তারা রেস্টুরেন্টে লাইন ধরে। মনে হয় মাইজদী( নোয়াখালী সদর) এর সব লোকই সন্ধার দিকে এক বার রেস্টুরেন্টে খেতে আসে।
সব হোটেল গুলোতেই পরটা খাওয়ার ভীড় থাকে। চা এর সাথে তারা পরটা খায়। এটা মনেহয় তাদের ঐতিহ্যে অংশ। পরটার সাথে অলু ভাজি( অলু কেটে সেদ্ধ) সবচেয়ে বেশি বিক্রিত খাবার। হালিম , নানরুটি, গুরুর মাংস, খাসি ইত্যাদিএ পর্যাপ্ত থাকে প্রায় সব হোটেলে।
প্রত্যেক রেস্টুরেন্ট, হোটেলের সামনেই একটা পান দোকান। এটা তাদের রেস্টুরেন্ট এর একটা অংশ। সব রেস্টুরেন্টের আর একটা ব্যাপার কমন তা হল তাদের খাবার টেবিল গুলো। একটা টেবিলে ছয় থেকে আটটি চেয়ার থাকে। ভীর বাসে যেমন গাদাগাদি থাকতে হয় অনেকটা এমন ভাবেই বসে খাবার খেতে হয়। এভাবে বসে খেতেই সবাই অভ্যস্ত।
কখনো যদি দুপোরে কয়েক জন নিয়ে বসে চা বা কিছু খাচ্ছি , আমাদের পরেই একটা কাস্টমার ঢুকল। সকল টেবিল ফাঁকা থাকলেও সে ভীড় টেবিলে এসে বসবে। আমাদের বলবে একটু সরেন।

হোটেল গুলোতে পর্দা ঘেরা অনেক মহিলা কেবিন থাকে। কেবিনের বাইরে কোন মহিলা কখনো চোখে পরবে না। এমনিতেও কখনো পুরুষ ছাড়া মহিলাদের কখনোই হোটেলে খেতে দেখিনি। মহিলারা শপিং সেন্টার গুলোতে দখল দিয়ে খাবারের দোকান গুলো পুরুষের দ্বায়িত্বে ছেড়ে দিয়েছে।

নোয়াখালীর আর একটি বহুল প্রচলিত খাবার বন রুটি। সকালে বিকালে রাতে সব সময়ই এটি তাদের অলীতে গলীতে সব দোকানে পাওয়া যাবে। বন রুটির মতো ছোলাও তাদের প্রিয় খাবার।

তারা চা খেতে পছন্দ করে। তাদের চা এর একটা বিশেষত্ব হলো সব সময়ই চা থাকবে হালকা গরম। প্রথমে ব্যাপারটা আমার কাছে বুঝতে একটু সময় লাগে। কেবল চা বিক্রর দোকান তাদের খুব কম। অন্য কসমেটিক্স, মনিহারির দ্রব্যাদির সাথেই একটি বা দুটি বড় আকারের ফ্লাক্সে থাকে গড়ম পানি আথবা তৈরি করা চা। এটাই সারাদিন বিক্রি করে থাকে। তাই চা এর তাজা গন্ধ তাদের চা তে কখনো পাই নি।

খাবারের বেলায় আর একটা ব্যাপার বলতে হয়। তারা অতিথীপরায়ন। চা খায় এবং অন্যকে খাওয়াতে পছন্দ করে।

** নোয়াখালী ব্যাপারে তথ্য গত কোন ভুল হলে,জানাবেন । ঠিক করে দেব।
১৯টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নজরুলের চিন্তার কাবা প্রাচ্য নাকি পাশ্চাত্য?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে মে, ২০২৪ ভোর ৫:০৫


কাজী নজরুলের বড় বিপত্তি তিনি, না গোঁড়া ধর্মীয় লোকের কবি আর অতিমাত্রায় বামের কবি, না হোদাই প্রগতিশীলের কবি। তিনি সরাসরি মধ্যপন্থীর। অনেককেই দেখি নজরুলের কিছু কথা উল্লেখ করে বলেন কাফের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিলিস্তিনিদের আত্মদান ধর্মযুদ্ধ নয়; এটি স্বাধীকারের যুদ্ধ

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৬ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৬

বিশ্বব্যাপী মুসলমানরা যেকোন বিষয়কে ধর্মীয় ফ্লেভার দিয়ে উপস্থাপন করে৷ ইসলামের সাথে কতটুকু সম্পৃক্ততা তার ভিত্তিতে কনভারজেন্স নির্ধারিত হয়৷ বাঙালি মুসলমানরা এক্ষেত্রে এক কাঠি ওপরে৷ পক্ষ বিপক্ষ বেছে নেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ওহাবী বাতিল মতবাদের স্বরূপ উন্মোচন

লিখেছেন মীর সাখওয়াত হোসেন, ২৬ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৭

নজদী ওহাবীদের সম্পর্কে আলােচনা করার পূর্বে নজদ দেশ সম্পর্কে আলােকপাত করতে চাই। আরবের মক্কা নগরীর সােজা পূর্ব দিকের একটি প্রদেশের নাম নজদ । এখন উক্ত নজদ দেশটি সৌদি আরবের রাজধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘূর্ণিঝড় রিমাল সর্তকতা।

লিখেছেন কাল্পনিক_ভালোবাসা, ২৬ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩

প্রিয় ব্লগারবৃন্দ,
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় রিমাল প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে এবং ইতিমধ্যে বাংলাদেশের উপকূলের দিকে এগিয়ে আসছে। সংশ্লিষ্ট অঞ্চলগুলোর ব্লগারদের কাছে যদি স্থানীয় ঝড়ের অবস্থা এবং ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিংশ শতাব্দীতে পৃথিবীতে চিরতরে যুদ্ধ বন্ধের একটা সুযোগ এসেছিল!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৬ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৩


মনে হয় শুধু মানুষের কল্পনাতেই এমন প্রস্তাবগুলো উপস্থাপন সম্ভব- যদি বাস্তবে হত তবে কেমন হত ভাবুন তো?
প্রত্যেকটি দেশের সমস্ত রকমের সৈন্যদল ভেঙে দেওয়া; সমস্ত অস্ত্র এবং সমর-সম্ভার, দুর্গ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×